দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্যে পরীক্ষা নিয়ে গত দুই বছর যাবত যেই নাটক শুরু হয়েছে তা আর কাউকে বলার না। মানুষ শুনলেও অবাক হয়ে যায়! যা হোক গত বছরের কাহিনী এখানে বলেছিলাম।
এই বছরও কাহিনী কম হয়নি বা হচ্ছেনা! আগেই জানতাম পরীক্ষার সময় দেশ উল্টে পাল্টে পাতালে, চাঁদে বা মঙ্গল-বুধে যেখানেই যাক না কেন পরীক্ষা হবেই হবে। তাই সেভাবেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। চলে এলো পরীক্ষা। অন্য সব ইয়ারের পরীক্ষা শুক্রবার করে পরেছে কিন্তু আমাদের-ই ভিন্ন! পরীক্ষার দিন হরতাল-অবরোধে যাবো কিভাবে। তাও পরীক্ষা সকাল ৯টায়! কি আর করা বহুত কাহিনী-টাহিনী করে ঠিক করলাম আপাতত এক বান্ধবীর বাসায় যাবো। এক বান্ধবী আজিমপুর পলাশী কলোনিতে সাবলেটে থাকে। ও আগেও বলেছিলো ওর রুমে বেড খালি আছে পরীক্ষার জন্যে যাতে একমাস থাকি। বান্ধবী ফোন করে বললো যাতে ওর রুমে উঠি। ৩তারিখ পরীক্ষা, দিশা না পেয়ে ভাবলাম আপাতত পলাশীতে যেয়েই উঠি। পরের পরীক্ষায় দেখা যাবে।
দুপুরে গোছগাছ করে রেডী হচ্ছিলাম আর মনে হচ্ছিলো না গেলেই পারতাম। কেন যেনো যেতে ইচ্ছে করছিল না। মনে হচ্ছিলো আমি যেনো কতদিনের জন্যে বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি, তাই খুব খারাপ লাগছিলো। অনেক কষ্টে কোনমতে বিদায় নিয়ে বের হলাম। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে দরদর করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো!! আমি প্রচন্ড ভাবে অবাক। ভেবেই পাচ্ছিলাম না কেন এরকম হচ্ছে। খুব বিরক্তও হয়েছিলাম।
যাইহোক আরেক বান্ধবী তন্বী উঠেছে ঐ কলোনীতেই অন্য একটি বিল্ডিংয়ে। তন্বীর রুমমেটরা বলছিলো আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের পাশে "ভূতের আস্তানা" নামে এক রেস্টুরেন্ট খুলেছে, ঐদিন ই (২ ডিসেম্বর) শুরু করেছে। তো সেখানে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০% ছাড় খাবারে। ঠিক হলো যাবো সেখানে (পরীক্ষা গেলে পরীক্ষা আসবে এমন সন্ধ্যা তো জীবনে বার বার আসবেনা)
তার পরে ১১ তারিখ পরীক্ষা। সেদিনও অবরোধ। কি আর করা ঠিক হলো যে রুমে ছিলাম সে রুমেই দুই বেড ভাড়া নিবো ৩ বান্ধবী মিলে থাকবো। এবার চার বান্ধবী মিলে এক বাসায়। এক জন পাশের রুমে থাকলেও তিন জন ছিলাম এক বেডে। উল্লেখ্য আগের বারের মতন বাসা থেকে আসার সময় এবার আর তেমন খারাপ লাগেনি (বড় হয়েছিনা?
যাইহোক পরদিন পরীক্ষায় সেইরকম বাঁশ খেয়ে রুমে ফিরলাম। রুমমেট সেই ছোটবোন আমাদের চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করে কেমন পরীক্ষা হলো। ভাল না বলাতে বলে, "ভাল হইসে পরীক্ষার আগে বেশী হাসাহাসি করছেন যে না পড়ে...."
পরের পরীক্ষায় অবরোধ না থাকায় বাসায় থেকেই দিয়েছি। সামনে কী হয় কে জানে তবে যাইহোক কিচ্ছু আসে যায় না তেমন। অবরোধ থাকলে আগের দিন পলাশী না থাকলে বাসা থেকেই এই যা। বাসায় ফেরার পথে ভালই লাগে। রাস্তা-বাস ফাঁকা থাকে। তবে একটু ভয় লাগে কোন দিক থেকে পেট্রোল বোমা পরে কিনা এই ভেবে।
সবাই নিরাপদ থাকুক, ভাল থাকুক। আর কোন মার কোল যাতে খালি না হয়, এইকামনা ছাড়া আর কিছু করার নাই হয়ত আমার মতন সাধারন ভাত খাওয়া পাবলিকের পক্ষে! মগের মুল্লুকে বাস করি যে...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



