পরীক্ষার আগে বন্ধ যত দিনই থাক আর যত কঠিন সাবজেক্ট ই হোকনা কেনো পড়া শুরু হয় সেই দুই রাত আগে। পাঁচ দিন বন্ধ পেয়েও পড়িনি আগের দিন পড়বো বলে। যেদিন পড়া শুরু করবো সেদিন শুনি হরতাল। তার মানে পরীক্ষা হবে না। মজ্জাই মজ্জা....
= হ্যালো
== অই, কালকে পরীক্ষা হইবো, আমরা কলেজে যাইতেসি হোস্টেলে থাকমু, তুই কি করবি?
= পরীক্ষা মানে.....এইটা কেমন কথা...থাকবো কই....আচ্ছা রাখ দেখতেসি কি করা যায়
হোস্টেল লাইফটার প্রতি প্রবল আকর্ষন ছিলো (এখনো আছে তবে এখন মনে হয় একটু কমে গেছে) এরকম সহজেই সুযোগ পাবো ভাবিনি। আচমকা এই সুযোগে আসলে কিছুই ভাবতে পারছিলাম না কি করবো। একবার মন সায় দিচ্ছিলো না। আবার ভাবলাম হরতালের মাঝে সকালে যাবোই কিভাবে। তার চেয়ে ভাল চলেই যাই। শেষে চলেই গেলাম কলেজে।
ঝামেলা-টামেলার পর পেলাম থাকার এক জায়গা। সবাই রুমে রুমে জায়গা পেলেও আমরা চার বান্ধবী পেলাম টিভির রুমে।
পরে বুঝেছি সেখানেই ভাল হয়েছে। বিশআআআল এক রুম নিজেদের মত করে পড়তে পেরেছি।
পড়া কি আর হয়!! গল্প বান্দ্রামী-শয়তানী এগুলা করেই ত কুল পাইনা।
আর আমি ঘোষনা দিলাম "আমিতো নয়টা বাজেই ঘুমাই পড়মু"
ম্যাডামরা বলে তোমরা কম্বল-টম্বল নিয়ে আসো নাই কিছু? আমরা তো বড় জোর ম্যাট্রেস বিছিয়ে দিতে পারি
সব ঠিকঠাক করে বসলাম পড়তে। হোস্টেলের বান্ধবী রোমানা এসে বললো রাতের খাবার ৮টার আগে খেতে নয়তো খাবার পাবোনা। একটু পর পর বড় আপু-ম্যাডামরা এসে কেয়ার করছিলেন। এক আপু এসে বললেন "৯টার আগে খাবার খেয়ে নিয়ো নয়তো পাবেনা, আর মামাদের প্লেট আছে ওগুলোতেই খেতে পারবে"।
তন্বী আবার একটু খুতখুতে স্বভাবের। যার জন্যে ওর ভাই ওকে বলে ব্রাক্ষন! একদম ঠিক বলে।
বেচারীর মাথাটাই গেসে ওকে আস্বস্ত করে বললাম মামারা চাটবে কেনো ওগুলা মেয়েদের জন্যেই। পরে বুঝতে পারল ব্যাপারটা।
তন্বীর ব্যাপারটা আরেকটু ক্লিয়ার করি হলে কিছু চামচ দিয়ে খেতে গেলে বলবে "লক্ষ লক্ষ মেয়েরা খায়, এই চামচ দিয়ে খাবো...."
যাগগে খেতে যেয়ে দেখি সে এক এলাহী কারবার। টাকা দিয়ে টোকেন নিলাম। তিন বান্ধবী নিবে ভাত-মুরগী আর আমি ভাত-সর্ষে ইলিশ। যেয়ে দেখি মাছ শেষ মাছের মাথা আছে। বাসায় ওর চেয়ে বড় মাছের মাথাই খাইনা আর কাঁটা ওয়ালা অতো ছোট মাছের মাথা!
এবার বাধ্য হয়ে বললাম বললাম তেলাপিয়া মাছ দিতে( আমি হোস্টেলে নরমালি মাছ খাইনা কেমন যেনো ঘিন্না লাগে) চরম সংবাদটা তখনো অপেক্ষা করছিলো। তেলাপিয়া মাছও শেষ
এবার ঠিক হলো মুগডাল খাবো। কিন্তু ডালের চেহারা দেখতে যেয়ে দেখি ওটা মাছের কাঁটা দিয়ে রান্না করা ডাল।
বান্ধবীরা তাই নিলো কিন্তু আমি নিলাম সবজী সাথে ছিলো মাছের কোফতা (কিয়ের কোফতা আলু দিয়া মাছ ভর্তা)
যুথী ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বলে এই তোমাদের কারো মাথায় আবার উকুন আছে নাকি?
তন্বীর স্বভাব সুলভ জবাব "হ আরো কিসু আছে না, কিরমিও আছে...মুখটা খারাপ করে" । কি যে মজা পাইসি ওর উত্তর
কিছুক্ষন পর পর সবাই আসছিলো বলে তন্বী বলে, "শিল্পা দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আসোনা...."
শিল্পা এক চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, "হ আমিতো খালি তগো কামই করমু"
তন্বী এক ঝাড়ি দিয়ে, "হ তুই জানোস না মানুষ বগুড়া রংপুর থিকা কাজের মাইয়া আনে আমি আনছি টংগী থিকা" উল্লেখ্য শিল্পার বাসা টংগী।
খাওয়াদাওয়ার পরে দাঁত ব্রাশ করার কথা উঠে। শিল্পা বলে "দোস্ত আমিতো ব্রাশ আনিনাই"।
তন্বী: তাইলে ক্যান্টিনে যাও দেখো আছে কিনা।
শিল্পা: ক্যান্টিনে পামু....
আমি: না থাকলে দেখ মামাগো দাঁত মাজার ব্রাশই নিয়া আবি
তন্বী: মামাদের বলবা সবচেয়ে সস্তা একটা ব্রাশ দেন। দেখা যাবো দাঁত ব্রাশ করার সময় তুলিগুলো ঝুরঝুর কইরা সব পরবে
শিল্পার জোরে পড়ার অভ্যাস। তন্বী হোস্টেলে থেকে অভ্যাস তাই এসবে কোন সমস্যা না হলেও আমার চুপচাপ পড়ার অভ্যাস বলে একটু সমস্যা হচ্ছিলো (এই কারনেই মনে হয়েছে হোস্টেলে আমি থাকতে পারবোনা)
যাগগে রাতের কথা মনেছিলো তাই সকালে তাড়াতাড়ি নাস্তা করতে গেলাম।
তন্বী বলে ভাত-মুরগী আজ খাবোই তাই ১২টায় গেলাম দুপুরের খাবারের জন্যে। ভাত-মুরগী খেয়ে পরীক্ষা দিতে গেলাম যার যার বিছানা-কাঁথা বুঝিয়ে দিয়ে।
ওহ আগের রাতে আমি উজবুকটা একটা কান্ড ঘটিয়েছি সেটাতো বলতেই ভুলে গেসি। এক ক্লাসমেট একটা কয়েল আর ম্যাচও দিয়েছিলো। কয়েলটা এনে টেবিলের উপর রেখে আমি নাড়ছিলা দেখে তন্বী বলে তোমার ভাব ভালনা ভেংগে ফেলবা এটা। তাই সরিয়ে রাখলো। কথা বলতে বলতে কিছুক্ষন পর কিভাবে জেনো নেড়ে নেড়ে পট করে সত্যিই দিলাম কয়েলটা ভেংগে। উজবুক পোলাপাইন আরকি।
পরীক্ষার জন্যে হয়ত সবাই একটু টেনশনে ছিলাম তারপরেও মজাটা কম হয়নি। জীবনের প্রথম রাত হোস্টেলে। অন্যরকমই হয়েছে। সত্যিই দোস্তজ অলয়েজ রকজজজ....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





