somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নুহা

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাসার ভেতরের দিকে যে বারান্দাটা সেখানে রৌদ্রের আলো এসে তেমন একটা পড়ে না । আজ সকালে ঘুম ভেঙে বারান্দায় গিয়ে যখন আমার লাগানো সবজি গাছের দিকে তাকিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতে যাবো , সে মুহূর্তে ডোরবেল বেজে উঠলে দরজা খুলে দেখি আমাদের বিল্ডিং এর তৃতীয় তলার কিয়ারার মা আর তার বাবা ম্যাক দাঁড়িয়ে আছে । আমি থাকি চার তলায়। কিয়ারার মা'কে আমার তেমন একটা পছন্দ না , সম্ভবত তার প্রতাপশালী মনোভাব আর রুক্ষ্মতার কারণে । সে তুলনায় ম্যাককে দারুন পছন্দ আমার । খুব সুদর্শন আর অমায়িক এই ভদ্রলোক।

আচ্ছা নু , ( আমার নাম নুহা হলেও এই মহিলা আমাকে ডাকে 'নু ' বলে ) কিছু মনে করো না , তোমার ব্যালকনীতে যে গাছগুলো লাগিয়েছ তার প্রাকৃতিক গুনাগুন আর সৌন্দর্যের ব্যাপারটা কি ব্যাখ্যা করতে পারো যদি হাতে সময় থাকে তোমার ?

মহিলার প্রশ্ন শুনেই বুঝলাম ক'দিন আগে দেশ থেকে পাঠানো আমার টবের লাউবিচির বেড়ে ওঠাকে নিয়ে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে ভেতর বারান্দায় যা লাগিয়েছি । লাউ ছাড়াও করলা, সীম এর গাছও লাগিয়েছিলাম টবে। জানতাম কিছুদিন পর এসব গাছ নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর অভাবের জন্য মুখ থুবড়ে পড়বে । আমি উত্তর দেবার আগেই ম্যাক তার স্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়ে আমাকে ঈশারা দিলো এই মস্তিষ্ক বিকৃত মহিলার কথায় আমি যেন আহত না হই । যাওয়া আসার পথে বা লিফটে ম্যাকের সাথে আমার প্রায়ই দেখা হয় , কিছুটা হাই- হ্যালোও হয়। সেখান থেকেই জানি ম্যাকের স্ত্রী সবসময় মারমুখী ভঙ্গীতেই কথা বলে এবং ম্যাক বরাবরই তার সম্বন্ধে বলে তার স্ত্রীর মাথার স্ক্রু একটু ঢিলে।

কিছু মনে না করলে তোমার বারান্দায় লাগানো সবজির গাছগুলো কেটে ফেলবে। তোমার ব্যালকনী বেয়ে বেয়ে একটা পোকা আমার ব্যালকনীতে কোন একসময় এসেছিল পড়ে যা আমি আবিষ্কার করেছি আমি আমার কিচেনে ! বলে বিস্ফোরিত চোখে মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো !

আমি গাছ লাগানো কিংবা বাগান করার মতো বিলাসী কখনই ছিলাম না কিন্তু এই বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে বাংলাদেশের ছোটখাটো অনেক কিছুর তীব্র অভাববোধে ছিলাম বলেই মহিলার কথা শুনে মেজাজটা ভীষণ তেতো হয়ে গেলো এই সকাল বেলাতেই। তারউপর মহিলা কেমন হুকুমের সুরে কথা বলছে আমার সাথে ! সাহস কত্ত বড় !

আচ্ছা তোমরা যখন শুকরের মাংস খাও তখন কি আমি বা আমার স্বামী কেউ তোমার ঘরে এসে নক করে বলি , প্লিজ দোনাতেল্লা , আর কখনো এই প্রজাতির মাংস খেও না ? বলো , বলি আমি ? কিংবা এত বড় ভয়াবহ দর্শনের কুকুরটা নিয়ে যখন লিফটে ঢোকো আমি কি বলি কুকুরটা কে নিয়ে তুমি পরে আসো ? বলি না এসবের একটাও , তাই না ?

- নু , আর ইউ ক্র্যাজি ? কোথায় পোকা আর কোথায় আমার পিট ! বলে মহিলা তার পিট নামের কুকুরের জন্য পারলে সেখানেই মূর্ছা যায় আমার তুলনা দেয়া দেখে ।

- এই গাছটা শুধু গাছ না , বুঝলে ? এটা একটা সবুজ ! আমার বাংলাদেশ !

- এই পোকাটা যদি আমার মেয়ে কিয়ারার কান বা নাক দিয়ে ঢোকে ? কত অসুখ হতে পারে জানো ? আর আমি পিটকে অনেক নিয়মকানুনের মধ্যেই লালনপালন করি আমার সন্তানের মতো ! অসুখ ছড়ানোর কোনো ভয় অন্তত নেই ।

- মানুষ যখন নিঃসঙ্গ হয়ে যায় কিংবা বৃদ্ধ , তার আশেপাশে কেউ থাকে না তখন কুকুর হয় তার আপনজন ! ম্যাক তো তোমার কাছেই আছে দোনাতেল্লা ! তুমি তো আর সেইসব মানুষের মতো নিঃসঙ্গ নও । বলে আমি একটা গা জ্বালানো হাসি হাসলে মহিলা কথা খুঁজে পায় না সে মুহূর্তে ।

আমি ম্যাককে জানাই আমি গাছে কীটনাশক দেব এবং আমার গাছের পরিচর্যা করব যাতে কোনো পোকা কিয়ারা পরীর নাক এবং কান দিয়ে ঢুকতে না পারে । সাথে ম্যাক দম্পতিকে আমি কফি পান করতে বলি আমার সাথে যদিও আমি জানতাম আমার ঘরে এসে অন্তত ঐ মহিলা কখনই কফি পান করতে ইচ্ছুক হবে না ।

এরকম ম্যাড়ম্যাড়ে প্রবাস জীবনে ছোটখাটো ঝগড়াঝাঁটি না থাকলে হয়ত কবেই মনে হয় আমি বাংলাদেশে চলে যেতে বায়না ধরতাম রেজার কাছে। বৈচিত্র্যের জন্য আমি প্রবাসে এসে ঝগড়া-ঝাঁটি কামনা করছি ভেবেই কেমন হাসি পাচ্ছে আমার। ইচ্ছে করে কাউকে রাগিয়ে দেবার জন্য ঝগড়া করার মজাই আলাদা । দেখি সারাদিনের প্ল্যানটা করে ফেলতে হবে। এখন সন্ধ্যা হয় ঘড়ির কাঁটায় নয়টায়। গ্রীষ্মের এই দিনগুলো শুধু দীর্ঘই না একঘেয়েমিতে ভরা !

( চলবে ...)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:১৭
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×