এম এস রানা
পিলখানায় ঘটে যাওয়া সেনা হত্যাকান্ডের ঘটনা আলোচনাকালে কযেকটি তথ্য জানতে পারলাম... উত্তর জানা নেই... কাজেই কোনো সমাধান পেলাম না...
১. পিলখানা সঙশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক টাওয়ারগুলোর রেকর্ড অনুযায়ী নাকি ওই এলকা থেকে প্রায় তিনশ'রও বেশিবার ভারতে ফোন করা হয়েছে... এতবড় একটা ষড়যন্ত্রের কালে কারা ফোন করেছে এতবার? কাকে ফোন করেছে? কেন করেছে?
২. ওই ঘটনার আগে ও পরে নানক এবং ডিএডি তৌহিদ পরস্পরের সঙ্গে নাকি মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন প্রায় ৩০০ মিনিটট। কী কথা তাদের এত? কেন?
৩. সেনা অফিসার কামরুজ্জামান প্রশ্ন রেখেছেন, 'যেখানে এতজন অভিজ্ঞ সেনা অফিসার টানা দুইদনেও পিলখানা থেকে বাইরে আসতে পারলেন না, সেখানে কী করে এতজন [কমপক্ষে ৭ হাজার] বিডিআর এতগুলো মানুষের চোখে ফাকি দিযে বেরিয়ে আসল এবং পালিয়ে গেল?
আসলেই কী করে? কোনো উত্তর জানা আছে?
৪. অস্ত্র সমর্পনের কথা বলেও যখন বিডিআর-রা অস্ত্র সমপর্ন করছিল না, তখনও কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সেনাবাহিনীর মতো এত দক্ষ একটি দলকে বিডিআরে অপারেশন চালানোর পারমিশন দিলেন না? তাহলে অন্তত এতগুলো পরিবারের সম্ভ্রম হানি ঘটত না!
৫. যখন মেজর শাকিলসহ অন্য অফিসারদের মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না, এবং বিডিআর-রা দাবি করছিল সবাই বেঁচে আছেন এবং সুস্থ আছেন, তখন কেন নিশ্চত হওয়ার জন্য অফিসারদের সংঙ্গ ফোনে একটিবারের জন্য কথা বলতে চাইলেন না কেউ?
৬. অনেকেই বলছেন, তখন আক্রমন চালালে সারাদেশের বিডিআর-রা আসল ঘটনা না জেনে বিদ্রোহ করে বসত। যতদূর বুঝি, চাইলেই মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে অপারেশন চালানো যেত, আর আমাদের মিডিয়া এখন অনেক অগ্রসর, তাদের যদি বলা হতো, দেশের সার্থে আপাতত কোনো নিউজ লাইভ কাস্ট করবেন না, তাহলে সেটা সম্ভব হতো। ফলে বিডিআর-রা কোনো রকম ভুল তথ্য পাওয়া থেকে বিরত থাকত। যতদূর শুনেছি, আমাদের সেনাবাহিনী সব ধরনের প্রস্তুতি নিযে তৈরি ছিল, তৈরি ছিল আমাদের দক্ষ বিমান বাহিনীও। তাদের তথ্য মতে এটা ছিল মিনিট দশেক সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের অপারেশন। অতচ, ভেতর থেকে বারবার ফোন করা হলেও, তারা কেবল বলতে পেরেছে ফোর্স তৈরি আছে, একটু অপেক্ষা করুন, যে কোনো মুহূর্তে আমরা ভেতরে আসছি, কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। দাতে দাত চেপে, দাড়িয়ে থেকেছে তারা, ভাইয়ের মৃত্যু আর বোনদের করুণ আর্তনাদে তাদের চোখ থেকে ঝরেছে অশ্রু। যে সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মিশনে গিয়ে নম্বর ওয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করে, তারাই তাদের নিজের দেশে পাথরের মূর্তির মতো দাড়িয়ে রইল অসহায হয়ে।
কেন?
৭. রাতে যখন অনেকেই ভেতরে গেলেন, বিভিন্ন টিভি ফুটেজে আমরা দেখলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনসহ অনেককেই। কিন্তু নানককে দেখা গেল না কেন? তিনি কোথায় ছিলেন তখন? অথচ তিনিই তো সবার আগে বীর দর্পে ঢুকে গিয়েছিলেন ভেতরে! বেরিয়ে এসেছেন সেই ভোর রাতে! কী করেছেন তিনি সারা রাত?
৮. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অস্ত্র জমা নিলেন, হাজার হাজার বি্ডিআরের অল্প কিছু অস্ত্র জমা নিযে তিনি সন্তুষ্ট হলেন, অথচ যেখানে অস্ত্র জমা নেওয়া হচ্ছিল সেখানেই নাকি পেছনের কক্ষটাতেই বন্দী ছিল অনেক লোক। তারা ভেতর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনতে পেয়েছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের কারো কোনো শব্দ শুনতে পান নি? নাকি না শোনার ভান করেছেন? অথচ, তাদের তথ্যমতে, তখন নাকি তাদের অনেকেই কাশছিলেন, ছোট্ট একটা শিশু কাঁদছিল। কই তাদের শব্দ তবে কেন শোনা গেল না?
৯. ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস কার আদেশে পিলখানার তিন কিলোমিটারের মধ্যে থেকে সবাইকে সরে যেতে বললেন? কেন বললেন? তিনি এখন কোথায়?
১০. সেনাবাহিনীর ৮০ ভাগ সেনা মানসিকভাবে ভেঙ্গ পড়েছে। এতদিনের আত্মবিশ্বাস তাদের ফিরিয়ে দেবে কে? কী করে? যে দেশ তাদের কঠোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে অথচ সেই প্রশিক্ষণ তাদের নিজের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কাজে লাগাতে পারে না, যে দেশ তাদের নিরাপত্তা বিধান করতে পারে না, সেই দেশের জন্য এই বীর সেনারা পূর্ণ মনোবল নিয়ে কাজ করতে ত্যাগের মহিমায় আবারো উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারবে তো?
এখন তদন্ত হচ্ছে, সময় গড়াচ্ছে।
সঠিক তথ্য উদঘাটন হবে তো?
নিশ্চয়ই হবে। দোষীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে, এটাও আশা করি।
দিন যায়, কথা থাকে, থাকে আশা, আমাদের প্রত্যাশা আমাদের বীর সন্তানরা ভেঙ্গে পড়বেন না। আবারো পূর্ণ মনোবল নিয়ে কেবল দেশেই নয, সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে সুনাম অর্জন করবেন, বযে আনবেন দেশের সম্মান!