somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেক সমান্তরাল....... (দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব)

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বের পর.........

তিন

টুপ করে একটা জোনাকি পড়লো গায়ে। ধরে ফেলল সৌমিত্র। দেখতে লাগলো নেড়েচেড়ে। বন- বাদড় নেই জোনাকি আসলো কোত্থেকে? আকাশ গলে বেরিয়ে এল নাকি? নাকি জ্যোৎস্নাগুলো জমাট বেধে জোনাকি হয়ে গেল? তবে বেশ বোঝা যাচ্ছে জোনাকিটার সময়জ্ঞান নেই। তার মূল্য যে অন্ধকারে, ভরা পূর্নিমায় নয় তা সে কোন প্রেমের আঘাতে ভুলেছে কে জানে? জোনাকিটা ছুড়ে ফেলল না সৌমিত্র। জ্বালিয়ে দিল বুকপকেটটা। ওখানটা অন্ধকার। অপব্যবহার হবেনা পিঠে আলো বয়ে বেড়ানো গাধাটার।

ঘড়ি দেখলো সৌমত্র। বেশীদুর এগোতে পারেনি রবিদাকে বগোলদাবা করে পালানো চোরটা। এগারোর নগ্ন দেহে ছোট ছায়াদুটি কামানায় দুলছে। যাক দেরি হয়নি তাহলে। বরং পকেটে কিছু সময় হাতসাফাই হয়ে ঢুকে গেছে। ভালোই হল। ভাবল সৌমিত্র। শম্ভুদাকে একা পাওয়া যাবে কিছুক্ষণ।

শম্ভুদা রহস্যের কোট মুড়েই থাকেন প্রায় সময়। কথা বলেন কদাচিৎ। তাও আবার অর্থহীন। একদিন হঠাৎ করেই সৌমিত্রকে বলেছিলেন, কোন একটা প্রশ্ন করতে। সেদিন সৌমিত্রর কোন প্রশ্ন ছিল না, সে করেনি। তবে আজ করবে। অবশ্যই করতে হবে। না হলে ছকটা ঘুরে যাবে ফের। বাতাসের ডালপালাগুলো আবার আটকে যাবে মাকড়সার জালের প্রেমে।

টিমটিমে ল্যাম্পটা এখন আর জ্বলতে জ্বলতে কাঁদেনা। তার বদলে গলায় রশি দিয়ে ঝুলে থাকা চোঙা বাল্বটা ছাদ থেকে সোজা নেমে এসেছে তিনফুটে টেবিলটার হাতদেড়েক ওপর পর্যন্ত। তার ঠিক সামনেই শিরদড়া ফার্স্ট ব্রাকেটের মতো করে ঝুকে আছেন শম্ভুদা। জারুল কাঠের চৌকিটাই তার কেদারা। চৌকির পেছনটা ধুলির শাড়ি জড়িয়ে আছে। নানারকম দলা পাকানো কাগজভর্তি ঠোঙাটা লাজলজ্জার মাথা খেয়ে বা হাতের কাছেই হা করে আছে। নিঝুম হয়ে গেলে টেবিলের কাঠ থেকে গুঞ্জন শোনা যায়। কিছু ঘুনপোকাদের পূর্নবাসন হয়েছে বোধহয়। পুবের জানালাটার ব্যায়াম হয়নি বহুদিন। এমনিতে ওদিকটা ঘোলাটে তারওপর মাকড়সার জালের সঙ্গোম আর খচ্চর মশাদের গুলতানি। কিন্তু শম্ভুদা নিবিষ্ঠ সদ্য প্রেসের গন্ধযুক্ত নীল কভারের বাধানো বইটাতে।

সৌমিত্র পায়ের কম্পমান স্পন্দনে ঘরে ঢুকে দেখলো চল্লিশ ওয়াটের বাল্বের আলোতে শম্ভুদার বাম চোয়ালটা অন্ধকার হয়ে আছে। তিনি এক হাতে একদলা কাগজ নাড়ছেন আর অন্য হাতে হরদম উল্টিয়ে যাচ্ছেন বইয়ের পাতা। তার দৃষ্টি বইয়ে নিবদ্ধ।

ভ্যাপসা গন্ধটা নাকে এসে লাগার আগেই সৌমিত্র সামনের চেয়ারটাতে আকাশী রঙের শাড়ীর নিচে জড়িয়ে থাকা ডবকা যুবতীটাকে দেখলো। ছুটে আসা একঝলক বাতাসকে ভ্রূক্ষেপ না করেই ধপাস করে বসে পড়লো খালি চেয়ারটাতে। চোখ তুললেন না শম্ভুদা। কিন্তু ঠোটে আঙুল দিয়ে চুপ সংকেতটা জানিয়ে দিল যুবতী। রাগে রি রি করে উঠলো সৌমিত্রের লোমগুলো, কটমট করে তাকালো তার দিকে। আগে কখনো দেখেনি। ভদ্রগোছের বলেইতো মনে হয়। থিয়েটারে আকৃষ্ট বলে বোধ হচ্ছে না। তবে শম্ভুদার এখানে কেন? এ ঘরের ধুলি প্রতিদিন শম্ভুদার বুটের চুম্বনে স্ফীত হয়। তার কন্ঠে বাতাসে বইয়ের অক্ষরগুলো জীবন্ত হয় রোজ। আর মেয়েটা অনাগমনিয়া। তারপরেও সে তার ওপর আঙুল তোলে?

সৌমিত্র দু’হাতে টেবিলের সীমানা খামছে ধরলো। সাথে সাথে তার হাত চেপে ধরলো হাফ দশেক বেহায়া আঙুল। ঘুরে তাকালো সৌমিত্র। ফোকাসটা বুলিয়ে নিল একবার। সাদা সিঁথিটা মাঝ বরাবর। সরু কপালে টিকলো নাকটাই আগে নজরে পড়ে। তবে চোখ দু’টো চৌকা আর থলথলে চোয়াল। চুলের রঙের সাথে ব্লাউজ আর চোখের সাথে শাড়ির রঙ মিলিয়ে পরেছে। কে জানে মোজার সাথে অন্তর্বাসের রঙটাও মিলিয়েছে কিনা।

চোখের তারা নাচিয়েই হাতটা ছাড়িয়ে নিল সৌমিত্র। খিঁচিয়ে উঠতে গিয়েও চুপসে গেল একমূহুর্ত। চুলের একটা মসৃণ জট কানের পাশ দিয়ে বেকিয়ে চিবুক পর্যন্ত নেমে এসেছে মেয়েটার। বাতাসে হোঁচট খেল সৌমিত্র। স্মৃতির ফারাক্কা ভেঙে প্রজাপতির দল হুড়মুড়িয়ে আসতে চাইলো। দৃঢ় হাতটাতে আটকে দিল ও গলির মুখটা। তারপর তারপর চেঁচিয়ে উঠলো, ‘শম্ভুদা !’

শম্ভুদা চঞ্চল হলেন না, কিন্তু চঞ্চল হল মেয়েটা। ভ্রক্ষেপ করলো না সোমিত্র। সমানে উচ্চারণ করলো 'আমায় বলবেন, জোনাকিরা কেন মরে যায় না?'

প্রতিধ্বনিটা কাঁপতে কাঁপতে মরে যেতে লাগলো। এক মুহুর্ত ভারি হয়ে উঠলো এ ঘরের এঁদো বাতাস। এক ..দুই...তিন মিনিট সব চুপচাপ। তারপর অভিলম্বের সাথে সমান্তরাল হল শম্ভুদার মেরুদন্ড। লম্বা চুল গুলো ফের গড়িয়ে পড়ার আগেই শব্দ করে বন্ধ করে দিলেন নীল বইখানা। সেই শব্দে ঘরের নিস্তবদ্ধতা আরও গম্ভীর হল। উৎকর্ণ হল ঘুণপোকার দল। শম্ভুদা দু’হাতে মাথার রগ টিপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলেন হঠাৎ, 'পরবো না, আমি পারবো না'। তারপর আস্তে আস্তে তার মাথার আগেই চুল গুলো নুয়ে পড়ল টেবিলে। ফুঁফিয়ে কেদে উঠলেন তিনি।

স্থির ছিল সৌমিত্র। ছিল মেয়েটা। শম্ভুদা কারো দিকে তাকান নি। তার দৃষ্টি ছিল শূন্যতায়। মেয়েটা সৌমিত্রকে টেনে বাইরে নিয়ে এলো। বারান্দায় জ্যোৎস্না এসে পড়েনি। সৌমিত্রর দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। গন্ধটাও স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমশ। সামনের অবহেলায় বেড়ে ওঠা এক চিলতে বাগানটা দেখল সৌমিত্র। প্রতিদিনই দেখে। অশ্বত্থ গাছটা লম্বা হচ্ছে ক্রমশ। তার পাতায় পাতায় জলছে তারা। মোটা একটা ডাল ঘরের পাশ দিয়ে দূরে চলে গেছে। তার 'পরে গা মেলে শুয়ে আছে একটা মেয়ে। নীল শাড়ী লাল টিঁপ। শাড়ির আঁচলটা বাতাস গলে মাটিতে এসে লেগেছে। মেয়েটাকে শম্ভুদার ঘরের এই মেয়েটাই তো মনে হচ্ছে। পায়ে তাল রাখলো সৌমিত্র। বাতাস সরিয়ে ঘুরে দেখল মেয়েটাকে। নাহ্‌ এ মেয়ে না। এর পরনে আকাশী শাড়ী। কপালে টিঁপ নেই। অবাক হল সৌমিত্র। এত দূর থেকে গাছের মেয়েটার চেহারা দেখা যাওয়াতো সম্ভব নয়। অন্তত এই রাতে। আবার দেখল সৌমিত্র। ঠিকই দেখা যাচ্ছে। মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়েছে। জ্যোৎস্না আর ঝিরঝিরে বাতাসে গা এলিয়ে যাচ্ছে। আকাশটা অনেক নীচে নেমে এসছে মনে হচ্ছে। গাছটাও আরো এগিয়ে আসছে। আরে এ যে দীপা!! সোমিত্র অবাক হয়ে দেখল দীপ ভারি শাড়িটা ঝুপ করে ফেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায় উন্মুক্ত হল তার নগ্ন দেহ। চোখ ঘুরিয়ে নিল সৌমিত্র। একটা শীতল জলের প্রবাহ ছুটে গেল তার শিরা গুলিতে এবং পরক্ষণে সে অনুভব করল তার গালে আকাশী শড়ীর মেয়েটার স্তন যুগলে স্পর্শ।

চার.

বালির বুকে একটার পর একটা শুঁড় বিদ্ধ করে এগিয়ে যাচ্ছে সৌমিত্র। ছলকে ছলকে উঠছে লাই পাওয়া বালুর ধোঁয়াগলো। নিঃশ্বাস বমি করতে করতে পায়ে তাল রাখছে সে। বাতাসে পাক খেতে খেতে মিশে যাচ্ছে সেই ভারি নিঃশ্বাস। সে মনে করার চেষ্টা করলো কি ঘটেছিল? একটা গন্ধ ......। তারপর অশ্বত্থ গাছ। নগ্ন মেয়েটি .... তারপর..... ? বুকে হাত রাখলো সৌমিত্র। যন্ত্রটা জানান দিচ্ছে সে ঠিকই আছে। তবে ওই ঘেরা জমিতে কতগুলো আগাছা আর শিউলী গাছ ছাড়া কম্মিন কালে ও কিছু দেখেনি। তার দৃষ্টি স্বাভাবিক ছিল না এটা স্পষ্ট। তাছাড়া সে শম্ভুদার ঘরের মেয়েটির বুকে ঢলে পড়ছিল কখন। সৌমিত্র বুঝতে পারলো না কিছুই। সে ঠেলে ফেলতে চাইলো সব অস্বস্তি। কিন্তু তার বদলে একখণ্ড শূন্যতা ট্রামের মতো করে গড়িয়ে গেল তার ওপর দিয়ে। শম্ভুদাও তাকে তাড়িয়ে দিল। মেয়েটা বলল শম্ভুদার থিয়েটার আর কোন দিন বসবে না। শম্ভুদা সবাইকে চলে যেতে বলেছে। কেন? ঐ অগোছালো মানুষটাকে তার ভাল লাগতো। ভাল লাগতো তার ছন্নছাড়া থিয়েটারে গলা মেলতে। সৌমিত্রর ভিন্ন কোন জগৎ ছিল না। সে উচ্ছ্বল জীবনের একটা রশি বেঁধেছিল এখানে। আজ তাও ছিড়ে গেল। শম্ভুদা চলে যাবে। শম্ভুদার উত্তর যে তার প্রশ্নের নয় তা স্পষ্ট। উদ্ভট বই উল্টানো, হঠাৎ কেঁদে ওঠার কোন মানেই খুঁজে পেল না সৌমিত্র। তবে এটুক বুঝলো শম্ভুদা মোটেও স্বাভাবিক নেই। তার জন্য কে দায়ী? মেয়েটা? মেয়েটা তার পরিচয় বলেনি। সৌমিত্র জানতেও চায়নি। সে তাকাতে পারছিল না তার দিকে। তার ঝুলে পড়া চুল গুলো তাকে চাবুকের মতো পেটাচ্ছিল। সেই চুল! ঠিক একই রকমই খসে পড়ছিল বারবার!!

সৌমিত্র কখনো ভালোবাসেনি কিন্তু ভালাবাসাটা জাগিয়েছিল। শোভা ছোটবেলা থেকেই তার বন্ধু ছিল। ঠিক বন্ধু নয়- তবে পাশাপাশি ফ্লাটে থেকে তাদের অনুভূতিগুলো জড়িয়ে পেঁচিয়ে জট পাকিয়ে গিয়েছিল হয়তো। স্কুল কলেজ তারপর ভার্সিটি পর্যন্ত তারা একসাথেই পড়েছে। শোভার একগুচ্ছ চুল প্রায় সারাক্ষণই ঝুলে থাকতো কপালে। সে সামলে পারতো না। সে ভালোবাসতো সৌমিত্রকে। প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হবার আগেই জেনেছিল সৌমিত্র। কিন্তু তার ডাকে সাড়া দেয়নি সে। প্রেসিডেন্সিতে সারাক্ষণই পিছু লেগে থাকতো শোভা। হানা দিত বাড়িতেও। তখন চৌরঙ্গির বাড়ীতে পাকাপাকি ভাবে চলে এসেছে তারা। শোভারা আগের ফ্লাটেই। কিন্তু এবাড়িতে তার যাতায়াত ছিল অবাধ। সৌমিত্র শোভাকে আপন করে নিতে পারেনি, কারণ সেও একদিন গিয়েছিল শোভার কাছে। কিন্তু শোভা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তখন সে ছিল উচ্চমাধ্যমিকের ১ম বর্ষে।

শোভার বাবার ছিল ট্যুর প্রগামিংএর ব্যবসা। বাবা মা দুজনে মিলে চালাতো। শোভা বরাবরই তাদের সঙ্গী হতো। কিন্তু সেবার সে থেকে গিয়েছিল বাড়িতেই। সৌমিত্র কিছুটা ঘোর নিয়েই গিয়েছিল তার কাছে। বহু ছেড়া ক্যানভাস আর অস্পষ্ট একটা মূর্তি ছটফট করছিল তার মাথায়। স্কেচটার অস্পষ্টতা-অজ্ঞতা তাকে ছুটিয়ে নিয়ে গিয়েছিল নির্জনান্তে শোভার কাছে।

সে নিজেই ফেলেছিল আঁচলটা। তারপর ব্লাউজে হাত দিতেই প্রচণ্ড একটা ধিক্কার ঘরের বাতাসগুলোর সাথে তার মাথার উস্কো চুলগুলোকেও নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই থেকে সে আর কোন ক্যানভাস ছোয়নি, মনে আছে ঠিক। হয়তো মনে ছিলনা শোভার।

বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসাটাকেই পাথেয় করেছিল সৌমিত্র। সেই সাথে তার কিছু বদঅভ্যাসও রপ্ত করতে ভুল হয়নি। কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউজ ছেড়ে ততদিনে সে জানবাজারের আড্ডাখানায় পৌঁছে গেছে প্রায়। এই জানবাজারই যে তার চিরদিনের পাথেয় হবে কে জানতো! এবং সেই পথ যে শোভাই তৈরি করে দিয়ে যাবে তা সে ভাবেনি কখনোই। শোভা মেয়েটা হারিয়ে গেছে। এই সত্য যন্ত্রণাটা সে সহ্য করতে পারেনা। সে চায়নি কিন্তু কিভাবে যে কি হয়ে গেল !!!

বুদ হয়ে একা ঘরে পড়েছিল সৌমিত্র। শোভা এসেছিল ভর দুপুরেই। সৌমিত্রর কোন জ্ঞান ছিল না। শোভা বারবার বলেছিল, ‘একবার বল আমাকে ভালোবাসিস, তারপর আমার কোন বাধা থাকবেনা’। কিন্তু সে শোভার বাধা অগ্রাহ্য করে করে তার কপালের চুলগুলোকে অবিন্যাস্ত করে দিয়েছিল। এবং তারপর...। শোভাকে হারিয়ে সে বুঝেছিল সে শোভাকে ভালবেসেছিল।

পাঁচ.

দু’হাতে একদলা বালি খামছে পড়ে আছে সৌমিত্র। সামনের অনেকটা পথ শুধুই বালি। এ পথটা কোথায় গেছে সে জানেনা। জ্যোৎস্নায় বালির ধোয়া আর উঠছেনা। ফের পায়ে তাল দেবার চেষ্টা করলো সৌমিত্র। পকেটা হাতড়ে দেখলো ছোট্ট বোতলটা কোথায় হারিয়ে গেছে আগেই। হতাশ হল সে। কিন্তু একদলা বাতাস তাকে ধাক্কা দিল পেছন থেকে। চলতে শুরু করলো সৌমিত্র। সে চায় জ্যোৎস্নায় সব স্মৃতি গুলোকে ধুয়ে ফেলতে। কিন্তু পারে না। ধু-ধু জ্যোৎস্নাটা তার বুকে চেপে আছে। তার ভর সে সইতে পারে না। জড়িয়ে ধরতে গেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সে ক্ষ্যান্ত হয়। জড়িয়ে আর কাউকেই ধরতে চায়না। আকাশের জ্যোৎস্না পৃথিবীতে গড়াগড়ি খাক, তাতে তার কি? লোভীর মতো জড়িয়ে ধরতে গেলেই তো যত বিপত্তি। সৌমিত্রর মনে হল, দীপাকেও তো সে আকড়ে ধরে আছে। তাতে কি? দীপা কি আকাশের জ্যোৎস্না? না হোক, তার চাইতেও হয়তো অনেকখনি বেশী। সে ভাবল, জ্যোৎস্নাটাকে আকড়ে ধরতে গেলে তা পিছলে যেতে পারে কিন্তু দীপা? ঠিক করলো, সে নিজেই দীপাকে মুক্তি দিবে। কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়লো অরুনের কথা। সৌমিত্র তার প্রতি অনেক অবিচার করেছে। দীপাকে ঠেলে ফেলে এই অবিচারটা আরো বাড়াতে ভয় হয় তার।

সৌমিত্র ভেবে পায় না, কিসে তার মুক্তি? সত্যিই তো সে মুক্তি চায়, কিন্তু কোন পথে? সে চোখের সামনে কিছুই দেখতে পায় না। সবই ঘোলাটে, সবই অন্ধকার। জ্যোৎস্নাটা বাড়িয়ে যেতে যেতে হঠাৎ নিভে গেল বোধ হয়। কেমন জানি অসহয় লাগে সৌমিত্রের। যন্ত্রনার একদলা কষ্ট ফেঁপে উঠতে চায় বুকের নীচে। সে হাত রাখে সেখানে। ছোট্ট একটা জড় বস্তুর স্পর্শে ঘুরে তাকায়, বিস্ময়ে দেখে জোনাকিটা মরে শুকিয়ে গেছে। হঠাৎ কেঁপে ওঠে সৌমিত্র। হাটু গেড়ে বসে পড়ে বালুর ওপর। দু’হাতে প্রানপণে খামছে ধরে দু’মুঠো বালু। তারপর কেঁদে ওঠে হু হু করে।

----সমাপ্ত----
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×