somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে... ( পর্ব-২)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নয়ন-২


পানি খেতে যাওয়াটা নয়নের যেন আজ সার্থক হলো। মিনতি যে তার সাথে প্রেম করতে চায় বা মনে মনে নয়নকে পছন্দ করে এমনটা ভাবতেই নয়ন যেন আনন্দে নেচে উঠবে অবস্থা। নয়ন আজ খুব খুশি। টিফিনের পর ক্লাসগুলো কোনো রকম শেষ হতেই আনন্দে গুনগুন করে গান গাইছে আর বাড়ির রাস্তায় হাটছে। চোখে তার রাস্তার বদলে ভেসে উঠছে মিনতির মুখটি। রাস্তায় আরো ছাত্রছাত্রী উপেক্ষা করে নয়ন গান গেয়ে যাচ্ছে আপন মনে। যেন গানের মাঝেই তার হৃদয়ের আনন্দ বেরিয়ে আসছে। আনন্দে আজ যেন নাচতে ইচ্ছে করছে নয়নের, পারছেনা কেবল লোক-লজ্জার ভয়ে। তবুও মাঝেমধ্যে উচ্চ স্বরে গেয়ে উঠছে গান। গাইবেই না কেন! আজ যে নয়নের বহুদিনের জমানো স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। অনেক দিনের কল্পনা সত্যি হতে যাচ্ছে। একটা প্রেম পাওয়া নয়নের হৃদয়ের আকাঙ্খা ছিল। সেই কাঙ্ক্ষিত প্রেম পেয়ে যাচ্ছে প্রিয় মানুষটির কাছ থেকেই। মিনতি নয়নের নিত্যদিনের কল্পনা, স্বপ্ন। সেই স্বপ্নই যে সত্যি হয়েছে খালেদার কথায়। মিনতির কাছের বান্ধবীর মুখে তার আগ্রহ জেনে নয়ন আজ আকাশের চাঁদই যেন পেয়েছে হাতে। বাড়ি এসে ভাত খেয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লো মিন্টুর উদ্দেশ্যে, তাকে বলবে বলে। মিন্টুর কাছ থেকে পরামর্শও চাইবে। সে যে তার বাল্যকালের দোস্ত।

মিন্টুদের বাড়ি গিয়ে জানতে পারে, মিন্টু বাড়িতে নাই। কোথায় গেছে তা মা'ও বলতে পারছে না। তাই ফিরে এসে প্রতি দিনের মতো মিজানদের বাড়ির পার্শ্বে খোলা আকাশের নিচে বসে বসে ভাবছে, কি করবে। কার সাথে বলবে তার এই আনন্দের কথা, তার স্বপ্ন পূরণের কথা। নতুন নতুন প্রেম বুঝি এমনই ছটফটানি বাড়ায়। মিন্টুকে পেল না তাই মনটা একটু চিন্তিতই লাগছে। কারণ, মিন্টুই ছোট সময়ের প্রথম দোস্ত। সুখ-দুঃখ, কষ্ট বেদনা সবই তার সাথে শেয়ার করে। নয়নের মুখ দেখেই মনের কথা বুঝতে পারে সে হল মিন্টু। বন্ধু তো এমনই হওয়া উচিৎ। যদি মুখ দেখেই বন্ধুর মনের অবস্থা না বলতে পারে তবে কিসের বন্ধু। মিন্টুকে না পেয়ে কিছুই যেন ভাল লাগছে না। কোথাও আর স্থির হয়ে থাকতে পারছেনা নয়ন। ভেতরের আনন্দ যেন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতোই বেরিয়ে আসতে চাইছে। একা মনে বসে গান গাইছে......

আসাদ আসছে দেখে নয়নের গান একটু ছোট হয়ে এলো। আসাদ দূর থেকেই বলছে- কিরে আজ বিকাল বেলাই আসর শুরু করে দিলি। কয়েক বন্ধু মিলে প্রতি রাতেই এখানে বসে আড্ডা দেয়, মাঝেমধ্যে গান গায় তারা। তাই আসাদ একটু ব্যঙ্গ করেই বললো হয় তো। আসাদ নয়নের ভাতিজা লাগে সম্পর্কে। বয়সে সমবয়সী বলে বন্ধুর মতোইর চলাফেরা তাদের মধ্যে। সবকিছুই ওরা কয়েকজন একসাথেই করে। নয়ন গান থামিয়ে আসাদকে কাছে ডাকলো- এই দিকে আয় তাড়াতাড়ি, তোর সাথে কিছু কথা বলার আছে।
আসাদ হাসতে হাসতে নয়নের পাশে এসে ঘাসের উপর বসতে বসতে বলছে- কিরে, আজ তোরে এতো খুশি খুশি মনে হচ্ছে, কারণ কি?
হুম, আজ আমার খুব আনন্দের দিন। আমার এত্ত দিনের স্বপ্ন আজ বাস্তবতার ছোঁয়া দিয়েছে।
কি এমন পেলি যে, এত্ত আনন্দ। আর স্বপ্নটাই বা কি? প্রেমের সঙ্গী খুঁজে পেলি না কি?
হুম, অনেকটা সেরকমই।
কে?
তুই মিনতিকে দেখসছ?
আসাদ নয়নদের স্কুল পেরিয়ে তার মাদ্রাসায় যায়। অনেক সময় নয়নদের স্কুলের সামনে দোকানে বসে আড্ডা দেয়। তাই অনেক মেয়েদেরই আসাদও চিনে। আসাদ বললো-
কোন মিনতি, ওই বিলাই চোইক্ষ্যা, বাঘের চর থাকে সেই মিনতি?
জানিনা কোথায় থাকে। তবে ওই দিক থেকেই আসে দেখি। তুই কি তারে দেখছস কোনোদিন?
হুম, দেখেছি। খুব সুন্দরী। স্কুলের অনেক ছেলেই তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে অনেকেই হয় তো তার সাথে প্রেম করার জন্যও পাগল। কেন, মিনতির কি হইছে?
আসাদের মুখে মিনতির প্রশংসা শুনে আর মনে মনে আনন্দে নাচতে লাগলো নয়ন। না, মানে, আজ খালেদা বললো মিনতি নাকি আমার সাথে প্রেম করতে চায়। তুই কি কস। ভাল হবে তার সাথে আমার প্রেম করা।
কেন ভাল হবে না। মেয়ে তো দেখতে শুনতে ভালই। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তোর কথা।
তোর বিশ্বাস করতে হবে না, তুই শুধু বল কেমন হবে।
তুই কি তার বাড়ি চিনস? আসাদ কেমন যেন একটু চিন্তিত হয়েই বলল।
না, চিনি না।
তাইলে কেমনে, বাড়ি-ঘর না জেনেই প্রেমে পড়া কি ঠিক হবো। আসাদ কেমন যেন হঠাৎ আমার গার্ডিয়ানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হল।
আমি বললাম- তার বাড়ি ঘর জেনে কি করবো। আমার তো শুধু ওকেই দরকার। আমার এতদিনের স্বপ্ন ওর সাথে প্রেম করা। ও যেদিন প্রথম আমাদের স্কুলে এসে ভর্তি হয়েছিল, সেদিন থেকেই তাকে দেখার পর আমার মনের ভেতর প্রেমের আকাঙ্খা জন্মেছে। এতদিন মুখে বলতে পারিনি কিছুই। শুধু দেখেছি দুচোখ ভরে। কেবল মনে মনে স্বপ্ন সাজিয়েছি। একা একা মনে মনে তার সাথে কথা বলেছি। মনে প্রাণে চেয়েছি একান্ত আপন করে। আজ সেই চাওয়া আমাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে।

এবার আসাদ একটু হাসি হাসি মুখেই বলল- কি হয়েছে, আমাকে ভালো করে বল শুনি।
আজ খালেদা সিওর করে বললো-মিনতি আমার সাথে প্রেম করতে চায়। আমাকে নাকি চিঠি দেওয়ার কথা বলেছে।
তুই কি বললি?
আমি বলেছি, আগে তাকেই চিঠি নিয়ে আসতে বলো।
ঠিক বলছস। আগে ওই'ই চিঠি দেক। তারপর না হয়.....।
হুম, তাই বলেছি।

তাদের কথা বলার সময় আল-আমিন আসলো। পাশে এসে নয়ন ও আসাদকে হাসি খুশি দেখে বলছে- কিরে.... তোরা এত্ত খুশি ক্যারে আজ। আল-আমিন নয়নের ক্লাসেই পড়ে। আজ স্কুলে যায়নি। তাই নয়নকে দেখে বলছে, আজ স্কুলে গিয়েছিলি?
হুম, গিয়েছিলাম। আজ একটা মজার কাহিনী হয়ে গেল স্কুলে।
কি হয়েছে শুনি। নয়ন স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে খালেদার সাথে কথা বলার সব কিছুই বললো। আল-আমিন সবকিছু শুনে কোনো কথা না বলে সোজা সুজি বলে দিল- কোন চিন্তা নেই, শুরু করে দে। এমন মেয়ের সাথে প্রেমে পরা সৌভাগ্যের।

তাদের কথা বলার মাঝেই মিন্টুকে দেখা যাচ্ছে এদিকেই আসছে। মিন্টুকে দেখেই আল-আমিন বলছে- ওই তো মিন্টু আসছে। ও আজ কই গেছিলো। আমি বললাম- জানিনা, আজ স্কুলেও যায়নি। মিন্টু কাছাকাছি আসতেই আল-আমিন বলছে- কিরে, আজ তুই কই ছিলি। মিন্টু বলল- একটু ধানুপাড়া গেছিলাম। ধানুপাড়া মিন্টুর নানু বাড়ি। মিন্টুকে দেখেই আসাদ হেসে হেসে বলছে- নয়ন তো আজ বেজায় খুশি।
কেন রে, আজ কি পাইলি। আমাকে লক্ষ্য করে বললো মিন্টু। মিন্টুকেও সবকিছু খুলে বলে, শেষে বললাম এখন কি করি, আমাকে তোরা বোঝা। তোর বাড়িতে খুঁজে এসেছি। তুই আসছস ভালই হইছে।
মিন্টু কোনো চিন্তা না করেই বলে দিল- এতে আর চিন্তা করার কি আছে। মিনতি আপার মতো মেয়ে কারো প্রেমে পড়তে চাইলে যে কেউ আনন্দে আত্মহারা হবে। তাছাড়া, তোর তো আশা পূর্ণই হচ্ছে।
হুম, তা ঠিক বলছস। আমার আশা পূর্ণ হওয়ার পথে। তাহলে.... দেখি ও চিঠিতে কি লেখে, তার পর আমি উত্তর দেবো। এই বলে নয়ন ওঠে বাড়ির দিকে হাটতে লাগলো। কিরে, কই যাস। আল-আমিন বললো। আমি মাথা ব্যথা করছে বলে, চলে এলাম।

আমার রুমে এসে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি- কি লিখবে মিনতি প্রথম চিঠিতে। আমিই বা কি লিখবো। আমি তো কোন চিঠি লিখিনি। ভাবতে ভাবতে কেমন যেন লজ্জা লাগতে শুরু করলো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, তাই বাতি জ্বালিয়ে টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছি। খুব টেনশন হচ্ছে। একটা বিড়ি ধরিয়ে টানছি। এই সময় আম্মা সাধারণত রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই একটু আয়েস করেই টানছি আর ভাবছি আগামীকাল কি বলবো। কখন যে আম্মা ও ঘর থেকে আমার বিড়ি খাওয়া দেখে ফেলেছে বুঝতেই পারিনি। চৈতন্য ফেরে আম্মা যখন বলছে, এই নয়ন, কি এমন চিন্তা করছস। বিড়ি খাওয়ার সিস্টেম কি। যেন সংসারের কঠিন চিন্তায় মগ্ন। হারাম জাদা, পড়া বাদ দিয়ে বসে বসে বিড়ি খাওয়া। আমি তাড়াতাড়ি বিড়ি ফেলে দিয়ে বললাম- কই, না- কিছু না। আম্মা চলে গেছে ততক্ষণে। মনে মনে নিজেদের উপর রাগ হচ্ছে। কয়েক দিন চিন্তা করেও আমার রুমের পার্টিশনে কয়োটি পেপার লাগাবো লাগাবো বলেও লাগাতে পারিনি। লাগালে আজ আম্মার কাছে ধরা খেতে হতো না। আসলে কাজ কখনো পরে করবো বলে ফেলে রাখতে নেই।

না, আজ কিছুতেই ভালো লাগছে না। মন চাইছে কখন সকাল হবে। মিনতির চিঠি পড়বো। চোখে যেন মিনতি- শুধুই মিনতির মুখটা ভাসছে। মনে কেবল ওকে নিয়েই নানা ধরণের চিন্তা। মিনতি আসবে- হাতে একটা চিঠি থাকবে। মুখে মিষ্টি মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলবে- আই লাভ ইউ নয়ন। আমার হাতে চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলবে- আগামীকাল চিঠির উত্তর নিয়ে আসবে। তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকবো। আমি চিঠি পকেটে রেখে মিনতিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলবো- আই লাভ ইউ টু মিনতি। তুমি আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। তুমি শুধু আমাকে মনে রেখো, ধরে রেখো তোমার বাহুডোরে, ভালোবাসার বন্ধনে সারাটি জীবন জুড়ে। আমি তোমার সাথেই বাঁচবো, মরতে হলে মরবো তোমার সাথেই।

এরকম কতশত কথা মনের ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে। কত মধুর মুহূর্তের চিন্তায় মগ্ন এই মন। প্রথম প্রেমের প্রথম চিঠি বলে কথা। আমার কিশোর হৃদয়ের স্বপ্ন স্বাদ পূরণ হওয়ার পথে। তাই আনন্দ আর অজানা ভয়ে অস্থির লাগছে। রাতে ভাত ভালো লাগলো না। তবুও আম্মার জোড়াজুড়িতে অল্প কিছু ভাত খেতেই হলো। মা কোনো মতেই ভাত না খেয়ে ঘুমোতে দিতে পারেনা। মা আমার! সব সময় খাওয়ার সময় থাল ভরে ভাত দিতো আর বলতো- সব গুলোই খাবি, ভাত পাতে রাখতে নেই। মা যেন পেট ভরে ভাত খাওয়াতে পারলেই তৃপ্তি পায়। মা'রা বুঝি এমনই হয়।

সেই রাতে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি জানিনা। ঘুম ভাঙল আম্মার ডাকে- নয়ন, এই নয়ন উঠ না....। গোছল করবি ভাত খাবি স্কুলে যাবি। কখন উঠবি, এই নয়ন ওঠ। তোর বাপে আইলে কিন্তু মারবো। তাড়াতাড়ি ওঠ, হাত-মুখ ধোয়ে পড়তে বস। ঘুম ভাঙতেই আমি বিছানা ছেড়ে দাত ব্রাশ করতে করতে বাহিরে এসে প্রস্রাব করে হাত মুখ ধোয়ে মা কে বললাম- আম্মা ঠাণ্ডা ভাত নাই। মা বলল- ঠাণ্ডা ভাত কেন, গরম ভাতই হয়ে গেছে। তুই গোছল করে আয়- নয়টা বেজে গেল প্রায় আমারও অফিসে যেতে হবে, তুই আসতে আসতে তরকারি হয়ে যাবে.....।

আম্মা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর ভিজিটর। প্রতিদিন সকালে আমাদের তিন ভাইকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে অফিসে যায়। গ্রামের সংসার সামলিয়ে অফিস করা আম্মার খুব কষ্ট হয়ে যেতো, তবুও কোনদিন অনিয়ম হতো না। আমাদের কোনো বোন না থাকায় মা'র কষ্ট আরও বেশি। একটা বোন থাকলে আম্মাকে সামান্য সাহায্য সহযোগিতা করতে পারতো। পাশের বাড়ির বিমলা ফুফু মাঝে মাঝে আম্মাকে সাংসারিক কাজে সহযোগিতা করতো। বিনিময়ে আমাদের ওখানেই খেতো। বিমলা ফুফু খুব দুঃখী। একটা ছেলে আছে তার আমার সমবয়সী। স্বামী পরিত্যাগ হয়ে নিজের বাপের বাড়িতেই সামান্য একটা ঘর তোলে থাকেন। এবাড়ি ওবাড়ি কাজ করে নিজে চলতো আর ছেলেকে খাওয়াতো। আমাদের পুরাতন জামাকাপড় তার ছেলেকে পড়তে দিতাম। মাঝেমধ্যে মানে ধান কাটামারির সময় দেখতাম ফুফুকে নতুন কাপড় কিনে দিতো, জাম্বু ( বেলাল) কেও। বিমলা জিয়ের ছেলের নাম বেলাল। সবাই জাম্বু বলেই ডাকতো। খুব সুন্দর চেহারা জাম্বুর। জাম্বু এখন বড় হইছে। মানুষের বাড়িতে বছর চুক্তি কাজ করে। অল্প কিছু যা মাইনা পায় তা দিয়েই তারা মা-ছেলে চলে।

আমি তাড়াতাড়ি গোসল করে এসে আম্মাকে ডাকছি ভাত খাবো বলে। আম্মা আমাকে সবসময় খাওয়ার সময় ভাত বেড়ে দিতো, তবেই খাইতাম। আম্মাকে ছাড়া ভাত খাইতে একদম ভালো লাগতো না। আম্মা এসে প্লেট ধুয়ে যথারীতি থাল ভরে ভাত বেড়ে দিয়ে বলল- তরকারি পাতিল থেকে নিয়ে খা। আমি রেড়ি হই, অফিসে যেতে হবে- আমার তাড়াতাড়ি। মা গোসল করতে গেলে আমি অর্ধেক খেয়ে আর অর্ধেক ভাত পাতিলে নামিয়ে রেখে কোনোরকম হাত ধুয়ে চলে এলাম আমার রুমে।

মনে মনে খুব আনন্দ আজ। কিছুক্ষণ পরই আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে দেখা হবে। কোন শার্ট পড়বো, পেন্ট কোনটা এই ভাবতে লাগলাম। প্রথম সাক্ষাত বলে কথা। দেখাতো প্রতি দিনই হয়, তবুও আজকের হিসেবটা ভিন্ন, আজকের দেখাটা আলাদা তাৎপর্যপূর্ণ। তাই মোটামুটি চিন্তায় পড়ে গেলাম কোন শার্টটি পড়বো। যাক, শেষে নূর ভাইয়ের দেওয়া হলুদ শার্ট আর আমার সবচেয়ে মনেরমত পেন্টটি পড়ে বই খাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম স্কুলে যাওয়ার জন্য। স্কুলে পৌঁছলাম তখন মাত্র সাড়ে নয়টা বাজে।

আজ স্কুলে আমিই মনে হয় প্রথম এসেছি। কেউ নেই। এতবড় স্কুলে একা একা কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। জানালার পাশে একটি বেঞ্চে বসে আছি। মিনতি যে পথে স্কুলে আসে, সেই পথের দিকে চেয়ে....। ভাবছি একা মনে অনেক কিছুই। এত ভাবনার মাঝে আমার কখনওই মনে হল না আমার হয় তো ভুল হচ্ছে। ভালোবাসা পাওয়ার ব্যাকুলতা আমাকে ঘিরে রেখেছিল। আজ সেই ব্যাকুলতারই অবসান হচ্ছে। মনের মধ্যে এ যে কেমন অনুভূতি তা বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

কিছুক্ষণ পরই দেখলাম মিনতি আসছে। দূর থেকে দেখেই আমার চোখ পাগল হয়ে গেল। খুব সুন্দর লাগছে আজ। প্রতিদিনই দেখি, মনে হয় খুব সুন্দর। কিন্তু, আজ যেন বেশিই সুন্দর দেখছি। মিনতি এত সকাল সকাল কোনদিন স্কুলে আসেনি। আজ একটু তাড়াতাড়িই এসেছে। কারণটা মনে হয়- প্রথম প্রেম পত্র। মিনতিকে আসতে দেখেই আমি বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। মিনতি আসছে ধীরেধীরে এগিয়ে। আমাকে দেখেই মনে হয় তার মুখে মিষ্টি হাসি। কপালে ছাড়া চুলগুলি বাতাসে দোলছে। আহ! নিজেকে আজ খুব সৌভাগ্যবান মনে হতে লাগলো এই ভেবে যে, এত সুন্দর একটা মেয়ে আমাকে ভালোবাসে! আমি সত্যিই আজ যেন মহাসুখ অনুভব করছি। নিজেকে সুখী ভাবছি।

মিনতি এসে সোজা কমনরুমে ঢোকে বই রেখে আবার বেরিয়ে এলো। সোজা আমার দিকে। আমি তার আসা দেখে ক্লাসে ঢোকলাম। মিনতি আমার কাছে এসে বুকের ভেতর রাখা একটা চিঠি (কাগজ ভাজ করা) আর তার একটা ছোট সাদাকালো হাফ ছবি আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো- আগামী কাল চিঠির উত্তর যেন পাই। যেন ভুল না হয়। এই বলে চলে যেতে ফিরতেই আমি বললাম দাঁড়াও, কিছুক্ষণ থাকো না।
না, কেউ দেখে ফেললে আমার বাড়িতে এই খবর চলে যাবে। তখন আমার মায়ের হাতে মার খেতে হবে।
তবুও কিছুক্ষণ থাকো না। এখন তো আর কেউ নেই।

মিনতি হাসছে মৃদু। না না আমার এত আদরের দরকার নাই। মুচকি হেসে আবারও ফেরত চিঠির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না তাকে। মনে মনে কতই না কথা সাজিয়ে রেখে ছিলাম মিনতিকে সাক্ষাতে বলবো বলে- সেইসব কথার কিছুই বলা হলো না। ওর মুখপানে চেয়ে থেকে আর তার কথা শুনেই পার হয়ে গেল বহু কাঙ্ক্ষিত সময়। চিঠিটি পকেটে রেখে ছবিটি আরেকটু দেখলাম। তার পর ছবি পকেটে রেখে ক্লাস থেকে বেরিয়ে পড়লাম চিঠি পড়ার জন্য নিরিবিলি জায়গার সন্ধানে.....।



বড় ভুল করেছিলাম তোমায় ভালোবেসে... (পর্ব-১)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:১৬
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×