somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য গডেস অব দ্য উইকেন্ডস

০৬ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশের ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ। নদীমুখী গ্রামের সূর্যমুখী পথ। জনহীন।

একজন আইসক্রিম বিক্রেতার ভ্যান ধীরে এগিয়ে আসছে। 'মৌসুম এলো ভালোবাসার, মৌসুম এলো...' মাইকে উন্মাতাল নারীকণ্ঠের গান উদাস বিকেলের নিরালা-নিশ্চুপ ভাব ভেঙে দিতে দিতে বয়ে যাচ্ছে গ্রামান্তরে। এমন বসন্ত পথে কতকাল পর আসা হল মনে পড়ে না।আজকাল স্মৃতি গুলিয়ে যায় । কোন রবিবার মাদ্রিদে আর কোন রবিবার কলকাতায় কাটল মনে রাখা মুশকিল হয়ে যায় প্রায়ই্। অথচ এই একশ' দেড়শ' বছর আগেই কেমন কড়া স্মরণ শক্তিই না ছিল! ভারতের রানি তখন ভিক্টোরিয়া। মনে আছে, এই রকম এক নির্বিবাদ বিকেল কেটেছিল পদ্মার পাড়ের এক গ্রামে। আহা কী মায়াময় ছুটির বিকেল! মনে আছে ময়মনসিংহ শহরের রবিবারগুলো। সন্ধ্যার গীর্জা-ধ্বনি! ধূপের মদির-গন্ধ! কূল-আকুল করা লৌহিত্যের ধারা! আবার এতোকাল পড়ে এই বঙ্গদেশে আসা। ছুটির দিন অবশ্য বদলে গেছে। সিরাজগঞ্জ নামের নতুন এক জেলায় এসে নামলাম খানিক আগে; এই দেশের নতুন ছুটির দিন, শুক্রবারে।

নদী-ছোঁয়া উদাস হাওয়ার সূর্যমুখী গ্রাম। আইসক্রিম বিক্রেতার মুখটা বেশ উদাস। তার মনের কোনোখানে কারও গভীর চোখ, নিখাদ হাসি ভেসে বেড়াচ্ছে, গানের সুর যেমন বাতাসে উন্মনা। সেই সুর যতদূর যায় ততদূর চাইলাম। কেউ নাই। এতো নির্জন পথ হয়? দিনের আলোতে এতোখানি জনহীন হতে পারে চারিদিক?

বাঁশঝাড়ের মাথার উপরে সূর্যের সুন্দর রোদ জ্বলছে। । আমের এলোমেলো পাতাগুলো থেকে প্রশান্তির ছায়া । নিয়ম না মানা আগাছা বা অনাকাঙ্ক্ষার লতাপাতারা খানিকটা পথ দখল করে আছে। অদূরে একটা পুকুর। পুকুরের পশ্চিমে উঁচু বড় বাড়ি। বাড়ির ঢাল নেমে গেছে উত্তরের মাটির পথে। সারা গ্রামের মানুষ আসলে এই বাড়ির ভেতর। ভিড় করে চেয়ে আছে টিভি বাক্সের দিকে। বড় উঠানজুড়ে এই মানুষগুলো জটলা ধরে বসে আছে। ছুটির দিন। কী বিশেষ উদযাপন! কত ভিন্ন এক ছুটির উৎসব। হঠাৎ চোখে পড়ল এক ছয়-সাত বছরের বালকের দিকে। উঠানের তেজপাতা গাছটি ঘেষে বসে আছে ছোট্ট একটি লক্ষ্মী চেহারার চেয়ার পেতে। সে টিভির বাক্সের দিকে মুখ করে বসে আছে পূর্ণ মনোযোগে কিন্তু দুই হাতে চোখ ঢাকা।

আ.
সন্ধ্যার খানিক পর ছেলেটিকে আবার দেখলাম। ঘরের জানালা খুলে পথের অন্ধকারের দিকে চেয়ে আছে। আহা! কী আনন্দ-উজান চোখের ভাষা! আমি ছুটির দিনের দেবী। ছুটির দিন কেমন লাগে জানতে চাইলে ছেলেটি বলল
- বাবার মতোন।
-কেন, বাবার মতোন?
-জানি না। বাবা জানে।

ছেলেটির বাবাকে খুঁজতে গেলাম। নদীর পাড়ে ছোট্ট এক চায়ের দোকানে বসা। বাতাস হু হু করে এসে লাগে বুকে। ওপার থেকে এপার- যমুনার হাজার হাজার ঢেউ রাতের অন্ধকার বয়ে নিয়ে যাচ্ছে বহুদূর। সমুদ্র এই সব ঢেউ খুলে খুলে পড়বে। তার একটাতে লেখা থাকবে এই সময়, এই গ্রাম, এই রাত, এই বাবার কথা।

বাবাটির শান্ত চোখে নদী আর রাত দেখা যায় স্পষ্ট। আমি প্রশ্ন করি
- কেমন লাগে শুক্রবার?
- সন্তানসমান।
- কী কারণ?
-জানি না। কিন্তু একদিন প্রতি শুক্রবার ভোরে, যখন বেশ বুড়ো হব, নদীর দিকে অপলক চেয়ে থাকব। আমার ছেলে তখন দূর শহরে ঘুমিয়ে আছে। তার ছুটির সকাল নদীর অন্যপাড়ে। একদিন প্রতি ছুটির দিনেই দু'চোখ পথ জুড়ে ছড়িয়ে দেব। অপেক্ষায়, প্রতীক্ষায়, সন্তান-মুখ-তৃষ্ণায়। সে ফিরে আসুক না আসুক, একদিন ছুটির দিন হবে আমার সন্তানের প্রতিশব্দ।


১৯৯৫ ই্ংরেজি সালের বাংলাদেশ। শুক্রবার।

রাত গভীর, আরও গভীর হল। ছেলেটি, বাবার স্বপ্নকাতর ছোট্ট ছেলে, দেবদূত সমান মুখ যার, অঘোরে ঘুমাচ্ছে। তার স্বপ্ন বড় অদ্ভুত। বড় অনন্ত। যমুনার আরেক পাড়ে যেন চিরকাল হেঁটে চলেছে সে। বাবার ছায়ার মতোন এক ছুটির দিনের খোঁজে। দিন, মাস, বছর, যুগ শতা্ব্দী ধরে সে হেঁটে হেঁটে খুঁজে ফেরে বাবার মতোন শুক্রবার। পায় না। স্বপ্ন জুড়ে অঘোরে কাঁদতে থাকে।

অন্যদিকে বাবার স্বপ্ন সন্তানের প্রতিটি অশ্রুবিন্দু খুলে পড়তে থাকে। যেন মহান পুস্তক, মহর্ষির অমূল্য বচন। যেন সন্তানের সমস্ত লোনা জল ভোরের আগেই গোপনে গোপন করে আসতে হবে দূরে।

আরও একবার বুঝলাম বঙ্গদেশে ছুটির দিন অতি ভিন্ন। বিকেলের পথ জুড়ে থাকে রাতের নির্জনতা। এখানে শুক্রবার প্রেমের সমার্থক।




ছবি: উরিয়ান লোজানো
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:২৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×