এইমাত্র ইত্তেফাকের এইবারের ঈদসংখ্যার একটি গল্প রকস্টার শেষ করলাম। এই গল্পটি পড়ে আমার মনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।গল্পের নাম রকস্টার লিখেছেন অনুরুপ আইচ। গল্পের নাম পড়ে বেশ আগ্রহী হয়ে পড়া শুরু করেছিলাম গল্প টা কিন্তু পড়া শেষে রীতিমতো বিরক্তি এবং ক্ষোভের জন্ম হয়েছে।
মোটামুটি গল্পের সারাংশ হলো আতিফ নামে একজন ছেলে খুব কষ্ট করে নিজেকে রকস্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। শুধু তাই না কিছুদিনের মধ্যেই সে বিশ্ব দরবারে পরিচিত পায়। আতিফ বলিউডে ডাক পায় একটা সিনেমার টাইটেল করার জন্য যেখানে নাকি শাহরুখ খান আর এঞ্জেলিনা জোলি একসাথে অভিনয় করবেন!তো আতিফ নামের রকস্টার এই সিনেমার টাইটেল সং এর জন্য আতিফ খুব বিখ্যাত হয়ে যায়,পশ্চিমা বিশ্বেও পরিচিতি পায়। তারপর দেশে হঠাত করে ইয়াবার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। অনেকে ব্যান্ডসংগীত শিল্পীদের এই জন্যে দায়ী করে। তারপর এক সাংবাদিক পুরাতন তথ্য ঘাইটা দেখে আতিফ নামের রকস্টার দেশে প্রথম ইয়াবা নিয়ে আসে। তারপর সে দেশে এই লালবড়ি নিয়ে গান লেখে এবং গায়। এখানেই শেষ নয় সাংবাদিকের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে আতিফ ভারতীয় গডফাদার দাউদ ইব্রাহিমের সাথে যোগাযোগ করে। তারপর সাংবাদিক রিপোরট লেখতে বসে যায়।
আমার কাছে এই গল্পটা একটা বুলশিট ছাড়া কিছুই না। সবার প্রথমে গল্পের তথ্যগত ভুল তুলে ধরি বলা হয়েছে"পপ গুরু আজম খানের উচ্চারণের পর নাগরিক কবিয়াল নামে আতিফ বাংলা নামে ব্যান্ড দল গঠন করে"। গল্পে উপমহাদেশে সেরা রকস্টার জেমসের কথাও উঠে এসেছে তো জেমসের ব্যান্ডের নাম কি? লেখকের তা মাথায় ছিল না? নাকি নগরবাউল হিন্দি নাম? প্রয়াত সঞ্জীব দা আর বাপ্পা মজুমদার যে দলছুট নামে একটি জনপ্রিয় ব্যান্ড দল গঠন করেছিলো তা কি লেখকের মাথায় ছিল না? আগে তথ্য সমন্ধে নিশ্চিত হতে হবে। যা মনে আসলো তাই লিখে দিলাম এমন করলে তো হবে না।
তারপরে আসি লেখকের কল্পনা শক্তির ব্যাপারে! শাহরুখ খানের সাথে জোলির সিনেমা এতো দুই বছর বয়সের বাচ্চার কার ড্রাইভ করার মত!
আমার সবচেয়ে বড় আপত্তি একজন শিল্পীকে ক্যানো এত নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করা হলো? মনে হয় যেন আমাদের দেশে মাদকদ্রব্য ছড়ানোর পেছনে মনে হয়ে ব্যান্ড সংগীত শিল্পীদের সবচেয়ে বেশী অবদান! লেখকের মাথায় কিভাবে এই চিন্তা আসলো তা আল্লাহ মালুম।
আমাদের দেশের ব্যান্ড সংগীত তথা রক মিউজিক কিন্তু গৌরবেরই জানান দেয়। কারণ সাউথ এশিয়াতে বিশেষ করে ভারত,শ্রীলংকাতে কিন্তু বাংলাদেশের মানের ব্যান্ড দল কিংবা মিউজিশিয়ান নাই। আমাদের শুধু ওয়ারফেজ, মাইলসের বৈশ্বিক মানের ব্যান্ডই না আয়ুব বাচ্চু, গিটারম্যান কমলের মত বিশ্বমানের লিড গিটারিস্ট আছে। আর বেসবাবার কথা তো বলার কিছু নাই। বেসবাবা তথা সুমন ভাই নাম মিউজিক শো তে আমন্ত্রণ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশী এবং স্ন্যাপ বেজ( বেজ গিটার বাজানোর কৌশল)এ বিশ্বব্যাপী ২৩ নাম্বারে অবস্থান করছে। আর আমাদের আছে রকস্টার জেমস। যার একটি ডাকেই পুরো তরুণ সমাজ উদ্বেলিত হয়।
এইসব প্লটেও তো গল্প লেখা যায়। কিন্তু ব্যান্ড মিউজিক মানেই যে মাদক এমন ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে অন্যদের বের করে আনতে হবে।