somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমকির মুখে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক সুন্দরবন এখন হুমকির মুখে। দিনে দিনে অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ছে প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবনের। সিড়র ও আইলাসহ নানা দুর্যোগ বুক পেতে মোকাবিলা করে এমনিতেই বিপর্যস্ত। তার উপর ফারাক্কা ও মিনি ফারাক্কাসহ উজানের অভিন্ন নদীর পানি প্রতিবন্ধকতায় আরো করুণ অবস্থা। ভাটির দেশের নদ-নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে পড়ার স্বাভাবিক ধারা আর অবশিষ্ট নেই বললেই চলে।ডাউনলোড

স্রোতহীন নদ-নদীর পানি চুঁইয়ে পড়াও বন্ধ যায় শুষ্ক মৌসুমে। বহুবছর ধরে এটি চলে আসছে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এতে শুধু সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত নয়, লবণাক্ততা গ্রাস করছে নতুন নতুন এলাকা, ঘটছে ভূমি গঠনের পরিবর্তন, উদ্ভিদ জীববৈচিত্র, সৌন্দর্যবৃদ্ধি এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বনসম্পদ মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত সুন্দরবনের কোন নদ-নদীর পানির তোড় নেই। যার কারণে সমুদ্র উত্তপ্ত হচ্ছে।



পরিবেশ বিজ্ঞানী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীলিপ দত্ত জানান, উজান থেকে পানি প্রত্যাহারের ফলে দেশের নদ-নদীতে শুকিয়ে গেছে। সাগর থেকে যতটুকু প্রবাহ আছে ততটুকু সুন্দরবনকে টিকিয়ে রেখেছে। অথচ উল্লেখযোগ্য কোন পরিকল্পনা নেই। যা নেয়া হয় তা কার্যকর হয় না।

কপোতাক্ষ নদ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অনীল বিশ্বাস জানান, ভৈরব নদ ও কপোতাক্ষ নদের শাখা প্রশাখা সুন্দরবনের মিঠা পানির অন্যতম উৎস। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী নদ দু’টি আজ মৃত। উজানে মিঠা পানির প্রবাহ না থাকায় সুন্দরবনে মাথামরা রোগ দেখা দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে ধীরে ধীরে সুন্দরী. গেওয়া, শাল, কেওড়া, বাইন, কাকড়া, পশুর, ধন্দুল ও গোলপাতাসহ উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী গ্রিন বেল্ট হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বাঘের হুংকার ও দাপাদাপি এবং মায়াবি হরিণের ছোটাছুটি কমে যাচ্ছে। অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে সবুজ তরতাজা সুন্দরবন। বনজ ও জলজ প্রাণী এবং নানা প্রজাতির পাখির কলতানও থেমে গেছে অনেকটা। সুন্দরবনের নদী রায়মঙ্গল ও আড়পাঙ্গাসিয়াসহ ছোট-বড় দেড় সহস্রাধিক খাল ও নালা রয়েছে। যা কখনোই সংস্কার কিংবা খনন করা হয় না। সুন্দরবনের অনেক নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদী ও খালের পানির নড়াচড়া নেই। যেন নিথর হয়ে আছে। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষা সুন্দরবনকে বাঁচাতে এখনই মহাপরিকল্পনা নেয়া দরকার বলে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত সুন্দরবন। ভারতের ২৪ পরগণার দক্ষিণ ভাগও সুন্দরবন। পশ্চিমে ভাগীরথি নদীর মোহনা থেকে পূর্বে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত সুন্দরবন বিস্তৃত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত সুন্দরবনের ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ভূভাগ আর ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জলভাগ। সমুদ্রের পানির উচ্চতাবৃদ্ধির ফলে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ক্রমাগতভাবে ডুবে যাচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, সাপ, শূকর, বানর, কাঁঠবিড়ালি, বাজপাখি ও শকুনসহ বিভিন্ন পশু-পাখির বিলুপ্তির পথে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘন ঘন ছোট-বড় সাইক্লোন, নদ-নদীতে পলি জমে সিলটেশন হওয়া, জলবায়ুর পরিবর্তন ও গাছপালা মারা যাবার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবনের চেহারার পরিবর্তন হয়ে গেছে।

সূত্রমতে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর আবার মাত্র ১৮ মাস পর ২০০৯ সালে ২৪ মে মাসে জলোচ্ছ্বাস আইলা উপকূলীয় সুন্দরবনকে তছনছ করে দিয়ে যায়। সৌন্দর্যবৃদ্ধি এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বনসম্পদের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। নিকট অতীতের যে কোনো দুর্যোগের চেয়ে ওই দু’টি আঘাত ছিল নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। তাতে সুন্দরবনকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা মূল্যবান গাছ পরিচর্যার কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা আয় হচ্ছে সুন্দরবন থেকে। গাছ কাটা, মাছ ধরা ও মধু আহরণসহ সুন্দরবনকে ঘিরে অসংখ্য উপকূলীয় মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। অবহেলায় কষ্টেসৃষ্টে সুন্দরবন টিকে আছে। অথচ অনন্যসম্পদ সুন্দরবনকে রক্ষায় ভূমিকা বরাবরই অনুপস্থিত।

সুত্রমতে, সুন্দরবনের ক্ষতি ছাড়াও উজান থেকে অভিন্ন নদ-নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে গড় উঞ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর ও পূর্বাঞ্চল এবং মধ্যভাগসহ গোটা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যে নেমে আসছে ভয়াবহ বিপদ জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন। পানি প্রতিবন্ধকতা ক্রমেই এতটা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে যে, খরা ও মরুকরণ প্রবণতা বাড়ছে। মারমুখী ও বিপজ্জনক হচ্ছে পরিবেশ। রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বাংলাদেশের নদী ধাবমান। মানুষের জীবন, অর্থনৈতিক কর্মকা-, সভ্যতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সাথে বলিষ্ঠ ও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে নদ-নদীর। জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। নদীভাঙনে উদ্বাস্তু হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। পানি বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, অভিন্ন নদ-নদীর পানি প্রতিবন্ধকতায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। যাতে ভয়াবহ বিপদেও মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ভিডিও দেখুন

ঘুরে আসুন

http://www.bdview24.com/


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×