somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোস্টেলে একরাত কাটিয়ে হরতালে তাল-বেতাল পরীক্ষা ;)

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পরীক্ষার আগে বন্ধ যত দিনই থাক আর যত কঠিন সাবজেক্ট ই হোকনা কেনো পড়া শুরু হয় সেই দুই রাত আগে। পাঁচ দিন বন্ধ পেয়েও পড়িনি আগের দিন পড়বো বলে। যেদিন পড়া শুরু করবো সেদিন শুনি হরতাল। তার মানে পরীক্ষা হবে না। মজ্জাই মজ্জা.... !:#P !:#P পড়েটরে টাইম লস না করে ফেসবুকানোর সিদ্ধান্ত নিলাম এবং মনযোগ দিয়ে শুরুও করলাম।B-) কিন্তু এ অভাগীর কপালে যে সুখ সইবে না। পরীক্ষার আগের দিন দুপুরে বান্ধবী শিল্পার ফোন
= হ্যালো
== অই, কালকে পরীক্ষা হইবো, আমরা কলেজে যাইতেসি হোস্টেলে থাকমু, তুই কি করবি?
= পরীক্ষা মানে.....এইটা কেমন কথা...থাকবো কই....আচ্ছা রাখ দেখতেসি কি করা যায়

হোস্টেল লাইফটার প্রতি প্রবল আকর্ষন ছিলো (এখনো আছে তবে এখন মনে হয় একটু কমে গেছে) এরকম সহজেই সুযোগ পাবো ভাবিনি। আচমকা এই সুযোগে আসলে কিছুই ভাবতে পারছিলাম না কি করবো। একবার মন সায় দিচ্ছিলো না। আবার ভাবলাম হরতালের মাঝে সকালে যাবোই কিভাবে। তার চেয়ে ভাল চলেই যাই। শেষে চলেই গেলাম কলেজে।
ঝামেলা-টামেলার পর পেলাম থাকার এক জায়গা। সবাই রুমে রুমে জায়গা পেলেও আমরা চার বান্ধবী পেলাম টিভির রুমে।
পরে বুঝেছি সেখানেই ভাল হয়েছে। বিশআআআল এক রুম নিজেদের মত করে পড়তে পেরেছি।

পড়া কি আর হয়!! গল্প বান্দ্রামী-শয়তানী এগুলা করেই ত কুল পাইনা।;) শিল্পা এসেই ঘোষনা দিলো এবং সারাটা সময় বলে যাচ্ছিলো "দোস্ত আমি কিছু পড়িনাই, আমি আজ সারা রাত পড়মু" আমারে সারা রাত পড়তে হইবো। মেয়েটা ভাংগা রেকর্ড বাজাতে বাজাতে মাথা খারাপ করে দিসিলো। X(
আর আমি ঘোষনা দিলাম "আমিতো নয়টা বাজেই ঘুমাই পড়মু"B-)

ম্যাডামরা বলে তোমরা কম্বল-টম্বল নিয়ে আসো নাই কিছু? আমরা তো বড় জোর ম্যাট্রেস বিছিয়ে দিতে পারি:| মনে মনে কইলাম হ! পরীক্ষা দিতে আমু ল্যাপ কম্বল নিয়াX( মুখে বললাম জ্বী না ম্যাডাম, আমাদের কিছু লাগবে না।X(। যার কেউ নাই তার আল্লাহ আছে। আল্লাত আছেন ই আমাদের জন্যে ছিলো হোস্টেলের মেয়েরা। ক্লাস মেটরা খুব হেল্প করেছে কম্বল-কাঁথা, ম্যাচ-কয়েল দিয়ে।

সব ঠিকঠাক করে বসলাম পড়তে। হোস্টেলের বান্ধবী রোমানা এসে বললো রাতের খাবার ৮টার আগে খেতে নয়তো খাবার পাবোনা। একটু পর পর বড় আপু-ম্যাডামরা এসে কেয়ার করছিলেন। এক আপু এসে বললেন "৯টার আগে খাবার খেয়ে নিয়ো নয়তো পাবেনা, আর মামাদের প্লেট আছে ওগুলোতেই খেতে পারবে"
তন্বী আবার একটু খুতখুতে স্বভাবের। যার জন্যে ওর ভাই ওকে বলে ব্রাক্ষন! একদম ঠিক বলে। :P তো তন্বী বলে মামাদের প্লেটে খাবো, চাইটা-চুইটা কেম্নে রাখে....
বেচারীর মাথাটাই গেসে ওকে আস্বস্ত করে বললাম মামারা চাটবে কেনো ওগুলা মেয়েদের জন্যেই। পরে বুঝতে পারল ব্যাপারটা।
তন্বীর ব্যাপারটা আরেকটু ক্লিয়ার করি হলে কিছু চামচ দিয়ে খেতে গেলে বলবে "লক্ষ লক্ষ মেয়েরা খায়, এই চামচ দিয়ে খাবো....":|। বেচারী তন্বী। ;)

যাগগে খেতে যেয়ে দেখি সে এক এলাহী কারবার। টাকা দিয়ে টোকেন নিলাম। তিন বান্ধবী নিবে ভাত-মুরগী আর আমি ভাত-সর্ষে ইলিশ। যেয়ে দেখি মাছ শেষ মাছের মাথা আছে। বাসায় ওর চেয়ে বড় মাছের মাথাই খাইনা আর কাঁটা ওয়ালা অতো ছোট মাছের মাথা!:| শেষে বললাম মুরগী দিতে। মুরগী নাকি শেষ!:|
এবার বাধ্য হয়ে বললাম বললাম তেলাপিয়া মাছ দিতে( আমি হোস্টেলে নরমালি মাছ খাইনা কেমন যেনো ঘিন্না লাগে) চরম সংবাদটা তখনো অপেক্ষা করছিলো। তেলাপিয়া মাছও শেষ:-/
এবার ঠিক হলো মুগডাল খাবো। কিন্তু ডালের চেহারা দেখতে যেয়ে দেখি ওটা মাছের কাঁটা দিয়ে রান্না করা ডাল। :((:((
বান্ধবীরা তাই নিলো কিন্তু আমি নিলাম সবজী সাথে ছিলো মাছের কোফতা (কিয়ের কোফতা আলু দিয়া মাছ ভর্তা):|

যুথী ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বলে এই তোমাদের কারো মাথায় আবার উকুন আছে নাকি?
তন্বীর স্বভাব সুলভ জবাব "হ আরো কিসু আছে না, কিরমিও আছে...মুখটা খারাপ করে" । কি যে মজা পাইসি ওর উত্তর =p~ =p~ :P

কিছুক্ষন পর পর সবাই আসছিলো বলে তন্বী বলে, "শিল্পা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আসোনা...."
শিল্পা এক চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, "হ আমিতো খালি তগো কামই করমু"
তন্বী এক ঝাড়ি দিয়ে, "হ তুই জানোস না মানুষ বগুড়া রংপুর থিকা কাজের মাইয়া আনে আমি আনছি টংগী থিকা" উল্লেখ্য শিল্পার বাসা টংগী। :P
খাওয়াদাওয়ার পরে দাঁত ব্রাশ করার কথা উঠে। শিল্পা বলে "দোস্ত আমিতো ব্রাশ আনিনাই"
তন্বী: তাইলে ক্যান্টিনে যাও দেখো আছে কিনা
শিল্পা: ক্যান্টিনে পামু....
আমি: না থাকলে দেখ মামাগো দাঁত মাজার ব্রাশই নিয়া আবি :P:P
তন্বী: মামাদের বলবা সবচেয়ে সস্তা একটা ব্রাশ দেন। দেখা যাবো দাঁত ব্রাশ করার সময় তুলিগুলো ঝুরঝুর কইরা সব পরবে :P

শিল্পার জোরে পড়ার অভ্যাস। তন্বী হোস্টেলে থেকে অভ্যাস তাই এসবে কোন সমস্যা না হলেও আমার চুপচাপ পড়ার অভ্যাস বলে একটু সমস্যা হচ্ছিলো (এই কারনেই মনে হয়েছে হোস্টেলে আমি থাকতে পারবোনা) :P
যাগগে রাতের কথা মনেছিলো তাই সকালে তাড়াতাড়ি নাস্তা করতে গেলাম।
তন্বী বলে ভাত-মুরগী আজ খাবোই তাই ১২টায় গেলাম দুপুরের খাবারের জন্যে। ভাত-মুরগী খেয়ে পরীক্ষা দিতে গেলাম যার যার বিছানা-কাঁথা বুঝিয়ে দিয়ে।
ওহ আগের রাতে আমি উজবুকটা একটা কান্ড ঘটিয়েছি সেটাতো বলতেই ভুলে গেসি। এক ক্লাসমেট একটা কয়েল আর ম্যাচও দিয়েছিলো। কয়েলটা এনে টেবিলের উপর রেখে আমি নাড়ছিলা দেখে তন্বী বলে তোমার ভাব ভালনা ভেংগে ফেলবা এটা। তাই সরিয়ে রাখলো। কথা বলতে বলতে কিছুক্ষন পর কিভাবে জেনো নেড়ে নেড়ে পট করে সত্যিই দিলাম কয়েলটা ভেংগে। উজবুক পোলাপাইন আরকি।:P

পরীক্ষার জন্যে হয়ত সবাই একটু টেনশনে ছিলাম তারপরেও মজাটা কম হয়নি। জীবনের প্রথম রাত হোস্টেলে। অন্যরকমই হয়েছে। সত্যিই দোস্তজ অলয়েজ রকজজজ.... B-)B-)
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×