somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমেনার ভাগ্যে আজো মেলেনি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Gournadi.com ॥ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আমেনা বেগমকে এলাকার কিছু মানুষ এখনো পাঞ্জাবির বউ বলে ডাকে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আমেনার পুত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করায় তাকে ও তার স্বামীকে স্থানীয় রাজাকারদের ইশারায় পাক সেনারা ধরে নিয়েছিলো গৌরনদী কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পে। সেখানে বসে পাক মিলিটারীরা তার স্বামী সোবাহানের ওপর চালায় ষ্টীম রোলার। নির্মম নির্যাতনের পর তাকে (সোবহানকে) ছেড়ে দেয়া হলেও আমেনাকে ক্যাম্পের একটি কক্ষে আটক করে রাখা হয়। তিনদিন আটক করে রেখে ৭/৮ জন পাকসেনারা আমেনার সম্ভ্রাব্য কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে আমেনার শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হওয়ায় তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো।


বীরঙ্গনা আমেনা বেগমদেশ স্বাধীনের ৩৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই হতভাগ্য মহিলার ভাগ্যে আজো জোটেনি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি। পাননি কোনো সরকারি সাহায্য কিংবা সহযোগিতা। সবখানেই উপেক্ষিত স্বাধীনতা যুদ্ধের এই কিংবদন্তী জীবন্ত ইতিহাস। কেউ কোনো দিন খোঁজ করেননি কেমন আছেন স্বামীহারা আমেনা বেগম (৭৫)। দু’মুঠো ভাতের জন্য আজো বৃদ্ধা আমেনা ভিক্ষার ঝুঁলি হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রামের এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে। ভিক্ষা করে যেদিন পান-সেদিন খান, আর যেদিন না পায়-সেদিন না খেয়েই থাকতে হয় আমেনাকে। আমেনা বেগমের বাড়ি গৌরনদী পৌর সদরের দক্ষিণ পালরদী গ্রামে।

একান্ত আলাপকালে অনেক অনুরোধের পর আমেনা বেগম জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল মুহুর্তে তার পুত্র মুজ্জাফ্ফর হাওলাদারের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের খবর পেয়ে স্থানীয় রাজাকারদের ইশারায় পাক সেনারা তাদের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে ও তার স্বামী সোবহান হাওলাদারকে ধরে নিয়ে যায় গৌরনদী কলেজের পাক বাহিনীর ক্যাম্পে। সেখানে বসে পাক সেনারা তার স্বামীকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলো। তাকে আটক করে রাখ হয়েছিলো ক্যাম্পের একটি কক্ষে। সেখানে তিনদিন আটক করে রেখে ৭/৮ জন পাকসেনারা তার (আমেনার) ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন। পর্যায়ক্রমে তিনদিনই আমেনার ওপর চালানো হয় এ নির্যাতন। একপর্যায়ে আমেনার শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হওয়ায় তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়। ছাড়া পাওয়ার পর আমেনা বেগম কোন রকম হামাগুরি দিয়ে বাড়িতে ফেরেন। বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান তাদের বসত ঘরটি হানাদাররা পুড়িয়ে দিয়েছে। আর তার স্বামী নির্যাতনের অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে কাতরাচ্ছেন। আমেনা অনেক কষ্ট করে কলাপাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে অসুস্থ্য স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা চালায় কিন্তু কয়েকদিন পরেই পাক সেনাদের নির্মম নির্যাতনে তার স্বামী সোবহান হাওলাদার মারা যান। যুদ্ধচলাকালীন অবস্থায় দ্বিতীয়বার ৩ জন রাজাকার পূর্ণরায় আমেনার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এসময় আমেনা আত্মহত্যার প্রস্তুতি নেয়। হঠাৎ করে জানতে পারেন তার একমাত্র পুত্র মুজাফ্ফর বেঁচে আছে এবং সে গোপালগঞ্জের হেমায়েত বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছে। তখন আমেনা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। যুদ্ধ জয়ের লাল সবুজের বিজয় পতাকা নিয়ে তার একমাত্র পুত্র মুজাফ্ফর বাড়িতে ফিরে দেখতে পান তার বাবা নেই, শুনতে পান মায়ের করুন কাহিনী।


মুজ্জাফ্ফরের মতে, আমার মায়ের মতো হাজার-হাজার নারী ইজ্জত দিয়েছে এ দেশ স্বাধীনের জন্য। আমার মা তাদেরই একজন। এটাই আমার গর্ব। বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন মুজ্জাফ্ফর। বর্তমানে মাছ বিক্রি করে ৬ সদস্যর পরিবার নিয়ে কোন একমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন মুজ্জাফ্ফর। অভাবের সংসারে মায়ের তেমন কোন খোজ খবর নিতে পারছেন না। গ্রামের সহজ-সরল আমেনা বেগম জানেনই না মুক্তিযুদ্ধের সময় যে নারী ইজ্জত দিয়েছেন সরকার তাদের বীরাঙ্গনার উপাধি দিয়েছেন। আর জেনেই বা কি হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩৯ বছর পেরিয়ে গেলেও আজোতো আমেনার ভাগ্যে জোটেনি সরকারি ভাবে কোন সহানুভুতি। রোগাক্রান্ত শরীর নিয়েই বৃদ্ধা বয়সে আমেনা বেগম ভিক্ষা করেই জীর্বিকা নির্বাহ করেছেন।

।। গৌরনদী ডট কমে পূর্ব প্রকাশিত ।।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:২৯
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×