somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ প্লাস

৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( আমার view this link পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়াতে নতুন আইডি দিয়ে পোস্ট করতে হলো ! )



সকাল থেকেই আরিয়ানের পেট তিরতির করে কাঁপছে। ঠিক সকাল থেকে নয় আসলে গতকাল রাত থেকেই পেটের ভিতর কাঁপছে এমন মনে হচ্ছে। গতরাতেই মনে পড়েছে পরদিন সকালেই ওর পিএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। এটা মনে পড়ার পর থেকেই ওর কেমন অস্থির লাগছিলো। কিন্তু টিভিতে কার্টুন আর ট্যাবে গেমস খেলতে গিয়ে রেজাল্টের অস্থিরতা কমেও গিয়েছিলো আর খিদেটাও লেগেছিলো বেশ জোরেশোরে। অন্যদিন ওর মা আর দাদী ওকে বলে বলেও খাবার টেবিলে বসাতে পারে না ওকে।কিন্তু গতকাল খাবার জন্য ডাক দেয়ার সাথে সাথে ও টেবিলে বসেছে। মাছ, সবজি খেতে ওর একেবারেই ভালো লাগে না। ইলিশ, চিংড়ি আর পাঙাশ মাছের ফ্রাই করে দিলেও তবু ও খেতে পারে কিন্তু ওর দাদী আর মা মিলে খালি ঝোল ঝোল করে তরকারী রান্না করে, আরিয়ানের খেতে বসলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ঘ্যানঘ্যান করছিলো বলে ওর মা ওকে একটা ডিম ভেজে এনে দিয়েছিলো। কিন্তু কয়েক নলা ভাত খাবার পর ওর মা ওর দাদীকে বলছিলো,

আম্মা দেখছেন, আপনার নাতির মাঝে কোনো টেনশন দেখেন? ওরে জিজ্ঞেস করেন তো ওর মনে আছে কিনা আগামীকাল যে ওর পিএসসির রেজাল্ট দিবে!

আরিয়ানের দাদী সবসময় ওর পক্ষ নিয়েই কথা বলে। তাই সালেহা বেগম বললেন -

কালকেরটা কালকে দেখা যাইবো। এহন খাইতে বসছে এইসব কথা কইলে পোলাটা খাইবো ক্যামনে? দাদু ভাই তুমি খাও। আল্লাহ্‌য় দিলে ভালো রেজাল্টই করবা।

সারাক্ষণ ওকে হইহল্লা করতে দেন, দেখবেন ননস্টপ তাই করবে। সারাবছর ওকে আমি কিছুই বলি নাই কিন্তু ফাইনাল এক্সামে যদি জিপিএ ফাইভ ও না পায়, তখন ওকে যে আমি কি করবো আমিই জানি। আপনি কিন্তু আম্মা আমাকে তখন আটকাতে আসবেন না।

আরিয়ানের মা সবসময়ই আরিয়ানকে এ কথা বলে, রেজাল্ট দিলে ওকে ধরবে, সব সাব্জেক্টে এ প্লাস না পেলে ডাল ঘুটনি দিয়ে পিটাবে, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিবে না হলে কিন্তু ওর মা কখনো ওকে মারেনি। সবসময়ই বলেছে যেটুকু পড়, বুঝে শুনে পড়। পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্ন কতো ধরণের হতে পারে, ঘুরিয়ে আসতে পারে সেগুলিও সবসময় ওকে বুঝিয়েছে। তারপরেও স্কুল আর কোচিং এর চূড়ান্ত মডেল টেস্টে কিছু উত্তর ও দিতে পারেনি। মার্কস কম এসেছে বাংলা আর সমাজে। যদিও আরিয়ান একটা টেকনিক করে, যেদিন পড়া ঠিক ভাবে শেখা হয় না বা পরীক্ষায় ভালো মার্কস আসে না ও নিজেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়, ওর মায়ের সামনে স্কেল নিয়ে গিয়ে বলে -
নাও মারো। আমি তো পচা স্টুডেন্ট!

কিন্তু আজকের ব্যাপারটা অন্যদিনের মতো না। সত্যিই আরিয়ানের খুব ভয় লাগছে আর কেমন বমি বমি পাচ্ছে। আজকে ও খুব চাচ্ছিলো ওর আব্বু আর আম্মু কেউই যাতে অফিসে না যায়। তারা বাসায় থাকলে ওর ভয়টা কমতো। আসলে নিজের রেজাল্ট যেমনই হোক না কেন ওর মামাতো ভাই সিয়াম যদি ওর চেয়ে ভালো রেজাল্ট করে বা বেশি পয়েন্ট পায় ওর আম্মু যে ওকে কি করবে সেটা ভাবলেই ওর ইচ্ছে করে বাসা থেকে পালিয়ে যেতে বা ছাদের ট্যাংকির পেছনে লুকিয়ে থাকতে। আব্বুকে নিয়ে সমস্যা নেই। আরিয়ানকে আব্বু সবসময় সাপোর্ট দেয় কিন্তু মাঝে মাঝে আম্মুর হৈচৈয়ের কারণে আব্বু চুপ থাকলেও আম্মু যখন বলতে থাকে আজকে ওকে আমি শাস্তি দিবোই তখন আব্বু মজার মজার শাস্তির আইডিয়া দেয়। কয়দিন আগে আরিয়ান যখন ওর ছোট ভাই রাবিকে জোরে ঘুসি মেরেছিল, তখন আম্মু আরিয়ানকে মারতে চেয়েছিল। আরিয়ান অনেকবার বলতে চেষ্টা করেছিলো রাবিকে ওর এতো জোরে মারার ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু কীভাবে যেন ঘুসিটা জোরে হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আরিয়ানইবা কি করবে, ও তো ইদানিং তরতর করে লম্বা হচ্ছে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মাসল চেক করে দেখেছে, গায়ে শক্তিও বেড়েছে আগের চেয়ে। ও আস্তে কিছু করতে চাইলেও সেটাতে একটা না একটা ভেজাল হয়ে যায়। ডাইনিং টেবিলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় অকারণেই হাতের ধাক্কায় গ্লাস উল্টে টেবিল থেকে পড়ে যায়, স্যান্ডেল পড়তে গেলে ফিতা ছিঁড়ে যায়, গেঞ্জি পড়তে গেলে গলার মুখটাও কেমন বড় বড় হয়ে যায়। ও বইতে পড়েছে বাচ্চাদের মাথা নাকি শরীরের চেয়ে বড় হয় দেড় থেকে দুই গুন কিন্তু ও তো আর এখন বাচ্চা নেই। ওর যে কেন সবকিছুতে এমন হয়ে যায়। আর আম্মু খালি বলতে থাকে -

দেখে শুনে চলতে পারো না? গরুর মতো চলাচল।

স্যান্ডেল এর ফিতা ছিঁড়ে যায় তাই বলে গরুর মতো পা। ওর পা বড় হলে ওর কি করার আছে। আম্মু খালি রাবিকেই আদর করে। অথচ রাবি যে কি দুষ্টু ওইটা যেন আম্মুর চোখেই পড়ে না। সেদিনও তো রাবি বাথরুমে ঢুকে বদনার ভেতর শ্যাম্পু মিশিয়ে পানি ভরে রেখেছিল। আরিয়ান ইচ্ছে করলেই পারতো আম্মুকে বলে ওকে মার খাওয়াতে কিন্তু সেটা ও করেনি। রাবিকে উৎসাহ দেয়ার জন্য বালতির পানিতে ও নিজেও শ্যাম্পু আর কাপড় ধোয়ার হুইল পাউডার মিশিয়ে অনেক ফেনা তুলে বুদবুদ বানিয়েছিল। পরে রাবিকে নিয়ে বাথরুমে পানি আর শ্যাম্পু-সাবানের পানি দিয়ে খেলতে খেলতে পিচ্ছিল ফ্লোরে পড়ে গিয়ে রাবি ব্যথা পাওয়াতে আম্মুর কাছে আরিয়ানকেই শেষ পর্যন্ত মার খেতে হয়েছিলো। কিন্তু রাবিরও মার খাওয়া দরকার ছিল, খেলাটাতো ওই শুরু করেছিলো প্রথম - এই কথাটাই ও অনেকবার বলতে চেয়েও কথা বলার সুযোগটাই পায়নি। এর আগেই রাবি কাঁদতে কাঁদতে আম্মুকে গিয়ে বলেছে -

আম্মু দেখো ভাইয়া আমার মাথায় আলু বানিয়ে দিয়েছে। এই দেখো ফুলে গিয়েছে বলে ওর মাথার চুল সরিয়ে আম্মুকে দেখিয়েছে। ফলাফল হিসেবে আম্মু ডাল ঘুটনি দিয়ে একটা বারি দিয়ে যখন ওর পায়ে আরেকটা বারি দিতে যাবে অমন সময়েই আব্বু সুপারম্যানের মতো এসে আম্মুকে বললো -

ফারহানা, শাস্তির ভারটা আমার উপরেই দাও। এক কাজ করা যাক, আরিয়ানকে শাস্তি হিসেবে বারান্দায় এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখি। টিভি দেখা বন্ধ থাকবে সে এক ঘণ্টা আর এই ঘণ্টায় ও যা যা ভেবেছে সেসব একটা খাতায় লিখে আব্বুকে দেখাতে হবে।

এতে মস্ত বড় এক টেনশন কেটে গিয়েছিলো আরিয়ানের। অন্তত মার তো খেতে হবে না। এজন্যই আব্বুকে আরিয়ানের এতো ভালো লাগে। আরিয়ানের এক ঘণ্টা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে একটুও খারাপ লাগেনি। রাস্তা দিয়ে কতো মানুষ যাওয়া আসা করে! সেসব দেখেই ওর সময় কেটে গিয়েছিলো। ওদের বাসার সামনের রাস্তায় বিকেলে ওরা ক্রিকেট খেলে। কিন্তু সেদিন ও নিজে খেলতে না পারলেও খেলা দেখেছে। ওদের গ্রুপে কয়েকজন বড় ভাইও খেলে, ওরা ক্লাস এইটে পড়ে। বড় ভাই গুলো অনেক পাজি, ওদের নিজেদের ব্যাট-বল নেই কিন্তু রোজ আরিয়ান, সিয়াম, নিপুদের ব্যাট দিয়েই খেলে আর ওদের ব্যাটিং এর সময় এমনভাবে তারা বোলিং করায় যে ওরা তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যায়, ফিল্ডিং মিস হলেই বকা দেয় -

আরে মিয়া তোমরা এতো ফাউল খেলো কেন! খালি ফিল্ডিং মিস করো। খেলার সময় চোখ কি আকাশে তুইলা রাখো!

ওরা এতো খারাপ খারাপ কথা বলে না! সেগুলো শুনলে আরিয়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে তো আরিয়ানদের ব্যাট বল রেখে ওদের এক্সট্রা ম্যান হিসেবে বসিয়ে রাখো। আম্মুকে বলেও লাভ হয়নি, আম্মুর একটাই কথা -

যাও কেন ওদের সাথে খেলতে। ছাদে গিয়ে খেলতে পারো না!

ছাদে খেলতে গেলেও সমস্যা, চার ছক্কা মারতে গেলে বল ছাদ থেকে নিচে গিয়ে পড়ে আর বারবার সে বল আনতে যাওয়াও সমস্যা। ওর মামাতো ভাই সিয়াম অনেক ফাঁকিবাজ, একবার দুইবার বল আনার পর বলে -

না ভাই আমি আর আনতে পারবো না বল। আমি ঘেমে যাই উপর নিচ দৌড়ালে। জামা কাপড় নষ্ট হলে আম্মু মারবে।

সিয়ামকে বেশি চাপ দিলে ও আর খেলতে চাইবে না আর রাবি বেশি ছোট , ওর সাথে খেলে আরাম পায় না আরিয়ান। ওর মন মতো কিছু না হলেই আম্মু আম্মু করে আর অকারণেই অন্যায্যভাবে আরিয়ানকেই মার খেতে হয় সবসময়।

টিভিতে আজ নিউজ চ্যানেলের স্ক্রলে দেখেছে শিক্ষামন্ত্রী দুপুর সাড়ে বারোটায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পিএসসি আর জেএসসি পরীক্ষার ফলাফল দিবে। আরিয়ান ঠিক কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে বারোটাতেই ওর আম্মুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছে রেজাল্ট দিয়েছে কিনা। আব্বুও বাসায় ফোন করে জানিয়েছে ইন্টারনেটেও এখন রেজাল্ট আসেনি। দুপুর দুইটা বাজবে রেজাল্ট আসতে, আরিয়ান যেন টেনশন না করে আর অস্থির না হয়। আব্বু তো এই কথা বলেই শেষ, ওর টেনশন আব্বু কি বুঝবে! আব্বুর সময় তো আর এরকম পিএসসির মতো এক্সাম ছিল না। আজ আরিয়ানের টিভি দেখার অনেক সুযোগ থাকার পরেও ওর টিভি দেখতে ইচ্ছে করছে না। অন্যদিন দাদীর সাথে টিভি দেখা নিয়ে ওর অনেক ঝগড়া হয়। দাদী খালি পচা পচা অনুষ্ঠান দেখে। দিদি নাম্বার ওয়ান, পাখি, সাত্যকির নাটক, এই চ্যানেল সেই চ্যানেল দেখতে দেখতে আরিয়ানকে সময়মতো কোনো স্পোর্টস চ্যানেলই দেখতে দেয় না। আরিয়ান জোর করে রিমোট নিলে দাদী আবার আম্মু অফিস থেকে বাসায় আসলে বলে দেয় আরিয়ান সারাদিন বাসায় থাকলে কি কি দুষ্টুমি করে। সেদিনও দাদী ওকে বার্সিলোনার খেলা দেখতে দেয়নি। নেইমার ওর প্রিয় খেলোয়াড়। আব্বুকে বলে ও ওর চুলের কাট নেইমারের মতোও করিয়েছে। একটু কালার করাতে পারলে ওর ইচ্ছে পূরণ হতো কিন্তু আব্বু বলেছে বড় হলে আরও স্টাইলিস করে দিবে, বাচ্চাদের এভাবে করতে হয় না। ও আসলে দাদীর ব্যাপারটা বোঝে না। এমনিতে আম্মু ওর সাথে রাগারাগি করলে বা মার দিলে দাদী ওর সাপোর্ট নিয়ে কথা বলে, ওর পছন্দের খাবার বানিয়ে খাওয়ায় কিন্তু এরপরেও দাদীর সাথে ওর টিভি দেখা নিয়ে ঝগড়া হলে আম্মুকে দাদী নালিশ করে। বড়রা কেন যেন একেক সময় একেক আচরণ করে। ব্যাপারটা ওর কাছে ভীষণ অবাক লাগে। সময় করে ও ভেবেছে ওর আব্বুর সাথে এ ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলবে। রাবিকে কোনো খেলনা বা খাবার না দিলে আম্মু ঠিকই বলে -

তুমি না ওর বড় ভাই! ওকে কেন দিচ্ছো না ? আবার যখন আরিয়ান রেসলিং খেলা দেখতে চায় তখন আম্মু বলে -- ছোটদের এসব খেলা দেখতে হয় না! সবসময় বড়দের কাছে সুবিধা অনুযায়ী বড় বা ছোট হবার ঝামেলা থেকে যে আরিয়ান কবে মুক্তি পাবে সে অপেক্ষাতেই ও আছে।

রেজাল্টের টেনশনে পেট ব্যথা মুচড়ে মুচড়ে জানান দিচ্ছে আরিয়ানকে। এর মাঝেই তিনবার ও টয়লেট থেকে ঘুরে এসেছে। আসলে এতোটা টেনশন ওর হতো না। ওর মামাতো ভাই সিয়ামটা এসে ওর টেনশন বাড়িয়ে দিয়েছে। সিয়ামরা ওদের পাশের বিল্ডিং এ থাকে। সারাদিনে সিয়াম আরিয়ান একজনের বাসায় আরেকজন যাওয়া আসার মাঝেই থাকে। যেদিন ওদের অংক পরীক্ষা হয়েছিলো, পরীক্ষা শেষে সিয়াম বলেছিলো অংকে এ প্লাস কেউ ঠেকাতে পারবে না, পঁচানব্বইয়ের উপরে তো পাবেই আর চোখ বন্ধ করে জিপিএ ফাইভ আসবে। আরিয়ান নিজেও জানে সিয়াম পড়াশুনায় ভালো কিন্তু এমন করে বাজি ধরে সিয়াম যখন কথা বলে তখন সত্যিই নিজের আত্মবিশ্বাসটা ওর কমে যেতে থাকে। অংক নিয়ে আরিয়ানের দুর্বলতা আছে সেটা ও জানে কিন্তু ইদানিং সিয়াম বেশি বেশি ঝাড়ি মেরে কথা বলছে সেটাও ওর ঠিক পছন্দ না। তাই আরিয়ানও বলেছিলো -

আমি জিপিএ ফাইভ না পেলেও অংকে আমি এ প্লাস পাবোই। কারো ঠেকানোর ক্ষমতা নেই। হুহ্‌

কিন্তু আজকে সকালে এসেও সিয়াম ওদের বাসায় কিছুক্ষণ ঘুরে গেছে। ওকে চুপচাপ দেখে জিজ্ঞেসও করেছে -

তোমার কি হয়েছে আরিয়ান? ফুপি কি রেজাল্ট হবার আগেই ধোলাই দিয়ে গেছে? বলে খ্যাকখ্যাক শব্দ করে হাসছিলো ।

সকালে খেতেও পারেনি। ওর আম্মু পাস্তা রান্না করেছিলো টুনা মাছ দিয়ে। এই আইটেমটা আরিয়ানের খুব প্রিয়। সেই পাস্তাও ও খেতে পারেনি। একে তো পেতে খিদে, রেজাল্টের টেনশন আরিয়ানের মেজাজটাই খারাপ হয়ে যাওয়াতে সিয়ামকে ও ধমকেই বললো -

বেশি লাফিও না। নিজের চিন্তা করো।

আমি কি তোমার মতো অংকে ডাল মাথা নাকি যে টেনশনে হাতের নখ কামড়ে খেয়ে ফেলবো, চেহারা কালো বানিয়ে রাখবো !

বেশি কথা বলো না তো সিয়াম। বাসায় যাও ।

হুম যাচ্ছি, সন্ধ্যায় বড় বড় রসগোল্লা নিয়েই আসবো তোমাদের বাসায়।

ওর কথা শুনলে আরিয়ানের রাগে গা চিড়বিড় চিড়বিড় করে। বেশি পাকামি করে সবসময় আর সবকিছুতে লিডার হতে চায়। ইচ্ছা করে এক থাপ্পড়ে ওর মাথা ঘুরিয়ে দিতে কিন্তু মারামারি করার ইচ্ছে ওর নেই বলে সিয়ামকে মারে না। ওর কথার উত্তরে আরিয়ানও বলে -

আইসো। আমরাও তোমাদের বাসায় ছানা আর রসমালাই নিয়ে যাবো।

কি ফেলের মিষ্টি আনবা ? বলেই সিয়াম দৌড় দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়।

আরিয়ানও ওর পেছন পেছন তাড়া করে সিঁড়ির কাছে এসে বলে - তুমি একটা শয়তান ছেলে।

এই সিয়ামটা যে কবে ওর হাতে মার খাবে ঠিক নেই। সিয়ামের আম্মু কলেজে পড়ায়। ওই কলেজটা কলেজও স্কুলও আর ওই স্কুলেই সিয়াম পড়ে। এবার ও শুনেছে ওদের পিএসসির প্রশ্ন নাকি ফাঁস হয়েছে, পরীক্ষার সেন্টারে অনেকেই বলেছে প্রশ্ন ওরাও পেয়েছে আর বলেছে চোখ বন্ধ করে এ প্লাস পাবে। সিয়ামটা প্রশ্ন পেয়েছিলো কিনা কে জানে। পেলে পেতেও পারে, ওর আম্মু তো টিচার। ও যে চালাক ওর পেট থেকে একটা কথা বের করা যায় না। তবুও ওকে জিজ্ঞেস করাতে ও বলেছিলো -

সারাবছর কি এমনি এমনি পড়েছি ? আমি ফাঁস করা প্রশ্ন পড়ি না।

ওর খুব অবাক লাগে প্রশ্ন আসলে ইন্টারনেটের কোথায় ফাঁস হয়! ইন্টারনেট বলতে ও আব্বু আম্মুর ডেক্সটপকেই বোঝে কিন্তু কম্পিউটারের কোথায় যে প্রশ্নটা ফাঁস হয় ও বুঝে উঠতে পারছে না। ওর আম্মুর পরিচিত অনেকেই হয়তো এসব নিয়ে আম্মুর সাথে কথা বলেছে, ও ফোনে কথা বলার সময় শুনেছে আম্মু বলছিলো -

আরে ভাবী কি বলেন ! প্রশ্ন আবার কোথায় পাবো! সারাবছর কোচিং এ পড়ালাম , স্কুলে পড়ালাম, অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে ছেলেকে পড়িয়েছি। এখন এসব প্রশ্ন পেলেই কি আর না পেলেই কি!

আরিয়ানের আব্বুও আরিয়ানকে বলেছে - এভাবে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পেয়ে পড়াশুনা করায় কিংবা জিপিএ ফাইভ পাওয়ায় কোনো কৃতিত্ব নেই।

কিন্তু অংকটা নিয়েই ওর যত ভয়। এই প্রশ্ন ফাঁস ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলে আরিয়ানের খুব রাগ লাগে। ওদের ক্লাসের যে স্টুডেন্টগুলো ঠিক ভাবে ক্লাসে পড়া পারতো না, ক্লাসে টিচারের শাস্তি পেতো, দুই এক সাবজেক্টে ফেল করতো ওরাও পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে ভি সাইন দেখাচ্ছিলো। সারাবছর আরিয়ান কষ্ট করে পড়েছে, পুরো বই কয়েকবার শেষ করেছে, ওর বন্ধুরাও ভালো ভাবে পড়েছে কিন্তু খারাপ স্টুডেন্টগুলো সারা বছর না পড়েও এখন ওরাও কেন ভালো নাম্বার পাবে, জিপিএ ফাইভ পাবে এই ব্যাপারটাই মানতে পারে না ও। যারা এভাবে প্রশ্ন ফাঁস করে দেয় তাদেরকে পেলে ও খুব করে বকে দিতো কিংবা শাস্তি দেয়াতো। কিন্তু দুপুর দেড়টা পেরিয়ে গেছে এখনো ওর আম্মু কেন ওকে ফোন দিচ্ছে না ভাবতে ভাবতে আরিয়ান অস্থির হয়ে এঘরে ওঘরে হাঁটতে থাকে। মনে মনে সুরা পড়তে থাকে এ যাবত যা যা শিখেছিলো। ওর কেমন ঘুম ঘুমও পাচ্ছে। মনে হচ্ছে অনেক লম্বা সময় ধরে ও জেগে আছে কিংবা অপেক্ষা করছে। অনেক ক্লান্তও লাগছে ওর। এরমাঝেই হঠাৎ করে ওর কানে এলো ল্যান্ড ফোনটা বাজছে। ও দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরে।

আম্মু! আম্মু আমার রেজাল্ট কি ? পেয়েছ? আম্মু জোরে বলো আমি শুনতে পাচ্ছি না! উত্তেজনায় আরিয়ানের বুক ধুকপুক করে কাঁপছে। ওর আম্মু যে ওকে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে ফোন করেছে কে জানে! ও কিছুই শুনতে পাচ্ছে না আশেপাশে গাড়ির সাউন্ড ছাড়া।

আম্মু শুনতে পাচ্ছো ?

আরিয়ান তুমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছ। শুনছো আরিয়ান!

আরিয়ানের বিশ্বাস হতে চায় না সত্যিই ও জিপিএ ফাইভ পেয়েছে! আম্মু সত্যি বলছো ? তুমি নিজে দেখেছো? আম্মু আমি ম্যাথে কতো পেয়েছি?

হ্যা আরিয়ান সত্যিই পেয়েছ জিপিএ ফাইভ। হ্যালো আরিয়ান... আরিয়ান ...

আরিয়ানের কেন যেন খুব কান্না পেতে থাকে। মনে হচ্ছে ওর হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে ওর আম্মু ওকে বলেই যাচ্ছে - আরে বোকা ছেলে কাঁদছ কেন? আজকের দিনে কাঁদতে আছে? হ্যালো আরিয়ান... আমি বাসায় আসছি এখনি।

আরিয়ানের খুব আনন্দের দিন আজকে। একবার মনে হচ্ছে ও আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে, আরেকবার ওর কান্না পাচ্ছে, মনে হচ্ছে ও খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছে। আব্বু আম্মু এই মুহূর্তে যদি ওর কাছে থাকতো তাদের জড়িয়ে ধরে থাকতো ও। ওর ভেতরটা ভালো লাগায়, আনন্দে কেমন যেন থেকে থেকে কেঁপে উঠছে!

সমাপ্ত



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৯
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×