somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নুহা -২

২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নুহা - আগের পর্ব

সচরাচর আমি এত সকালে ঘুম থেকে উঠিও না কিন্তু আজ উঠতে হলো। রেজাকে বারবার নিষেধ সত্ত্বেও সকালে কাজে যাবার আগে আমার কপালে একটু আদর করে যায় আর এরকম করে না গেলে নাকি ওর দিন ভালো হয় না। আসলে কপালে এই আদর করাটা ওর একটা বাহানা। একটা মানুষ ঘুম ভেঙেই কি করে কাম বোধে আক্রান্ত হয় কে জানে ! আমার সে সময় প্রচণ্ড মেজাজটা খারাপ হয়। কারণ আমার ঘুমটাই হয় ভোরের দিকে। সে সময় মুখের উপরে গরম নিঃশ্বাস পড়া, টুথপেস্টের গন্ধ, দাঁড়ির খোঁচায় চোখ খুলে তাকাতে বাধ্য হলে মাঝে মাঝে সকালেই ওর সাথে নীরবে ঝগড়া হয়ে যায়। মুখের উপরে কারো চেহারা ঝুঁকে থাকা দেখলে, আমি আচমকা ভয় পেয়ে আতকে উঠি আর আমার ভয় পাওয়া দেখে রেজাও ভয় পেয়ে মেজাজ খারাপ করে রেডি হতে শুরু করে অফিস যাবার জন্য । ভুল বললাম - অফিস না, হোটেলে কাজে যাবার জন্য ও রেডি হতে থাকে। আমার মনে হয় একমাত্র বাংলাদেশেই অফিস শব্দটাকে কাজের সম্ভ্রম, আভিজাত্য বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। দেশের বাইরে অফিস বলতে সরকারি দপ্তরকেই বুঝি আমি আর বাকি সব ব্যক্তি মালিকানা ।



সকাল সকাল কিয়ারার মা'কে রাগিয়ে আমার সাধের ঘুমের বারোটা যে রেজা বাজিয়ে গেলো তার একটা দারুন শোধ নেয়া গেলো। রেজার সাথে গলাবাজি আমি কখনোই করি না আর বিরক্তি বোধ, রাগ , অভিমান ওর সাথে আমি করি না, সব কিছুই চাপা থাকে আমার মাঝে তাই বোধ হয় ও ভাবে আমি বেশ নিরীহ একজন মানুষ। ওর অনুপস্থিতিতে আমার যে একটা ভিন্ন সত্তা আছে সেটা ওর এখনো দেখা হয়নি আর এখানেই মনে হয় আমার জয় বিগত সময়ে আমার কাটানো পরাজয়ের বা অনাচারের ভিড়ে। সে যাই হোক , সকালে উঠে খেতে আমার একদমই ভালো লাগে না। যদিও রেজা বলেছে ঘরে খেতে ভালো না লাগলে বাইর বারে গিয়ে অন্তত এক কাপ কফি হলেও খেয়ে নিতে। কিন্তু আমি ঘর থেকে একবার বের হলে আমার আর ঘরে ফিরতেই ইচ্ছে করে না। আজ ঠিক করেছি নতুন কোনও এক বারে গিয়ে নাস্তা খাবো। আসলে বার, নাস্তা, কফি এসব আমারও একটা বাহানা। কতক্ষণ এভাবে একা থাকতে ভালো লাগে একলা ঘরে! তার আগে বারান্দায় গিয়ে দেখা দরকার আকাশের অবস্থা কেমন। অবশ্য এটাও একটা কথার কথা বললাম আমি কারণ বৃষ্টি হলেও আমি বাইরে বের হবো। বারান্দায় যেতেই দেখি আমার প্রতিবেশী স্যাম রোজকারের মতো তার বারান্দায় টবে লাগানো গাছগুলোর সাথে কথা বলছে আপন মনে। আমাকে দেখে একটু হাসলো। প্রত্যুত্তরে আমাকেও হাসতে হলো। এমনিতে সে সল্পভাষী কিন্তু কোনো কোনোদিন তাকেও ভীষণ কথায় পেয়ে বসে। আমাকে দেখে বৃদ্ধ স্যাম বলল -


এত ঠাণ্ডার মাঝে তুমি গরম কাপড় পরোনি কেন মেয়ে ! খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।


আমিও আমার বারান্দা থেকে একটু গলা উঁচিয়েই বলি - এই এলাকার শীতটাকে একটু স্বাগত জানাচ্ছি , চেনা-জানা করে নিচ্ছি । অনেকগুলো দিন তো এখানে থাকতে হবে! স্যাম কানে একটু কম শুনত বলে আমাকে বেশ উচ্চ স্বরেই কথা বলতে হচ্ছিলো যা ছিল আমার অপছন্দ। আরও কিছু টুকটাক গল্প করে স্যামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমিও রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হই। এখন সামার হলেও সকালে একটা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার রেশ থাকে। তবে ঠিক করেছি আজ দানিয়েলের বারে যাব না । মারিয়ানো নামের নতুন একটা ছেলে এসেছে ওর বারে , ওর চাহনিটা ভীষণ তীব্র। তীব্র বলতে ঠিক অশ্লীল কিছু না কিন্তু কেমন যেন ভেতরটা কেঁপে ওঠে অমন দৃষ্টি দেখলে এই আর কি! অস্বস্তি হয় দারুন, মনে হয় পালাতে পারলেই বাঁচি। প্রথম ওকে আমার আমার নজরে পড়ে যেদিন, সেদিন আমি একটা স্যান্ডউইচ খেতে খেতে ফোনে মায়ের সাথে বাংলাদেশে গল্প করছিলাম আর একটা কোক খাচ্ছিলাম একটু একটু করে। আমার সকালের নাস্তার বিবরন শুনে মা যখন আমাকে উপদেশ দিচ্ছিলো আর আমি হাসছিলাম ,ঠিক সে সময়েই দেখতে পাই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে আমার থেকে চারটা টেবিল দূরে। এভাবে ছেলেটাকে তাকিয়ে থাকতে দেখেই আমার কি জানি হলো, একটা বমি বমি ভাবে অকারনেই আমার মাঝে টের পাচ্ছিলাম পাক খাচ্ছে। অকারনেই ওড়না নিয়ে টানাটানি করতে লাগলাম, চুল ঠিক করতে লাগলাম। একটা যাচ্ছে তাই নার্ভাস অবস্থা। ওর চোখ সম্ভবত আমার ভেতরটা ভেদ করে ফেলেছিল। চোখ চেনাচেনিতে, আমার পোশাক- আশাক দেখে একদিন সে জানতে চেয়েছিলো আমি এশিয়ান কিনা । যদিও আমাদের খুব একটা কথা হয় না দেখা হলে কিন্তু নাস্তা খেতে সেখানে গেলেই আমি আগে চট করে দেখে নেই মারিয়ানো আছে কিনা। ধারে কাছে ও না থাকলেই তবে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে কফি নিয়ে বসি।

( চলবে )
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১৭
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×