somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - জীবন, মায়া সবশেষে পরিহাস - পর্ব - ০২

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা প্রথম পর্বটি পড়েননি, তাদের জন্য ১ম পর্বের লিংকঃ গল্প - জীবন, মায়া সবশেষে পরিহাস - পর্ব - ০১

২য় পর্ব -

এই গ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম খাবার পানি । জুন থেকে সেপ্টেম্বর, এই চার মাস গ্রামের মানুষ বৃষ্টির পানি জমিয়ে খাবার পানির খোরাক মেটায় । এরপর পরের দুই মাস অর্থাৎ অক্টোবর ও নভেম্বর হয়তো আশেপাশের পুকুরের মিষ্টি পানি খেয়েই তাদের দিন চলে । কিন্তু বছরের পরের ছয় মাস অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত আবার কখনও কখনও জুনের শেষ পর্যন্ত খাবার পানি ক্রয় করেই সংগ্রহ করা লাগে । কারণ এই ছয় মাস পানি অতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে যায় । সমুদ্রের লবণ পানির প্রবাহ এই সময় আশেপাশের পুকুরের পানি কিংবা জলাশয়ের পানিতে এসে পৌঁছায় ।

সাধারণত যেখানে বছরের অন্যান্য সময় ঐসব জলাশয়ের পানির লবনাক্ততার পরিমাণ ৩-৪ ppt (parts per thousand) থাকে, সেখানে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত সেই লবনাক্ততার পরিমাণ গিয়ে দাড়ায় ৩৫-৪০ ppt, যা খাওয়া তো দূরের কথা, হাত দিয়ে স্পর্শ করলে বরং হাত জ্বলতে থাকে । এই অবস্থায় সে পানি ব্যবহার করার স্পর্ধাও কারও হয় না । তাই তো সেই ছয় মাস পানি কিনে খাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না । তাও আবার পানির একেকটি টব যাতে কিনা ৩০ লিটার পানি ধরে, সেটি বিক্রি হয় ২০-৩০ টাকায় । তাও সেই পানি খুব বিশুদ্ধ কোন পানি নয়, শুধুমাত্র অনেক দূরের কোন মিষ্টি পানির পুকুর থেকে উঠানো মাত্র । পানির সমস্যার জন্য এই গ্রামের মানুষ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক বরাবরও আর্জি দিয়েছে । কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি । কারণ এখানেও সেই অবস্থাই চলে, "গরীবের কথা কেউ ভাবে না ।"

তবে গ্রামের মানুষগুলো সত্যি যদি কারও কাছ থেকে একটু সহমর্মিতা পায়, তারা হলো বিভিন্ন এনজিও । বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রতিনিধিরা গ্রামের মানুষগুলোর কাছে আছে । তারা নানান প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত-অশিক্ষিত মানুষগুলোকে আশার আলো দেখায়, এর বিনিময়ে তারা ঐ গ্রামের মানুষগুলোর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঋণ কিংবা কিস্তির কথা বলে হাতিয়ে নেয় । গ্রামের মানুষগুলো যেই বিষয়টাতে সহজে টোপ গেলে, সেটি হলো পানি ধরে রাখার ট্যাংক । ১০০০০-১২০০০ টাকায় একটি ১০০০ লিটার পানি ধরে রাখার ট্যাংক কেনা যায় ঐসব এনজিও থেকে । এর বেশি ধারণক্ষমতা বিশিষ্ট ট্যাংকের দাম আরও বেশি । এই ট্যাংক কার্যত ঐ গ্রামের মানুষগুলোকে বৃষ্টির পানি কিংবা পুকুরের মিষ্টি পানি ধরে রেখে আরও দুই-এক মাস বেশি ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয় । কিন্তু কার্যত সমস্যার চিরস্থায়ী কোন সমাধান হয় না । তবে একবার ঋণ বা লোন কিংবা কিস্তির চক্করেই গ্রামের মানুষগুলো ঐসব এনজিও-গুলোর কাছে কার্যত বন্দী হয়ে যায় । তখন কিস্তি শোধ করার জন্য গ্রামের মানুষগুলোকে নিজেদের জমি, বসতভিটা পর্যন্ত বিক্রিও করা লাগে । এমতাবস্থায় যদি এদের সুদিন কোন অবস্থাতে ফিরে আসে, সেটি হলো একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, যেটি কিনা লবণাক্ত পানি উঠিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি খাঁটিয়ে মিষ্টি করে দিতে পারে এবং যার যতটুকু প্রয়োজন তা সরবরাহ করতে পারে ।

তবে এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নিয়ে এনজিও-গুলো তেমন আগ্রহ দেখায় না । তাদের ধান্দা হচ্ছে মানুষকে অল্প লাভের মুখ দেখিয়ে কিভাবে নিজেদের আখের গোছাতে হয় । এরই ফলস্বরূপ গ্রামের অনেক মানুষই নিঃস্ব হয়ে যায় এইসব এনজিও- গুলোর কারণে । সাবিনার বাবা মোঃ আব্দুস সাত্তারেরও একই অবস্থা । তিনি একটি ট্যাংক কেনার জন্য একটি এনজিও থেকে লোন নিয়েছিলেন । বাড়িতে একটি ট্যাংক আসলেও সংসারের দৈনন্দিন যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে তিনি ঐ লোনের টাকা আর সংগ্রহ করতে পারেননি । এর ফলস্বরূপ তাকে বসতভিটা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিতে হয় । তখনই এগিয়ে আসে একই গ্রামের আব্দুল মোতালেব শিকদার । তিনি মোঃ আব্দুস সাত্তারকে প্রস্তাব দেন যেন তার বড় মেয়ে সাবিনাকে তার সাথে বিয়ে দেওয়া হয় । মোঃ আব্দুস সাত্তার চিন্তার জন্য কয়েকদিন সময় নিয়ে শেষমেশ বাধ্য হয়েই রাজি হন । এই আব্দুল মোতালেব শিকদারের আগেও তিন বিয়ে হয়েছে । তার প্রথম ঘরের বড় সন্তানের ঘরে সাবিনার চেয়েও বড় ছেলে আছে । মোঃ আব্দুস সাত্তার অবশ্য সাবিনার সাথে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেন । অবশ্য গ্রামে কোন মেয়ের বিয়ে দিতে হলে তার অভিভাবক কখনই ঐ মেয়ের কাছ থেকে শোনে না । সাবিনার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা না ।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৩:০৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×