শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মুক্তিযুদ্ধের ভাষ্কর্য নির্মিত হতে যাচ্ছে। এটি নিয়েই যত নাটকিয়তার শুরু। আমি জানি না বাংলাদেশে কতটি পীর আছে, আর এদের কাজই কি? আমার কাছে মনে হয় তাদের আর তাদের মুরিদদের তাদের ঠুনকো ঈমান রক্ষা করা ছাড়া আর কোন কাজ নাই। ভাষ্কর্য নির্মানের সিদ্ধান্তের পরপরই এরকম হাজারো পীরের লাখো মুরিদ মেসে মেসে এসে তাদের অশেষ নেকী হাসিল করার চেষ্টায় লিপ্ত। তারা মেসে মেসে গিয়ে ছাত্রদের মুর্তি নির্মানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহবান জানচ্ছে। এর পিছনো তাদের ঠুনকো যুক্তিগুলো হল-
১। ভাষ্কর্যের নামে মুর্তি।
২। শাহজালালের পুন্যভুমিতে মুর্তি।
৩। ঈমানী দায়িত্ব।
এগুলো নিয়ে কিছু বলার আগে যারা এ নিয়ে আন্দোলন করছে তাদের নিয়ে কিছু কথা বলি। বাংলাদেশে আর কিছু থাকুক আর না থাকুক, অলিতে গলিতে মসজিদ আছে হাজারে হাজারে আর আছে গজিয়ে ওঠা পীর। যদিও মসজিদগুলো শুক্রবার ছাড়া ব্যবহার হয় না, আর পীরদের কাজটা কি তা আমি জানি না। মসজিদগুলো অন্তত সপ্তাহে একবার কাজে লাগে, পীরের দরকার কখন হয় আমার বোধগম্য না। আর দরকারই বা হবে কেন? দেশের লাখো কি কোটি কোটি সমস্যা তাদের (পীর) কাছে কোনই গুরুত্ব পায় না। তাদের কাছে একমাত্র গুরুত্বপুর্ণ জিনিষ হল তাদের পিতৃদত্ত ঈমান। আমাদের দেশের দারিদ্রতা, বেকারত্ব, নারীর প্রতি বৈষম্য, অর্থনৈতিক মন্দা এগুলো তাদের কাছে কোন সমস্যাই মনে হয় না। কারন দারিদ্র বিমোচন, বেকারত্ব দুরীকরন সহ বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় তাদের কোন কর্মসুচী বাস্তবায়নে তাদের কোন আগ্রহ দেখি না। এই সেক্টরগুলোতে তাদের কোন কর্মসুচিও আমার চোখে কখনো পড়ে নি। আমার আবার চোখেও সমস্যা আছে! তাদের বয়ানে আছে শুধু একটা মাত্র বিষয়, আর তা হল কিভাবে ঈমান শক্ত করা যায়। ঈমান শক্ত করার কাজেই তারা আর তাদের ভক্তরা যারা জাহান্নামের ভয়ে নাহয় জান্নাতের লোভে তাদের ক্বালবের সাথে নিজেদেরকে জুড়ে নিয়েছে তারা ব্যস্ত থাকে।
এবারে আসি তাদের ঠুনকো যুক্তিতে। তাদের প্রথম যুক্তি ভাষ্কর্যের নামে মুর্তি। তারা যদি না জানে যে ভাষ্কর্য আর মুর্তির মধ্যে পার্থক্য কি এই অজ্ঞতার বোঝা অন্যের উপর চাপানো কেন?
শাহজালালের পুন্যভুমিতে মুর্তি! মুর্তি যদি ইসলামে নিষিদ্ধই হয় তাহলে তা কি শুধু মাত্র পুন্যভুমিতে নিষিদ্ধ? যদি তা না হয় তাহলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ভাষ্কর্যের নির্মানকাজ চলার সময় এরা কি কোন প্রতিবাদ করেছিল? এমন এক দেশে থাকি রে ভাই। জাতীয় দিবসগুলোতে দেশের নেতৃস্থানীয়রা যখন বিভিন্ন পাথরের স্থাপনায় পুষ্পস্তবক অর্পন করে এসে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করে তখন এইসব মাওলানার তো কিছু বলতে শুনি না।
তোমার ঈমানী দায়িত্ব নিয়ে তুমি থাক। অন্য কেউ যদি ঈমান নিয়ে মরতে না চায় তাহলে তুমি কি করবা? তোমার ঈমান তার উপর চাপায়ে দিবা? ঈমানের এসব ব্যবসায়ীর ধারনা তাদের ঈমান একেবারে শুদ্ধ। এটা অন্যের উপর চাপিয়ে দেবার অধিকার তাদের আছে।
এখন জনগন থেকে দুরে থাকা এইসব পীরদের কথা মেনে কেন নিতে হবে? এর পিছনে একটা কারন খুজেও পাই না। খারাপ লাগে তখন যখন দেখি আমার ক্যম্পাসের কোন ভাল সাবজেক্টে পড়া বড়ভাই হুদাই ঐসব পীরদের কথা শুনে ভাষ্কর্য নিয়ে মেসে আসে হেদায়েতের বস্তা নিয়ে। এদেশের পীরদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন তা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। তারপরও একটা সর্বচ্চ বিদ্যপীঠে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী যখন ঐসব প্রায় মুর্খ পীরদের পিছে ছোটে তখন কী-বোর্ডে লেখা থেমে যায়....
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫০