পুত্রের বয়স ৫ হয়েছে। এখন তার খায়েশ জাগছে স্কুলে ভর্তি হবে। অতঃপর পুত্রের জ্বালায়, ঠেলায় অথবা চাপে যেইটায় পইরায় হোক না কেন, পিতা তার পুত্র কে স্কুলে ভর্তি করালেন। পুত্র এখন মহা খুশিতে স্কুলে যায়। কিন্তু মাস চারেক না যেতেই পুত্র বুঝলো যে স্কুল আর যাই হোক, আনন্দের যায়গা না। তারপরও বহু কষ্ট করে ১ বছর পড়ে ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টু তে উত্তির্ন হলো।
রেজাল্টের পর পিতা পুত্রের আলোচনা
পুত্রঃ আব্বা, আমি আর স্কুলে যাবো না। স্কুলে যেতে ভাল্লাগে না
পিতাঃ না বাবা, কয়দিন যাও। এইতো, ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়লেই তো তুমি যোগ বিয়োগ করতে পারবা। তখন আর স্কুলে যাওয়া লাগবে না।
এই কথা শুনে পুত্র খুশি হয়। মাত্র তো আর ৪ বছর, এর পরেই মুক্তি। পুত্র আবার মহা আনন্দে স্কুলে যায়।
(৪ বছর পরের কথা, ক্লাস ফাইভের রেজাল্টের পর পিতা পুত্রের মাঝে আবার সংলাপ হয়।)
পুত্রঃ আব্বা, আমি ফাইভ পাশ করছি। ভালো মতো যোগ বিয়োগও করতে পারি। আমি আর স্কুলে যাবো না।
পিতাঃ শুধু যোগ বিয়োগ পারলে তো হবে না বাবা। অন্যান্য জিনিসও ভালো করে জানতে হবে।
পুত্রঃ কিন্তু তুমি তো বলছিলা যে ফাইভ পর্যন্ত পড়লেই...............
পিতাঃ হ্যা বলছিলাম। কিন্তু এখন আরো কিছু পড়তে হবে। এইতো, ক্লাস এইট পাশ করলেই হবে। নাইন-টেন তো খালি গায়ে হাওয়া বাতাস লাগায়া ঘুরবা। যাও যাও,পড়তে বসো।
পুত্র ফেরত যায়। এখন তাকে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়তে হবে। এর পড়েই তার মুক্তি। মনে বড় আশা নিয়ে সে আবারো পড়া শুরু করে।
(৩ বছর পরের কথা)
পুত্রঃ আব্বা, আমিতো এইট পাশ করছি। এখন তো লেখাপড়া না করলেও হবে?
পিতাঃ হ্যা ঘুরা যায়। কিন্তু বাবা, এখন যদি তুমি গায়ে হাওয়া বাতাস লাগায়া ঘুরো, তাহলে এস এস সি পরীক্ষায় ফেইল করবা। তখন তো লোকে তোমাকে মেট্রিক ফেইল বলবে। সেটা কি ভালো হবে? ভালো করে এসএসসি পরীক্ষা দাও। ইন্টার লাইফে খালি শান্তি আর শান্তি। তখন খালি ক্লাস করবা আর ঘুরবা।
পুত্র ফেরত যায়। তাকে যে মেট্রিক পাশ করতে হবে.........
(২.৫ বছর পরের কথা)
পুত্রঃ আব্বা, আমিতো এসএসসি পাশ করে ফেলছি।
পিতাঃ তো কি হয়েছে?
পুত্রঃ না মানে, এখন তো আর কোনো পড়াশোনা নাই, তাই না? এখন তো না পড়লেও চলবে।
পিতাঃ শোনো বাবা, তোমার জীবনটা এখানেই নির্ধারিত হবে। এখন যদি না পড়ো তাহলে তো জীবনে কিছুই করতে পারবে না। ইন্টার টা পাশ কর। ভার্সেটি কোনো পড়ালেখা নাই। তখন খালি শান্তি আর শান্তি।
পুত্র চলে যায়। মনে ক্ষুদ্র আশা। আর মাত্র ২ বছর, তার পরেই............
(২ বছর পরের কথা)
পুত্রঃ আব্বা, আমিতো এইচএসছি পাশ করছি। এখন কি পড়াশোনা বাদ?
পিতাঃ শোন বাবা, এখন যদি না পড়ো, তাহলে তো ভালো চাকরী পাবা না। এতো বছর পড়ালেখা করছো, এখন যদি ভালো চাকরী না পাও তাহলে হবে? ভার্সেটি তে ভালো করে পড়। চাকরী জীবনে শুধু শান্তি আর শান্তি
পুত্র চলে যায়। ভালো করে পড়তে হবে, ভালো একটা চাকরী পেলেই মুক্তি। বেশী না, মাত্র ৭-৮ বছরের মামলা।
(৮ বছর পরের কথা, পুত্রের লেখা পড়া শেষ। মোটামুটি একটা চাকরী করে। এমন সময় পিতার সাথে পুত্রের আবার সংলাপ।)
পুত্রঃ আব্বা, আমার লেখাপড়াও শেষ। আর চাকরীও করি। এখনও কি আমার গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘোরার সময় হয় নি?
পিতাঃ এইতো বাবা, সময় অতি সন্নিকটে। একটা বিয়ে করে ফেল, বাচ্চা কাচ্চা নে, তাদের মানুষ কর। তারপর খালি শান্তি আর শান্তি............
১২ বছর পরের কথা। পিতা ততো দিনে মারা গেছে। পুত্র ও এখন আর পুত্র নেই। ২ বাচ্চার পিতা হয়ে গেছে। বড়ো টা আবার ক্লাস টু তে পড়ে। সেদিন পুত্রের বড় ছেলে এসে ছিলো পুত্রের সাথে আলোচনা করতে
পুত্রের বড় ছেলেঃ আব্বু, আমি স্কুলে যাবো না। স্কুলে যেতে ভালো লাগে না।
পুত্রঃ না বাবা, আর কয়েক দিন যাও। এইতো, ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়লেই যোগ বিয়োগ শিখে................................................
আর ঠিক এই ভাবেই পিতা পুত্রের আলোচনা পর্যাবৃত্ত গতিতে চলতে থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর পর পিতার যায়গা পুত্র দখল করে। আর পুত্রের যায়গাতে আসে নতুন এক পুত্র