somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাড়ি,টুপি,পাঞ্জাবী,পাগড়ি পড়া কি সুন্নত ? নাকি তা নবীজির অভ্যাস, তাই আমল না করলেও চলে ?

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানিং কি একটা ফেতনা বাইর হইছে, দাড়ি-টুপি-পাগড়ি নাকি সুন্নত না,তাই কিছু আলোচনা তুলে ধরা হল, দয়া করে এইসব বাজে কথায় কান দিবেন না, হয়ত এখনও আপনি সার্ট-প্যান্ট পড়েন, দাড়ি কাটেন, কিন্তু মনে যদি আফসস থাকে, হায়, ইমানের কমজরির কারনে পারতাছি না,ইনসাল্লাহ আল্লাহ আপনাকে একদিন দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবির তৌফিক দিবেন, আর কেউ যদি এই গুলোরে জরুরিই না ভাবে, সে আর কোন দিন সুন্নতের উপর উঠতে পারবেনা, কোরআন - হাদিস কে নিজের মন মত, যেভাবে নিজের সুবিধা হয় সেই ভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে তার উপর থাকাকে হেদায়েতের উপর থাকা বলেনা, এই লোক তো মারাত্মক এক গোমরাহির উপর থাকবে, কেননা সে ভাবতাছে, আমি তো সঠিক পথেই আছি,অথচ সে ভ্রান্ত পথের মুসাফির, একে বড় যোর নফসের গোলামি বলা যায়।
আমার কথা শেষ,এখন আমি ওই আলোচনা তুলে ধরলাম,
একজন আমাকে চ্যালেন্জ্ঞ করলো যে লম্বা জামা ,টুপি,পাগড়ি এগুলি মক্কা মদিনার কাফির মুশরিকরাও পড়তো । তাই এগুলো সুন্নাত নয়। এগুলির সম্পর্কে কুরআন হাদিসের কোনো দলীল নাই। মহানবী সা. পরতেন কারণ এগুলি আরবের পোষাক ছিল। দয়া করে রেফারেন্স জানাবেন যাতে আমারও সন্দেহ নিরসন হয়।
◉◉◉ জবাবঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
এ বক্তব্যটি কোন নবীপ্রেমিকের কথা নয়, নবীজীর দুশমনদের কথা হতে পারে। কাফেররা কী করেছে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের প্রিয় নবীজী কী করেছেন? সেটাই আমাদের আলোচ্য ও বিবেচ্য। রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজ উম্মতের জন্য আদর্শ।
তবে কতিপয় সুনির্দিশ বৈশিষ্ট রাসূল সাঃ এর ছিল যা অন্য কারো জন্য জায়েজ নয়। যেমন চারের অধিক বিয়ে করা ইত্যাদি। এটা রাসূল সাঃ এর বৈশিষ্ট। এমন কতিপয় সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট ছাড়া রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমল, প্রতিটি চাল-চলন একজন নবী প্রেমিক উম্মতের কাছে আদর্শ ও পালনীয়।
রাসূল সাঃ এর সকল আমলকে আদর্শ সাব্যস্ত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [٣٣:٢١
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। {সূরা আহযাব-২৩}
পোশাকের মাঝে রাসূল সাঃ কোন নমুনা আমাদের জন্য রেখে যান নি? তিনি শুধু মক্কার কাফেরদের অনুসরণে জামা কাপড় পরিধান করে গেছেন? এমন কথা রাসূল বিদ্বেষী ছাড়া অন্য কেউ কিছুতেই বলতে পারে না।
যারা আল্লাহ ও হাশরে বিশ্বাস রাখে তাদের জন্য নবীজীর পোশাকে, নবীজী কথায়, নবীজীর প্রতিটি আমলে উত্তম নমুনা আছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ পাক।
কিন্তু যারা আল্লাহ ও হাশরে অবিশ্বাসী তাদের জন্য নবীজীর পোশাকে, নবীজীর চাল-চলনে আদর্শ না থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। তারা নবীজী সাঃ এর চাল-চলন ও পোশাক পরিচ্ছদ না দেখে কাফেরদের পোশাক পরিচ্ছদ দেখেই আকৃষ্ট হবে বেশি এটাই স্বাভাবিক।
কে কী করেছে? সেটা কোন মুসলমান বিবেচনা করতে পারে না। একজন মুসলমান দেখবে আমাদের আদর্শ, আমাদের পথিকৃত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কী করেছেন? রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজের শর্তহীন ও যুক্তিহীনভাবে অনুসরণের নাম দ্বীন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ [٣:٣١
বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূলা আলে ইমরান-৩১}
সর্বক্ষেত্রে নবীজীর অনুসরণকে আল্লাহ প্রেমের নিদর্শন বলা হয়েছে। আর হাদীসে কাফেরদের অনুসরণকে জাহান্নামী হওয়ার নিদর্শন বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ».
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৪০৩৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৯৬৬, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-২০৯০৮৬)
একজন মুমিন মুসলমান প্রতিটি আমলে রাসূলের মাঝে আদর্শ ও নমুনা খুঁজে বেড়ায়। আর নবী বিদ্বেষীরা খুঁজবে কাফেরদের মাঝে এটাই স্বাভাবিক। তাই তাদের মুখে নবীজী সাঃ এর পরিধান করা পোশাকে থাকা আল্লাহ তাআলার ঘোষণা দেয়া আদর্শিক রূপরেখা বর্জনের জন্য স্লোগান আসতেই পারে। নবীপ্রেমিকের মুখে এমন কুফরী কথা আসতে পারে না।
রাসূলে কারীম সাঃ এর প্রতিটি কর্মের অনুসরণকে রাসূল সাঃ এর সাথে জান্নাতে যাওয়ার পথ বলে ঘোষণা করে বলেন-
ومن أحيا سنتي فقد أحبني ومن أحبني كان معي في الجنة
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত তথা পথ-পদ্ধতিকে জিন্দা করবে তথা পালন করবে, সে আমাকে ভালবাসল, আর যে, আমাকে ভালবাসল, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬৭৮}
◉◉◉ সুন্নাত কাকে বলে?
السنة تطلق في الأكثر على ما أضيف إلى النبي من قول أو فعل أو تقرير
সুন্নাত বলা হয়, রাসূল সাঃ এর কথা, কাজ ও চুপ থাকাকে। {আনওয়ারুল কাশিফাহ, উলুমুল হাদীস ফি জাওয়ি তাতবীকাতিল মুহাদ্দিসীন, কাওয়ায়েদুত তাহদীস ফি ফুনুনি মুসতালাহিল হাদীস, লিসানুল মুহাদ্দিসীন}
রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমলকে অনুসরণের চেষ্টা করা নবীপ্রেমিকের কাজ। নবীজী সাঃ এর আমল বর্জনের বাহানা খোঁজা নবী বিদ্বেষীদের কাজ। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাঃ যাই করেছেন, যে কারণেই করেছেন, তা’ই অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন দলিল ও যুক্তি ছাড়া। এ কারণেই -
☞ রাসূল সাঃ এর মজাক করে বলা আবু হুরায়রা তথা বিড়ালওয়ালা নাম পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন সাখার রাঃ।
☞ সাহাবী আব্দুল্লাহ নামের সাথে জোড়ে নিলেন “জুলবাদাইন” তথা দুই চাদরওয়ালা নাম।
☞ আরেকজন জোরে নিলেন জুলইয়াদাইন তথা হাতওয়ালা নাম।
যুক্তি খুঁজেননি, কেন বলেছেন রাসূল সাঃ? রাসূল সাঃ বলেছেন এর চেয়ে আর বড় দলিল কি আছে একজন একনিষ্ট ভক্তের কাছে?
এ কারণেই -
☞ যুক্তিহীনভাবে রাসূল সাঃ কে ভালবেসে এক সাহাবী সারা জীবন খাবারের তালিকায় কদু রাখতে চেষ্টা করেছেন যেহেতু রাসূল সাঃ পছন্দ করতেন।
☞ আব্দুল্লাহ বিন ওমর অকারণেই মদীনা থেকে মক্কায় যাওয়ার পথে নির্দিষ্ট স্থানে বসে পড়তেন, যেহেতু রাসূল সাঃ কোন কারণে সেখানে একদিন বসে ছিলেন।
☞ হযরত ওমর রাঃ বিনা কারণে ইচ্ছেকৃত মাটিতে বসে গিয়েছিলেন এক স্থানে যেহেতু একদিন রাসূল সাঃ উক্ত স্থানে হোচট খেয়েছিলেন।
এই সবই তীব্র মোহাব্বত ও হৃদয়ের টানের ব্যাপার। নবীজী সাঃ কে হৃদয়ের সবটুকু নিংড়ে ভালবাসার নিদর্শন।
রাসূল সাঃ এর অনুসরণ থেকে দূরে থাকতে নোংরা যুক্তি দিয়ে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা করা গোটা পৃথিবীর আদর্শ মানব নবীজী সাঃ এর পোশাককে মক্কার কাফেরদের অনুসরণ বলাটা নবীপ্রেমিকরা করবে না। নবীবিদ্বেষীদের বেআদবীর বহিঃপ্রকাশ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২০
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×