somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথের বংশ পরিচয়ের গল্প(গাজাখুড়ি নয়)

১০ ই মে, ২০১১ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশ ও শিকড় সম্পর্কে সুনীল গংগোপধ্যায়ের "সেই সময়" উপন্যাসে গল্প আছে মজার তবে গাজাখুড়ি নয়।রবীঠাকুরের পরিবার কলকাতার সবচেয়ে প্রাচীন ব্রাক্ষ্মণ পরিবার।তাদের পূর্বপুরুষদের বলা হত "পীরালীর বামুন"।কারন তাদের পরিবারের সাথে একজন মুসলমান পরগনাদারের নাম যুক্ত আছে।

যশোরের সেনাপতি খান জাহান আলীর জনৈক হিন্দু কর্মচারীর(নাম জানা যায় নি) গভীর প্রনয় হয়েছিল এক মুসলিম নারীর সাথে।তাকে বিয়ে করায় কর্মচারীটির জাত যায় এবং সে মুসলীম হতে বাধ্য হয়।কর্মচারীটির জন্ম পশ্চীমবংগের নবদ্বীপের পিরল্যা গ্রামে ছিল বলে পরে তার মুসলামানী নাম হয় পীর আলী।যদিও মুসলমান হবার পর তার খাতা কলমে নাম ছিল মামুদ তাহির।তবু তিনি পীর আলী নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন(কারণ তখনকার দিনে বাংগালীদের নামের সাথে পদবীর বদলে গোত্র ও গ্রামের নাম যুক্ত থাকার রেওয়াজ ছিল।গ্রামের নাম যেহেতু ছিল পিড়ল্যা তাই লোকমুখে বলতে ভলটে হয়ে গেল পীর আলী)।এই পীর আলীকে খান জাহান আলী ভালবেসে "চেঙ্গুঠিয়া"নামে একটি পরগনা মুসলীম হওয়ার পুরস্কারসরূপ দান করেন।পরগনাদার হিসেবে তিনি বেশ খ্যাতি কুড়ান।

কামদেব ও জয়দেব নামে দুই দেওয়ান কাজ করত তার পরগনায়।তারা একদিন এক ভয়ানক রসিকতা করে বসল পীর আলীর সাথে।রোজার মাস।রোজাদার পীর আলীর হাতে ছিল একটি গন্ধ লেবু,মাঝে মাঝে তিনি তা শুকছেন এবং সবার সাথে কথা বলছেন।এমন সময় জয়দেব ও কামদেবের মাঝে কেউ ১জন বলল,"উজির সাহেব,আপনার আজকের রোজা তো ভংগ হয়ে গেল।"
পীর আলী বিষয়টি জানতেন না।অবাক পীরকে তখন ব্যাখ্যা দেয়া হল ঘটনার।শাস্ত্রমতে,"ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনম্"মানে গন্ধেই আহার হয়।তাই রোজা হল না।

চালাক পীর আলী কামদেব ও জয়দেবকে জব্দ করার জন্য এক কৌশল নিলেন।একদিন পীর আলী দরবারে ভু হিন্দুকে নিমন্ত্রন করলেন।কথাবার্তার এক ফাকে ভৃত্তকে ইসারা করলেন।একটু পরই দরবার কক্ষে আনা হল কয়েকটি জলন্ত উনুন।উনুনের উপর কড়াইতে গরুরমাংস রান্না হচ্ছে।গরুর মাংসের গন্ধ পেয়ে অনেক হিন্দু নাকে কাপড় দিলেন,সভা ছেড়ে পালালেন,কিন্তু পীর আলী চেপে ধরলেন কামদেব আর জয়দেবকে।বললেন"তোমরা পালাচ্ছ কেন?শাস্ত্র মতে তোমাদের ও অর্ধ ভোজন হয়েছে।এবং সে অনুযায়ী তোমাদেরও জাত গ্যাছে।"

ধর্মান্তরিত হবার পরে তাদের নাম হল জামালউদ্দীন ও কামালউদ্দীন।কিন্তু ধর্মান্তরিত হবার পরও তৎকালীন রক্ষনশীল ও কড়া হিন্দু সমাজের হাত থেকে তাদের আত্মীয় স্বজন কেউ নিস্তার পেল না।তারা মুসলমান হয়ে বাঁচলেও তাদের আত্মীয় স্বজনরা কেউ হল কোনঠাসা কেউ হল একঘরে।তাদেরকে কেউ পুরো বামুন বলত না,বলত পীরালীর বামুন।কামদেব আর জয়দেবের দুই ভাই রতিদেব ও সুখদেব সমাজের অত্যাচার সইতে না পেরে একজন করে গৃহত্যাগ আরেকজন টাকার জোরে সমাজে টিকে থাকলেও পীরালী অপবাদ ঘোচাতে পারল না।প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তারা বয়ে চলল এ অপবাদ।

সপ্তদশ শতকের গোড়ার দিকে এই বংশের ই দুই ভাই পন্চানন ও শুকদেব কাজের সন্ধানে আসে স্বগ্রাম ছেড়ে।ঘুরতে ঘুরতে তারা আসে গোবিন্দপুর খাড়িতে।সেখানে ছিল তখন কেবল কয়েকঘর জেলে,মালো কৈবর্তের বাস।পরিধানে পটবস্ত্র,মাথায় শিখা,অতিশয় গৌর বর্ন ও ললাটে চন্দন পরিহিত ব্রাক্ষ্মণ দেখে সেখানকার অধিবাসীরা এসে সাস্টাঙ্গে প্রনাম করতে লাগল।গ্রামে ব্রাক্ষ্মণদের আশ্রয় দেয়া পুন্যের কাজ।সেখানে তাদের ঠাঁই হয়ে গেল।তখন গ্রামের মানুষ ভক্তিভরে তাদের ডাকতো "ঠাকুর" বলে।

গোবিন্দপুর,সুতানটি ও কলকাতা নামে তিনটি গ্রাম জুড়ে ইংরেজরা তখন কেবল নতুন একটি শহরের পত্তন করেছে ।গোবিন্দপুর খাঁড়ি দিয়ে জাহাজ চলাচলের জন্য এটিকে কেটে পশস্ত করা হচ্ছে।গ্রামের লোকদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সাহেবরা যখন আসে তখন গ্রামের লোকেরা তাদের সাথে কথা বলার সাহস না পেয়ে এগিয়ে দেয় তাদের "ঠাকুর"দের।সাহেবরা সঠিক উচ্চারণ করতে পারে না,বলে 'টেগোর'।সেই থেকে ঘুচল তাদের বংশীয় অপবাদ ''পীরালীর বামুন" ।সেই থেকে পরিচিত হল তারা ঠাকুর নামে।এভাবেই শুরু।পরবর্তীতে ইংরেজদের সাথে যোগাযোগ ও কর্ম দক্ষতার সুবাদে প্রজন্মান্তর ধরে ঠাকুর পরিবার হয়ে গেল কলকাতার শ্রেস্ঠ ধনী।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১১ রাত ৯:১১
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×