somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরিয়া ভ্রমণের সুযোগে চীন দেখা: ঘুমহীন গুয়াংজু (পর্ব ২)

২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। যাবার পথে যত দুর্দশা, আসার পথে তার প্রায় কিছুই পাই নি। প্রধান কারণ, অভিজ্ঞতা! তবে এবার কয়েকটি মজার বিষয় পেলাম। সেগুলো একে একে বলছি। বিমান থেকে নেমে বাসে করে এরাইভাল লাইনে এসে যুক্ত হলাম। ‘আমি ইংরেজি জানি’ লেখা একটি চেস্ট প্লেইট গায়ে লাগিয়ে এক চীনা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একদম নাক বরাবর! ‘ট্রান্সফার প্যাজেন্জার?’ শব্দগুলো উচ্চারণ করায় এবং পেছনের ডেস্কে ‘চাইনা চাউদার্ন’ দেখতে পাওয়ায় আর বুঝতে বাকি রইল না যে, এবার ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছেছি। ভদ্র মহিলা প্রত্যেকের গায়ে ‘১৪’ নম্বরের একটি করে স্টিকার লাগিয়ে দিলেন। নম্বরের অর্থ যা-ই হোক, তাতে আমরা স্পেশাল যাত্রী হিসেবে চিহ্নিত হলাম। অতএব কোন ঝামেলা ছাড়াই একদিনের চিনা ভিজা নিয়ে এবার হোটেলে যাবার বন্দোবস্ত হয়ে গেলো।

ফেরার পথে অনেক বাঙালি যাত্রীর মধ্যে ‘মনসুর’ নামের একজনকে পেলাম। বাড়ি তার মুন্সিগঞ্জ। বিশাল আকৃতির ব্যাকপ্যাকসহ অতিরিক্ত আরও একটি ব্যাগ তার হাতে দেখে সঙ্গত কারণেই জিজ্ঞেস করলাম, কেন বিমানে পাঠালেন না। উত্তর এলো, বিমানে আর কত দেওয়া যায়? বুঝা যাচ্ছে অনেক দিন ধরে কোরিয়ায় শ্রম বিক্রি করছেন। পরিশ্রমী দেহ দেখে শ্রদ্ধায় মন ভরে গেলো। একই ফ্লাইটের যাত্রী হওয়ায় হোটেল ভাউচারে আমাদের নামের পাশে তার নামও পেলাম। নামটি বেশ কৌতূহল-উদ্দীপক: ‘কিম মনসুর’! মিস্টার কিম একই হোটেলে থেকেছেন। একই প্রক্রিয়ায় হোটেলে আসা। তবে ভিন্ন হোটেলে।

দুপুরে এসে গুয়াংজু পৌঁছালেও চেক-ইন করে হোটেল রুমে যাওয়া এবং গোসল ও পোশাকাচ্ছাদন বাবদ সাড়ে চারটা লেগে গেলো। তপ্ত আবহাওয়া। দুঃসহ। যেমন গরম, তেমনি আর্দ্রতা। বাংলাদেশের গরমকে হার মানায়। কোরিয়া, বিমান, গাড়ি, হোটেল – কোথাও এরকম গরমের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে নি। যা হোক, বের হয়েছি ডাবল উদ্দেশ্য নিয়ে: ডিনার এবং চীন পরিদর্শন। এবার স্বস্তি একটু বেশি। যাবার পথে দেশের বিমানবন্দরেই অপ্রত্যাশিত ট্যাক্স-এ ১০০ আরএনবি হারিয়েছিলাম। অবশিষ্ট ছিলো মাত্র ৮৭ আরএনবি। সঙ্গে ছিলো একজন সহযাত্রী দেশি ভাই। বিদেশের মাটিতে অর্থাভাবের সাথে যুক্ত হয়েছিলো ক্ষুধা। এবার সাথে আছে পর্যাপ্ত চীনা মুদ্রা। তাছাড়া সঙ্গের ক্রেডিট কার্ডটিও এতদিনে ‘প্রাণ’ পেয়েছে। অতএব বিপদের নেই কোন ভয়।

ম্যাকডোনাল্ডস চীনে চিকেন স্ক্যান্ডালে পড়ার প্রেক্ষাপটে কেএফসিতে স্বাভাবিক ব্যস্ততা কম। আমার আবার চিকেনে কোন অভুক্তি নেই। সন্দেহও থাকার কোন ফুরসত আমার ছিলো না। এর প্রধান কারণ, গুয়াংজুতে খাবারের আর কোন বিকল্প না থাকা। টার্কি আকৃতির চিকেন পেলাম এক বাটি আঁঠালো সাদা ভাতের সাথে। কেএফসিতে সন্তুষ্টি নিয়েই খেলাম মাত্র ৫০ আরএনবি (৬৫০ টাকা) দিয়ে। বেড়িয়ে পড়লাম গুয়াংজু দর্শনে।



গুয়াংজু একটি উপ-প্রাদেশিক শহর যেটি ক্যানটন নামে অধিক পরিচিত। মূল প্রদেশের নাম গুয়াংডং। পূর্বদিকে চিনের মধ্যভাগে এর অবস্থান। হংকং থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত গুয়াংজু চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক বন্দর। এই শহরেই প্রতি বছর আয়োজিত হয় চীনের প্রধান বাণিজ্যমেলা ক্যান্টন ফেয়ার। ৭ হাজার ৪ শ’ বর্গকিলোমিটারের শহরটিতে প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ লোকের বসবাস।

গুয়াংজুর যে এলাকাটিতে আমি ওঠেছি সেটি অপেক্ষাকৃত কম জনবহুল। পরিচ্ছন্নতা ঢাকার চেয়ে উত্তম নয়, তা রাস্তাঘাট এবং মার্কেটের সামনে জমে থাকা আবর্জনা দেখে বুঝতে পারলাম। কাঁচাবাজারের অবস্থা মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটের মতোই পরিষ্কার! ফলগুলোই কেবল কিছুটা অপরিচিত। মাংস খণ্ড দেখে অনেক চেষ্টা করেও বুঝতে পারলাম না, ওগুলো আসলে কিসের মাংস! রেস্টুরেন্ট হলে হয়তো ইশারা করে জানা যেতো। কেনাকাটার স্বভাব, পরিচ্ছদ এবং বাহন দেখে অধিকাংশ অধিবাসীকে মধ্য এবং নিম্নবিত্তের মাঝামাঝি অবস্থানের মনে হলো। প্রত্যেকের আছে একটি সাইকেলের মতো মোটর-বাইক। হাতে-তৈরি গাড়ির মতোই মনে হলো।



সময় পেলে আরও লেখার ইচ্ছা আছে। লেখার অনেক কিছু থাকলেও আপাতত ছবি দিয়ে শেষ করছি:


(গুয়াংজু বিমান বন্দরে নেমে বাসে করে যাচ্ছি এরাইভাল লাউন্জে)


(চীনের কেএফসিতে স্টাফগুলো নীলবর্ণের! বাংলাদেশে লাল/লালছে।)


(লে জিয়া সুপারমার্কেটের সামনে। ছুটির আমেজ, নাকি এমনিতেই মানুষ কম নিশ্চিত হতে পারলাম না।


(ফলের দোকান)


(ওভারব্রিজ থেকে নির্মাণাধীন বিল্ডিং।)




(ওভারব্রিজ থেকে সন্ধার গুয়াংজু)


(চীনের ঐতিহ্যবাহী চায়ের দোকান। হরেক রকমের চা। বিভিন্ন রোগের নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন রকমের চা। আমি খেলাম ক্লান্তি দূর করা ও মাথা সতেজ করার চা। এতে কিন্তু দুধ বা চিনি জাতীয় কিছু নেই।)


*পূর্বের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:০০
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×