somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে...

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নয়ন-১


আমি কোন লেখক নই। লেখালেখির অভ্যাসও নেই। হয়'তো ভাল পাঠকও নই। তবে বই পড়া গল্প পড়া একটা অভ্যাস আমার মধ্যে সবসময় লক্ষ্য করেছি। কোন অচেনা গল্প কিংবা চেনা কোন বিষয অথবা রূপকথা কোথাও নজরে পড়লে সেটা পড়তাম মনোযোগ সহকারেই। হ্যা, প্রায় ভাবতাম আমার নিজের জীবনের ঘটনা গুলো কোথাও লিখে রাখবো। এরজন্য অনেক সময় নতুন খাতা কিনতাম। কিন্তু দু'এক দিন লিখার পর আর সময় মনোযোগ কিছুই থাকতো না। তাই আর লিখা হয়নি আমার জীবন প্রবাহ। খাতা ফাঁকাই রয়ে যেতো।
তবে সামুতে রেজিস্ট্রেশন করার পর আবার সেই পুরোন ইচ্ছাটা নতুন করে কাজ করছে। কোনকিছু শুরু না করলে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নাই। তবে এবার ভাবছি লিখবো। ভাল গুছিয়ে না পারি। নিজের ব্লগে নিজের করেই রেখে দিবো না হয়।

সাধারণ পাঁচ দশজনের মতো আমিও অতি সাধারণ একজন। সঙ্গীত প্রিয় হাসি খুশি চঞ্চল প্রকতির স্বভাব থাকায় এলাকার প্রায় অনেকাংশ মানুষ বৈরাগী সম্বোধন করতো। আমি হয়তো খুশিই হতাম। আমি কিন্তু বৈরাগী শব্দের অর্থ জানতাম না। তবে বিরক্তিবোধো হতো না কখনো। আজ বুঝছি বৈরাগী জীবন কাকে বলে। হয়'তো মিল ছিল তাই হয়'তো অনেকেই বলেছে। যাক সেই বিষয় অনেক পরের বিষয়।
যার জীবন বৃত্তান্ত লিখছি তার পরিচয় আগে দেওয়া উচিৎ।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি জেলা শেরপুর। অনেকেই গারো পাহাড় বলেও জানতো যদিও পাহাড় জেলার একপ্রান্তে। শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অস্থিত গজনী পাহাড়। যা 'গজনী অবকাশ' নামেই পরিচিত।

শেরপুর সদর উপজেলার ২নং চরশেরপুর ইউনিয়ন চরশেরপুর গ্রামের শেষে শুরু সাতানীপাড়া গ্রামের। গ্রামে ঢুকে প্রথম যে বাড়িতেই বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এটিএম জিন্নাত আলী'র তিন ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় জনের নাম মো: নাঈম জাহাঙ্গীর 'নয়ন'। জন্ম ২৯ মার্চ ১৯৮২ইং সালে শেরপুর সদর উপজেলার ২নং চরশেরপুর ইউনিয়নের সাতানীপাড়া গ্রামে। গ্রামের মানুষ নয়ন নামেই জানতো, ডাকতো। হাস্যউজ্জল চঞ্চলতায় ভরা ছিল নয়নের বাল্য কিশোর সময়গুলি। হাসি তামাসা গান বাজনা নিয়েই মেতে থাকতো সবসময়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর খেলা ধূলায় কেটে যেতো দিনের পর দিন, মাস ,বছর।

মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েও কোনোদিন দুঃখ কষ্ট তাদের তিন ভাইকে ছুতে পারেনি। সুখেই যাচ্ছিল কেটে নয়নের জীবন। পাশের গ্রামের হাইস্কুলে পড়তো নয়ন। লেখা পড়ায় মোটামুটি। পড়া লেখায় মনোযোগী কমই ছিল। তবে একেবারে খারাপ ছাত্র যে ছিল তা কিন্তু নয়। অষ্টম ক্লাসে যখন পড়ে তখন নয়নের বয়স মাত্র বারো বছর। শরীর স্বাস্থ্য ভালো তাই দেখতে বয়সের তুলনায় একটু বড়ই দেখা যেত।

হঠাৎ সেই স্কুলে একদিন নতুন এক সুন্দরী মেয়ে এসে ভর্তি হল। মেয়ে দেখতে শুনতে ভালোই পরীর লাহান ,কিন্তু পড়া লেখায় ছিল রূপ চেহারার পুরোপুরিভাবে বিপরীত। সেটা বুঝতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় নি। ক্লাশ এইট থেকে নয়ন তৃতীয় রোল নিয়ে ক্লাস নাইনে উঠে। সেই সুন্দরীও কোনোরকম পাশ করে। দূর ! মেয়েটি মেয়েটি বলতে আর ভালো লাগছে না। এবার নামটাই বলে দেই। নাম ছাড়া কি আর চলে ! সত্যিই এই নামটি ছাড়া নয়নের একদিনও চলতে চাইতো না। ক্লাস নাইন থেকেই নয়নের লাইন শুরু মিনতি'র সাথে। সেই থেকেই নয়নের জীবনের ছন্দ পতনের শুরু ....

------------------------------------------------------#
দুনিয়ার সবাই কাউকে না কাউকে ভালোবাসে, ভালোবাসতে চায়, ভালোবেসে সাজাতে চায় নিজের ভবিষ্যৎ ঘর-সংসার। কিন্তু সবার পক্ষেই সম্ভব হয়ে উঠেনা সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যটি পূরণের। কেউ মাঝ পথে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। আবার কেউ বা জীবনের দীর্ঘপথ ভালোবেসে যেয়েও পথহারা হয়ে জীবনের যোগবিয়োগ কষে পায় শূন্য। সব ভালোবাসা, বিশ্বাস এক নিমিষে ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়ে যায়। নিঃস্ব হৃদয়ের বিষণ্ণতা আর ভালোবাসা হারানোর ব্যথায় পুড়তে হয় বহুদিন, বহুকাল হয়তো জীবনের শেষ বেলা পর্যন্ত। প্রিয়া বিরহের ব্যথিত মনের শেষ বাণী হয়ে বেরিয়ে আসে ‘বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে’ ।

নতুন জীবনের নতুন যৌবন প্রতিটি প্রাণীকুলকে ছন্দময় চঞ্চলা করে তুলে। নির্ভাবনা আর যৌবনারম্ভে মনের আকাশে ইচ্ছাগুলো দুরন্তপনা হয়ে উঠে। চোখের সামনে সবকিছুই তখন রঙ্গিন মনে হয়। ভালোবাসা পাওয়ার সঙ্গী খুঁজতে থাকে চোখের সীমানা জুড়ে। মনের ইচ্ছা গুলো ভাবনার সাথে মিশে যায় একই সুরে। ব্যতিক্রম ছিল না তেরো বছরে পা দেয়া ক্লাশ এইটে পড়ুয়া ‘নয়ন’ও।

গ্রামের ছেলে নয়ন, বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। পার্শ্ববর্তী গ্রামের একটি হাই স্কুলে অষ্টম ক্লাশের ছাত্র নয়ন। লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালই, গত ফাইনাল পরিক্ষায় ক্লাশ সেভেন থেকে এইটে উঠেছে তৃতীয় হয়ে। হাস্যকর চঞ্চলা প্রকৃতির নয়ন ক্লাশ তথা পুরো স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রী এমনকি শিক্ষকদের নিকট মোটামুটি জনপ্রিয়। সবাই তাকে আদর করে। সারাক্ষণ মুখে গুনগুন সুরে গান লেগেই থাকতো তার। গান তার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। গাইতোও বেশ, যেমন মিষ্টি কণ্ঠ তেমনি যেকোনো শিল্পির সুরই সুন্দর মিলে যেতো তার সাথে। স্কুলের প্রতি বৃহস্পতিবার চার পিরিয়ড শেষে গানের প্রতিযোগিতা চলতো রেগুলার। সেই প্রতিযোগিতায় কখনো প্রথম কোনদিন দ্বিতীয় হতো। তার আগের ক্লাশেরই আরেটা ছেলে মন্তাজ খুব সুন্দর গাইতো। মাঝে মাঝে মন্তাজ প্রথম হইতো গানে। নয়নও ভালই গাইতো, তবে মাঝেমধ্যে তাল কাটা পড়ায় পিছিয়ে পড়তো নয়ন। যা হোক, এভাবেই হাসি খুশিতেই চলতে থাকলো নয়নের স্কুলের দিন গুলি।

কেন জানি বেশ কয়েকদিন যাবত নয়নের সময় ভাল যাচ্ছে না। সেদিন একটু সকাল সকাল স্কুলে এসে পড়েছে। ক্লাশে ডুকে দেখে কার যেন বই রাখা বেঞ্চের উপর কিন্তু কেউ নেই তবুও বুঝে গেল যে বইগুলো আমির সাহেবের। কারণ, তার জায়গাতেই বইগুলো রাখা। আমির আলী ক্লাশের সবচেয়ে ভাল ছাত্র। এক নম্বর রোল তার, নয়নের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। আমির আলীকে সবসময় আমির সাব বলেই ডাকতো নয়ন। স্কুল এবং স্কুল শেষে নয়ন যাদের সঙ্গে ঘুরাফরা করে আড্ডা দেয় তাদের মধ্যে একজন। দু’জনের মধ্যে এতোই গরিষ্ঠতা যে সারাদিনের চিন্তাভাবনা সবই শেয়ার করতো তার সাথে। তার বই দেখে খুশিই হলো নয়ন। যাক একজনকে তো পাওয়া গেল। কিন্তু তাকে দেখতে না পেয়ে একটু অবাকই হল। সারা স্কুল ফাঁকা কোথাও সাড়াশব্দ নাই। তো গেল কই….! নিজের বই বেঞ্চে রেখে বেরিয়ে এলো ক্লাশ থেকে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছে কই গেল আমির সাব। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

মনে মনে ভাবছে অনেক কিছু, তবে বারবার কেবল ঘুরেফিরে একজনকেই মনে পড়ছে। আজকাল তাকে খুব বেশি বেশি মিস করতে শুরু করেছে নয়ন। তাকে দেখলেই কেমন যেন আনমনে হয়ে যায় সে। মনের আকাশে রঙিন ঘুড়ি উঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। কিছু বলার সাহস করতে পারে না। যদিও একই ক্লাশের মেয়েটি, তবুও সব কথা বললেও আসল কথাটি বলতে পারছে না। কি যেন ভয়, কি জানি কি হয়…..। আজ সকাল সকাল স্কুলে আসার সাথেও সেই কারনটাই প্রধান। যদি সেও একটু আগে আসে তো কিছু বলতে না পারলেও দেখতে তো পারবে। তাকে দেখতে যে দারুণ লাগে। যেমন সুন্দর চেহারা তেমনি শরীরের গড়ন তার। মুগ্ধ নয়ন তার চেহারা দেখেই।

না, এখনো কাউকে দেখা যাচ্ছে না। কমন রোমের দিকে নজর গেল হঠাৎ দরজার শব্দ শোনে। স্কুলের উত্তর দিক দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে মিরা আসছে। মিরা প্রায়ই এই সময়ই আসে। একই ক্লাশে তারা। মিরা কেন জানি ইদানিং নয়নের সাথে কথা বলতে আগ্রহী বেশিই মনে হয়। মিরা মেয়েটি সহজ সরল নাজুক প্রকৃতির খুব সুন্দর দেখতে। এর মধ্যে স্কুলের আরও ছাত্রছাত্রী আসতে শুরু করেছে।
কমনরুম থেকে আমির সাবকে বের হতে দেখে কিছু বুঝে উঠার আগেই মিরা কাছাকাছি এসে বললো-
কেমন আছো নয়ন। কখন আসলে?
এইতো কিছুক্ষণ। তুমি ভাল আছো? পাল্টা প্রশ্ন করে আমির সাহেবের দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে নয়ন। মিরা ভাল আছি বলে পাশদিয়ে কমনরুমের দিকে চলে গেল।
কি ব্যাপার নয়ন সাব কখন এলেন? বলে ক্লাশরুমে ডুকলো আমির। এইতো কিছুক্ষণ জবাব দিয়ে ক্লাশরুমে ডুকে নয়ন বলছে-
কি ব্যাপার আমির সাব ব্যাপার কি আপনার? এত সকাল বেলা আপনাকে তো পাওয়া যায় না। আজ কেন?
না এমনিতেই। বলে আমির আলী বসল বেঞ্চে।
এমনিতে মানে? কমন রুমে কি করছিলেন? একটু উচু স্বরে বলায় আমির বললো-
আস্তে কন, আপনারে বলবো সবই। এখন বলেন আপনি কেন আজ সকালেই আসছেন?
আমিও এমনিতেই, ভাল লাগছিল না। তাই ভাবলাম স্কুলে চলে যাই। বলতে বলতে নয়ন দরজা দিয়ে বাহিরের দিকে চেয়ে হাসছে দেখে আমির আলী বলছে-
কি ব্যাপার বলেন তো, আপনাকে বেশ কয়েকদিন যাবত মিনতির দিকে নজর একটু বেশি বেশি দিতে দেখছি মনে হচ্ছে?
হঠাৎ আমিরের মুখে মিনতি নামটা শুনে নয়ন অবাক হলেও কিছু বুঝতে না দিয়ে
না, এমনিতেই। মিনতিকে দেখিয়ে- দেখেন কি সুন্দর দেখা যাচ্ছে।
হুম, বুঝতে পারছি। লাগবো নাকি? যদি প্রেম করেন তো চেষ্টা করে দেখতে পারি। ভালই হবে, খারপ না। দেখতে শুনতে নায়িকার মতোই। আপনার সাথে মানাবে দারুণ।
আমিরের কথা গুলো শুনে ভালই লাগলো নয়নের। সে তো তেমনটাই চাইছে মনে মনে। তবুও কিছু বুঝতে না দিয়ে বললো –
চাইলেই কি সবকিছু পাওয়া যায়?
আপনি শুধু বলেন, লাগবো নাকি। আমিরের কথায় কেমন যেন জোড় লক্ষ্য করলো নয়ন। ভাবছে এত জোড় কোথায় পাইল আমির আলী। তাকে তো মিনতির সাথে বেশি মিশতেও দেখিনা।
দেখি, আর কিছু দিন যাক বলবো আপনাকে। এই বলে বাহির হয়ে বারান্দার জানালা দিয়ে বলল আমির সাব আমি দোকানে গেলাম। আপনি চাইলে আসতে পারেন। আমির বললো না, আপনিই যান। নয়ন দোকানের দিকে যাচ্ছে। বারান্দায় দেখা হলো ইয়াসমিন আর রেখা আসতেছে। কিছু না বলে মুচকি হেসে পাশকাটিয়ে যাচ্ছে নয়ন। রেখা বলে উঠল কই যাও, সিগারেট টানতে? রেখার কথায় লজ্জা পড়ে গেল নয়ন। আরে না এমনি তেই। হুম বলে তারা চলে গেল। নয়ন দোকানে ডুকে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানছে। তখনো নয়ন পুরোপুরি সিগারেট খায় না। মাঝে মাঝেমধ্যে টানে স্কুলে এলেই। তবে আজ যেন পাকা সিগারেট খোরের মতো টানছে। দোকানে আগে থেকেই বসা ছিল হানিফ। নয়নের সিগারেট টানার স্টাইল দেখে হানিফ বললো –
কিরে, তুই দেখা যায় সিগারেট পুরোপুরিই ধরলি। তোর পুরা নেশা হয়ে গেছে। আর ছাড়তে পারবি না দেখিস।
আরে না, সিগারেট আমার নেশা হবে না কখনো, দেখিশ। নয়ন দৃঢ়ভাবেই বলল।
দেখা যাবো।

দেখিস- বলে সিগারেটে ঘনঘন টান দিয়ে ছুড়ে ফেলে একটু পানি মুখে নিয়ে গড়গড় করতে করতে আবার স্কুলের দিকে যাচ্ছে নয়ন। বারান্দয় ডুকে কমনরুমের দিকে চেয়ে দেখলো মিনতি, খালেদা মিরা আর ইয়সমিন কমনরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। নয়নের দিকে চেয়ে কি যেন বলছে আর হাসছে তারা। নয়ন এসে ক্লাশের ভিতরে বসে পড়লো। ক্লাশে আরও অনেকেই বসে আছে। প্রায় সবাই এসে পড়েছে। সবাই বই দেখছে। আলীকে জিজ্ঞাস করল কিরে আলী এখন কোন ক্লাশ? প্রথম ক্লাশ তো ইংরেজী হওয়ার কথা ছিল, ইব্ররাহীম স্যার আসেনি এখনো, দেখি কোন স্যার আসে- বললো আকরাম। আকরাম ক্লাশের সেকেন্ড বয়। লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী। ভাল ছাত্র। তার পাশের মাঝখানের সিটেই বসে নয়ন আর দরজার কাছে প্রথম বসে আমির আলী।

রশিদ স্যার এসে ক্লাশে ডুকলো। রশিদ স্যার বাংলা ক্লাশ নেয়। স্যারের পিছনে পিছনে মেয়েরা ডুকছে। মেয়েরা স্যারের সঙ্গেই ক্লাশে আসে আবার চলেও যায় স্যারের সঙ্গে। সবাই দাঁড়িয়ে স্যারকে সম্মান জানায়। স্যার বসতে বললেই বসে সবাই।
প্রথম বেঞ্চে বসায় প্রায় সামনে দিয়েই যেতে হয় মেয়েদের। মিনতি যখন ডুকে তখন নয়ন মুখে ফু দিয়ে মিনতির চুল উডায়। এটা প্রতিবারই করে ডুকতে ও বের হওয়ার সময়। আজও করলো। মিনতির সামনের কিছু আগলা চুল থাকতো। যা ফু দিলে উড়তো। নয়ন এতেই খুশি। ক্লাশে বারবার মিনতির দিকে তাকাতো নয়ন। সবই বুঝতো মিনতি কিন্তু কোন সময় প্রতিবাদ করতো না সে। তাই বুঝি নয়ন এসব করার সাহস পেতো। মিনতির দিকে চেয়ে আছে নয়ন। আহ! কি সুন্দর। খালেদা কাশি দিয়ে নয়নকে চোখের ইশারায় সাবধান করলো এই প্রথম। এর আগেও নয়ন এরকম করেছে। কিন্তু আজই প্রথম সাবধান করলো কেউ। দেখতো ক্লাশের সবাই, জানতোও, কিন্তু কেউ কিছু বলতো না। এমনকি মিনতিও না। স্যার হাজিরা রোল ডাকছে।

কয়েক দিন পর…..

চার পিরিয়ড শেষ, টিফিন চলছে। প্রচণ্ড গরম সেদিন। রোদ্দুর খেলা করছে চারিদিকে। সবাই এদিক সেদিক ঘুরছে, মাঠের ওপাশটায় গাছের ছায়ায় বসে আছে। নয়ন টিউবয়েলে যাচ্ছে পানি খাবে। কমনরুমের সামন দিয়ে লাইব্রেরী থেকে গ্লাস নিয়ে টিউবয়েলের কাছে যেতেই খালেদা ডাকছে-
নয়ন দাঁড়াও, গ্লাসটা দেও ধুঁয়ে দিই।
নয়ন গ্লাসটি খালেদার হাতে দিয়ে টিউবয়েলের কাছেই দাঁড়িয়ে দেখছে, খালেদা গ্লাসে পানি নিয়ে হাত দিয়েই ধুইছে।
নয়ন তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। লাইব্রেরীর কাছেই টিউবয়েল থাকায় স্যারদের শুনে ফেলার ভয়ে আস্তে আস্তেই বললো খালেদা।
আচ্ছা বল।
নয়ন বুঝতে পারছেনা কি বলতে চায় খালেদা। আগ্রহ নিয়ে শোনার অপেক্ষায় নয়ন।
খালেদা গ্লাস পরিষ্কার করে পানি ভরে নয়নের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলছে-
আমি বেশকিছু দিন যাবত লক্ষ্য করছি।
কি ?
তুমি মিনতির দিকে বেশি বেশি তাকাও, ফু দাও আসতে যাইতে।
তয় কি বিচার করবা নাকি? হাসতে হাসতে বলে খালেদার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খাচ্ছে নয়ন।
না, বিচার না। মিনতিও তোমার কাজকারবার বুঝে। তুমি কি মিনতির সাথে প্রেম করবা?
নয়ন অবাক হয়ে শুনছে, আনন্দে আত্মহারা। এমন একটা কথা খালেদার মুখে শুনবে আশা না করলেও মনে মনে এমন কথা শোনার অপেক্ষা করছে অনেক দিন যাবত। কিছু বলতে পারছে না।
কি, কিছু একটা কও?
তোমারে কে বলছে এইসব?
মিনতিই বলছে, তুমি রাজি থাকলে তোমার সাথে প্রেম করতে চায় মিনতি।
আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। তুমি ওকে বলতে বলবা।
না, সে বলতে পারবে না। তুমি একটা চিঠি নিয়ে আসবা।
না, ওকেই আগে দিতে বল। আমি জানি না, কি লিখবো।
আচ্ছা, আগামীকাল সকাল সকাল স্কুলে আসবা। এই বলে খালেদা চলে গেল।



(লেখাটা প্রথমে আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট 'স্বপ্ননীড়' এ লিখেছিলাম। ব্লগ ফিরে পাওয়ায় শেয়ার করলাম। জানিনা আর কত পর্ব হবে।)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×