এক বছরের বেশী হয়েছে প্ল্যান করছি মাগুরা যাবো যাবো করে। কিন্তু কোন না কোন কারনে তা পিছিয়েই যায় বার বার। ছোট কাকা থাকেন চাকরী সূত্রে সেখানে। কাকী যাওয়ার জন্যে বলে বলে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। ভাবলাম ঈদের পরে যাবো কিন্তু কপাল আমার! পরীক্ষার ডেট পরে যায়! পরীক্ষা শেষ হলো ২৯ আগস্ট। শেষে ঠিক করলাম যা আছে কপালে ৩০ তারিখ-ই যাবো। আম্মাকে বললাম লাগলে আমি একাই যাবো তাও যাবোই।
শেষে দেখলাম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আম্মা হলেন আমার সঙ্গী।
সকালে বাসা থেকে গাবতলী যেয়ে ঘুরে টুরে উঠলাম হানিফের এক পঁচা বাসে। বাস দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সাধারনত দূরপাল্লার জার্নি করা হয়না। জীবনে সুযোগ একটু পেলাম, ভাল একটা বাসে চড়বো তা না। যাগগে কি আর করা। ১০টা বা তার পরে মনে হয় বাস ছাড়লো। ফেরী পারাপারে যাবো। ১২টার দিকে পাটুরিয়া গিয়ে পরলাম জ্যামে। বাবারে বাবা সে যে কী ম্যারাথন জ্যাম!! টেলিভিশনে খালি দেখি আর পেপারে পড়েছি জীবনে পড়িনি ওরকম জ্যামে। ৮ঘন্টা সেই পাটুরিয়ায় আটকা ছিলাম। ফেরী নাই। ছোট্ট দুইটা ফেরী দিয়ে নাকি ৬টা করে বাস পার করছে। বাস ড্রাইভার বললো রাত ৮টার আগে ফেরীর সিরিয়াল পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। শুনে অবিশ্বাস্য লেগেছিল এই ভেবে যে এতক্ষন জ্যামে থাকে কিভাবে! যাই হোক কিভাবে থাকে তা থেকে বুঝেছি!
গাড়ী পাটুরিয়া যাওয়া আগেই গেছে আমার ক্ষিধা লেগে! কি ভয়ানক কথা। ঘাটে বাস থামার পরে সাথে নেওয়া রুটি ডিম সেদ্ধ দিয়ে আপাতত খেলাম। ভাগ্যিস আম্মা সকালে বানানো রুটি গুলো সাথে নিয়েছিলো। রুটি নিয়েছিল আসলে বাসায় থাকলে ওগুলো আব্বা/ভাইয়া কেউ হয়ত খাবে না। নষ্ট হবে সেই জন্যে। যাক খুব কাজে দিয়েছে। পরে বাসে বসে বসে খাওয়ার জন্যে কিনলাম পপকর্ণ আর তিলের খাজা। সাথে ফোনের এক্সট্রা ব্যাটারী ছিলো তাই দিয়ে ফেসবুকে পরে রইলাম। মাঝে মাঝে এদিক সেদিক উকি দিয়ে দেখছিলাম। অনেক্ষন পর পর বাসটা একটু সামনে টানলে কিযে খুশী লাগতো তা আসলে বোঝানোর মত না।
এর মাঝে দেখি এক এক করে যাত্রীরা বাস থেকে ব্যাগ বোচকা নিয়ে লন্ঞ্চ পারাপারে চলে যাচ্ছে! বাসের ড্রাইভারও পরামর্শ দিচ্ছে যার তাড়া আছে সে যেনো চলে যায়! আমরা কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। সারাদিন যেমন তেমন দুপুর গড়ালে পড়লাম মহা টেনশনে। নরমালি মাওয়া দিয়েই বর্ষার সময় লন্ঞ্চে যেতে ভয়পাই নদীর ঢেউয়ের জন্যে আর আরিচার এখানের কথা শুনেছি আরো খরস্রোতা। তার উপর ঐপাড়ে গিয়ে আবার কোন বাসে উঠবো, কখনো যাইনি এই পথে, একা দুজন মেয়ে! একে একে দেখলাম আমাদের বাসের প্রায় সব যাত্রী নেমে গেছে আমরা ৭জন মেয়ে যাত্রী ছিলাম যাদের ২জনের সাথে ২টা পিচ্চি। উনারাও কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা। আম্মার নানান টেনশন মাথায় আসছে। ভয় আমারো লাগছিলো। মনে মনে প্রথমবারের মতন খুশী হলাম বাসা থেকে একা ছাড়েনি বলে। এখানে একটা কথা বলে রাখি, আমার খুব ইচ্ছে ছিল একা মাগুরা যাওয়ার। একা একা এই লম্বা জার্নিটা করার খুব খায়েশ ছিলো যা ঐ জ্যামে আটকা পড়ে একদম শেষ হয়ে গেছে।
বাসে বসে বসেই নেট, মেসেজ আর খাওয়া-দাওয়া চলছিলো পুরোদমে। দ্বিতীয় দফা রুটি খেলাম আলু ভাজি আর ডিম ভাজা দিয়ে। পপকর্ণ খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে পাশের সিটের এক পিচ্চিকে সাধলাম, ভাবলাম আমার প্যাকেট থেকে একটু নেবে হয়ত পিচ্চি দেখলাম প্যাকেটটাই হাতে নিয়ে নিলো
এর মাঝে দুবার ঝালমুড়ি খেলাম। কম ঝালে করা সর্ষের তেলের ফ্লেভারে পাটুরিয়া ঘাটের ঝালমুড়ি!! আহ...অনেক দিন মনে থাকবে।
এর মাঝে সন্ধ্যা নেমে এলে আম্মাকে দেখলাম ভয়ে তার গলার চেন, চুরি আংটি কানের দুল সব খুলে একটা পুটুলিতে বেধে পায়ের কাছে রাখে কাপড়ের ব্যাগ খুলছে। খোলার সময় পাসের সারির সিটে বসে (বাসে সিট খালি বলে ইচ্ছে মত যেখানে সেখানে বসেছিলাম পরে) দেখছিলাম তার কাজ। ব্যাগের চেন খুলতে দেখে আর থাকতে পারলাম না। ছোটখাটো এক ধমক দিয়ে বললাম ঐব্যাগে কেন ঢোকাচ্ছে। মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল মনে হয় টেনশনে! এসব জিনিস থাকবে নিজের কাছে হাতের কাছে, তা না দূরে ব্যাগে ঢোকাচ্ছে। পড়ে ধমক খেয়ে নিজের হাত ব্যাগেই মনেহয় ঢোকালো।
রাত আট টার দিকে মনে হয় ফেরীতে উঠলাম। এর মাঝে আম্মা গরমে অস্থির হয়ে হাওয়া খাওয়ার জন্যে বাস থেকে নামে। অনেক্ষন খোজ খবর না পেয়ে ফোন দিলে বলে বাস হারিয়ে ফেলেছে ! কেমনটা লাগে!
তা বাসে বসে বসে সারাদিন কী খেয়েছিলাম সেটার একটা তালিকা দেই
১। ডিম সেদ্ধ+রুটি
২। পপকর্ণ
৩। ঝালমুড়ি
৪। রুটি+ডিম ভাজা + আলুভাজি
৫। পেয়ারা
৬। ঝালমুড়ি
৭। কেক
মাত্র এই
ওখানকার ফেরী খুব দ্রুত চলে। ফেরীতে ওঠার পরে বাস থেকে নামলাম। রাতের নদী ফেরীর আলো ছাড়া দেখার তেমন কিছু নেই তাও বেশ ভালই উপভোগ করলাম মা-মেয়ে মিলে। সকল প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ধকল কাটিয়ে রাত সাড়ে দশটার দিকে পৌছলাম মাগুরা গিয়ে।
সেখানে যে কয়দিন ছিলাম প্রতিদিন ই বৃষ্টির কারনে বাসায় বন্দী ছিলাম। সেই দুঃখের কাহিনি আর নাইবা বলি। আর ফেরার পথে পাটুরিয়ার ফেরী বন্ধ ছিল বলে ফরিদপুর দিয়ে এসেছি। সেখানেও আবার আরেক কাহিনী হইসে, আজ নাহয় সে কথা থাক! হিসেব করে দেখলাম মাওয়া আসতে আসতেই যাবে সন্ধ্যা হয়ে তাই বাড়ীতে রাতটা থেকে পরের দিন ফিরলাম ঢাকা।
যাক তার পরেও বলবো জার্নিটা ভালই হয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




