somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমাম আবু হানিফা সম্পর্কে তৎকালীন মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিভঙ্গি

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হিজরি দ্বিতীয় শতক ছিল মুসলিম বিশ্বে তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী আলিম, মুহাদ্দিস, ফকীহগনের বরকতময় যুগ। হাদীস, ফিকহ ও অন্যান্য সকল জ্ঞানে পারদর্শী ইমামগনের বিচরণে পরিপূর্ণ ছিল মক্কা, মদীনা, কুফা, বসরা, দামিশক, বাগদাদ ও সে যুগের অন্যান্য জনপদ। সেই সময়কার মুহাদ্দিসিনের দৃষ্টিতে ইমাম আযম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ কেমন ছিলেন চলুন জানি,

মুগীরাহ ইবন মিকসাম দাব্বী কুফী রহিমাহুল্লাহঃ ১৩৬ হিজরি

ইমাম আবু হানিফার শিক্ষক পর্যায়ের সুপ্রসিদ্ধ নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস ও ফকীহ মুগীরাহ ইবন মিকসাম। তিনি অন্যান্য মুহাদ্দিসদের উদ্দেশ্যে বলেন, "তুমি আবু হানিফার মজলিসে বসবে, তাহলে ফিকহ শিখতে পারবে। কারন ইব্রাহিম নাখায়ী রহিমাহুল্লাহ (তাবেয়ী এবং কুফার তৎকালীন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস) যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনিও আবু হানিফার মজলিসে বসতেন। ... আল্লাহ্‌র কসম হালাল-হারামে বিষয়ে সে ভালোভাবে কথা বলার যোগ্যতা রাখে"

সুলাইমান ইবন মিহরান আল-আমাশ রহিমাহুল্লাহঃ ১৪৮ হিজরি

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সুলাইমান ইবন মিহরান ছিলেন ইমাম আবু হানিফার শিক্ষক। তিনি অনেক সময় আবু হানিফাকে জিজ্ঞাসা করতেন,
"তুমি এই মাসআলাটি কোন দলিলের ভিত্তিতে বলেছ? আবু হানীফা উত্তর করতেন, আপনার বর্নিত অমুক হাদীসে ভিত্তিতে। তখন তিনি অবাক হয়ে বলতেন, হে ফকীহগন তোমরা ডাক্তার আর আমরা ফার্মাসিস্ট"

মিসআর ইবন কিদাম ইবন যাহীর কুফী রহিমাহুল্লাহঃ ১৫৫ হিজরি

তিনি ছিলেন তাবে-তাবেয়ী। ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ এর সম্পর্কে উনার ভাষ্য,
"কুফার দু ব্যাক্তি ছাড়া কাউকে আমি ইর্ষার যোগ্য বলে মনে করি নাঃ আবু হানিফাকে তার ফিকহের জন্য এবং হাসান ইবন সালিহকে তার যুহদের জন্য...যদি কোন ব্যাক্তি তার ও আল্লাহ্‌র মাঝে আবু হানিফাকে রাখে অর্থাৎ ইবাদতের জন্য আবু হানিফার ফিকহী মতের উপর নির্ভর করে- তাহলে আমি আশা করি যে, তাকে ভয় পেতে হবে না এবং আত্মরক্ষা সাবধানতায় অবহেলাকারী বলে গন্য হবে না"

হাসান ইবন সালিহ রহিমাহুল্লাহঃ ১০০-১৬৯ হিজরি

তাবে-তাবেয়ী হাসান ইবন সালিহ রহিমাহুল্লাহ আবু হানিফা সম্পর্কে বলেনঃ
"নুমান ইবন সাবিত (আবু হানিফার নাম) বিজ্ঞ আলিম ছিলেন, ইলমের বিশুদ্ধতা নির্ণয়ে সচেতন ছিলেন। কোন বিষয় রসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে কোন হাদীস সহীহ বলে প্রমানিত হলে তিনি তা পরিত্যাগ করে অন্য কোন দিকে যেতেন না"

কাযী আবু ইউসূফ ইয়াকুব ইবন ইব্রাহীম রহিমাহুল্লাহঃ ১১৩-১৮২ হিজরি

আবু ইউসুফ তার যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফকীহ ছিলেন বলে অন্য সকলেই স্বীকার করেছেন। আবু হানিফার জ্ঞানের পরিধি ও গভীরতা বরণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন,
"হাদীসের ব্যাখ্যায় ও হাদীসের মধ্যে ফিকহের যে সকল নির্দেশনা রয়েছে তা অনুধাবন করায় আবু হানিফার চেয়ে অধিক জ্ঞানী ও পারদর্শী আমি কাউকে দেখিনি।... যে বিষয়েই আমি আবু হানিফার সাথে বিরোধিতা করেছি সে বিষয়েই আমি পরে চিন্তা করে দেখেছি যে, আবু হানিফার মতই আখিরাতে নাজাতের অধিক উপযোগী। অনেক সময় আমি হাদীসের দিকে ঝুঁকে পড়েছি, কিন্তু তিনি সহীহ হাদীসের ব্যাপারে আমার চেয়ে অনেক বেশী সমজদার ছিলেন। আমি আমার পিতামাতার জন্য দুয়া করার আগে আবু হানিফার জন্য দুয়া করি। আর আমি শুনেছি, আবু হানীফা বলতেন, আমি আমার পিতামাতার সাথে হাম্মাদের জন্যও দুয়া করি "

ফুদাইল ইবন ইয়াদ খুরাসানী মাক্কী রহিমাহুল্লাহঃ ১৮৭ হিজরি

তৎকালীন সময়ের অন্যতম মুহাদ্দিস, সমালোচক ইমাম ফুদাইল রহিমাহুল্লাহ আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে বলেনঃ
“আবু হানিফা প্রসিদ্ধ ফকীহ ছিলেন। তার তাকওয়া ছিল অতি প্রসিদ্ধ। তিনি সম্পদশালী ছিলেন এবং বদান্যতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। রাতদিন সার্বক্ষনিক ইলম শিক্ষা দানে তিনি অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল ছিলেন। রাতের ইবাদতে মশগুল থাকতেন। অধিকাংশ সময় নিরব থাকতেন ও কম কথা বলতেন। তবে যখন হালাল-হারামের কোম মাসআলা তার কাছে আসত। তিনি তখন কথা বলতেন এবং খুব ভালোভাবেই হক্ক প্রমান করতে পারতেন। তিনি শাসকদের সম্পদ থেকে পালিয়ে বেড়াতেন। যখন তার কাছে কোন মাসআলা আসত তিনি সে বিষয়ে সহীহ হাদীস থাকলে তা অনুসরণ করতেন , অথবা সাহাবী-তাবেয়ীগনের মত। তা না হলে তিনি কিয়াস করতেন এবং তিনি সুন্দর কিয়াস করতেন”

হাফস ইবন গিয়াস রহিমাহুল্লাহঃ ১৯৫ হিজরি

কুফার প্রসিদ্ধ এই তাবি-তাবেয়ী ও প্রথমে কুফা এবং পরে বাগদাদের কাযীর দায়িত্ব পালন করা মুহাদ্দিস বলেন,
“ফিকহী বিষয়ে আবু হানিফার বক্তব্য চুলের চেয়েও সুক্ষ। জাহিল-মুর্খ ছাড়া কেউ তাকে খারাপ বলে না”



সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×