somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিহত আফতাব আহমদ, একটি ছবি ও আজকের বাংলাদেশ

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আজ প্রবীণ ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমদকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। রামপুরার নিজ বাসভবনে তাকে খুন করা হয়। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার চিফ ফটো সাংবাদিক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় কুড়িগ্রামে বাসন্তীর ছবি তুলে তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছিলেন।)

এএস রিয়াদ : স্বাধীন বাংলাদেশ যারা মেনে নিতে পারেনি, যারা এখনও নিজেদেরকে পাকিস্তানের অংশ ভাবে, যারা একাত্তরে পাক বাহিনীর দোসর হিসেবে মুক্তিকামী মানুষদের নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে সেই সময়ও তাঁদের মূল অস্ত্র ছিল শঠতা ও মিথ্যাচার, আজো একই কাজ করে চলেছে তারা। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় কুড়িগ্রামের বাক প্রতিবন্ধী বাসন্তীর জাল পরিহিত সাজানো ছবি থেকে শুরু করে অতি সম্প্রতি চাঁদে সাঈদীকে দেখা; যুগে যুগে এমন শঠতার আশ্রয় নিয়ে আসছে জাতির কিছু কুলাঙ্গার সন্তান।

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ট্রাজেডির নাম ‘বাসন্তী’। কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় এক জেলে পরিবারের বাক প্রতিবন্ধী মেয়ে বাসন্তীর জাল পরে লজ্জা নিবারণের ছবি প্রকাশিত হয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। আর সেই বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত ছবির ফটোগ্রাফার ছিলেন ইত্তেফাকেরই নিজস্ব আলোক চিত্রি আফতাব আহমেদ। অনেকে ছবিটির নাম দিয়েছেন জাল-বসনা বাসন্তী। ছবিটিতে দেখানো হয় বাসন্তী ও দুর্গাতি নামের দুই যুবতী মেয়েকে। অভাবের জন্য যারা সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারছিল না। ছবিতে বাসন্তীর পরনে ছিল একটি মাছ ধরার জাল। এই ছবি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধু সরকারকে রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছিল। দেশের আনাচে কানাচে দুর্ভিক্ষের আগমনী বার্তা পৌঁছে দেয়। তাঁদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে রেখেছিল বিশাল ভূমিকা, বঙ্গবন্ধু সরকারের পতনকেও ত্বরান্বিত করে ছবিটি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং এই ছবির মধ্যেও যোগসূত্র রয়েছে এমন দাবী অনেকেরই। কিন্তু সেই ছবি প্রকাশিত হওয়ার কিছুকালের মধ্যেই বেরিয়ে আসে ভিন্ন তথ্য। বাসন্তীকে নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতা ও নোংরা রাজনীতির খোলস থেকে বেরিয়ে এসেছে আসল রূপ। পরিষ্কার হয়ে যায় ছবিটি ছিল সাজানো। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন ছাপা হয় পরবর্তীতে।

আজ থেকে সতেরো বছর আগে ৯৬ সালের ৫ অক্টোবর দৈনিক খবর-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়, ‘‘চিলমারীর বন্দর থেকে কয়েকশ গজ দূরে বেশকিছু কুঁড়ে ঘর। এখানেই বাসন্তীদের আবাস। জেলেপাড়ায় ঢুকতেই একটি মনোহারি দোকান। দোকানের মালিক ধীরেন বাবুর সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানালেন, ‘৭৪-এর অনেক কথা। যেদিন বাসন্তীদের ছবি তোলা হয়, সেদিনও তার পরনে কাপড় ছিল। কিন্তু ছেঁড়া জাল পড়িয়ে কৌশলে তাদের ছবি তোলা হয়। এটা এক ধরনের চক্রান্ত ছাড়া কিছুই নয় বলে মনে করেন অনেকেই।’’

সেই ছবি তোলার প্রত্যক্ষদর্শী হলেন, রাজো বালা। তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলেন। প্রকৃত দৃশ্য বর্ণনা করতে চান না। এখনো ভয় পান। তার মতে, এসব বললে ক্ষতি হতে পারে। যা হবার তা তো হয়েই গেছে বলে আর লাভ কি। পরে অনেক আলাপ-আলোচনার পর রাজো বালা বর্ণনা করেন সেই দৃশ্য। ছলছল চোখে আনমনা হয়ে কথা বলেন তিনি। তার বর্ণনা থেকে জানা যায়, ৭৪-এ যখন বাসন্তী-দুর্গাতিদের ছবি তোলা হয়, তখন ছিল বর্ষাকাল। চারদিকে পানি আর পানি। এমনকি প্রেক্ষাপটে তিনজন লোক আসেন বাসন্তীদের বাড়িতে। এদের মধ্যে একজন ছিল তৎকালীন স্থানীয় রিলিফ চেয়ারম্যান তার নাম আনছার। অপর দুজনকে রাজো বালা চিনতে পারেনি। বাসন্তী-দুর্গতিদেরকে একটি কলা গাছের ভেলায় করে বাড়ি থেকে বের করা হয়। আর অন্য একটি ভেলায় রেখে তাদের ছবি নেয়া হয়। এ সময় পাশের একটি পাট ক্ষেতে ছিলেন রাজো বালা। ছবি তোলার আগে আগন্তুকরা বাসন্তীদের মুখে কাঁচা পাটের ডগা দিয়ে বলে এগুলো খেতে থাকো। এর বেশি আর কিছু জানাতে পারেননি রাজো বালা। বাসন্তীর কাকা বুদুরাম দাসের কাছে সেই ছবি তোলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কাঁচুমাচু করেন। এক পর্যায়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করেন সেই ছবি তোলার নেপথ্য কাহিনী। শেষ পর্যায়ে তিনি ঐ ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং প্রতিকার চান।’

একই সালের ১২ অক্টোবর দৈনিক সংবাদ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়, ‘‘বাসন্তী জন্ম অবধি বোবা তাই বাসন্তীর কাছে সেই কাহিনী জানা যায়নি। তবে সে ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী বাসন্তীর কাকা বুদুরাম দাশ (৮০)। ব্রহ্মপুত্র নদে একটা নৌকায় বসে তাঁর পুরানা দিনের নানা স্তরে ঢাকা স্মৃতির পাতা হাতড়িয়ে জানালেন সেদিনের কাহিনী।

সঠিক ভাবে দিন-তারিখ মনে নেই। একদিন বাসন্তী ও তাঁর কাকাতো বোন দুর্গাতিসহ পরিবারের আরও কয়েকজন মিলে ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁধের ওপর বসেছিলেন। তখন দুপুর গড়িয়েছে। এমন সময় ইউপি চেয়ারম্যান আনসার আলি বেপারি (এক সময়ের মুসলিম লীগ ও পরে আওয়ামীলীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা) কয়েকজন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ একজন সাংবাদিককে (আফতাব আহমেদ, আলোকচিত্রি, দৈনিক ইত্তেফাক) নিয়ে আসেন মাঝি পাড়ায়। তারা বাসন্তী ও দুর্গাতির ছবি তুলতে চান। এ সময় তারা বাঁধের ওপর মাঝিদের রোদে শুকোতে দেয়া জাল তুলে এনে তা বাসন্তীর ছেঁড়া শাড়ির ওপর পরিয়ে ছবি (১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় এই ছবি দু’টি ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়। সুত্রঃ ‘চিলমারীর এক যুগ’ – মোনাজাত উদ্দিন) তোলেন। বুদুরাম এভাবে ছবি তুলতে আপত্তি জানিয়ে নিষেধ করেছিলেন। তবুও তারা শোনেননি। এ প্রসঙ্গে বুদুরাম দাশ তার ভাষায় জানায়, ‘চেয়ারম্যান সাব ছেঁড়া হউক আর ফারা হউক একনাতো শাড়ি আছে উয়ার উপরত ফির জাল খান ক্যা পরান, ইয়ার মানে কি? (চেয়ারম্যান সাহেব। ছেঁড়া হোক একটা শাড়ি তো আছে, তার ওপর জাল কেন পরান; এর কারণ কি? তখন সাইবদের মইদ্যে একজন কয় ইয়ার পরোত আরো কত কিছু হইবে….’’ তখন একজন সাহেব জানায় এরপর আরো অনেক কিছু হবে…..)।

তবে সেই ছবি তোলার সঙ্গে চেয়ারম্যান আনসার আলি বেপারি ছাড়া আর যারা ছিলেন বুদুরাম দাশ তাদের পরিচয় জানাতে পারেননি। তবে তাঁরা কেউই স্থানীয় ছিলেন না। সেই সময় বাসন্তী কিশোরী। একই সঙ্গে অপুষ্টির শিকার তার কাকাতো বোন দুর্গতি নামে অপর এক প্রতিবেশী কিশোরীর জীর্ণ বস্ত্র শীর্ণ দেহের একটি ছবিও তোলা হয়েছিল। সেই ছবি ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষের ট্রাজেডি হিসেবে দেশে-বিদেশে কাঁপন জাগিয়েছিল। শোনা গেছে দুর্গতি পরিবার-পরিজনসহ দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে চলে গেছে সেই থেকে তার আর কোনো খোঁজ নেই।

আসুন এবার শুনি এই ফটো সেশন সম্পর্কে প্রামবাসী ও বাসন্তীর পরিবার কি বলে-

১৯৯৬ সালের ১২ অক্টোবর দৈনিক সংবাদে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয় ‘তেইশ বছর কেটে গেছে বাসন্তীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি’ শিরোনামে। সেই রিপোর্টে বলা হয় জেলেপাড়ার মানুষজন এখন অনেক সচেতন। সাংবাদিক পরিচয় পেলেই সাবধান হয়ে যায়, ভাবে আবার না জানি কোন ফন্দি ফিকির নিয়ে আসলো! গ্রামের কাছাকাছি গেলেই গ্রামবাসীর উৎসুক দৃষ্টি। বাসন্তীর ছবি তুলতে গেলে গ্রামবাসী দুই যুবক বাঁধা দেয়। একজন মুখ আড়াল করে অশ্লীল শব্দ ছুঁড়ে দেয়। একজন বিক্ষুব্ধ হয়ে বলে, ‘‘৭৪ এর মঙ্গা থাকি হামরা দেখপার নাগছি হামার বাসন্তীর ফটোক তুলি কত কি হইল। বাসন্তীক জাল পরেয়া ফটোক তুলি আর কত ব্যবসা করমেন তোমরাগুলা? ম্যালা হইছে এ্যালা ছাড় আর ফটোক তুলবার দিবারনাই। বাসন্তীক জাল পরেয়া ফটোক তুলি কি হইল? মঙ্গাত মানুষ মইল, শ্যাখের ব্যাটাক (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব) মারি ফেলাইল। তাতে হামার কি হইল? বাসন্তীর প্যাটোত এ্যালাও ভোক, পরনোত শাড়ি জোটে না, ব্যালাউজ নাই, ভাতের জন্যি খালি কান্দে। …।’’

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেদক কিছুটা বিচলিত হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকতার কৌশল কাজে লাগিয়ে তিনি গ্রামবাসীকে বলেন, ‘‘আমি আপনাদের এই ক্ষোভের কথাগুলো কাগজে লিখতে চাই। আপনারা আমাকে সাহায্য করুন। আমি সব কাগজে লিখবো।’’ অবশেষে গ্রামবাসী রাজী হয় ছবি তুলতে এবং বিভিন্ন তথ্য দিতে সাহায্য করে। সাংবাদিক কথা বলেন বাসন্তীর ভাই বিশু আর আশুর সাথে। তাঁরাও ক্ষোভের সাথে একই প্রতিক্রিয়া জানায়।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক আফতাব আহমেদের নিজ পত্রিকা ইত্তেফাক বাদে সব পত্রিকা এসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এখানেই শেষ নয়। ১৯৯৮ সালের ০৪ জুন ‘ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমদের বক্তব্য’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয় দৈনিক ইত্তেফাকে। সংবাদটিতে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশ ফটো জার্নালিষ্ট এ্যাসোসিয়েশনের একযুগ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের উপর তোলা বাসন্তীর মর্মস্পর্শী ছবির জন্য তাহাকে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করিয়াছেন। …এই সংবাদ চিত্রটির জন্য বেগম খালেদা জিয়া একজন ফটো সাংবাদিককে পুরস্কৃত করার যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়াছেন সেইজন্য তিনি তাহার নিকট কৃতজ্ঞ।’

এখানেই উন্মোচিত হয়ে যায় বাসন্তীকে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের স্বরূপ। কারণ, বাসন্তীর মর্মস্পর্শী ছবির জন্য যখন বেগম জিয়া আফতাব আহমদকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন তার আগেই প্রমাণ হয়ে গেছে সেই ছবিটা ছিল সাজানো এবং সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অর্থাৎ বেগম জিয়া জেনে শুনেই বাসন্তীর সেই সাজানো ছবির জন্য ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমদকে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নেন। এদিকে এই ঘোষণার পরে আফতাব আহমদও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসবের মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তৎকালীন সরকারকে বিপদে ফেলতেই কুচক্রী মহল এমন মিথ্যাচার ও শঠতার আশ্রয় নেয়। আর এই কুচক্রী মহল কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আশে পাশে থাকা খোন্দকার মোশতাকদের মতো ঘরের শত্রু বিভীষণরাই। সব মিলিয়ে ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমদের আলোকচিত্রের বস্তুনিষ্ঠতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

২০১১ সালে বাসন্তী

এদিকে আলোকচিত্রে অবদান রাখার জন্য আফতাব আহমেদ ২০০৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। অনেকের অভিযোগ বাসন্তীর ভুয়া ছবি তোলার জন্য বেগম জিয়া আগে তাকে পুরস্কৃত করার কথা বললেও তা তিনি করতে পারেননি। কারণ তখন তিনি ছিলেন বিরোধী দলে। পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে তিনি আফতাব আহমদকে ভুলে যাননি। ছবিটা যে সাজানো সেই অভিযোগ বা সাংবাদিক মাহাবুব রহমানের এবং অন্যান্য পত্রিকার প্রতিবেদনগুলোতে যে দাবী করা হয়েছে তার সবই যদি মিথ্যাও হয় তবুও আফতাব আহমেদের আসল রূপ বেরিয়ে আসে অন্য একটা দিক থেকে। একদিকে ২০০৬ সালে তিনি একুশে পদক প্রাপ্ত হলেন, অন্যদিকে একই বছর অর্থাৎ ২০০৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী তিনি ছুটে যান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামাত শিবির রাজাকারদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। এবং এই অনুষ্ঠানে তিনি পদক গ্রহণ করে চিহ্নিত আলবদর বাহিনীর নেতা, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীর হাত থেকে।

উল্লিখিত ঘটনাগুলো যদি এক সূতায় বাঁধা হয় তাহলে একটা জিনিস খুব পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আফতাব আহমেদ যতোই মুক্তিযুদ্ধের আলোক চিত্র তোলেন না কেন, আদপে তিনি একজন সুবিধাবাদী ব্যক্তি বই আর কিছুই নয়। আর সুবিধা গ্রহণ করেই তিনি বাসন্তীর সেই সাজানো ছবি তুলেছিলেন। কারণ তখন দেশের প্রেক্ষাপট ছিল জনগণকে বিচলিত করার মতো। এপ্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের বক্তব্য বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। বাসন্তীর ছবি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘ওই ছবিটি প্রকাশের আগে থেকেই দেশের তৎকালীন অবস্থা নিয়ে জনগণ বিচলিত ছিলেন। দুর্ভিক্ষ সৃষ্ট পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে বঙ্গবন্ধু সরকার তখন প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছিল। এরকম একটা সময়ে বাসন্তীর ছবিটি ছাপা হয়। এবং ছবিটি জনমনে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। মানুষের ভাবনা ছিল, এত কষ্ট করে দেশ স্বাধীন হল। অথচ স্বাধীন দেশে একটি যুবতী মেয়ের পরার মতো কাপড় নেই। এমনটা কেন হবে। পরবর্তীতে জানা যায় ছবিটি সাজানো ছিল। এবং এ থেকে মানুষ আসল সত্য জানতে পারে। একটা সরকারের বিরোধী পক্ষ থাকবে। এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে ওই আলোকচিত্রি যে কাজটি করেছিলেন তা সাংবাদিকতার কোনো নীতিমালার মধ্যে পড়ে না। এটা অন্যায়।’’

আবার যে ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্রি হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সেই ব্যক্তি দেশের সর্বোচ্চ পদক পাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই চলে গেলেন চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের অনুষ্ঠানে। পুরস্কার নিলেন আলো বদর প্রধান নিজামীর হাত থেকে। ভেবে দেখুন তো ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের কি ভয়াবহ উত্থান ঘটেছিল, সেসব জেনেও যিনি রাজাকারদের কাছে পুরস্কার গ্রহণ করেন তাহলে তাকে নিশ্চয়ই দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা বলতে পারেন না আপনি! আমার আক্ষেপ একটাই, যে শহর জন্ম দিয়েছে সাংবাদিক অগ্রণী প্রয়াত মহমুদ হোসেন, প্রয়াত কাজী ইদ্রিস, চারণ সাংবাদিক প্রয়াত মোনাজাত উদ্দিন, মাহবুব রহমান (হাবু ভাই, বর্তমানে প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক) এর মতো সাংবাদিকের, সেই রংপুরের মাটিতেই জন্ম হয়েছে বাসন্তীর সেই সাজানো ছবির ফটোগ্রাফার আফতাব আহমেদ!!

তথ্য সূত্র :

মঙ্গার আলেখ্য – মাহবুব রহমান
চিলমারীর এক যুগ – মোনাজাত উদ্দিন
পথ থেকে পথে – মোনাজাত উদ্দিন
আনিস রায়হান’র ব্লগ
এ এস রিয়াদের ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×