ক'দিন ধরেই ভাবছিলাম একটু ব্লগর ব্লগর করবো। মনে মনে সে বিষয়গুলো গুছাচ্ছিলাম কিন্তু এখন লিখতে গিয়ে এলোমেলো হয়ে কথা গুলো উঁকি দিচ্ছে।
অফিস বিষয়ক ক্লান্তি
আমার ছোটবেলা থেকে কোনো এইম ছিল না বড় হয়ে কি হতে চাই। আব্বা যখন অতি আহ্লাদে বলতো আমার মেয়ে ব্যারিস্টার হবে না হয় ডাক্তার হবে, সেটা শুনে আমিও সুরে সুর মেলাতাম। পড়াশুনা করতে গিয়ে ব্যাপক বাঁধার সম্মুখীন হই পরিবার থেকেই। হয়ত সে জেদ থেকেই যত বাঁধা পেয়েছি তত এগিয়ে যেতে চেয়েছি। এই বাঁধার কারণেই নিজের নিভৃতে কাজ করতো আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি, এটাই অনেক কিছু। কিন্তু এখন এসে মনে হয় আমি হয়তো পড়াশুনা নিয়ে আরো আগাতে পারতাম কিংবা আমার জীবনটা আরো অন্যরকম হতে পারতো। হয়নি কারণ সত্যিকার অর্থেই কোনো এইম আমার মাঝে ছিল না। বড় বয়সে এসে স্বপ্ন দেখি এটা করবো, সেটা করবো কিন্তু সেটা পূরণের জন্য যতটা এফোর্ট দেয়া দরকার, যতটা অর্থ এবং সময় বিনিয়োগ করা দরকার ততটা আমার নেই; নেই আন্তরিক ইচ্ছাও। তাই চ্যালেঞ্জিং একটা জবে ঢুকেও জব নিয়ে আমার মাঝে কোনো আকর্ষণ কাজ করে না। কাজ না করার কারণ এই প্রেজেন্ট অফিসে সেরকম করে কাজের মূল্যায়ন হয় না। চেহারা আর তেল দেয়ার উপরে স্যালারি বাড়ে, সুবিধা বাড়ে। এমডি স্যারের মুখের উপর "না" করে জব চেঞ্জ করাও সম্ভব না। যে আদর্শ নিয়ে আছি সে আদর্শে থেকে জবে উন্নতি করার সুযোগ নাই কিন্তু অফিসের আশেপাশের লোকেরাই অনেক অনেক উপরে চলে যাচ্ছে " অর্থের মাপকাঠিতে" অসৎ উপায়ে। জানি না তাদের ভেতরে সেলফ রেস্পেক্ট আছে কিনা। প্রতিটা দিন সকালে উঠেই মনে হয় -- " আজ যদি অফিস না যেতাম, খুব ভালো হতো! " কিংবা বৃহস্পতিবারের আনন্দটা শুক্রবার রাতেই মিইয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো সময় কাটে ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে। ৯ দিনের লম্বা বন্ধ পাই।
অনেকদিন ভেবেছি আর জব করবো না। কিন্তু আমার মত নানাবিধ ট্রমাতে ভোগা মানুষ বাসায় বসে সময় কাটালেও পাগল হয়ে যাবে বোধ হয়। প্রচণ্ড এক অনীহা নিয়ে অফিস করা খুব ক্লান্তিকর ব্যাপার। আর কিছু দিন পার হলে ব্যস্ততায় ডুবে যাবো কিন্তু এই অলস সময়টার এই যন্ত্রণা ভালো লাগছে না আসলেই।
আপনাদের পড়াশুনা আর এইম ইন লাইফ জানতে চাই। চাওয়া আর প্রাপ্তির কি মিল হয়েছে ?
আমার বাবুই পাখি
বাবুই পাখির কোচিং করার জন্য বাসা থেকে বের হয় সকাল সাড়ে সাতটায়। কোচিং শেষ করে স্কুলে যায় আর ফেরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর। ক'দিন ধরে সকালে বেশ কুয়াশা পড়ছে। ও রোজ সকালে সোয়া ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে জানালা খুলে যখন দেখে কুয়াশা, খুব মন খারাপ করে বলে রোজ সকালে উঠে আমার কোচিং করতে যেতে ইচ্ছে করে না কিংবা বলে আম্মু আজকে কোচিং না যাই ? কিংবা যখন ওর পরীক্ষা চলে স্কুলে বা কোচিং তখন ও খুব বিচিত্র কারণে রেগে থাকে ওকে একা একা পড়তে হয় বলে। আমিও কেন ওর পড়ার সময় বসে থাকি না এটা নিয়ে খুব রাগ। রাগে গজগজ করে আর বলে - " তোমাদের কত আরাম, পড়াশুনা করতে হয় না। কবে যে আমি বড় হবো, তাহলে আর পড়তে হবে না।" তখন আমি বলি -- অফিস যেতে হবে সেটা বিজনেস করো বা জব করো। তখন ও বলে - সকালে তো ঘুমাতে পারবো!।
আমার খারাপ লাগে ছেলেটাকে সময় দিতে পারি না ওর মত করে। সকাল থেকে সারাদিন ও যেমন বিজি, তেমনি আমিও। সন্ধ্যার পর ওর নিজের পড়াশুনা। সে হিসেবে মাঝে মাঝে মনে হয় সময়টা ২৪ ঘণ্টা না হয়ে আরো বড় হওয়া দরকার ছিল। তাই হঠাৎ হঠাৎ ওকে সারপ্রাইজ দেই। সন্ধ্যায় স্যারের কাছে পড়তে না দিয়ে নিজেই পড়াই, ওর নোট করে দেই কিংবা ওকে নিয়ে খেতে বের হই কিংবা ওর পছন্দের কিছু কেনার জন্য ওকে নিয়ে বাইরে বের হই । সময় ঘনিয়ে আসছে সিনেপ্লেক্সে ওকে নিয়ে গিয়ে আমাদের সিনেমা দেখা। কিন্তু এসব করার মানেই ওকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া না এটা বুঝি। আরো কিছু করা দরকার কিন্তু সময়ের অভাব এবং পারিপার্শ্বিক কারণে হয়ে উঠছে না। বাসার আশেপাশে যেসব খালি প্লট ছিল, সেখানে ধীরে ধীরে প্লট মালিকগণ নিজেদের বাড়ির কাজে হাত দিচ্ছে। বাবুইদের খেলার জায়গা বলতে গেলে নেইই। ক্রিকেট খেলা অনেকদিন ধরে বন্ধ হয়ে গেছে। বাসাতেই টিভি দেখে আর কাল্পনিক ব্যাট নিয়ে বলে মারছে এমন অঙ্গভঙ্গি দেখে তো ওর নানু মাঝে মাঝে ক্ষেপেই যায়। বাসায় ফির গিয়ে এখন ওর সাথে ক্যারাম খেলতে হয় ঘুমোবার আগে কিংবা লুডু। মাঝে মাঝে গল্পের বই পড়তে পড়তে উদাস হয়ে বলে -
চলো আমরা অন্য কোথাও যাই যেখানে খেলার মাঠ আছে, স্কুলের অনেক ভালো টিচার আছে, জ্যাম ছাড়া রাস্তা আছে!
এগুলোর উত্তর আমার কাছে নেই। সকালে পরিবারের সবাই মিলে যখন নাস্তা করতে বসি, তখন ঐ সময়টাই আমার বাস্তব মনে হয় আর বাকি সব সারাদিনের সব কাজ মনে হয় মেকী! নাস্তার টেবিলে আমার বসার একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে জানালার পাশে। সকালের চা' টা আমি সময় নিয়ে আয়েশ করে খেতে পছন্দ করি। সে সময় মনে হয় সময়টা এখানেই স্থির হয়ে থাকুক! দিবা স্বপ্ন!
এ সপ্তাহের পড়াশুনা
গত তিনদিন ধরে আমার বুক শেলফের সামনে দিয়ে আনাগোনা করছি। ভাবছি পুরনো কিছু বই আবার পড়া শুরু করবো কিনা। কিন্তু ভাবতে ভাবতেই সময় তিনদিন গড়িয়ে গেলো। বুদ্ধদেব গুহর " অবরোহী আর আরোহী" বইটা আবার পড়া শুরু করবো ভাবছি। চিঠি সিরিজের জন্য এটা একটা ভালো বই। বুদ্ধদেব গুহের বইতে প্রকৃতির যেসব বর্ণনা আর বুনো ফুলের গন্ধের সুবাস পাওয়া যায় সেটা সত্যিই আমার কাছে খুব অনবদ্য লাগে।
ব্লগ বিষয়ক
নির্বাচিত পোস্ট লিস্ট চেক করে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। এখন ঘন ঘন পোস্ট নির্বাচিত পাতায় এনলিস্টেড হয় না। দীর্ঘ সময় নির্দিষ্ট পোস্টগুলো নির্বাচিত পাতায় থাকে। এটা ভালো লাগলো সত্যিই।
আগে আমার লিঙ্ক বলে একটা অপশন ছিল যার যার ব্লগ পাতায় যেখানে পছন্দের ব্লগারদের ব্লগ পাতা এড করে রাখা যেতো। সেটা এখন নাই। এই অপশনটা আবার আনা যায় কিনা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন।
নোটিফিকেশন অপশনটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু মাঝে মাঝে নোটিফিকেশন ঠিক মত কাজ করে না। আশা করি এই সমস্যাটা দূর হবে।
ফান কমেন্ট হিসেবে নিমগ্ন আর আরণ্যক রাখালের কমেন্টে মাঝে মাঝে আমি খুব হাসি। বিশেষ করে আরণ্যক রাখাল কিছুদিন আগে এক এপিক কমেন্ট করেছিল যা দেখে আমি খুব হেসেছি, নিখাঁদ বিনোদন। সে কমেন্ট আর পোস্টের কথা উল্লেখ না করি!
ব্লগ বিষয়ক আরো কিছু কিছু কথা মাথায় ছিল যা এখন হাওয়া হয়ে গিয়েছে। ওহ আরেকটা বিষয়। গত কয়দিনে ব্লগের যে দুইটা পোস্ট আমার ভালো লেগেছে তার লিঙ্ক দিচ্ছি আমার ভালো লাগাটা শেয়ার করতে।
রিস্টওয়াচ ও মাকড়শার আখ্যান - এনামুল রেজা
আমি তুমি আমরার অনুবাদ গল্প
ব্লগর ব্লগর আরো চলবে আশা করছি