আজ বইমেলায় দ্বিতীয় শিশু প্রহর ছিল। এক স্টলের সামনে, মা বাচ্চার জন্যে বই কিনলেন। স্টলের ভেতর থেকে এক মেয়ে হৈ হৈ করছে এই বইয়ের লেখিকা অটোগ্রাফ দিবে, ভেতর থেকে একটা কলম দেন হ্যানো ত্যানো বলে। বই নেওয়ার পরে মা মেয়েকে বলছেন, "তুমি এই বইয়ে লেখিকার নাম জানতে চাও? জিজ্ঞেস করো উনাকে" । বাচ্চার দেখলাম কোন আগ্রহ নাই বা আনইজি ফিল করছে। মায়ের উচ্ছাস তাকে ছুঁতে পারেনি। বইয়ের লেখক, লেখিকাকে সামনে পেলে যে আনন্দ বা অনুভূতি তা বোঝার বয়স এখনো হয়নি মেয়ের।
আমি সাধারনত বই মেলায় শনিবার সকালে যাই, ঐদিন থাকে সপ্তাহের দ্বিতীয় শিশু প্রহর। অনেক বাবা মা তাদের বাচ্চাদের সাথে করে আসেন, ঘুরে ঘুরে বই কিনে দেন। দেখতে খুব ভাল লাগে।
**********************
এক স্টলের সামনে দাড়িয়ে আছি। এক মেয়ে (আমার বয়সী বা একটু বেশী হবে), ফোকগীতি বা লোকগীতি এই ধরনের একটি বই নাড়ছে। দূরে স্টলে দাড়ানো মাকে ডাকল। হয়ত শুনতে পায়নি, বাবা বলছেন, "খুকুর মা খুকু ডাকে তোমাকে" । ভদ্র লোক স্ত্রীকে যেভাবে ডাকলেন, এত ভাল লাগল শুনতে, এখনো আমার কানে বাজছে!
ভদ্রমহিলা কাছে আসতে মেয়ে হাতের বইটি দেখালে চেহারায় উজ্জল, আকর্ণ হাসি ফুটে উঠল। মেয়ে বলল এজন্যেই তোমাকে ডেকেছি।
মা কারো নাম করে বললেন সে মনে হয় বইটি তাকে গিফট করেছে। মেয়ে আবারো বলল ভাল করে মনে করতে। না থাকলে যাতে কিনে নেয়। আমি স্টলে দাড়াইনি, চলার মাঝেই পুরো ব্যাপারটি দেখে মনে গেঁথে গেছে। যা বুঝলাম পুরো পরিবার এসেছে মেলায়, এবং যা বুঝলাম বাবা মা শুধু ছেলে মেয়ের বায়না রাখার জন্যে বা ঘোরার জন্যেই আসেননি। তারাও পড়ুয়া। খুব ভাল লেগেছে দেখে।
***********************
এবার মেলায় যাওয়ার তেমন ইচ্ছে ছিলনা আর গেলেও হয়ত শেষ দিকে যেতাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকের নিউজফিডে ২জনের মেলায় ঘোরার ছবি, কাহিনী দেখে মনটা কেমন কেমন জানি করল। তার পরে কলেজে গিয়ে দেখি যেই কাজে গিয়েছি তা হবে না। একা মেলায় যাবো, যাবো কী যাবোনা ভাবতে ভাবতে বাসার জন্যে রওনা দিয়েও এক রিক্সা ডেকে টিএসসির জন্যে উঠে পড়লাম।
উপলব্ধি: একা ঘোরার জন্যে বইমেলা চমৎকার একটি জায়গা । নিস্বঃঙতা বা বিরক্তি আসবেনা ঘুরতে ঘুরতে। আর যদি ব্যাগে পর্যাপ্ত টাকা থাকে তাহলে ত কথাই নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪২