somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মি জা ন
অজ্ঞাত পরিচয় নাম বুকে নিয়ে সমাধিস্থ হব, অজ্ঞাতনামা কোন এক সমাধিস্থলে শতাব্দী হতে সহস্রাব্দের কোলে অনন্ত ঘুম হবে নিস্তব্ধ নিরালায় আলো হতে শত যোজন দূরে, আমার চিরাচরিত আঁধার বুকে নিয়ে আমি তো শুধুই একটা নাম ওটা মুছে গেলে কি এমন লাভ-ক্ষতি বল!

এক চিলতে গল্প: দ্বিধা পর্ব - ১

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দিনটি ছিল বৃষ্টিমুখর। কখনো ইলশেগুড়ি, কখনোবা ঝুম বৃষ্টির রিমিঝিমি কলতান। বেহায়া রকমের অপরিপাটি চায়ের দোকানটি হাউসফুল চলছে। বৃষ্টিবন্দী কয়েকজনের মুখ দেখে বলে দেওয়া যায় তারা বেরুতে পারলে বাঁচে। তবে সৃষ্টিছাড়া বৃষ্টির ছিঁটে মাথায় নিয়ে বেরুতে তাদের রাজ্যের আপত্তি। নিদারুন বিরস বদনে বসে থাকতে থাকতে ঝিমুনিতে ঢুলছে দুয়েকজন। সিগারেটের ফুকফুকুনি চলছে বিরামহীন, মরাটে সাদা ধোঁয়া আর খেয়ালি বিধাতার আলো আধাঁরি খেলা জমে উঠেছে। বিজাতীয় চিল-চিৎকার, হাঁসি-ঠাট্টা, আর থেমে থেমে কাশির দমকে বসে থাকা দায়, আবার উঠতেও পারছি না। যদি আরো অনেকটা সময় বসে থাকতে হয়, চা-বিড়ি কিছু একটার অর্ডার না দিলে চলে না। ওদিকে পকেট গড়ের মাঠ, দোকনি ‍মুখচেনা হলেও বাকি-ফাঁকি খাইনি আগে। আচ্ছা খেয়ে দেয়ে বিল বাঁকির খাতায় ঠুকে দিলে মানবে তো দোকানি! নাকি অতো মানুষের ভীড়ে ‍দু’কথা শুনিয়ে দিবে। চা, বিড়ি আর দুটো নোনতা বিস্কুট সাকুল্যে ১৪ টাকা, সামান্য কটি টাকার জন্য ঠিক কি করতে পারে, না পারে সাতপাঁচ ভাবনার মাঝেই বেরসিক বিধাতা বৃষ্টির ভলিউমটা আরো খানিকটা উসকে দিলো। লে বাবা এবার! মুখর মানবকূলের ভীড়ে নিসাড় বসে থাকার বিড়ম্বনা উপলব্ধি করার মতন দরদী কোথায় আছেন জানি না তবে আছেন ন্শ্চিয়। সেই অজ্ঞাত মানবের চরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য রেখেই বলছি, এহেন পরিস্থিতিতে আপনি কি করতেন জানিনা, আমি আর বসে থাকতে পারছি না। পকেটে পয়সা না থাকলে কেন জানিনা আমি আর আমি থাকি না। অজান্তেই হীনমনস্ক, সদাভীরু প্রজাতির একজন হয়ে উঠি। চারিপাশের কারো চোখে চোখ রাখতে আর ভরসা পাই না, মনে হয় সবাই যেন আমার ভেতরটা দেখে নিচ্ছে আমারই অজ্ঞাতসারে। বৃষ্টিমাখা বাতাসের শীতল পরশেও আমার ঘাম হয়, কপাল আর নাকের উপরটা ভিজে আসে অসময়ে। মা বলে, যে ছেলেদের নাক ঘামে তাদের বউভাগ্য খুব ভালো হয়, বউয়ের ঝরতি-পড়তি আর বাড়তি আদর জোটে তাদের ললাটে। কিন্তু মা বলে নি, যে ছেলেদের বাড়তি রোজগারের মুরোদ নেই তাদের ভাগ্যাকাশে ঝড়, ঝামটা নাকি সাইক্লোন লেখা থাকে। একবার ভাবি ধুরছাই বৃষ্টি মাথায় করে বেরিয়েই যাই না কেন, ক্ষনিকেই মত পাল্টাই, শরীরে আবার রোদ-বৃষ্টি কিছুই সহ্য হয়না। একদিন বৃষ্টিভেজার ঝাল ১০দিন জ্বরে ভূগে শোধের দায় নিতে পারব কিনা দ্বিধায় পড়ে যাই।

রুষ্ট বিধাতার চরণে মিনতি জানাই, হে প্রভূ সমাজের বঞ্চিত মানবকুলের হাহাকার আর নিত্য নাই এর আহাজারি শোনার সময় তোমার হয় কিনা জানিনা আর হলেও প্রতিকারের আশু ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ কতকাল আগে ফুরিয়ে গেছে সে তুমিই জানো। আমাদের একটা ডাকে সাড়া দেবার আগেই হাজির হয় আরো দশটা নাই এর অনুযোগ। তোমাকে দোষ দেবার বহু আগেই আমাদের চোখে দোষী হয়ে যায় সমাজের যদু-মধু, রাম শ্যাম নামক হায়নার দল। বুকের গভীর হতে দ্বীর্ঘশ্বাসগুলো এত বেশি বেশি শোরগোল তোলে, স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নিতে ভুলে শ্বাস টানি হাপানি রোগীর মতন। তার পরেও একটুকরো প্রশান্তির সুবাস পেলে সব ভুলে ভক্তিভরে তোমাকেই ডাকি বেলা অবেলায়। আমি জানি আমার ভক্তিতে লোভ লুকিয়ে থাকে, কিছু পাওয়ার লোভ, কেউকেটা গোছের কিছু একটা হওয়ার লোভ। চাইতে চাইতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি প্রভূ, কিন্তু খুব জানতে ইচ্ছে করে আমার ডাক শোনার শ্রবণযন্ত্রের সুইচ অন করতে ভুলে যাওনি তো তুমি! অথবা বিরক্ত হয়ে আনপ্লাগড করে রাখোনি তো আমাকে!! না হলে দিবানিশি হাজারটা চাওয়ার দুয়েকটা পূরণ করেও তো সান্তনা দিতে পারতে অবোধকে।


রাত বাড়ছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৃষ্টি, আজ যেন ধনুভঙ্গ পণ করেছে সে আমাকে ভিজিয়ে ছাড়বে। আমিও নাছোড়বান্দার মতন গো ধরে বসে আছি। হাত পা নিশপিশ করছে, জায়গায় বেজায়গায় চুলকো্চ্ছে খুব। দু’চারটে হিংসুটে মশা আর সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকে আক্রমনের পর আক্রমন করে যাচ্ছে প্রবল শত্রুতায়। যন্ত্রনাক্লীষ্ট জীবন যুদ্ধে হাজারটা শত্রুর মাঝে কয়েকটা শত্রুকে আমি নাম দিয়েছি দুধভাত, তার প্রথমটি মশা আর দ্বিতীয়টি ক্ষুধা। দুটোই গা সওয়া হয় গেছে। তবে আজ কিছুটা বাগে পেয়ে গেছে আমায়। সাড়াশী আক্রমনে নেমেছে দুজনায়। পাশে বসা হ্যাংলা গোছের লোকটি বিড়ির ফুকফুকুনির সাথে চায়ের সুড়ুৎসাড়ুৎ চালিয়ে যাচ্ছে মাপা বিজ্ঞাপন বিরতিতে। ধম্মে সবে না বাঁছা! আমারো দিন আসবে, আজ পকেটে পয়সা নেই বটে, তবে একদিন আমারো হবে। আমিও আয়েশ করে বিড়িতে সুখটানের পরে সুড়ুৎসাড়ুৎ চা সাটাবো। তোমাকে সেদিন সামনে পেলে হয়, তোমার মতন হাড়বজ্জাতকে সেদিন ডিমভাজার সাথে পাউরুটি খাওয়াবো। অতঃপর কড়া লিকারের এককাপ গরম চা সাথে গোল্ডলীফ/ব্যানসন অথবা যে ব্রান্ড তোমার পছন্দ। তুমি যখন সুখের আবেশে চা-বিড়ি সাটাবে তোমাকে আজকের গল্পটা শুনিয়ে দিব কেমন। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×