. ছবিঃ ডঃ জাফর ইকবাল
. মনে আছে কোন এক এমপি জৈনিক স্যারকে কানে ধরিয়েছিলো? কানে ধরার শাস্তি কোন অপরাধীকে দেয়া হয় এটি একটি লজ্জাজনক কাজ, সেদিন এদেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ কানে ধরাকে গায়ে মেখেছিল।
এইতো কদিন আগে কোন এক পিতা লজ্জায় ক্ষোভে তাঁর সন্তান ধর্ষণের বিচার চায়না বলেছিলো। ধরেন আমাকে কেউ অযৌক্তিক ভাবে শুয়োর বললো আমি তার প্রতিবাদ করতে তুই শুয়োর বলাটাই বাঞ্চনীয়, তবে আমার আর তার মাঝে ব্যাবধান কিছু থাকলো ? তাই যদি রাগে ক্ষোভে মেনে নেই হ্যাঁ আমি শুয়োর যদি তার নুন্যতম বিবেকবোধ থাকে সে লজ্জিত হতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রের সম্মানিত কোন ব্যাক্তি আমাকে এমন বলেন তবে রাগে ক্ষোভে চিৎকার করে সেই উপাধিকে ধারণ করে এর প্রতিবাদ ছাড়া আর কি উপায় থাকে? আপনি আজ অনেক দিন পর এই কথাটা নিয়ে লিখতে ইচ্ছে পোষন করেছেন ধন্যবাদ। স্যার আপনি কি একটিবারের জন্যও চিন্তা করেন নি এই ছাত্রগুলি কেন এমন ঘৃণিত শব্দকে ধারণ করছে? স্বাভাবিক কারণে কোন নির্বোধ ও কি নিজের গায়ে ঘৃনিত কোন শব্দ লিখবে? আর সেদিন শুধু আমি রাজাকার দাবি করা ছেলেটি আপনার চোখে পড়লো আপনি দেখেন নি "চাইতে এলাম অধীকার হয়ে গেলাম রাজাকার" লাইনটি? মাননীয় মন্ত্রী মতিয়া চোধুরীর সেই বক্তৃতার প্রেক্ষিত একটিবার টেনে তাঁর পক্ষেই যুক্তি দাড় করানোর চেষ্টা করলেও ভাবতাম স্যার অন্তত সত্যটুকু চাপা দেয় নি।আপনার এহেন আচরণ কি প্রমাণ করে না আপনি মিথ্যার বেসাতি দিয়ে আপনার ছাত্রদের কৌশলে অপরাধীর কাটগড়ায় দাড় করাতে চাইছেন? রাজাকার শব্দটা আজ কেন এতো সহজবোধ্য একটিবার ও কি তার কারণ খুঁজার ইচ্ছে হয় না আপনার ? বিশ্লেষণ করার ইচ্ছে হয়নি? কিভাবে হবে স্যার আপনি যে চেতনার ব্যাবসায়ী, চেতনার বিরুদ্ধে যত মানুষকে দাড় করাতে পারবেন আপনার ব্যাবসা ততো জনপ্রিয় হবে।
. শ্রদ্ধেয় স্যার আপনি খুব সম্মানিত ব্যাক্তি, মনে আছে আপনার প্রতিটা বিপদে, সংকটময় মুহুর্তে এই প্রিয় ছাত্ররা আপনার জন্য কেঁদেছে, জৈনিক এমপি আপনাকে চাবুকের বাড়ি দিবে বলেছিলো সেদিন সব ছাত্ররাই এর প্রতিবাদ করেছিলো, ছাত্রলীগ আপনার সাথে ঝামেলা করেছিলো আপনার সহধর্মিনীকে অপদস্থ করেছিলো সাধারণ ছাত্ররাই আপনার পাশে ছিলো, ছুরি দিয়ে কোপ দেয়া হয়েছিল সেদিন প্রতিটা ছাত্রের চোখে জল ছিল।
. আজ আপনি সেই প্রিয় ছাত্রদের শুধু কৌশলে ফাসানোর অপচেষ্টা করেন নি আপনি তাদের আচরণে বমি না আসলেও কোন এক বিশেষ গোষ্টিকে খুশি করতে আংগুল ঢুকিয়ে তাদের উপর বমি করার ইচ্ছে পোষণ করেছেন, এতটাই ঘৃণিত আপনার সেই ছাত্ররা ??
মনে রাখবেন আপনার এই বমি প্রজন্ম কোনদিন ভুলবে না আপনি পুরো ছাত্র সমাজের উপর হড়হড় করে বমি করেছেন।
. স্যার আপনি কি সুস্থ আছেন কম্পলিটলি? নাকি সাইকোলোজিক্যাল ডিসর্ডারড হয়ে গেলেন? কদিন আগে আপনার ৭১ এ গর্তে লুকিয়ে থাকার কাহিনি দেশের মানুষের হাসির খোরাক যুগিয়েছিলো। আসলে কথাটা বিনোদিত করলেও ধন্যবাদ আপনাকে যুদ্ধকালিন প্রেক্ষাপটে আপনার অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য। স্যার বিশ্বাস করেন সেদিন যদি আমি থাকতাম যুদ্ধে যেতে না পারলেও ঈদুরের মতো গর্তে লুকুতাম না।
. ছবিঃ সর্বকণিষ্ট মুক্তিযুদ্ধা বীরপ্রতিক শহিদুল ইসলাম বংগবন্ধুর কোলে,
. লজ্জা করেনা ১২ বছর বয়েসি গেয়ো যুবক যুদ্ধে ঝাপিয়ে বীর প্রতিক উপাদি পেয়েছে, কিন্তু আপনার মতো ১৯ বছরের হৃষ্টপুষ্ট যুবক গর্তে লুকিয়েছিলেন, তাও আবার ঢাক ঢোল বাজিয়ে প্রচার করছেন ? আপনি কি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নারীদের চেয়েও দুর্বল ছিলেন? আফসোস এদেশে বীরপ্রতিক খেতাবপ্রাপ্ত সর্বোকনিষ্ট মুক্তিযুদ্ধা প্রয়াত শহিদুল ইসলাম লালুরা কুলিগিরী, বাবুর্চিগীরি করে জীবন কাটায় আর জাফর স্যারের মতো গর্তে লুকিয়ে থাকারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পুঁজি করে দাপিয়ে বেড়ায়।
. মনে রাখবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কারো একার সম্পদ নয়, এদেশের মুক্তিকামী সকল মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত, এ গৌরব সকলের। আপনার কাছে মুক্তিযুদ্ধ , মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গল্প শুনা বড়ই বেমানান স্যার।
. আপনার প্রসংগে আমরা কি বলবো আপনার আপনা ভাই প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের বলাটাই কি যথেষ্ট নয়?
" ১৬ ডিসেম্বর, ভোর। ১৯৭১। আমার বুক ধক ধক করছে। বাজিছে বুকে সুখের মতো ব্যথা। বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমরা স্বাধীন। এখন আর মাথা উঁচু করে হাঁটতে সমস্যা নেই।… ‘নিজের দেশের মাটি/দবদবাইয়া হাঁটি।’ আমি দবদবিয়ে হাঁটার জন্যে বের হলাম। প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে আমার ছোট ভাইকে (জাফর ইকবাল)। শুনেছি, সে যাত্রাবাড়ীতে আছে। গর্তে বাস করে। যাত্রাবাড়ীতে আমার দূরসম্পর্কের এক মামা বাড়ির পেছনে গর্ত করেছেন। তিনি তাঁর স্ত্রী এবং দুই ছেলে নিয়ে গর্তে বাস করেন। জাফর ইকবাল যুক্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে।"- কত না অশ্রুজল, হুমায়ুন আহমেদ
শুনেছিলাম আপনি দেশের সম্পদ কিন্তু এ যে আমরা এক অলিক বিশ্বাসেই পড়ে আছি। মানুষ কিভাবে নিজের প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে দেবতা হতে হয় আপনি চোখে আংগুল দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছেন।
. শ্রদ্ধেয় স্যার আপনার কথার প্রতিবাদ করতে এখন রুচিতে বাঁধে।আসলে জ্ঞ্যানি, বুদ্ধিমান, সুশিল, খ্যাতি এসব অর্জন করা সহজ কিন্তু মানুষ হওয়া অনেক কঠিন। মনে রাখবেন আপনি যাদের খুশি করার জন্য আপনার এতো জনপ্রিয়তা ভালোবাসার উপর জুর করে বমি করলেন সেই বিশেষ গোষ্টি আপনাকে তাঁর জনপ্রিয়তার/স্বার্থের জন্য ডাস্টবিনে ফেলে দিতে একটু দ্বিধান্বিত হবে না। মনে রাখবেন এই দিন দিন নয় এদেশে অনেক বুদ্ধিজীবি, সুশীল জুতাপেটা খেয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ঘরে বসে আছে। আপনি বড্ড বোকা স্যার আসল ছেড়ে লাভ ধরলেন?
. শ্রদ্ধেয় জাফর স্যার আমাদের দুর্দিনে আপনার ব্যাবহারে আমরা বড্ড মাইন্ড করলাম। মনে রাখবেন দুর্দিন সবারই আসে!!
লেখকঃ
মোহাম্মাদ মোজাহিদ
বিবিএস (সম্মান) ,এমবিএস, হিসাববিজ্ঞান
এলএলবি (অধ্যয়নরত)
. ছবিসুত্রঃ google.com
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩