ভুমিকা ছাড়াই বলছি
ঢাকার যানজটের অনেকগুলো কারন আছে। বেশিরভাগই কারনই অবকাঠামোগত, যা সুরাহা করা সময়সাপেক্ষ ও ব্যায়বহুল। আমি একটি দৃশ্যমান সমস্যা তুলেধরছি যেটা ঢাকার যানজটের অন্যতম একটি বড় কারন। এর সমাধান মোটেও ব্যায়বহুল নয়। সুধু সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
খুলেই বলি,
ঢাকার জানজটের অন্যতম কারন ত্রুটিপুর্ন বাসরুট সমুহ, যে রুটগুলোর শেষপ্রান্ত ঢাকার কেন্দ্রস্থলে সবচেয়ে ব্যাস্ত এলাকাগুলতে। এগুলো স্থায়ী বাসট্যান্ড, আসলে রাস্তাটি সম্পুর্ন দখল করে অলিখিত বাস ডিপো। যেটা গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, মতিঝিল, মোহম্মদপুর প্রভৃতি একাকার রাস্তাগুলোকে অচল বাস দিয়ে বাসডিপো বানিয়েফেলেছে। সন্ধার পর বাসের ফাকে ফাকে বসে হিরোইঞ্চি-ডাইলখোরের দল। রাস্তাটুকু হেঁটে পার হতেও ভয় হয়।
একটি চার লেনের বিশাল রাজপথ কিভাবে মৃত রাস্তায় পরিনত হয়েছে! থেমে থাকা বাসের কারনে। ছবি আমার নিজের তোলা।
ছবিতে দেখুন, নগরভবন মার্কেট লাগোয়া ফুলবারিয়া অলিখিত বাসস্টান্ড, ঢাকা শহরের অতিগুরুত্বপুর্ন প্রবেশমুখটি কিভাবে স্থায়ীভাবে বন্ধকরে দেয়া হয়েছে থেমে থাকা বাস দিয়ে। ছবিগুলো আমার নিজের তোলা।
মোহম্মদপুর টাউন হলের সামনের রাস্তাটি কিভাবে সরু হয়ে আছে, থেমে থাকা বাস দিয়ে।
বেশীর ভাগ নগর পরিবহন বাস কেন ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান বা মতিঝিল থেকে ছাড়তে হবে?
মোহম্মদপুর বা মিরপুরের বাসগুলো শেষ গন্তব্য কেন গুলিস্থান বা মতিঝিল? কেন নারায়নগঞ্জ, কাচপুর বা জিঞ্জিরা হতেপারেনা?
কেন নারায়নগঞ্জের বাসের শেষ গন্তব্য গুলিস্তান এলাকাতে হবে? আসাদ গেট ছুয়ে মিরপুর বা সাভার বা এয়ারপোর্ট ছুয়ে গাজিপুর হতে পারেনা?
এর আগে বহুবার আইনপ্রয়োগ করে এদেরকে সড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, লাভ হয়নি।
আমার প্রস্তাব
বাসরুটগুলো এমন ভাবে গঠন করতে হবে যেন এর স্টার্টিং এবং এন্ডিং শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত হয়। মানে বাস সার্ভিস গুলো যাত্রা সুরু করবে ঢাকার বাইরে থেকে শেষও হবে ঢাকার বাইরের একটি স্থানে।
শহর কেন্দ্রে বা বিজি এলাকায় যেন বাসগুলো থেমে থাকতে না পারে,স্থায়ী আস্তানা বানাতে না পারে।
অনুরুপ ভাবে শহরতলি বা সল্প দুরত্তের আন্তজেলা বাসগুলোর রুট এমন ভাবে করতে হবে যেন ঢাকার ভেতর দিয়ে দুটি জেলাকে যুক্ত করে।
যেমন
নারায়নগঞ্জ – ঢাকা রুট টি হবে -
নারায়নগঞ্জ – গাজিপুর বা নারায়নগঞ্জ – সাভার বা মানিকগঞ্জ।
কুমিল্লা –ঢাকা রুটটি হবে –
কুমিল্লা- সাইন্সল্যাব হয়ে সাভার বা মানিকগঞ্জ।
কুমিল্লা- ফার্মগেট হয়ে –গাজিপুর বা টাংগাইল।
নরসিন্দি ঢাকা রুটটি হবে –
নরসিন্দি- শাহাবাগ হয়ে- দোহার বা গাজিপুর।
অনুরুপভাবে লোকাল সিটি সার্ভিস গুলো এর স্টার্টিং এবং এন্ডিং শহরতলির যতদুর সম্ভব শেষপ্রান্ত পর্যন্ত হতে হবে।
যেমন-
মোহম্মদপুর-মতিঝিল রুট টি হবে
পল্লবি-মহম্মদপুর-মতিঝিল হয়ে-তালতলা বা নারায়নগঞ্জ।
গুলশান-মতিঝিল রুটটি হবে-
টঙ্গি-গুলশান-মতিঝিল হয়ে-মেঘনা ব্রীজ।
এই ক্রাইটেরিয়া মেনে আমাদের ব্লগাররা এরচেয়েও কার্যকর বাসরুট প্রস্তাব তৈরি করতে পারবে বলে আমার ধারনা।
এতে শহরের মাঝে বাসগুলো বেশীক্ষন থাকতে পারবে না। বাস কম্পানির নিজস্য কাউন্টারে দুএক মিনিটের ভেতর যাত্রী উঠানামা করিয়ে বাকি গন্তব্যে চলে যাবে। এতে শহরের মাঝখানে বাসস্ট্যান্ড-বাসডিপো নামক ভোগান্তিও হবে না। শহরকেন্দ্রে থেমে থাকা বাসের আবর্জনা মুক্ত হবে। এতে নাটকীয় ভাবে মতিঝিল, গুলিস্তান, মোহম্মদপুর টাউনহল, ফুলবারীয়া এলাকার একটা বিশাল স্থান, বঙ্গভবন এলাকার ঢাকা প্রবেশমুখ, প্রভৃতি এলাকায় যানজট ৫০% হ্রাস পাবে বলে আমার ধারনা।
অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন কুমিল্লা বা মানিগঞ্জের বাসগুলি শহর কেন্দ্রে ঢুকলে যানজট বাড়তে পারে। আমার মনে হয় ব্যাপার টা অমুলক কারন কুমিল্লার একটি বাসের যাত্রীদের ঢাকার ভেতরে আনতে কমপক্ষে ৬ টি বলাকা, ট্রান্সসিল্ভা বা বিকল্প ছোট ধিরগতির বাস শহরে ঢুকতে হয়, সেই তো বাস ঢুকছেই। ধিরগতির বাসগুলিতে নামতে –উঠতে, অতিরিক্ত সময় থামাতে এবং যাত্রীদের অতিরিক্ত অর্থব্যায় কথা না হয় বাদই দিলাম।
আমি ঢাকার ভেতর কোন টার্মিনালই রাখতে চাচ্ছিনা।
টার্মিনালের নিয়ম-কানুন কাউকে মাননো যাচ্ছে না, সম্ভবও না-
নিয়ম অনুযায়ী কোন বাস টার্মিনালে থাকতে পারে না, সুধুমাত্র যাত্রা সুরুর কিছু আগে টার্মিনালে দাঁড়াতে পারে কাজ শেষে বাসটিকে নিজস্য যায়গায় রাখতে হবে, কিন্তু এই আইন কেউ কোন দিন মেনেছে কি না সন্দেহ।
বাস্তবে এটা অসম্ভব, ঢাকার ভেতর এতবড় নিজস্য স্থান পাবে কৈ.? সুতরাং বদ্ধ আস্তানা হয়ে গেছে টারমিনালগুলো, আসেপাসের রাস্তাও দখল।
গাবতলি বলেন আর সাইদাবাদই বলেন টারমিনাল ব্যাবস্থা অকার্যকর হয়ে আছে শূরু থেকেই।
প্রতিষ্ঠিত বাস কম্পানি গুলো টার্মিনাল ব্যাবহার করছেনা সঙ্গত কারনেই। কলাবাগান, আরামবাগ, শ্যামলি তে অফিস/কাউন্টার বানিয়ে, প্রয়জনে যাত্রীদের স্যাটেলাইট মিনিবাসে প্রধান কাউন্টারে নিয়ে সার্ভিস চালাচ্ছে।
একটি শহরে ২০% ভাগ রাস্তা থাকার কথা, আছে ৮%ভাগ, এই ৮ ভাগ রাস্তাকেই দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে সর্বচ্চ সুবিধা আদায় করতে হবে।
আমি জানি বাস রুট গুলো এভাবে ঢেলে সাজানো হলে সরকার দলীয় একটি গোষ্ঠির কোটি টাকার অবৈধ রুজি বন্ধ হয়েযাবে এম্পি-মেয়র, পুলিশ-মাস্তান নিয়ন্ত্রিত একটি চাঁদাবাজ গোষ্ঠির তীব্র বাধার সম্মুখিন হতে হবে।
এখন সময় এসেছে ভাবার, সরকার কি চাঁদাবাজদের স্বার্থ দেখবে না জনগনের।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:০৪