somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাটুরিয়ায় আট ঘন্টার জ্যামে ; নীলু পড়েছিলো ঝালমুড়ির প্রেমে ;)B-)

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বছরের বেশী হয়েছে প্ল্যান করছি মাগুরা যাবো যাবো করে। কিন্তু কোন না কোন কারনে তা পিছিয়েই যায় বার বার। ছোট কাকা থাকেন চাকরী সূত্রে সেখানে। কাকী যাওয়ার জন্যে বলে বলে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। ভাবলাম ঈদের পরে যাবো কিন্তু কপাল আমার! পরীক্ষার ডেট পরে যায়! পরীক্ষা শেষ হলো ২৯ আগস্ট। শেষে ঠিক করলাম যা আছে কপালে ৩০ তারিখ-ই যাবো। আম্মাকে বললাম লাগলে আমি একাই যাবো তাও যাবোই।
শেষে দেখলাম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আম্মা হলেন আমার সঙ্গী।

সকালে বাসা থেকে গাবতলী যেয়ে ঘুরে টুরে উঠলাম হানিফের এক পঁচা বাসে। বাস দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সাধারনত দূরপাল্লার জার্নি করা হয়না। জীবনে সুযোগ একটু পেলাম, ভাল একটা বাসে চড়বো তা না। যাগগে কি আর করা। ১০টা বা তার পরে মনে হয় বাস ছাড়লো। ফেরী পারাপারে যাবো। ১২টার দিকে পাটুরিয়া গিয়ে পরলাম জ্যামে। বাবারে বাবা সে যে কী ম্যারাথন জ্যাম!! টেলিভিশনে খালি দেখি আর পেপারে পড়েছি জীবনে পড়িনি ওরকম জ্যামে। ৮ঘন্টা সেই পাটুরিয়ায় আটকা ছিলাম। ফেরী নাই। ছোট্ট দুইটা ফেরী দিয়ে নাকি ৬টা করে বাস পার করছে। বাস ড্রাইভার বললো রাত ৮টার আগে ফেরীর সিরিয়াল পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। শুনে অবিশ্বাস্য লেগেছিল এই ভেবে যে এতক্ষন জ্যামে থাকে কিভাবে! যাই হোক কিভাবে থাকে তা থেকে বুঝেছি!

গাড়ী পাটুরিয়া যাওয়া আগেই গেছে আমার ক্ষিধা লেগে! কি ভয়ানক কথা। ঘাটে বাস থামার পরে সাথে নেওয়া রুটি ডিম সেদ্ধ দিয়ে আপাতত খেলাম। ভাগ্যিস আম্মা সকালে বানানো রুটি গুলো সাথে নিয়েছিলো। রুটি নিয়েছিল আসলে বাসায় থাকলে ওগুলো আব্বা/ভাইয়া কেউ হয়ত খাবে না। নষ্ট হবে সেই জন্যে। যাক খুব কাজে দিয়েছে। পরে বাসে বসে বসে খাওয়ার জন্যে কিনলাম পপকর্ণ আর তিলের খাজা। সাথে ফোনের এক্সট্রা ব্যাটারী ছিলো তাই দিয়ে ফেসবুকে পরে রইলাম। মাঝে মাঝে এদিক সেদিক উকি দিয়ে দেখছিলাম। অনেক্ষন পর পর বাসটা একটু সামনে টানলে কিযে খুশী লাগতো তা আসলে বোঝানোর মত না।

এর মাঝে দেখি এক এক করে যাত্রীরা বাস থেকে ব্যাগ বোচকা নিয়ে লন্ঞ্চ পারাপারে চলে যাচ্ছে! বাসের ড্রাইভারও পরামর্শ দিচ্ছে যার তাড়া আছে সে যেনো চলে যায়! আমরা কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। সারাদিন যেমন তেমন দুপুর গড়ালে পড়লাম মহা টেনশনে। নরমালি মাওয়া দিয়েই বর্ষার সময় লন্ঞ্চে যেতে ভয়পাই নদীর ঢেউয়ের জন্যে আর আরিচার এখানের কথা শুনেছি আরো খরস্রোতা। তার উপর ঐপাড়ে গিয়ে আবার কোন বাসে উঠবো, কখনো যাইনি এই পথে, একা দুজন মেয়ে! একে একে দেখলাম আমাদের বাসের প্রায় সব যাত্রী নেমে গেছে আমরা ৭জন মেয়ে যাত্রী ছিলাম যাদের ২জনের সাথে ২টা পিচ্চি। উনারাও কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা। আম্মার নানান টেনশন মাথায় আসছে। ভয় আমারো লাগছিলো। মনে মনে প্রথমবারের মতন খুশী হলাম বাসা থেকে একা ছাড়েনি বলে। এখানে একটা কথা বলে রাখি, আমার খুব ইচ্ছে ছিল একা মাগুরা যাওয়ার। একা একা এই লম্বা জার্নিটা করার খুব খায়েশ ছিলো যা ঐ জ্যামে আটকা পড়ে একদম শেষ হয়ে গেছে।
বাসে বসে বসেই নেট, মেসেজ আর খাওয়া-দাওয়া চলছিলো পুরোদমে। দ্বিতীয় দফা রুটি খেলাম আলু ভাজি আর ডিম ভাজা দিয়ে। পপকর্ণ খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে পাশের সিটের এক পিচ্চিকে সাধলাম, ভাবলাম আমার প্যাকেট থেকে একটু নেবে হয়ত পিচ্চি দেখলাম প্যাকেটটাই হাতে নিয়ে নিলো :P (অর্ধেকের একটু বেশী খেয়ে ছিলাম মনে হয়)। যাক বাঁচলাম ঐ খড়খড়ে খইয়ের হাত থেকে। :D

এর মাঝে দুবার ঝালমুড়ি খেলাম। কম ঝালে করা সর্ষের তেলের ফ্লেভারে পাটুরিয়া ঘাটের ঝালমুড়ি!! আহ...অনেক দিন মনে থাকবে। :D ফেরীতে নেমে আরো একবার খেতে চেয়েছিলাম পরে ভাবলাম সারাদিন খুব একটা কম খাইনি, থাক এবার ক্ষান্ত দেই । ;)

এর মাঝে সন্ধ্যা নেমে এলে আম্মাকে দেখলাম ভয়ে তার গলার চেন, চুরি আংটি কানের দুল সব খুলে একটা পুটুলিতে বেধে পায়ের কাছে রাখে কাপড়ের ব্যাগ খুলছে। খোলার সময় পাসের সারির সিটে বসে (বাসে সিট খালি বলে ইচ্ছে মত যেখানে সেখানে বসেছিলাম পরে) দেখছিলাম তার কাজ। ব্যাগের চেন খুলতে দেখে আর থাকতে পারলাম না। ছোটখাটো এক ধমক দিয়ে বললাম ঐব্যাগে কেন ঢোকাচ্ছে। মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল মনে হয় টেনশনে! এসব জিনিস থাকবে নিজের কাছে হাতের কাছে, তা না দূরে ব্যাগে ঢোকাচ্ছে। পড়ে ধমক খেয়ে নিজের হাত ব্যাগেই মনেহয় ঢোকালো।
রাত আট টার দিকে মনে হয় ফেরীতে উঠলাম। এর মাঝে আম্মা গরমে অস্থির হয়ে হাওয়া খাওয়ার জন্যে বাস থেকে নামে। অনেক্ষন খোজ খবর না পেয়ে ফোন দিলে বলে বাস হারিয়ে ফেলেছে ! কেমনটা লাগে! :| । পরে আমি বাস থেকে নেমেছি খোজার জন্যে তার আগেই দেখি নিজেই খুজে খুজে চলে এসেছে।

তা বাসে বসে বসে সারাদিন কী খেয়েছিলাম সেটার একটা তালিকা দেই ;)
১। ডিম সেদ্ধ+রুটি
২। পপকর্ণ
৩। ঝালমুড়ি
৪। রুটি+ডিম ভাজা + আলুভাজি
৫। পেয়ারা
৬। ঝালমুড়ি
৭। কেক
মাত্র এই ;) । তিলের খাজাটা আর খাওয়ার টাইম-ই পাইনাই । :(

ওখানকার ফেরী খুব দ্রুত চলে। ফেরীতে ওঠার পরে বাস থেকে নামলাম। রাতের নদী ফেরীর আলো ছাড়া দেখার তেমন কিছু নেই তাও বেশ ভালই উপভোগ করলাম মা-মেয়ে মিলে। সকল প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ধকল কাটিয়ে রাত সাড়ে দশটার দিকে পৌছলাম মাগুরা গিয়ে।
সেখানে যে কয়দিন ছিলাম প্রতিদিন ই বৃষ্টির কারনে বাসায় বন্দী ছিলাম। সেই দুঃখের কাহিনি আর নাইবা বলি। আর ফেরার পথে পাটুরিয়ার ফেরী বন্ধ ছিল বলে ফরিদপুর দিয়ে এসেছি। সেখানেও আবার আরেক কাহিনী হইসে, আজ নাহয় সে কথা থাক! হিসেব করে দেখলাম মাওয়া আসতে আসতেই যাবে সন্ধ্যা হয়ে তাই বাড়ীতে রাতটা থেকে পরের দিন ফিরলাম ঢাকা।

যাক তার পরেও বলবো জার্নিটা ভালই হয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪১
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×