কোন এক দুষ্ট ছাত্র ক্লাসের লেকচার ডেস্কের উপর লিখে দিল “প্রেম কে সরকারি করা হোক”। সব স্যারের চোখ এড়ালেও জানি মানিক লাল দেবনাথের চোখ এড়াবেনা। আজ ক্লাসে কিছু একটা ঘটবে! মনে মনে পুলক অনুভব করছি, অপেক্ষায় আছি কি ঘটে দেখার জন্য।
স্যার চশমা পরতেন নাকের ডগায়! যেদিন ক্লাসে কিছু ঘটত সেদিন চশমার উপর দিয়ে তাকাতেন। কিন্তু আজ চশমার উপর দিয়ে তাকালেননা। লেখাটা দেখেও এড়িয়ে গেলেন!
পরদিন ক্লাসে প্রবেশ করলেন চশমার উপর দিয়ে তির্যক ভাবে আমাদের দর্শন করতে করতে! বুঝেগেছি আজ কিছু হবে। কোণ কথা ছাড়াই সরাসরি বোর্ডে গেলেন। সারি করে অনেক গুলো শব্দ লিখলেন- আদর, সোহাগ, মমতা, সেহ্ন, শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও প্রেম। শব্দগুলোর একপাশে মা এর অন্য পাশে লিখলেন ছেলে। দাগ টেনে প্রতিটা শব্দের সাথে মা আর ছেলে কে জুড়ে দিতে দিতে বললেন, মা ছেলে কে আদর করে, সোহাগ, মমতা ও সেহ্ন করে?
আমারা চিৎকার করে বললাম- জী স্যার।
ছেলেও মাকে শ্রদ্ধা করে ও ভালবাসে ?
আমারা আবারও চিৎকার করলাম- জী স্যার।
স্যার আবার শুরু করলেন- এইসব ভাবের মাধ্যমে প্রেম তৈরি হয়! তাঁর মানে প্রত্যেকের মায়ের সাথে একটা ইমোশনাল রিলেশন তৈরি হয়? তাহলে সবাই সবার মায়ের সাথে প্রেম করে!
যাও, আজ থেকে প্রেমকে সরকারি করে দেয়া হল! সবাই সবার মায়ের সাথে ইচ্ছা মত প্রেম কর।
আগামীকাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ঢাকার রাস্তা ঘাঁট, পার্ক, উদ্যান, হোটেল-রেস্তরাঁ, ক্লাবগুলো ভরে যাবে প্রেমিক যুগলের পদভারে। নিজের প্রেয়সীর মন ভোলাতে কেউ ফুল দিবেন, কেউ টেডিবিয়ার। কেউ আবার পুলিশি পাহারায় চুম্বন করার আহ্বান করেছেন ঢাকার যুগলদের।
ভালোবাসার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয়া কঠিন। ব্যাক্তিভেদে, সমাজভেদে ভালোবাসার রূপটা ভিন্ন হতে পারে। এটা সত্য যে আপনি শুধু আপনার প্রেয়সীকেই ভালোবাসেন না। সমাজে একই সাথে আপনার মা, বাবা, ভাই-বোন, সন্তান, বন্ধু, কর্ম ও দেশ ছাড়া আরও অনেক কিছুই ভালোবাসেন। কিন্তু প্রতিটি ভালোবাসার রূপ ও বর্ণ ভিন্ন।
কিন্তু যুগলরা শব্দটাকে এমন ভাবে গ্রাস করলো যে, আজ ভালোবাসা বলতে সমাজ শুধু যুগলের প্রণয় কেই বুঝে! আমারা ভুলে গেছি, এই শব্দটার আরও অনেক বর্ণ আছে! শব্দটা আরও অনেকের জন্যে হতে পারে!
আজ মায়ের জন্যও কিছু ভালোবাসা রাখুন। সন্তানের জন্য একটু সময় রাখুন আর বাবার জন্য একটা গিফট নিয়ে জান। আসুন পথের চিহ্নমূল শিশুকেও ভালোবাসি। ভালোবাসাকে কোণ দিনে আবদ্ধ আর কোন ব্যাক্তির মাঝে সীমিত না করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন। শব্দটা কে দুজনের বাহিরে নিয়ে আসুন, মুক্তি দিন।
যারা খুব উত্তেজনা অনুভব করছেন, প্রকাশ্যে চুম্বনকে ভালোবাসা ভাবছেন তাদের বলছ । Plz get a room!! আপনার কর্মের ফল যেন আসমান থেকে টিনের ছাদের উপর না পড়ে!!
কারন আমরা এ সমাজটাকে ও ভালবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৩