somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদ্যালয় আমারে শিক্ষিত হতে দিলো না...

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১) আজকাল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আমাদের মাননীয় মন্ত্রী-সচিবরা যেভাবে দৌড়াদৌড়ি করেন, তাতে প্রশ্ন জাগে: আসলে পরীক্ষা কারা দিচ্ছে আর কারা পাশ করছে। আমার স্কুল জীবনের এক বন্ধু মেট্রিকের টেস্ট পরীক্ষায় গণিতে ফেল করে হৃদয় উজাড় করে প্রধানশিক্ষকের কাছে অনুরোধ করেছিল, যেন তাকে একটিবার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের সুনামে অতিরিক্ত যত্ন্শীল প্রধানশিক্ষক সে অনুরোধে কর্ণপাত করলেন না। “আমার বিদ্যার্জন এখানেই শেষ” বলে সেই যে বিদ্যালয় ছাড়লো, আর তাকে দেখা যায় নি বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায়। এইচএসসি’র প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফলে নিজের নাম না দেখে “আমার আর বাড়ি যাওয়া হলো না রে!” বলে আমার এক সহকর্মীর আদরের সন্তান আত্মহত্যা করে। তথাকথিত ভালো ছাত্র হয়েও শুধুমাত্র জিপিএ-৫ না পাওয়ার কারণে আত্মহত্যা করে আমাদের এই প্রিয় স্বদেশে।



উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া শিক্ষাব্যবস্থায় পরিচালিত আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে এভাবে কত জীবন নষ্ট করছে কে জানে। পরিস্থিতিটি এরকম দাঁড়িয়েছে যে, “তুমি যদি শিক্ষিত হতে চাও, তবে তোমাকে পাশ করতে হবে।” আমাকে পাশ করতে হবে গণিত ইংরেজি ভূগোল বিজ্ঞান ইতিহাস পৌরনীতিতে। আমার কিসে আগ্রহ, আমার কিসে ঝোঁক বা আমি কী বিষয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই সেটা এখানে বিবেচ্য নয়। “আগে পাশ দাও, পরে যা-খুশি হও, অথবা না হও।”



পাবলিক বাসে বসলে অনেক মজার কথপোকথন শুনা যায়। দুই সহযাত্রী আমার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন:
-ভাবছি একটা মাস্টার্স ডিগ্রি নিতেই হবে। শ্বশুরবাড়িতে মুখ দেখাতে পারছি না।
-তা কোন বিষয়ে আপনি মাস্টার্স করতে চান? অন্যজনের জিজ্ঞাসা।
-আমি তো বাণিজ্যে স্নাতক করেছি, কিন্তু বাণিজ্যের কোন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার ধৈর্য্য এখন আমার নেই। তাই বাংলা অথবা ইসলামের ইতিহাসে পড়তে পারি।

এথেকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তথা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কেমন ধারণা হয়?



২) স্যুটেট-বুটেড ব্যক্তিটি যখন তার বিএমডাব্লিউ’র জানালা দিয়ে পরিচ্ছন্ন রাস্তায় খালি বোতল বা সিগারেটের প্যাকেট ফেলে দিয়ে গাড়ি হাঁকে, তখন কি তাকে শিক্ষিত মনে হয়? পথচারিকে ধোয়াচ্ছন্ন করে দিয়ে কালো সানগ্লাস পরিহিত ব্যক্তিটি যখন সিগারেট ফুঁকে, তখন কি মনে হয় সে শিক্ষিত? মাত্র পাঁচটি টাকার জন্য আমরা যখন একজন খেটে-খাওয়া রিক্সাওয়ালার গায়ে হাত তুলি, তখন কি মনে হয়, শিক্ষা আমাদেরকে কিছু করতে পেরেছে? শহরের অধিকাংশ মানুষই উচ্চশিক্ষিত, তারপরও কি গাড়িতে ওঠার সময় লাইনে দাঁড়াবার জন্য তাদেরকে ধমকাতে হয় না? যে সমাজে নারীর জন্য গাড়িতে আলাদা বরাদ্দ করে রাখতে হয়, এবং বাসের চেংড়া যাত্রীদেরকে আসনে বসিয়ে রেখে বয়স্ক নাগরিককে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সে সমাজের শিক্ষা যে কোন কাজের আসে নি, তা কি বলার অপেক্ষা রাখে?



প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান নিয়ে আলোচনা করতে খুব মজা পাই আমরা, কারন কিছু কিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান পাবলিক প্রতিষ্ঠানের চেয়েও ভাল হবার পরও অন্যান্যদের জন্য তারা গলা উঁচু করতে পারছে না। তাছাড়া তাদের আছে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা। অথচ দেশের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে স্নাতক পড়ার জন্য এবার মাত্র দু’জন ছাত্র কোয়ালিফাই করেছে। এটি কি শিক্ষার্থীর দুর্বলতা, নাকি শিক্ষা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বলা মুসকিল। আমার প্রশ্ন, আমাদের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি গুণগত মানের ক্ষেত্রে ‘গড়পরতা’ ওপরে ওঠতে পেরেছে? গড়পরতা সকলেই কি সনদপত্র বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান নয়?



৩) মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন (১৮৩৫-১৯১০) বলেছিলেন, “আমি কখনও আমার শিক্ষাকে বিদ্যালয় দ্বারা বাধাগ্রস্ত হতে দেই নি।” কমপিউটার জিনিয়াস বিল গেটসও খুব ভালো ছাত্র ছিলেন না। নিজের শিক্ষা সম্পর্কে হারবার্ড ড্রপআউট বিল গেটস এর একটি মজার উক্তি হলো এরকম: “গণিতে আমি খুবই কাঁচা ছিলাম কিন্তু আ্মার বন্ধু খুব ভালো ছিলেন গণিতে। বন্ধুটি বর্তমানে মাইক্রোসফটের একজন সেরা প্রকৌশলী আর আমি এর চেয়ারম্যান!”

বিখ্যাত কম্পিউটার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডেল’ এর মালিক মাইকেল ডেল কলেজে ওঠেই পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছিলেন কম্পিউটার বিক্রয়ের সময় বের করার জন্য।

কমপক্ষে ১০০০ প্রযুক্তির পেটেন্ট-এ্রর মালিক ও বিদ্যুতের আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসনের (১৮৪৭-১৯৩১) কথা কে না জানে! নিজ বিদ্যালয়ে ‘স্টুপিড’ বলে পরিচিত এই খ্যাতনামা বিজ্ঞানী মার খেতে খেতে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন।

স্বশিক্ষিত কিন্তু কীর্তিমান মনীষীদের তালিকাটি একেবারে ছোট নয়। তারা প্রমাণ করেছেন, সত্যিকার শিক্ষা শুধুই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্য নয়।

আমাদের নতুন শিক্ষানীতিতে অনেক বিষয়ই সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু পা্বলিক পরীক্ষার পাশের হারকে সরকারের কৃতীত্ব দেখানোর যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে, তাতে বিভ্রান্ত না হয়ে পারি না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেই আজ শিক্ষাবিস্তারের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুশিক্ষিত মানেই স্বশিক্ষিত। শিক্ষার্থীর স্বাধীনতাই শিক্ষা বিস্তারের প্রধান উপায়। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীর স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে তাদের স্বশিক্ষিত হবার সুযোগ। শিক্ষার্থীকে অবাধে তাদের পছন্দমতো শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ যদি না দেওয়া হয়, এবং সামগ্রিক শিক্ষার সাথে যদি নৈতিক শিক্ষাকে যুক্ত না করা হয়, তবে আমাদের বিদ্যালয়গুলোই হবে প্রকৃত শিক্ষাগ্রহণের প্রধান প্রতিবন্ধকতা। (০৮/১০/২০১২)



[অন্য একটি ব্লগ থেকে স্থানান্তরিত]


--------------------------------
একটি প্রাসঙ্গিক লেখা: “সাউথপোলার অথবা স্বশিক্ষিত ক্ষণজীবীরা
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×