somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে (পর্ব-৫)

০৭ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নয়ন-৫



কেমন যেন অস্থির অস্থির একটা ভাব নয়নের। আজ মিনতির সাথে দেখা হবে। কি বলবে আর কি বলা যাবেনা তাই ভাবছে মনে মনে। প্রতিদিনের চেয়ে অনেক আগে সাড়ে ন'টার দিকেই স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেল। আজ একটু সকাল সকাল যেতে বলেছে স্কুলে। মনে মনে অনেক কথার জাল বুনছে নয়ন। আজ বলবে মিনতিকে, তাকে ছাড়া তার আর চলছে না। কেমন যেন এক অজানা হারানোর ভয় মাঝেমধ্যে নিঃস্ব করে দিয়ে যায় নয়নের ভেতর বাহির। ভাবতে ভাবতে স্কুলের বারান্দায় পৌঁছে দেখে মিনতি কমন রুমের দরজায় দাঁড়ানো।

কেমন যেন চিন্তার ছাপ মিনতির মুখে। নয়নকে দেখেই মিনতি কাছে চলে এসেছে। নয়নের ক্লাসে ঢোকে বলছে, তুমি নিলু আপার বাড়িতে এসো, আমি যাচ্ছি। মিনতি বলেই হেটে হেটে চলে যাচ্ছে সেই বাড়ির দিকে। নযন বই রেখে বেঞ্চে বসে ভাবছে, কি হয়েছে আজ মিনতির। কেমন যেন উদাসী ভাব তার। কিছুই ঠাওর করতে পারছেনা। এবার নয়নও সেই বাড়ির দিকে হাটছে।

নিলু চাচীর বাড়িতে ঢোকতেই চাচী কি যেন বোঝাতে চাইল, নয়ন কিছুই না বুঝে চেয়ে রইর চাচীর মুখের দিকে। চাচী বলছে আজ মিনতিকে কেমন যেন চিন্তিত মনে হলো। যাও দেখ কি হইছে। তোমরা ওই কানির রুমে বসে গল্প করগা। নয়ন চুপচাপ ঘরের ভিতর ঢোকে গেল। মিনতি বসে আছে খাটের এক পাশে। নয়ন ভাবছে কোথায় বসবে, মিনতির সামনে দাঁড়িয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে, কি হয়েছে তোমার। খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন আজ। মিনতি নিটের দিকে চেয়েছিল এতক্ষণ। নয়নের কথায় মুখ তুলে বলছে, কই, না, কিছুই হয়নি আমার। তুমি বসো। নয়ন মিনতির পাশেই বসে পড়লো খাটে। দুজনই চুপচাপ বসে আছে। কেউ যেন কিছুই বলতে পারছেনা। মিনতির চুপচাপ থাকাটা নয়নকে ভাবাচ্ছে। কারণ, ওর মুখটা কেমন যেন বেজার লাগছে। নয়নের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে ওই মলিন মুখ দেখে। সারারাত কত কথা, কতকিছু ভেবেছে আজ বলবে মিনতিকে, তার কিছুই আর বলতে ইচ্ছে করছেনা। কেমন যেন উদাসী হয়েই বসে আছে দুজন।

অনেকক্ষণ চুপ থেকে নয়ন বলছে কেন আসতে বললে আজ সকালে। তোমার মলিন মুখ দেখাতে?
এবার যেন মিনতির ঘোর কেটে গেল, চঞ্চল হয়ে বলছে, আরে না, কেমন যেন ভালো লাগে না আমার।
কি হয়েছিল, কিসের চিন্তা ঢোকলো তোমার মনে?
তুমি শুনলে কষ্ট পাবে।
না, কষ্ট পাবো না, বল।
আমাকে নুননি যেতে বলেছে দু এক দিনের মধ্যে।
নুননি কি? নয়ন অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলো।
নুননি আমাদের বাড়ি। আব্বা নাকি অসুস্থ তাই যেতে বলেছে। তাছাড়া অনেকদিন হল যাই না।
তাতে কি হয়েছে?  যাবে, সমস্যা কোথায়?
না, আমি ভাবছি অন্যকিছু।
কি ?
অসুস্থতার দোহাই দিয়ে যদি আমার বিয়ে দিতে চায় তো?
ভালোই তো হবে। বিয়ে তো ভালো জিনিশ।
কি বললা!
ঠিকই তো বলছি। প্রতি রাতেই যখন একা একা বিছানায় এপাশ ওপাশ করি তখন মনে হয় যদি একটা বৌ থাকতো আমার! কত মজা হইতো।
হুম, তাহলে করছো না কেন?
চেষ্টা তো করছি, হচ্ছে না তো।
কই চেষ্টা করছো? ও ও বুঝেছি, তুমি মনে হয় আরো কোন জায়গায় প্রেমটেম করছো।
আরে না, এক জায়গাতেই কিছু করতে পারিনা। আবার আরেক জায়গা। কেন, তোমার সাথে কি এটা প্রেম হচ্ছে না?
হুম, হচ্ছে। তাহলে কাকে বিয়ের কথা ভাবো?
আরে বোকা, তোমাকেই ভাবি প্রতিরাত। খুব ভাবি। অনেক ভাবে পেতে চাই। কই, পাই তোমারে।
কি করতে চাও?
করতে চাই মানে?
বললা যে, এক জায়গাতেই কিছু করতে পারিনা। কি করতে পারো না তুমি?
কতকিছুই তো করতে মন চায়। প্রায় বছর চলে যাচ্ছে এখনো তোমার হাতটা ধরেও দেখতে পারলাম না, ওটা নরম না লোহার।
দেখ, দুষ্টুমি করবা না।
ও মা, কি দুষ্টুমি করলাম।
তোমাকে হাত ধরতে নিষেধ করেছি কবে?
না, তা করনি। আসলে হাত ধরার সুযোগ পাইলাম কই।
সুযোগ তুমি নেও না কেন?
তুমি দেও না কেন?
আমি মেয়ে মানুষ, কিভাবে তোমাকে সুযোগ করে দিবো।
হ, ঠিকই কইছো। তুমি কিভাবে সুযোগ দিবা। তবে সুযোগ নষ্ট করতে ভালোই পারো।
মানে...?
গতকাল তুমি একটু সকাল সকাল আসতে বলার পর থেকে সারাটা বিকাল, সারাটা রাত তোমার কথা ভেবেছি। কত কথা, কতভাবে তোমাকে বলবো। আমার একা সময় গুলোর কষ্ট আর কামনার কথাগুলো সব বলবো আজ। অথচ, আজ এসেই দেখি তোমার চাঁদ মুখে অমানিশা ভরে করে আছে। মুহূর্তেই সবকিছু উল্টে গেল আমার। হারিয়ে গেছে মনে জমানো হাজারো কথা, নিশিরাতে সাজানো স্বপ্নগুলো!
কবি হয়ে গেছো দেখছি। ভালোই তো পারো।
কই আর পারলাম মিনতি....! তোমার সামনে এলে জানিনা আমি বোবা হয়ে যাই কেন! মনে অনেক ইচ্ছা থাকার পরও কোন ইচ্ছাই তোমাকে জানাতে পারিনা।
তোমার আবার কি ইচ্ছা হয়?
কেন, আমার কি কিছু নাই নাকি, ইচ্ছা হওয়ার মতো?
দেখো, ভণ্ডামি করবা না বলে দিচ্ছি। আমি আছি কত চিন্তায়, আর উনি মরে রঙে।
কি ভণ্ডামি দেখলা? একা ঘরে এখনো কত দূরত্ব দেখো তোমার আমার মাঝে। আমার চাওয়াটা তোমার কাছে রঙের মনে হলো....!
বুঝছি, আর আসা যাবেনা এভাবে।
কি বুঝছো? কেন আসা যাবেনা।
তুমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছো দিনদিন।
কেমন হচ্ছি ?
আমার ভয় লাগে।
কিসের ভয়?
ছেলে মানুষের বিশ্বাস নাই।
কথাটা উল্টা হবে।
না, সিধাই আছে। তুমি কখন কি করে বসো ঠিক নাই।
ও ও এই ভয়। মিনতি, আমি তোমার অবাধ্য হবো না কখনো। কোনদিন জুর করবোনা কিছুতেই। এই বিশ্বাস রাখতে পারো।
হয়েছে, আর ভালো মানুষ সাজতে হবে না। এখন বল, যদি বিয়ে দিতে চায় তো কি হবে?
কি, হবে আর, বিয়ে করে নিবা।
আমি মরে যাবো। তোমাকে ছাড়া কাউকে ভাবিও না কখনো।
আরে বোকা, কিছুই হবে না। তুমি যাবে আবার দুতিন দিন পরে চলে আসবে।
কেমন যেন চিন্তা হয় আমার জানো।
কোন চিন্তা নেই। যদি তেমন কথা ওঠে তো তুমি সোজা বলে দিবে এসএসসি পাশ করার আগে তুমি বিয়ে করবে না। সব চুকে যাবে। আপাতত সামনের দেড় বছর নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।
হ্যা, ঠিক বলেছো। আমি এমন ভাবতে পারিনি। কিন্তু, তারপর....!
তারপরের চিন্তা পরে করা যাবে।
এখন বলো, কিছু দিবা?
কি দেবো?
কিছুই দিতে ইচ্ছে করছেনা ?
ইচ্ছে করলেই সবকিছু দেওয়া যায় না।
বুঝি না মিনতি। আমি কিছুই বুঝি না। নয়নের মনটা ভার হয়ে গেল। আজও কিছুই বলতে পারলো না। মনের মতো কিছুই হলো না। নয়নকে ভাবতে দেখে মিনতি নয়নের বিছানায় রাখা বাম হাতটার উপর তার হাত রেখে বলছে,
দেখ, মন খারাপ করো না। আমি সবসময় তোমার শুধু এটুকু মনে রেখো। আমাদের ভালোবাসা যেনো পবিত্র থাকে সবসময়। আমি সম্ভবত আগামীকাল নুননি যাবো। বড়জোর তিনদিন থাকবো। তারপর আসবো। কোন চিন্তা করবা না তুমি। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবা। তিনদিনের সব কথা লিখে রাখবা। আমি এসে তিনদিনের তিনটা চিঠি একবারে নিবো।
নয়ন শুধু গাড় কাত করে সম্মতি জানালো।
চল এখন যাই। অনেকক্ষণ হলো। ক্লাস শুরু হতে বেশি সময় বাকি নেই।
নয়ন ওঠে দাঁড়াল, মিনতিও।
দুজনেই ঘর থেকে বেরিয়ে স্কুলের দিকে হাটতে লাগলো।

নয়ন আজ স্কুলে যায়নি। ভালো লাগছে না কিছু। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এ. টি. এম. জিন্নত আলী একজন ট্রেনিং প্রাপ্ত পল্লীচিকিৎসক। ভালোই সুনাম ছিল এলাকায় ডাক্তারিতে। কিন্তু তিনি ডাক্তারিতে মনোযোগী নয়। তার কাছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদই সব। তিনি যে ডিপুটি কমান্ডার। সংসদীয় সব কাজ তাকেই করতে হয়। তাই রোজ তাকে শহরে থাকতেই হয় মধ্যরাত অবধি। নয়নের বাবা আজ তাড়াতাড়ি শহরে যাওয়াতে তার জন্য স্কুল ফাকি দেওয়াটা সহজ হয়েছে। ঘরেই বসে শুয়ে বসে যাচ্ছে দিন। মনের ভেতর তো চিন্তা আছেই। তারমধ্য মিনতি যে কথা শুনালো তাতে তার চিন্তায় আরেকটা মাত্রা যোগ হয়ে গেছে। মিনতি তো আসবেই সে বিশ্বাস তার আছে। কিন্তু.... থাক এই না বলা কথাটা পরে একসময় বলা যাবে।

বিকেলবেলা খেলাধুলা করেই কেটে গেল। সন্ধ্যার পর মনে ভয় হতে লাগলো। স্কুলে না যায়নি তাই আব্বাকে কেউ বলে দেয় তো জবাবদিহি তো করতেই হবে। ভাগ্য খারাপ হলে উত্তমমাধ্যমও কিছু জুটতে পারে। যা হোক আজ অনেক রাত পর্যন্ত জেগে পড়তে হবে। যেন আব্বু এসে দেখে সে পড়ছে। পড়তে দেখে হয় তো কিছু নাও বলতে পারে।
কি পড়বে নয়ন। বই খুলে ভাবছে মিনতির কথা। সে কেমন আছে, কি করছে, অামার কথা কি কিছু ভাবছে সে? হয় তো ভাবছে, নয় তো আনন্দে ভুলেই গেছে আমার কথা। বই রেখে খাতা কলম নিয়ে বসে পড়লো মিনতির জন্য লেখতে। কি লিখবে। কিছুই বুঝতেছে না। অনেক কথা বলার ছিল মিনতিকে, তার কিছুই যেন বলা হয়নি তাকে। তার কাছে গেলেই সবকিছু ভুলে যায় নয়ন। যা কিছু বলা তা কেবল চিঠির পাতায় লিখতে পারে। আজও লিখে ফেলেছে একপাতা ভরে মিনতিকে না দেখার যন্ত্রণা মিশানো অনেক কথা। মনের দুশ্চিন্তা যেটুকু তারও কিছু লিখেছে আজ। রাত কতটা হলো কিছুই বুঝতে পারছেনা। চোখে ঘুম পাচ্ছে। বাপের ভয় ভুলে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে হাতমুখ ধোয়ে পড়তে বসে গেল নয়ন। পড়ছে আর ভাবছে যাক স্কুল চুরি তাহলে ধরা পড়িনি হয়তো। গোসল করে ভাত খেয়ে আজ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লো স্কুলের উদ্দেশ্যে। প্রথমে আমীর আলীর সাথে দেখা করে জানতে হবে গতকালের ক্লাস পড়া কি কি ছিল। কোন স্যারের পড়া তাকে মুখস্থ করতেই হবে তার ধারণা নিতেই আমির আলীর বাড়ি গিয়ে উঠল নয়ন। ততক্ষণে আমির আলী গোসল সেরে ভাত খাবে নয়কে দেখেই, কি খবর নয়ন সাব এত তাড়াতাড়ি কেন?
আমির আলীর কথা শুনে নয়ন হাতের গড়িটা দেখে একটু অবাক হলো, ও হ! তাইতো দেখছি, কেবল ৯.৪০ বাজে! ভেবেছিলাম একটু আগেই আসবো, তাই বলে প্রায় এক ঘন্টা আগে চলে আসবো ভাবিনি। নয়ন আসলে গতকাল স্কুল ফাঁকি দিয়েছে, তাই বাপের ভয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। বাবার শাসনে নয়ন সবসময় ভয়ে থাকতো। ভয় পাওয়ার জায়গা তার এই একটি জায়গাতেই।
নয়নকে বসতে বলে আমির ভাত খেতে যাচ্ছে, নয়ন তাকে ডেকে বলছে, আমীর সাব গতকাল কি পড়া ছিল, যা শিখতেই হবে?
না, তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কোন পড়া নেই।
বিএসসি স্যারের অংক...
গতকাল অংক যা বুঝিয়েছে সেটা আপনি পারেন। বিজ্ঞান একটু দেখেন, আমি ভাত খেয়ে আসি।
এই বলে নয়নকে বিজ্ঞান পড়াটুকু বের করে দিয়ে সঙ্গে ভাত খাওয়ার আমন্ত্রণ জানালো।
না, না, আমি খেয়ে এসেছি, আপনি তাড়াতাড়ি খেয়ে আসেন, স্কুলে যাই। হ্যা, বসেন বলে আমির খেতে গেল। নয়ন বসে বিজ্ঞান পড়াটা দেখছে। সেটা আগেই পড়া ছিল। তবুও পড়ছে, কারণ বিজ্ঞান স্যার সম্পর্ক চাচা লাগে, নয়নের বাড়ির পাশে বাড়ি। পড়া ঠিকমতো না বলতে পারলে বাপের কানে কথা যাওয়ার চান্স নাইন্টি পার্সেন্ট। আমির ভাত খেয়ে তার পড়ার ঘরে আসতে আসতে বেশ কয়েকবার পড়ে মোটামুটি মুখস্থ হয়ে গেল নয়নের। মুখস্থ বলতে একটু সমস্যা হলেও এখন লিখতে দিলে লেখা যাবে। আমির ভাত খেয়ে আসলে রেডি হয়ে দুইজন বেরিয়ে পড়লো। আমির আলী বাড়ি থেকে স্কুল মাত্র পাঁচ সাত মিনিটের রাস্তা। দুজন কথা বলতে বলতে স্কুলের দিকে হাটছে।

মেন রোডে ওঠে আমির আলী জিজ্ঞেস করলো, কি খবর আপনাদের,  কেমন চলছে?
নয়ন আমিরের কথা বুঝতে পেরে সোজা উত্তর দিল, ভালোই।
গতকাল মিনতিকে দেখলাম না, কোথায় গেছে বলতে পারেন?
হ্যা, পারি।
কোথায়?
তার বাপের বাড়ি?
কোথায়?
নুননি।
বুঝলাম না! একটু অবাক হয়েই আমির প্রশ্ন করলো।
হ, নুননি তার বাপের বাড়ি। আমাকে তাই বলে গেল গত পরশু।
তাহলে বাঘেরচর কি?
আমি জানিনা।
এটা কথা বললেন, প্রায় বছর হয়ে গেল, তার সম্পর্কে জানেন না!
না, আমি তেমন খুঁজ নেইনি। খুঁজ নিতে হবে।
কবে আসবে মিনতি?
আমাকে তো বলে গেলো আগামী কালের কথা।
ও, যাক।
দুজনে স্কুলে চলে এসেছে। নয়ন বই রেখে হানিফের দোকানের দিকে হাটতে লাগলো....
---
তিনদিন পর নয়ন স্কুলে এসেছে। সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি যাওয়ার পরদিন নয়ন তার নানি বাড়ি জামালপুর গিয়েছিল বেড়াতে। সেখানে একদিন থাকার পর নান্দিনাও গিয়েছিল খালাত ভাই মিলনের জোরাজুরিতে। অনেক না করেও তাকে যেতেই হয়েছিল। নান্দিনা রেল স্টিশনের এপাশে ওপাশে দুই খালার বাড়ি। মিলনদের বাড়ি থেকে বিকেলে ওই খালার বাড়ি গেল মিলনকে সাথে নিয়েই। সবার বড় সেই খালাই। সেই খালার পাঁচটা মেয়ের পরে ছোট একটা ছেলে তুহিন। সেখানে সাবিনার সাথে নয়নের ভালো বন্ধুর মতো সম্পর্ক। বয়সে একটু বড় হলেও সব আলাপই হয় তাদের মধ্যে। কথায় কথায় যখন আগামীকাল সকালেই চলে যাওয়ার কথা বললো নয়ন, তখনই সাবিনার কথায় সন্দেহের সুর। কিরে, ব্যাপার কি? তুই এখন আসলে থাকস না। এর আগেও এসে চলে গেলি পরেরদিন, আজও তাই। কারণটা কি।
না, কি কারণ, থাকবো।
নারে, কারণ তো অবশ্যই আছে একটা। তা'নাহলে আগে প্রায় চার পাঁচদিন থাকতি কম করে হলেও, এখন কেন পরেরদিন?
না এমনিতেই। স্কুল খোলা তো, তাই।
মিলন, সুযোগে বলে দেয়, প্রেমে পড়ছে সায়নানি। নয়ন ভাই নাকি সুন্দর একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছে।
সাবিনা, হুম....
তুই কেমনে জানলি, মিলনকে বলে নয়ন।
তুমি না বললে কি হবে।
আরে না সায়নানি বিশ্বাস কর।
হয়েছে, আর লোকাতে হবে না, বলে ফেল।
আরে না, মিলন না জেনেই বলছে।
না, নয়ন ভাই, আমাকে আল-আমিন আর মিন্টু বলেছে। তুমি নাকি খুব সুন্দর এক মেয়ের সাথে প্রেম করছো। কি জানি নাম বললো, মনে করতে পারছিনা।
এবার সাবিনার জোরাজুরি আর উপেক্ষা করতে পারলো না। সব বলে দিল নয়ন।
সবশুনে সাবিনা বলছে, তাইতো বলি, তোর তাড়া কোথায়। ওদিকে মিনতি বসে আছে অপেক্ষায়...তো যেতেই হবে।
কিছুক্ষণ গল্প করে মিলন আর নয়ন দুজনে মিলনদের বাড়িতে চলে এলো। নয়ন মিলনদের বাড়িতেই থাকে সবসময়। কারণ, মিলনরা তিন ভাই। দুই জন নয়নের সমবয়সি হওয়ায় সেখানেই থাকে। যা হোক পরদিন খালা আসতে দিতে না চাইলেও নয়ন একপ্রকার নাছোড় বান্দা হয়ে চলেই এলো। এসে পরেরদিন আজ স্কুলে একটু তাড়াতাড়িই এসেছে। কখন মিনতির সাথে দেখা করবে সেই আসল। না জানি মিনতি কেমন আছে ফিরে এসে তাকে না পেয়ে। তখনো দশটা বাজতে বাকি। বই রেখে নয়ন সাহেব আলী দের বাড়ির দিকে হাটছে।

সাহেব আলী দের বাড়ির কাছে যেতেই মিনতির সাথে দেখা। মিনতি স্কুলে আসছে। সেও একটু তাড়াতাড়ি এসেছে আজ। নয়নকে যেতে দেখেই মিনতি সাহেব আলীদের ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে রইল। নয়ন কাছে যেতেই, মিনতি অভিমানে মুখ ভার করে বলছে, কোথায় গিয়েছিলে তুমি, স্কুলে আসলানা কেন দুই দিন।
নয়ন, শান্ত হয়ে বলছে, তুমি কবে এসেছো?
আগে আমার কথার উত্তর দাও। মিনতি রাগে মনে হয় কেঁদে ফেলবে অবস্থা। তুমি কেন এলে না দুই দিন?
বলবো তো, এত রাগ করতেছো কেন?
না, রাগ হবে না উনার উপর। আমি এতো তাড়াতাড়ি চলে এলাম নুননি থেকে। অথচ দুই দিন তোমার দেখা নাই।
তাদের কথা বলা শুনে সাহেব আলী বাড়ি থেকে বেরিয়ে বলছে, কিরে তোরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছস। চল, ঘরে বসে বসে কথা বল।
সাহেব আলীর কথা শুনে দুজনে একটু ইতস্ত দেখে বলছে, যাও মিনতি ঘরে বসে কথা বলগা। কোন সমস্যা নাই।
নয়ন আর মিনতি সাহেব আলীর থাকার ঘরে গিয়ে চকিতে বসলো। দুজনই চুপচাপ।
কি হল, চুপ হয়ে গেলে কেন?
কি বলবো?
কিছুই বলার নাই?
আছে তো।
তাহলে বলছো না যে?
তুমি কোথায় গিয়েছিলে?
ভাবলাম তুমি আসতে দেরি তাই, একদিনের জন্য জামালপুর গেলাম।
শুধু জামালপুর?
আর কই যাবো?
না, তুমি জামালপুর এই দুই দিন থাকো নাই।
তুমি এত পাগল হচ্ছো কেন...!
আমার ধারণাই ঠিক।
কি?
আমি মিন্টুর কাছে পরশু দিন শুনেছি তুমি জামালপুর গেছো।
ঠিকি তো আছে।
না, ঠিক নাই। তুমি নান্দিনা গেছো, খালার বাড়ি।
হ, ঠিকি বোঝছো। তো...?
তুমি নান্দিনা কেন গেছো?
দেখো, রাগ করো না। মিলন খুব জোর করেই নিয়ে গেছে। আমি যেতে চাই নি।
কোন খালার বাড়ি থাকছো?
কেন, মিলনদের বাড়িতে।
খালাতো বোনদের দেখতে গেছো।
নয়ন এবার মিনতির রাগ বুঝে ফেলেছে। ও জানে যে নান্দিনা ওর দুই খালার বাড়ি। বড় খালার শুধু মেয়ে। নয়ন খুব নরম হয়ে বলছে, দেখো মিনতি, আমি দুনিয়া ঘুরে বেরালেও আমি তোমারই। শুধু তোমার জন্য, তোমার চিন্তা করেই খুব জোরাজুরি করার পরেও আমি গতকাল চলে এসেছি। খালা হয়তো রাগই করেছে।
এবার একটু রাগ কমছে মনে হল মিনতির। আসলে কেন, থাকতা।
হুম, কতদিন তোমারে দেখিনা বল তো। আমার মনটা তো তোমাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।
হয়েছে, আর ভালোবাসা দেখাতে হবে না। তুমি, জানো না, তোমাকে না পেয়ে কতজনকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করে খুঁজ নিতে চেয়েছি। আজ তাড়াতাড়ি এসেছি, তুমি না আসলে তোমাদের বাড়ির দিকে যাবো বলে।
মিনতির কথা শুনে নয়ন খুব খুশি। আমিও কি কম মিস করেছি তোমাকে। আজ সকালে স্কুলে এসেছি তোমার সাথে যদি দেখা হয়তো পাঁচদিনের না দেখার জ্বালা নিবাবো বলে।
এবার মিনতি হেসে ফেললো। হুম, আমার জন্য বুঝি জ্বলে তোমার?
কেন জ্বলবে না বল, তুমি ছাড়া যে আমার কোন সুখের জায়গা নাই। তোমাকে না দেখে থাকা যে আমাকে নরকের সাথে পরিচিত হওয়া।
মিনতি মুগ্ধ হয়ে নয়নের মুখের দিকে চেয়ে আছে। নয়নের চোখে চোখ পড়তেই চোখ নিচে নামিয়ে লজ্জায় সাদা মুখ লাল হয়ে উঠছে। নয়ন মুগ্ধ হয়ে মিনতির রূপ দেখছে। মনে মনে বলছে, হে আল্লাহ্ তুমি আমার মনের স্বাদ পূরণ করে দিয়েছো। আমি আর কিছু চাই না মিনতিকে ছাড়া। তুমি শুধু আমাদের সহায় থেকে।
নয়নের ভাবুক মুখ দেখে মিনতি বলছে, কি, চুপ হয়ে গেলে কেনো?
তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে এখন। নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে করছি আমি।
আমিও তোমার কাছে আসলেই সবচেয়ে সুখী হই। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না নয়ন।
তোমাকে হারালে যে আমার আর কিছুই বাকি থাকবে না হারানোর।
নয়নের খুব ইচ্ছে হচ্ছে মিনতির কপালে একটা চুমু দিতে। কিন্তু সাহস করে আর দিতে পারছে না। শুধু তার মুখপানে চেয়ে আছে। আর ভাবছে, মিনতি তোর কি একবারও মনে চাইছে না আমাকে একটু আদর করতে?
মিনতি
হুম,
না, থাক।
কি,
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নয়ন বললো, না, কিছু না।
কিছু বলবে?
না,
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লে যে
তুমি বুঝবা না।
আমি বুঝি নয়ন।
কি বুঝো?
যা বুঝি তা বোঝানোর সময় এখনো হয়নি।
কবে হবে?
ধৈর্য ধরো, হবে কোনদিন।
আর কতদিন ধৈর্য ধরে থাকতে হবে বলতে পারো?
দেখো নয়ন, আমার মনটা আরো বেশি পাগল তোমার কাছে থাকার জন্য। কিন্তু এখনো আমাদের সে সময় হয়নি। তোমার জন্য ভালোবাসা আমার সবসময় থাকে। সময় হলে বোঝাবো ঠিকই।
অপেক্ষায় থাকলাম সেই শুভক্ষণের।
চল এখন যাই। মিনতি বলেই উঠে দাঁড়ালো।
কই যাবা, ক্লাস তো শুরু হয়ে গেছে মনে হয়।
না না, হয় নি এখনো। চল।
থাকনা, আজকে না এখানেই দুই জন ক্লাস করি।
আরে না, সবাই খারাপ মনে করবে।
কেন, আমরা কি কিছু করছি নাকি।
না না, বোকারাম। কেউ যদি জানে দুই জন এখানে ক্লাস বাদ দিয়ে থেকেছি তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তারচেয়ে বরং আজ চল, আরেকদিন সময় করে আসবো।
নয়ন আর কোন কথা না বাড়িয়ে বললো, চল যাই তাহলে। মনে থাকে যেন কথাটা।
থাকবে, থাকবে। এই বলে মিনতি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বাড়াতেই স্কুলের দপ্তরি চাচা বেল বাড়ি দুইটি, মানে দুই ক্লাস শেষ। হুম, হইছে, এখন আর যেও না মিনতি থেকে যাও। আর দুই ক্লাস পর আর স্কুল এমনিতেই ছুটি হয়ে যাবে। তখন সবার সাথে চলে যেও, কেউ কিছু বুঝবেনা।
নয়নের কথাগুলো শুনে মিনতি আর বের হল না। আবার ঘুরে চকিতে বসে পড়ল। এত তাড়াতাড়ি দুই ক্লাস চলে গেল...!
হুম, সময়ের গতি মনে হয় আজ বাড়ছে।
ইয়ারকি করো না তুমি।
মিনতি কেমন যেন চিন্তিত। তাকে শান্তনা দিয়ে বলছে, এখানে আমার কি দোষ দেখলা। তোমার সাথে থাকলে আমার সময়ের খেয়াল থাকে কবে...?
আসলে দুজনে কথা বলতে বলতে এত মজে ছিল যে, বাহিরের কোন চিন্তাই তাদের মধ্যে ছিল না। তাই সময় কতক্ষণ যাচ্ছে তার হিসেব তারা রাখতে পারেনি। সেদিন, সেই ঘরেই দুইজন পুরো স্কুল সময় কাটিয়েছে। অনেক সময়। দশটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত। দুজনেই ছিল ঘরে। তবুও নয়ন মিনতির হাতটা ধরার সাহসও পেল না, পরে মিনতি কিছু মনে করে বসে। শুধু কথা বলেই চলে গেল এত সময়। নয়ন স্কুল ছুটি হলে মিনতিকে বিদায় দিয়ে কিছুক্ষণ পর স্কুলে এসে নিজের বইখাতা নিয়ে বাড়ির দিকে হাটছে।

আজ নিজের প্রতি নিজেই অভিযোগ নয়নের। এতসময় কাছে থাকার পরও নয়ন ছোঁয়ে দেখতে পারলো না মিনতিকে। কেন এত ভয় নয়নের! এমনি ভয় আর ভালোবাসার কথোপকথনে তাদের সময় যদিও ভালোই যাচ্ছে, তবু নয়নের যেন কিসে অতৃপ্তি। কিছুই ভালো লাগে না। মিনতিকে কিছুই বলতে পারিনা সামনে গেলে। এভাবেই তাদের প্রায় দুবছর হতে চললো।

এতদিন তাদের দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে সবই ঠিকঠাক ছিল। এভাবেই সপ্তাহে প্রায় দু'তিন দিন স্কুলে এসে কখনো ক্লাসের আগে কখনো বা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চলতে থাকে তাদের দেখা সাক্ষাৎ। বিনিময় হয় অনেক চিঠির পর চিঠি। কখনো এবাড়ি কখনো ও বাড়ি কখনো বা স্কুলের পিছনের জঙ্গলার মাঝে পুরনো ইন্দিরা পাড়ে খোলা আকাশের নিচে নয়ন আর মিনতির কথা চলতে থাকে। কিন্তু নয়নের স্বাদ মিটে না। স্বাদ মনে হয় মিটছে না মিনতিরও। দুজনের সমান আগ্রহেই দেখা সাক্ষাৎ হয়ে থাকে। যদিও মিনতির ইচ্ছা বা সময়ের উপর নির্ভর করে প্রতিটি সাক্ষাত। যতদিন এগুচ্ছে তত গভীর থেকে গভীরে চলে যাচ্ছে তাদের ভালোবাসা। একজন আরেক জনকে দুদিন না দেখলে কেই  থাকতে পারেনা। দুজনের মাঝেই লেগে থাকে দেখা করার তৃষ্ণা।

ভালোবাসা যেমন বাড়ছে তেমনি ভয়ও বাড়ছে অনেক হারাবার। নয়নের মনে ভালোবাসার পাশাপাশি হারানোর ভয়টাও তীব্রতর। কিন্তু সে ভয় একমাত্র মিনতি ছাড়া কারো কাছে প্রকাশ করেনা নয়ন। ধীরেধীরে স্কুলের আশেপাশের বাড়ি গুলোর সবাই জেনে গেছে নয়ন আর মিনতির ঘন্টার পর ঘন্টা এক ঘরে বসে গল্প করা। সবার মুখে নয়ন মিনতির প্রেম। ছোটবড় সবাই জেনে গেছে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক। সবাই জানলেও, তাদের বাড়িতে এখনো কেউ না জানায় কোন সমস্যা এখনো হয়নি। কেবল, বন্ধু বান্ধবী আর খুব কাছের মানুষরাই জানে তাদের প্রেম চলছে।

দুই বছর কেটে যাচ্ছে তাদের প্রেম। এখনো নয়ন মিনতির হাত দুটিও ধরতে পারেনি। ভয়ে, লজ্জায় বা ভালোবাসার প্রতি ভালোবাসার মানুষের প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা রেখে কোন নাকোনো ভাবে তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত স্পর্শ পাওয়া হয়নি। তাই ভালোবাসার স্রোতে ভাসলেও নয়নের মনে একটু অসন্তুষ্টি.... যদি কোন দিন কোন পরিস্থিতিতে ভুলেই যায় তো কোন স্মৃতিই আর রইলো না তাদের মধ্যে এই প্রেম ভালোবাসার। বন্ধুদের মহলেও এমনই প্রশ্ন নয়নকে নিয়ে। কাছের যারা তারা তো প্রায়ই বলতো- তোর দ্বারা হবে নারে... তোরে ভাব দেখিয়েই রাখবো আর হঠাৎ একদিন চলে যাবে উঁড়ে অন্য ঠিকানায়, সেদিন আর পিছন থেকে টেনে ধরার কিছুই থাকবেনা তোর কাছে...!  এই ধরণের আরো নানা কথা শুনে সত্যিই নয়নের ভীষণ ভয় হতে লাগলো। আসলে কি হারিয়ে যাবে মিনতি ! যদি তাই হয় তো সত্যিই তো কিছুই নেই যাতে তাকে ফেরাতে পারি। এমন কোন স্মৃতি নেই যে আমাকে তার পড়বে মনে! স্কুলে তো আরও কতজনে প্রেম করছে। তাদের অন্তরঙ্গতা আর দৈহিক সম্পর্ক কারো কারো মিলনের কথাও শুনে নয়ন একটু চিন্তিতই হয়ে পড়ে। নয়ন কখনো চায়নি মিনতির সাথে দৈহিক কোন সম্পর্ক জড়াতে বিয়ের আগেই, মিনতিও। চায়ও না কেউ। কিন্তু বন্ধুদে প্রমাণসহ উদাহারণ নয়নকে এখন বেশিই ভাবাতে থাকে। আর, ভাববেই না কেন! ক্লাস এইটে থাকতে প্রেম শুরু দুজনের এখন টেন-এ। এই দুই বছর তারা কত বসে থেকেছে একসাথে বদ্ধ ঘরে, দুজনে কথা বলেছে ঘন্টার পর ঘন্টা, কত চিঠিতে নয়ন মিনতিকে বলেছেও- ফেরত উত্তর তো তারও সেরকমই ছিল, তুও কোনদিন তার সাথে আলাপ কালে তার মধ্যে তেমন কোন ইচ্ছে ছিল না, নয়ন বুঝতে পারেনি সেরকম কিছু। নয়নও তাই আগবাড়িয়ে তাকে ছুঁতে চায়নি। তাহলে কি সত্যিই মিনতি তার সাথে অভিনয় করছে....! না! এমনটা হতেই পারেনা কখনো। তাকে তো কোনভাবে কোনদিন বাধ্য করিনি। সেই তো প্রথমে আমার সাথে প্রেম করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল, বলেছিল 'ভালোবাসি'। নয়ন কোন উত্তর খুঁজে মিলাতে পারেনা।

অর্ধ-সাময়িক (ছয় মাসিক)পরীক্ষা শেষ হয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা সামনে। সবকিছু আগের মতোই চলছিল তাদের। হঠাৎ মিনতির দুইদিন স্কুলে না আসায় আবার অজানা ভাবনায় নয়ন। সে তো কোথাও বেড়াতে গেলে আগেই জানিয়ে যেতো। কিন্তু গত দুইদিন কেন স্কুলে আসলো না এই ভাবনায় কেন যেনো অস্থির হয়ে পড়লো নয়ন। তাই গতরাতেই মিন্টুর সাথে কথা বলে রেখেছিল আজ সকালে মিনতির বাড়ির দিকে যাবে তারা। তাই সকাল ন'টার দিকে দুইজন সাইকেল চালিয়ে বাঘের চর গেল।

যাওয়ার সময় নয়নকে মিনতির বাড়ি চিনিয়ে দিল নয়ন ইসারায়। পরে টাঙ্গারপাড়া দিয়ে ঘুরে আবার মিনতির বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে ফিরছিল। মিনতিদের বাড়ির কাছে প্রাইমারী স্কুলের মোড়ে একটু সরু থাকায় সাইকেল থেকে মিন্টু নেমে হেটে আসতে থাকে। নয়ন মিনতির ঘরের পাশে এসে পিছনে পড়া মিন্টুকে উদ্দেশ্য করে ডাকে- কইরে... তাড়াতাড়ি আয়, স্কুলের সময় হয়ে গেল। সেই সময় মিনতি স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঘরে। মিন্টু চলে আসায় দুজনে আবার রওয়ানা হলো। সমস্যাটা প্রায় বেঁধেই ছিল সেদিন। সামনে বাড়ির আঙ্গিনায় বাঁশের কি যেন কাজ করছিল এক লোক সে থামতে বলল। মিন্টু সাইকেল থেকে নেমে পড়লো তার সাথে কথা বলছে। নয়ন সাইকেলের উপরেই বসে রইল মাটিতে পা ঠেকিয়ে। সেই লোকটি মিন্টুকে সব প্রশ্ন করেই চলেছে, মিন্টুও সবগুলো উত্তর দিচ্ছে। সেখানে বসে থাকা এক মুরুব্বী নয়নের সাথে কথা বলতে থাকে। তাদের পরিচয় বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করছে। নয়ন সবকথার উত্তর দিচ্ছে। এমন সময় মিনতি বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে হেটে যাচ্ছে। নয়নের চোখ মিনতির হাটার দিকে স্থির। মিনতি চলে যাওয়ার পর নয়ন বলছে, আমাদের কি যেতে দিবেন? আমাদের স্কুলে যাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। প্রথম থামতে বলা সুন্দর লোকটি কেমন যেন যেতে না দেওয়ার মতো কথা বলছিল। পরে মুরুব্বী লোকটির কথায় ছেড়ে দিল আমাদের। আমার সাইকেল চালিয়ে চলে এলাম।

আসার সময় পথে মিনতির সাথে দেখা হলেও কোন কথা বলা হলো না। সঙ্গে আরও ছাত্রীরা থাকায় শুধু চোখে চোখ পড়ায় মিনতি একটু মুচকি হাসলো। তাদের পাশ কাটিয়ে বাড়ি চলে গেল নয়ন আর মিন্টু। সময় বেশি না থাকায় তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে আসে দুজন। কিন্তু, স্কুলের সামনে আসতেই তাদের ভয় হতে লাগলো। কারণ, সেই সুন্দর লোকটি স্যারদের অফিস রুম থেকে বেরিয়ে আসছে দেখে।

নয়ন আর মিন্টু একটু স্থির হলো। কি করবে ভাবছে। হয়তো তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে সেই লোকটি। কিন্তু, অভিযোগ করার মতো কিছুই করেনি তারা। তাই নির্ভয়ে স্কুলে ঢোকে গেল দুজন। সোজা যারযার ক্লাশে গিয়ে বসলো। ক্লাশে স্যার আসার পরই জানতে পারলাম হ্যা, আমাদের জন্য অভিযোগই করে গেছেন সেই লোকটি। নয়ন স্যারের জিজ্ঞাস করার পর মিন্টুকে পিছনে পরায় ডেকেছিল, সেটাই বলে দিল সুন্দর করে বুঝিয়ে। আর অভিযোগ হয়েছে নয়ন আর মিন্টু তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে বাড়ির ভিতর থাকা মেয়েকে ডেকেছে 'তাড়াতাড়ি আয়'। নয়ন বলার পরে ক্লাসে থাকা মিনতি বলল- তখন আমি স্কুলে আসার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। তাই হয়তো ভুল বুঝেছে আঙ্কেল...। মিনতি এই কথা বলার পরও স্যার শুধু হুম, হুম করে একটু বুঝার ইঙ্গিত দিলেন তা নয়ন বুঝে নিল সহজেই। না বুঝার কিছুই নেই। এতদিনে স্কুলের সবাই জেনে গেছে নয়ন আর মিনতি প্রেম করছে। সেটা হেড-স্যার (প্রধানশিক্ষক) পর্যন্ত জানে। তাই নয়ন স্কুলে আর কোন ভয়ের কারণ ভাবেনি। তারপর মিনতির জবাবে সব শেষ তখনই।

সেদিন, স্কুলে আর কোন সমস্যা না হলেও, আসল সমস্যাটা হলো নয়নের বাড়িতে, রাত বারোটার পর তার বাপ শহর থেকে বাড়ি ফেরার পরে.....

বড় ভুল...... ভালোবেসে- পর্ব-৪

বড় ভুল......ভালোবেসে...পর্ব-৩

বড় ভুল...... ভালোবেসে...পর্ব-২

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×