somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মগজ

২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিজের মাথার ভেতর মগজ খুঁজে পাচ্ছে না সে। অস্থির হয়ে বিদিশার মতো হাতড়ে বেড়াচ্ছে সারা রাস্তা। একবার এদিকে, একবার সেদিকে ছুটছে। মাটিতে উবু হয়ে শুয়ে পড়ে শুকে দেখছে। তারপর দু’হাতে চেপে ধরছে মাথা।
এক আগন্তুক এলো তখন। সারা গায়ে একটা মাত্র শতচ্ছিন্ন লুঙ্গী তার। আগন্তুক এসেই লোকটার পেটে লাথি মারল জোড়ে। লাথি খেয়ে সে কুঁকড়ে ছোট হয়ে গেল। কাঁদতে লাগল হাউমাউ করে। আগন্তুক জিজ্ঞেস করল-“কি খুঁজতাছিস হারামজাদা?”
লোকটার চোখে পানি চলে এলো। ফিনকি দিয়ে তা পড়তে লাগল রাস্তায়। খসখসে গলায় সে বলল-
“আমার মাথায় মগজ নেই ভাই। মগজ খুঁজে পাচ্ছি না। খুপরির ভেতরটা বড্ড ফাঁকা লাগছে। কোথায় পড়ে গেল খুঁজে পাচ্ছি না।”
আগন্তুক হেঁ হেঁ করে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে লুঙ্গী কাছা মেরে নাচতে লাগল পাগলের মতো। সুর করে পড়তে লাগল-
“মগজ মগজ ডাক পারি,
মগজ গেল কার বাড়ি।
আমার মগজ কোথায় যায়?
কুকুর নাকি শেয়াল খায়!”
মগজবিহীন লোকটা আগন্তুকের দিকে তাকাল বিস্মিত হয়ে; জন্তু যেমন জন্তুকে দেখে, সেই দৃষ্টিতে। আগন্তুক চার হাত পায়ে ভর দিয়ে উবু হয়ে বসে লোকটার দিকে তাকাল। তারপর ফিসফিস করে বলল-
“কি হইল? মগজ পইড়া গেলে গেছে গা। এত খুঁজস ক্যান? মগজ ছাড়াই তো বাঁইচ্যা আছস।”
“খুলিটা যে খুব যে ফাঁকা ফাঁকা ফাঁকা লাগে ভাই।”
“হুম, মগজ কাউরে ধার দিছিলি?”
“না ভাই, কাউকে ধার দিইনি।”
“মগজ খুইলা রাইখা কোথাও গেছিলি?”
“না তো!”
“তাইলে গরম পানিতে ফুটাইয়া সেদ্ধ কইরা নিজের মগজ নিজে খাইয়া ফালাস নাই তো? হেঁ হেঁ হেঁ!”
আগন্তুক ঘোড়ার মতো লাফাতে লাগল চার হাত পা দিয়ে। হাসির দমকে তার সারা শরীর কেঁপে উঠল। পশুর দৃষ্টিতে তাকে দেখতে লাগল মগজবিহীন লোকটা।
একটু শান্ত হয়ে সে জিজ্ঞেস করল-“মগজ দিয়া কি করতি তুই?”
“চিন্তা করতাম ভাই।”
“কিসের চিন্তা?”
“কত চিন্তা! দুনিয়াদারিতে কত কিছু আছে। সব নিয়ে চিন্তা করতাম?”
“চিন্তা করতে গিয়া মাথা গরম হইত?”
“হতো ভাই।”
“কেন হইতো বলতো?”
“চিন্তা করতে করতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যেত তাই। অক্সিজেনের অভাবে এমন হতো। গ্লুকোজ খেলে ঠিক হয়ে যেত।”
“সাইন্স কপচাবি না। অন্য কিছু জানলে বল।”
“অন্য কিছু জানি না ভাই।”
“আমি জানি। আসলে তুই যখন চিন্তা করতি, তখন তোর মগজ একটু একটু কইরা গরম হইত, একটু একটু কইরা বাষ্প হইয়া উইড়া যাইত। প্রতিদিন তুই চিন্তা করতি, প্রতিদিন তোর মস্তিষ্ক বাতাস হইয়া কান দিয়া ধোঁয়া হইয়া বাইর হইয়া যাইত। এখন তাই তোর কোন মগজ নাই। সব মগজে বাতাসে উইড়া গেছে গা।”
লোকটা এবার পাগলের হাসি হাসল না, নাচল না, চুপচাপ পশুর মতো তাকিয়ে থাকল মগজবিহীন লোকটার দিকে।
মগজবিহীন লোকটির খুলিতে থাকা মগজের উচ্ছিষ্ট তখন পুড়তে শুরু করল তখন। দেখতে দেখতে আগুন ধরে গেল তার মাথায়। চুলগুলো জ্বলে জ্বলে পুড়তে লাগল ভীষণভাবে। আগন্তুকের কাছা দেয়া লুঙ্গীতেও লেগে গেল আগুন। দেখতে দেখতে দু’জন বাতাসে মিলিয়ে গেল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×