আগের পর্বগুলো-
ফাযায়েলে আমালের ওপর কিছু অভিযোগ পর্যালোচনা- অভিযোগ ১- ফেরেশতাদের ‘ভুল’
ফাযায়েলে আমালের ওপর কিছু অভিযোগ পর্যালোচনা- অভিযোগ ২- ‘হিকায়াতে সাহাবার একটি ভ্রমাত্মক বর্ণনা’
‘সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব’-পৃষ্ঠা ১৩২-১৩৮
মূল আলোচনার আগে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার-
১ম বিষয়- শায়খ যাকারিয়া (রহ) এর যে কথাটিকে কেন্দ্র করে আলোচ্য অভিযোগের সূত্রপাত, সেটি ফাযায়েলে আমালের ভূমিকার অংশ নয়, বরং শায়খ (রহ) লিখিত ‘ফাযায়েলে তাবলীগ’ নামক কিতাবের ভূমিকার অংশ। শায়খ যাকারিয়া (রহ) ফাযায়েলে তাবলীগ, ফাযায়েলে নামায, ফাযায়েলে কোরআন ইত্যাদি বইগুলো আলাদা আলাদাভাবে লিখেছিলেন। পরবর্তীতে সেগুলোকে একত্র করে ফাযায়েলে আমাল নামে প্রকাশ করা হয়। ফাযায়েলে তাবলীগ, ফাযায়েলে নামায, ফাযায়েলে কোরআন ইত্যাদির প্রত্যেকটিরই আলাদা আলাদা ভূমিকা রয়েছ।
২য় বিষয়- কথাগুলো শায়খ যাকারিয়া (রহ) কখন লিখেছিলেন-মাওলানা ইলিয়াস (রহ) জীবিত থাকা অবস্থায়, নাকি তাঁর মৃত্যুর পর। কারণ- ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এবং ইন্টারনেটে কিছু মন্তব্য পড়ে বুঝা যায়, অনেকের ধারণা এরকম যে, শায়খ যাকারিয়া (রহ) মাওলানা ইলিয়াস (রহ) এর মৃত্যুর পর তাঁর সন্তুষ্টি চেয়েছেন, তাই এটি শিরক। যেমন-
•অগ্রপথিক এর মন্তব্য ও এর জবাবে ‘বিখ্যাত’ তাবলীগ-বিরোধী ব্লগার Abdullah Arif Muslim যা বলেছিলেন-
Click This Link
•Sonarbangladesh ব্লগে ‘তাওহীদবাদী’র মন্তব্য- Click This Link
কমেন্ট নং-৪২ দেখুন
(বর্তমানে সোনারবাংলাব্লগ ব্লকড। তাই কমেন্টটি দেখতে waybackmachine এর সাহায্য নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে লিঙ্ক- Click This Link)
‘তাওহীদবাদী’ তাঁর মন্তব্যে আত্মা শব্দটি উল্লেখ করলেও শায়খ যাকারিয়া (রহ) আত্মা শব্দটি উল্লেখ করেননি।
তাবলীগী কুতুবখানা কর্তৃক প্রকাশিত ‘ফাযায়েলে আমাল’ এ অভিযুক্ত কথাগুলো যেভাবে আছে-
(ফাযায়েলে তাবলীগ এর ভূমিকা দ্রষ্টব্য)
দারুল কিতাব কর্তৃক প্রকাশিত ‘ফাযায়েলে আমাল’ এ অভিযুক্ত কথাগুলো যেভাবে আছে -
(ফাযায়েলে তাবলীগ এর ভূমিকা দ্রষ্টব্য)
‘সহীহ আক্বীদার মানদণ্ডে তাবলীগী নিসাব’ এ যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে (পৃষ্ঠা ১৩২)-
খেয়াল করুন, কোথাও ‘আত্মা’ শব্দটি উল্লেখ নেই। আর তা থাকার কথাও নয়।
এ দুটি স্ক্রিনশটের কথাগুলোকে বিশুদ্ধ মিথ্যাচার বললে কম বলা হয়।
কারণ- কথাগুলো মাওলানা ইলিয়াস (রহ) এর জীবদ্দশায় লেখা হয়েছিল, তাঁর মৃত্যুর পর নয়।
ফাযায়েলে তাবলীগ বইটি লেখা শেষ হয় ইংরেজি ১৯৩১ সালে, আর মাওলানা ইলিয়াস (রহ) মারা যান ১৯৪৪ সালে।
•ফাযায়েলে তাবলীগ (দারুল কিতাব,২০০১) এর সর্বশেষ পৃষ্ঠা-
•উইকিপিডিয়া থেকে মাওলানা ইলিয়াস (রহ) এর মৃত্যুর তারিখ-
Click This Link
সুতরাং, শায়খ যাকারিয়া(রহ)র উক্ত কথাগুলো মাওলানা ইলিয়াস (রহ) এর মৃত্যুর প্রায় ১৩ বছর আগে লিখিত।
সুতরাং, ভাই ‘Abdullah Arif Muslim’ এর “আপনাদের শায়খ তো একজন মৃত মানুষের সন্তুষ্টি হাসিল করছে যেটা প্রকাশ্য শিরক” এবং ভাই ‘তাওহীদবাদী’র “মাওলানা জাকারিয়া সাহেব তাবলিগী নিসাব বইটি লিখেছেন মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের ইন্তেকালের পরে, আগে নয়”- এ কথাগুলো কতটুকু সঠিক, তা আশা করি বুঝতে পারছেন।
সুতরাং, ‘Abdullah Arif Muslim’ ও ‘তাওহীদবাদী’র মত যাঁদের ধারণা, শায়খ যাকারিয়া (রহ) মাওলানা ইলিয়াস (রহ) এর মৃত্যুর পর আলোচ্য কথাগুলো লেখায় তা শিরক, তাঁদের জন্য এতটুকু তথ্যই যথেষ্ট হওয়া উচিত।
সকল মুসলমানই এ কথা স্বীকার করবেন যে, যে কোন ভাল কাজের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হতে হবে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি। কিন্তু প্রচলিত বাকরীতিতে কাউকে সন্তুষ্ট করা বা খুশি করার কথাটি যে নানাভাবে ব্যবহৃত হয়, এ ব্যাপারটি যদি কাউকে বুঝিয়ে বলতে হয়, তবে তা আসলেই হাস্যকর। ছাত্রের জন্য শিক্ষকের সন্তুষ্টি অর্জন, সন্তানের জন্য মাতা-পিতার সন্তুষ্টি অর্জন, আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সন্তুষ্টি অর্জন- সবগুলোই শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। (বাক্যটি অনেকটা অগ্রপথিক ভাইয়ের কথার কপি-পেস্ট)
যেমন- পিতার সন্তুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী (রহ) তাঁর সুনান গ্রন্থে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) তাঁর ‘সহীহ আত তিরমিযী’ গ্রন্থে এটিকে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন।
•শায়খ আলবানী (রহ)র ‘সহীহ আত তিরমিযী’ থেকে (৪/৭৮)-
আর সহীহ মুসলিম এর একটি হাদিসে চাচাকে পিতার সমতুল্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
•সহীহ মুসলিম থেকে (বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ৩/৩৪৭-৩৪৮ )
মাওলানা ইলিয়াস (রহ) ও শায়খ যাকারিয়া (রহ)র সম্পর্কঃ
মাওলানা ইলিয়াস (রহ) ছিলেন শায়খ যাকারিয়া (রহ)র চাচা, শিক্ষক এবং অন্যতম অভিভাবক (শায়খ যাকারিয়া (রহ)র বাবা মাওলানা ইয়াহইয়া (রহ) সাহেব যখন মারা যান, তখন শায়খের বয়স ঊনিশ)।
বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন-
১/হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ) ও তাঁর দ্বীনি দাওয়াত- শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ) (মোহাম্মদী বুক হাউস কর্তৃক প্রকাশিত)
২/ শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা মুহাম্মদ যাকারিয়া রহ- শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ) (মুহাম্মদ ব্রাদার্স কর্তৃক প্রকাশিত)।
দুটি বই-ই অনুবাদ করেছেন মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ।
যাহোক, শায়খ যাকারিয়া (রহ)র সাথে মাওলানা ইলিয়াস (রহ) এর চাচা-ভাতিজা এবং ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে তুলে ধরার জন্য ফাযায়েলে কুরআন (দারুল কিতাব,২০০১) এর ভূমিকা থেকে একটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
সুতরাং, খেয়াল করুন-
• বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
• চাচা বাবার সমতুল্য।
• মাওলানা ইলিয়াস (রহ) ছিলেন শায়খ যাকারিয়া (রহ) সাহেবের চাচা এবং শিক্ষক।
• শায়খ যাকারিয়া (রহ) সন্তুষ্টি অর্জন সংক্রান্ত বাক্যটি লিখেছিলেন মাওলানা ইলিয়াস (রহ) সাহেবের মৃত্যুর পরে নয়, বরং তাঁর মৃত্যুর ১৩ বছর আগে।
সুতরাং, শায়খ যাকারিয়া(রহ)র উক্তিটি শিরকের উদাহরণ, নাকি সহীহ হাদিস অনুসরণের, তা বিবেচনা করুন।
সামহোয়্যারইনব্লগেই এ অভিযোগ নিয়ে কিছু পোস্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটির শিরোনাম- “একটি বড় শিরক বা শিরকে আকবরের সচিত্র প্রতিবেদন” Click This Link
পোস্টের ৫ নম্বর কমেন্টের উত্তরে পোস্টদাতা লিখেছেন-
তিনি লিখেছেন, “দেখুন এখানে সাহাবী কিন্তু বলতে পারতেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করলাম, তা কিন্তু বলেননি”।
সম্ভবত তাঁর ধারণা, কেউ নেক কাজের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করলে সেটিও গর্হিত কাজ।
অথচ সাহাবায়ে কেরাম (রাযি)দের জীবনে এ জাতীয় উক্তির উদাহরণ রয়েছে।
উদাহরণ ১- আহলে বাইতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জন---
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত –(ইফাবা, ৬/৩২৬)
উদাহরণ ২- হযরত সাওদা বিনতে যামআ(রাযি)র আমল----
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত- (ইফাবা, ৪/৪১৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টির মাঝে যে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি রয়েছে, একথা কোন মুসলমানকে ব্যাখ্যা করে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। সে কারণেই উদাহরণের উক্তি দুটোতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টির কথা বলা হয়েছে।
তেমনিভাবে বাবার সন্তুষ্টির মাঝে রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি (তিরমিযী), আর চাচা বাবার সমতুল্য (সহীহ মুসলিম)। সুতরাং, কেউ যদি এ হাদিসদ্বয়ের অনুসরণে চাচার আদেশ পালনের ক্ষেত্রে চাচার সন্তুষ্টির কথা উল্লেখ করে, তাহলে সেটিকে কেন্দ্র করে শিরকে আকবর এর অভিযোগ তোলা কতটুকু সঠিক? বিশেষ করে সেই ব্যক্তি যখন মানুষকে তাঁর বইয়ে বারবার ইখলাস অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। ফাযায়েলে তাবলীগ এর পুরো পঞ্চম পরিচ্ছেদটি শায়খ যাকারিয়া (রহ) লিখেছেন ইখলাস অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করে।
উদাহরণ ৩- হযরত ফাতিমা (রাযি)র মৃত্যুশয্যায় হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযি) যা বলেছিলেন
ঘটনাটি উল্লেখ করার আগে একটি ভূমিকার প্রয়োজন। কারণ- আলোচ্য বর্ণনাটি মুরসাল। আমার মনে হয়, এ লেখাটি যারা পড়বেন, তাঁদের কারো কারো ধারণা এমন যে, সকল মুরসাল বর্ণনাই অগ্রহণযোগ্য। তাই প্রথমে এ ব্যাপারে সালাফি ভাইদের কাছে নির্ভরযোগ্য- এমন উৎস সমূহ থেকে কিছু তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
প্রথমে প্রখ্যাত সালাফি আলিম শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ এর islamqa.net থেকে মুরসাল হাদিস সম্পর্কে জেনে আসি (পুরোটা এখানে-http://islamqa.info/en/ref/130686)-
অনুবাদ-
“কোন হাদিসকে মুরসাল বলা হয় যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এর বর্ণনাকারী ব্যক্তি একজন সাহাবী না হয়ে একজন তাবিঈ হন। জীবনীগ্রন্থগুলোর সাহায্যে একজন সাহাবী ও তাবিঈর মাঝে পার্থক্য করা সম্ভব।
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকিম (রহ) বলেছেন-
হাদিসের শায়খদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই যে, মুরসাল সেই হাদিসকে বলা হয় যেটি একজন মুহাদ্দিস একজন তাবিঈ পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন, আর সেই তাবিঈ বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,.........’” (মা’আরিফা উলুমুল হাদিস, পৃষ্ঠা ৬৭)”
অর্থাৎ, একজন তাবিঈ তো সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সরাসরি কোন কথা শোনেননি। তিনি একজন বা একাধিক সাহাবীর কাছ থেকে শুনে বা আরেকজন তাবিঈর কাছ থেকে শুনে তা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদিসটি বর্ণনা করার সময় তিনি সেই সাহাবী বা তাবিঈর নাম উল্লেখ করেননি।
কোন হাদিস মুরসাল হলেই তা যঈফ বা দুর্বল হবে, তা নয়। বিভিন্ন বিবেচনায় মুরসাল হাদিসও নির্ভরযোগ্য হতে পারে।
১/ এ ব্যাপারে ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ) এর বক্তব্য-
ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ) তাঁর ‘মিনহায আস সুন্নাহ’ গ্রন্থে মুরসাল বর্ণনা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। শায়খ ডঃ সুহাইব হাসান তাঁর ‘An Introduction To The Science Of Hadith’ গ্রন্থে ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ)র সেই আলোচনা উল্লেখ করেছেন।
ডঃ সুহাইব হাসান মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন শায়খ বিন বায (রহ), শায়খ মুহাম্মদ আল-আমীন আশ-শানকীতী (রহ), শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী(রহ) প্রমুখ।
বিস্তারিত এখানে- Click This Link
এ কথাগুলো উল্লেখ করা হল যাতে আমাদের সালাফি/আহলে হাদিস ভাইয়েরা উপস্থাপিত তথ্যের উৎসের ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে পারেন।
An Introduction To The Science Of Hadith বইটির ডাউনলোড লিঙ্ক- - Click This Link
বইটির ২৯ পৃষ্ঠায় ডঃ সুহাইব হাসান মুরসাল বর্ণনাসমূহের ব্যাপারে ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ)র বক্তব্য উল্লেখ করেছেন তাঁর ‘মিনহায আস সুন্নাহ’ গ্রন্থ থেকে-
অর্থাৎ, ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ) মুরসালকে ৩ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন,
“সেগুলোর কিছু গ্রহণযোগ্য, কিছু অগ্রহণযোগ্য, আর কিছু এমন যে, সেগুলোর ব্যাপারে আরও গবেষণা প্রয়োজনঃ
• যদি এ কথা জানা যায় যে, বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের থেকে এটি (অর্থাৎ ইরসাল) করে, তবে তাঁর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে।
• যদি বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য ও অনির্ভরযোগ্য- উভয় প্রকারের ব্যক্তিদের থেকে এটি করে, তবে আমরা তাঁর বর্ণনা গ্রহণ করব না (অধিকতর গবেষণা ছাড়া), কারণ সে এমন ব্যক্তি থেকেও বর্ণনা করে যার নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে জানা নেই।
• যে সমস্ত মুরসাল হাদিস নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের বর্ণনার বিপরীত, সেগুলো পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য”।
২/ ডঃ বিলাল ফিলিপস এর “Usool ul Hadeeth” থেকে একটি তথ্য
আশা করি আপনারা ‘পিস টিভি’র কারণে ড. ফিলিপসকে চেনেন। মদীনা এবং রিয়াদ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন(http://en.wikipedia.org/wiki/bilal_philips), আমাদের সালাফি ভাইদের অন্যতম প্রিয় ‘লেকচার’ দাতা।
ডঃ বিলাল ফিলিপস তাঁর “Usool ul Hadeeth” গ্রন্থে মুরসাল হাদিস সম্পর্কিত আলোচনায় সহীহ মুসলিম এর একটি হাদিসের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন-
অর্থাৎ, তিনি সহীহ মুসলিম থেকে একটি হাদিস উল্লেখ করে বলেছেন, সাঈদ (রহ), যিনি একজন তাবেঈ,তিনি এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তাঁর এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যকার সূত্রের উল্লেখ ছাড়া। এই সূত্র হতে পারে একজন সাহাবী বা তাঁর মতই একজন তাবেঈ যিনি আরেকজন সাহাবী থেকে এটি বর্ণনা করেছেন।
বইটির ডাউনলোড লিঙ্ক- Click This Link
৩/বাংলাদেশ আহলে হাদিস আন্দোলনের মুখপাত্র দৈনিক আত-তাহরীক থেকে
ক/ Click This Link
খ/ Click This Link
গ/ http://www.at-tahreek.com/may2011/15.html
সুতরাং, বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে মুরসাল বর্ণনা নির্ভরযোগ্য হতে পারে।
আমাদের আলোচ্য ঘটনাটি (যা সামনে আসছে ইনশাআল্লাহ) যে সব কিতাবে বর্ণিত-
• আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (৫/৩১০ এবং ৬/৩৬৬), ইমাম ইবন কাসীর (রহ)
http://islamport.com/w/tkh/Web/927/1994.htm (আরবী)
http://islamport.com/w/tkh/Web/927/2428.htm (আরবী)
• সীরাহ আন নববীয়্যাহ (৪/৪১২, ইংরেজি সংস্করণ) , ইমাম ইবন কাসীর (রহ)
ডাউনলোড লিঙ্ক- Click This Link
• দালাইলুন নবুওয়াহ (৮/৪৬০), ইমাম বাইহাকী (রহ)
Click This Link (আরবী)
• সুনান আল কুবরা (৬/৩০১), ইমাম বাইহাকী (রহ)
http://islamport.com/w/mtn/Web/969/2416.htm (আরবী)
• সিয়ার আলাম আন নুবালা (২/১২১), ইমাম যাহাবী (রহ)
http://islamport.com/w/trj/Web/2129/845.htm (আরবী) ইত্যাদি।
এ বইগুলোর মধ্যে ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ বাংলাতে এবং ‘সীরাহ আন নববীয়্যাহ’ ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে। ইমাম ইবন কাসীর এবং আল বিদায়া সম্পর্কে সালাফি দৃষ্টিভঙ্গি ১নম্বর অভিযোগ পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রয়োজনে দেখে নিতে পারেন।
• ইমাম ইবন কাসীর (রহ) রচিত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ থেকে (ইফাবা, ৫/৪৭৫-৪৭৬)
• ইমাম ইবন কাসীর (রহ) রচিত আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া থেকে (ইফাবা, ৬/৫০২)
• ইমাম ইবন কাসীর (রহ) রচিত সীরাহ আন নববীয়্যাহ থেকে (ইংরেজি সংস্করণ, ৪/৪১২)
এ বর্ণনার নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে-
• ইমাম ইবন কাসীর (রহ)
১/ এ সনদ বেশ সবল ও উত্তম। বলাবাহুল্য (তাবিঈ) আমির আশ শাবী (রহ) এ ঘটনা আলী (রাযি)এর নিকটে সরাসরি শুনে থাকবেন কংবা আলী (রা) এর কাছে শুনেছেন এমন কারো মাধ্যমে শুনে থাকবেন।
- আল বিদায়া, ৫/৪৭৬ (ইফাবা)
২/ The line of transmission for this is excellent and strong.
It is clear that Amir al-Shabi heard it from Ali, or from someone who heard it directly from him.
- Al-Sira al Nabawiyya,4/412
• ইমাম বাইহাকী (রহ)
هذا مرسل حسن باسناد صحيح
http://islamport.com/w/mtn/Web/969/2416.htm
এটি হাসান মুরসাল যার সনদ সহীহ
- সুনান আল কুবরা, ৬/৩০১
• ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (রহ)
وهو وإن كان مرسلاً فاسناده إلى الشعبي صحيح، وبه يزول الإشكال في جواز تمادي فاطمة عليها السلام على هجر أبي بكر
http://islamport.com/w/srh/Web/2747/3369.htm
এটি মুরসাল হলেও আল শাবী (রহ) পর্যন্ত এর সনদ সহীহ এবং এটি হযরত ফাতিমা (রাযি) ও হযরত আবু বকর (রাযি) এর মধ্যকার সমস্যা সমাধান করে দেয়। -ফাতহ আল বারী, ৬/২০২
(ফাদাক অঞ্চলের ভূমি নিয়ে হযরত ফাতিমা (রাযি) ও হযরত আবু বকর (রাযি) এর মাঝে যে সাময়িক মতপার্থক্য দেখা দেয়, সে সমস্যার কথা বলা হয়েছে।)
সুতরাং, ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (রহ)র মতে বর্ণনাটি নির্ভরযোগ্য। কারণ- অনির্ভরযোগ্য বর্ণনার দ্বারা কোন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
• ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ)
আলোচ্য বর্ণনাটি ইমাম শাবী (রহ)র সূত্রে বর্ণিত। ইমাম শাবী (রহ)র সূত্রে বর্ণিত আরেকটি মুরসাল হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ) বলেছেন-
وهذا الحديث جيد ؛ فإن الشعبي رأى عليّاً ، وروى عنه حديث شراحة الهمدانية ، وكان على عهد علي قد ناهز العشرين سنة ، وهو كوفي ، فقد ثبت لقاؤه ، فيكون الحديث متصلا ، ثم إن كان فيه إرسال لأن الشعبي يبعد سماعه من علي : فهو حجة وفاقاً ؛ لأن الشعبي عندهم صحيح المراسيل ، لا يعرفون له مرسلا إلا صحيحا ، ثم هو من أعلم الناس بحديث علي ، وأعلمهم بثقات أصحابه
“হাদিসটি (এখানে ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ) ইমাম শাবী (রহ) বর্ণিত অন্য একটি মুরসাল বর্ণনা সম্পর্কে আলোচনা করছেন, কিন্তু তাঁর সামনের কথাগুলো ইমাম শাবী (রহ) বর্ণিত সকল মুরসাল বর্ণনা সম্পর্কে প্রযোজ্য।) জায়্যিদ (উত্তম), কারণ আল শাবী (রহ) আলী (রাযি)কে দেখেছেন এবং তাঁর থেকে সুরারাহ আল হামদানিয়্যাহর হাদিস বর্ণনা করেছেন। হযরত আলী (রাযি)র সময়ে তাঁর বয়স ছিল বিশের ঘরে, এবং তিনি ছিলেন একজন কুফী।
এটা প্রমাণিত যে, তিনি (শাবী (রহ)) তাঁর সাক্ষাৎ পেয়েছেন, সুতরাং হাদিসটি মুত্তাসিল (সংযুক্ত)। তাছাড়া, হয়ত আল শাবী (রহ) এটি আলী (রাযি) থেকে শোনেননি, তাই এটি মুরসাল- এমনটাও যদি হয়, তবুও এটিকে উলামাগণের ইজমা অনুসারে দলীল হিসেবে পেশ করা যাবে, কারণ- তাঁদের দৃষ্টিতে আল শাবী (রহ) বর্ণিত মুরসাল সমূহ সহীহ, এবং তাঁরা (অর্থাৎ আলিমগণ) তাঁর থেকে (অর্থাৎ ইমাম শাবী (রহ) থেকে) বর্ণিত এমন কোন মুরসাল বর্ণনার কথা জানেন না যা সহীহ নয় ।
তাছাড়া, তিনি হযরত আলী (রাযি)র হাদিস সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম, এবং হযরত আলী (রাযি)র নির্ভরযোগ্য সঙ্গীদের ব্যাপারে তিনি সবচেয়ে জ্ঞানী। ” –আল সারীম আল মাসলুল, ১/৬
•শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ
সমকালীন প্রখ্যাত সালাফি আলিম শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ তাঁর একটি ফতোয়ায় লিখেছেন-
http://islamqa.info/en/ref/103739
অর্থাৎ, শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ বলেছেন, “কিন্তু আল শাবী(রহ)র মুরসাল বর্ণনা সমূহ অনেক আলিমগণের মতে গ্রহণযোগ্য।”
আর আমাদের আলোচ্য মুরসাল বর্ণনাটিও ইমাম আল শাবী (রহ) কর্তৃক বর্ণিত।
এরপর তিনি আল সারীম আল মাসলুল থেকে ইমাম ইবন তাইমিয়া(রহ)র বক্তব্য উল্লেখ করেছেন যা একটু আগে অনুবাদ করা হয়েছে।
• ডঃ আব্দুল্লাহ আল ফকীহ
আরেকজন সমকালীন সালাফি আলিম ডঃ আব্দুল্লাহ আল ফকীহ এর নেতৃত্বাধীন ফতোয়া টিমের একটি ফতোয়ায় এ বর্ণনার ব্যাপারে বলা হয়েছে-
Click This Link
শেষ লাইন দুটি খেয়াল করুন- “যদি হাদিসটি সঠিক হয়, তবে কোন সংশয় থাকে না। খুব সম্ভবত এটি সঠিক, কারণ ফাতিমা (রাযি) তাঁর জ্ঞান এবং ধার্মিকতার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন।”
এবার মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক। আলোচ্য বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত আবু বকর (রাযি) হযরত ফাতিমা (রাযি)কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,
“আল্লাহর কসম, আমি ঘরবাড়ি, ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন ও গোষ্ঠী-গোত্র ত্যাগ করেছি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য এবং তোমাদের সন্তুষ্টির জন্য হে আহলে বাইত! হে রাসূলের প্রিয় পরিজন!” (আল বিদায়া (ইফাবা), ৬/৫০২)
লক্ষ্য করুন, এখানে হযরত আবু বকর (রাযি) আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবারের লোকদের সন্তুষ্টিকে উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন, অথচ উপরে উল্লিখিত আলিমগণ কেউই এ বর্ণনায় শিরক খুঁজে পাননি , বরং এটির নির্ভরযোগ্যতার পক্ষে মত দিয়েছেন ।
সুতরাং, আল্লাহর কোন বান্দার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সূচক উক্তি সমূহ সাহাবায়ে কেরাম (রাযি) থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং, আল্লাহর কোন প্রিয় বান্দার সন্তুষ্টি অর্জনের কথা বললেই তা শিরক নয়, বরং মুসলমানদের ক্ষেত্রে এর প্রকৃত ও চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল সেই বান্দার (যিনি হতে পারেন মা/বাবা/চাচা/ কোন গুরুজন/ আল্লাহর কোন প্রিয় বান্দা) সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
শেষকথা
• রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টির মাঝে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। তাই অনেক সময় নেক আমলের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টির কথা সাহাবীগণ উল্লেখ করেছেন।
• আহলে বাইত বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরিবারস্থ ব্যক্তিগণ আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত। আর হযরত আবু বকর (রাযি) হযরত ফাতিমা (রাযি)কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,
“আল্লাহর কসম, আমি ঘরবাড়ি, ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন ও গোষ্ঠী-গোত্র ত্যাগ করেছি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য এবং তোমাদের সন্তুষ্টির জন্য হে আহলে বাইত! হে রাসূলের প্রিয় পরিজন!” (আল বিদায়া, ৬/৫০২)
নিঃসন্দেহে এ জাতীয় উক্তিগুলোর ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আহলে বাইতের সন্তুষ্টি দ্বারা চূড়ান্ত উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি।
• সুতরাং-
১/ সাহাবায়ে কেরাম (রাযি) থেকে উল্লেখিত উক্তিগুলোকে মাথায় রাখুন।
২/ যে কোন নেক আমল চূড়ান্তভাবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য করার গুরুত্ব সম্পর্কে শায়খ যাকারিয়া (রহ)র বক্তব্য জানতে চাইলে অন্তত ফাযায়েলে তাবলীগ এর ৫ম পরিচ্ছেদ পড়ুন।
৩/ বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি আর চাচা বাবার সমতুল্য- সহীহ হাদিসের এ বক্তব্যকে স্মরণ রাখুন।
৪/ স্মরণ রাখুন- মাওলানা ইলিয়াস (রহ) ছিলেন শায়খ যাকারিয়া(রহ)র চাচা এবং শিক্ষক।
৫/ ফাযায়েলে তাবলীগ এর রচনাকাল এবং মাওলানা ইলিয়াস (রহ) এর মৃত্যুর সাল দুটি মাথায় রাখুন।
এরপর শায়খ যাকারিয়া(রহ)র উক্তিটিকে শিরকে আকবর এর উদাহরণ বলবেন (সেক্ষেত্রে আবু বকর (রাযি) এর উল্লেখিত দুটি উক্তি এবং সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হযরত সাওদা বিনতে যামআ(রাযি)র আমল সম্পর্কে কী বলবেন?), নাকি বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি আর চাচা বাবার সমতুল্য- সহীহ হাদিসের এ বক্তব্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি উক্তি বলবেন, তা আপনার বিবেচনা।
মুরাদ সাহেব লিখেছেন-
কথাটি অবশ্যই সঠিক। কিন্তু এ কথার ওপর ভিত্তি করে কোন উক্তির শুধু শব্দের প্রতি খেয়াল রেখে যদি শিরক নির্ধারণ করা হয়, তাহলে তো নেক আমলের দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টি এবং আহলে বাইতের সন্তুষ্টি অর্জন সূচক সাহাবীদের উক্তিগুলোকেও মুরাদ সাহেবের এর পরিপন্থী বলতে হবে।
শেষ করার আগে ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
হযরত আলী (রাযি)র খিলাফত আমলে খারিজীদের আবির্ভাব ঘটেছিল। হযরত আলী (রাযি) এবং হযরত মুয়াবিয়া (রাযি) তাঁদের মধ্যকার বিরোধ নিরসনে হযরত আবু মুসা আশআরী (রাযি) ও হযরত আমর ইবনুল আস (রাযি) কে সালিশ নিয়োগ করেন।
এর প্রেক্ষিতে খারিজীরা অভিযোগ তোলে, দ্বীনি বিষয়ে ফয়সালার জন্য মানুষকে বিচারক নিয়োগ করায় হযরত আলী (রাযি) এবং হযরত মুয়াবিয়া (রাযি) আল্লাহর দ্বীনে মানুষকে শরীক করেছেন এবং উভয়ই কাফির হয়ে গেছেন (নাঊযুবিল্লাহ)। তারা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে নিজেদের দাবি প্রমাণের চেষ্টা করতে থাকে।
এমনকি কুখ্যাত খারিজী ইবন মুলজিম হযরত আলী (রাযি)র ওপর হামলা করার সময়ও বলতে থাকে-“আল্লাহ ছাড়া কারও হুকুম করার অধিকার নেই (সূরা আনআম, আয়াত ৫৭)। হে আলী! তোমারও নেই এবং তোমার অনুসারীদেরও নেই।”
খারিজীদের উপস্থাপিত আয়াতের জবাবে আলী (রাযি) বলতেন, “কথাটি সত্য কিন্তু উদ্দেশ্য খারাপ।”
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৭/৫০৪
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৭/৫১০
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া-৭/৫৮০
খারিজীরা তাদের নিজস্ব ধারণায় দৃঢ় তাওহীদপন্থী ছিল। নিজস্ব ধারণায় তারা ছিল শুধুমাত্র আল্লাহর হুকুমের অধিকারে বিশ্বাসী।
আফসোস! তাদের ‘তাওহীদপন্থা’ (?) এতই উন্নতমানের ছিল যে, হযরত আলী (রাযি) বা হযরত মুয়াবিয়া (রাযি) - কেউই তাদের চোখে তাওহীদপন্থী হতে পারলেন না। এ সম্মানিত সাহাবীদ্বয়কে অপবাদ দিতে গিয়ে খারিজীরা ব্যবহার করত পবিত্র কোরআনের আয়াত।
আর এর জবাবে আলী (রাযি) বলতেন, “কথাটি সত্য কিন্তু উদ্দেশ্য খারাপ।” অর্থাৎ, তারা যে আয়াত পেশ করত সেটি তো নিঃসন্দেহে সঠিক, কিন্তু সে উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করত সেটি খারাপ।
কবি কত সুন্দর বলেছেন -
“দেখ, গত রাতের আঁধার আর আজ রাতের আঁধারে কত সাদৃশ্য !”
--------------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৩