somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহেষখালী থেকে ফেরার পথে কিছু অস্থির অনুভুতি

২১ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবছরের ফেব্রুয়ারী মাসে আমরা বন্ধু-বান্ধবী মিলে মোট ১৮ জন একসাথে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমাদের পুরো প্রোগ্রামটা ছিল প্রি-প্ল্যান্ড। মানে, আমরা কোথায় কখন কি কি করবো সেগুলো ছিল আগেই নির্ধারিত। এই জন্য পুরো সফরটা আমরা সবাই খুব এনজয় করেছিলাম।

তো আমাদের পুরো প্ল্যানের একটা জায়গাতেই ভুল ছিল। সেটা হলো মহষেখালী সফরটা নিয়ে। এটার টাইমিংটা ছিল ভুল। যার জন্য আমাদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় জোয়ার-ভাটার টাইমিংটা ভুলে যাবার জন্য।

আমরা রওনা দিয়েছিলাম কক্সবাজার থেকে দুটি স্পিড বোটে মহেষখালীর উদ্দেশ্যে। তখন বাজে প্রায় বেলা বারোটা। ওখানে পৌঁছে আমরা আবার একটা সাম্পান নৌকাতে করে একটা কিছুক্ষণ ঘুরলাম। সেখানে আমরা প্রথমে একটা মন্দিরে গিয়েছিলাম। বেশ কারুকাজ করা একটা মন্দির। অনেক উচুতে পাহাড়ের উপর। ওখানে পৌছেই ডাব আর মহেষখালীর বিখ্যাত মিষ্টি পান খেলাম।

এরপর গেলাম গোরকঘাটা বাজারের একটি হোটেলে লাঞ্চ করতে। এখানে এসে কক্সবাজারের চেয়ে মজা করে ভাত খেতে পারলাম। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, ওখানকার রিক্সাওয়ালারা জোড় করে তাদের রিক্সায় তুলতে চাইছে এবং তারা বেশ আন্তরিক। আরো দেখলাম লবনের ক্ষেত। শুটকীর মাঁচা। অদ্ভুত সব দৃশ্য। চমৎকার একটা জায়গা।

লাঞ্চ করে গেলাম বেশ কিছু দুরে একটা বৌদ্ধ মন্দিরে গেলাম। সেখানে গেটে সবাইকে জুতা খুলে জমা দিয়ে যেতে হয়। বেশ কিছুক্ষন সেখানে ঘুরলাম, ছবি তুললাম। বের হয়ে ঢুকলাম একটা তাঁতী বাড়ীতে। বাড়ীগুলো চমৎকার। উঠোনে দোকান আর একটা ঘরের মধ্যে চলছে খট খট শব্দে তাঁত। সেখানে বসে সে বাড়ী মহিলা তাঁত বুনছেন।

এরপর রওনা দিলাম ঘাটের দিকে উদ্দেশ্য আবারো কক্সবাজারে ফেরা। ততক্ষন প্রায় সাড়ে পাঁচটা বাজে। পথে পড়ল শুটকীর বাজার। সেখানে নেমে আবারো সবার শুটকী কেনা। তারপর হেলেদুলে ঘাটে পৌঁছালাম। আমাদের তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে কারণ আমাদের ঢাকা আসার বাস রাত ১১টায় ছাড়বে।

কিন্তু ঘাটে পৌঁছে যা দেখলাম তা দেখে আমাদের অবস্থা খারাপ। ঘাটে কোন নৌকা বা স্পিডবোট নেই। আর ঘাট থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দুরে অস্থায়ী ঘাট করা হয়েছে ভাটার কারণে। চারিদিকে সব ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূল বেরিয়ে পড়েছে। ঘাটটি একটি বড় সাম্পানের উপরে। সেখানে আধা ঘন্টা পর পর এসে ভিড়ছে ছোট ছোট শ্যালো নৌকা। কিন্তু কোন স্পিড বোট আসেছে না। কারণ পানি বলে কম। তাতে স্পিডবোটের পাখা নীচে বেঁধে যেতে পারে। ঘাট থেকে সেই সাম্পানে উঠতে হবে ছোট ছোট ডিঙ্গির উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে। সেই ডিঙ্গি কোনটা উপরে কোনটা নিচে। কোলে ঘুমন্ত বাচ্চা নিয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে সেগুলো পার হয়ে আসাটা কি কষ্টকর সেটা প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া কেউ বুঝবে না।

অনেক মারামারি, অনেক কষ্ট করে লাষ্টে সেই বড় নৌকায় এসে পৌঁছালাম। আমার এককোলে আমার দেড় বছর বয়সী ঘুমন্ত ছেলে আর আরেক হাত দিয়ে স্ত্রীর হাত ধরে আছি। প্রতিটা লোকজনের চোখে মুখে একটা ভীতি কাজ করছে। যেতে পারবে কি পারবে না। অনেক মহিলা আর বাচ্চারা কাঁদছে। আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পর নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ সেখানে এত লোক গিয়েছিল যে অন্যদিন এত লোক দেখা যায় না (সেখানের লোকের মুখে শোনা)। কারণটা ছিল, ঐ কয়েকদিন ছুটির মধ্যে এযাবৎ কালে সর্বোচ্চ চার লাখ লোক সমাগম হয়েছিল কক্সবাজারে (সেখানকার জেলা প্রশাসকের পরিসংখ্যান মতে)। এদিকে নৌকার উপরে অতিরিক্ত লোকের ভীড়ের জন্য একজন পড়ে গেল পানিতে। তাকে নাকি দড়ি দিয়ে তোলা হলো। সেই সাম্পানের পাটাতন পানি থেকে কমপক্ষে প্রায় ২০/২২ ফিট উপরে।

পরিশেষে আমাদের একজন অনেক কষ্ট করে সেখানকার এক মাতব্বর টাইপের লোক ধরে একটি স্পিডবোট জোগাড় করল। তাতেই আমরা সবাই (যাদের বাচ্চ ছিল) উঠলাম। স্পিডবোট ছাড়লো। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর নীচের বালুতে আটকে যায়। সেকি ভয়াবহ অবস্থা। এভাবে অনেক কষ্ট করে প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর কক্সবাজার ঘাটে এসে পৌঁছালাম।

সেদিনকার মত এত ভয়াবহ উৎকন্ঠা আমি কোনদিনও দেখিনি কারো মধ্যে। তখন আমার শুধু টাইটানিকের সেই সিন মনে পড়ছিল। যখন টাইটানিক ডুবে যাচ্ছিল আর ওটার যাত্রীরা প্রাণপণে চেষ্টা করছিল বোটে উঠার জন্য। একদম সেই সিনটার কপি দেখেছিলাম সেদিন।

যারা মহেষখালী যাবেন, তারা কক্সবাজার থেকে রওনা দেবার আগে জোয়ার ভাটার টাইম জেনে তারপর রওনা দেবেন। মহেষখালী থেকে ভাটা হওয়ার আগেই রওনা দিতে হবে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।

ছবি:
১। ভাটার সময়ের ম্যানগ্রোভ।
২। জোয়ারের সময়ের ম্যানগ্রোভ।
৩। নৌকার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ের একটি ছবি
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ২:১৬
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×