বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে। আল্লাহর তাআলার রহমত ও বরকত রাসূল ﷺ এর উপর, তার পরিবার ও সাহাবীদের উপর এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের অনুসরণ করবে তাদের উপর অর্পিত হোক। আমিন।
মানুষের সকল ইবাদত হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“তাদের হেদায়েতের দায়িত্ব তোমার উপর নয়, তবে আল্লাহ তাআলা যাকে চান তাকেই সঠিক পথ দেখান, তোমরা যা দান সদকা করো এটা তোমাদের জন্যেই কল্যাণকর, (কারণ) তোমরা তো এ জন্যেই খরচ করো যেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারো।” (সূরা বাকারাঃ ২৭২)
“যারা তাদের মালিকের সন্তুষ্টি লাভের জন্যে ধৈর্য্য ধারণ করে, যথারীতি নামায কায়েম করে, আমি তাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা (আমারই পথে) খরচ করে-গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে, যারা (নিজেদের) ভালো (কাজ) দ্বারা মন্দ (কাজ) দূরীভূত করে, তাদের জন্যেই রয়েছে আখিরাতে শুভ পরিণাম।” (সূরা রাদঃ ২২)
“অতএব (হে ঈমানদার ব্যক্তি), তুমি আত্মীয় স্বজনকে তার অধিকার আদায় করে দাও, অভাবগ্রস্থ মোসাফেরদেরও (নিজ নিজ পাওনা বুঝিয়ে দাও), এ (বিষয়টি) তাদের জন্যে ভালো যারা (একমাত্র) আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনা করে, (আর সত্যিকার অর্থে) এরাই হচ্ছে সফলকাম।” (সূরা রুমঃ ৩৮)
“যা (কিছু ধন সম্পদ) তোমরা সুদের উপর দাও, (তা তো এজন্যেই দাও) যেন তা অন্য মানুষদের মালে সাথে (শামিল হয়ে) বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তাআলার দৃষ্টিতে তা (কিন্তু মোটেই) বাড়ে না, অপরদিকে যে যাকাত তোমরা দান করো তা (যেহেতু একান্তভাবে) আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে দান করো, তাই বরং বৃদ্ধি পায়।” (সূরা রোমঃ ৩৯)
“যে (আল্লাহকে) বেশী বেশী ভয় করে তাকে আমি বাচিয়ে দিব, যে ব্যক্তি নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্যে (আল্লাহর পথে অর্থ সম্পদ) ব্যয় করেছে, (অথচ) তোমাদের কারোই তার কাছে এমন কিছু ছিলো না, (যার জন্যে) তোমদের কোন রকম প্রতিদান দেয়া হবে, (হাঁ, পাওনা) এটুকুই সে শুধু তার মহান মালিকের সন্তুষ্টিই কামনা করেছে। (এ কারণে) অচিরেই তার মালিক (তার উপর) সন্তুষ্ট হবেন।” (সূরা লাইলঃ ১৭-২১)
রাসূল ﷺ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ইবাদত করা জোর তাগিদ দিয়েছেন কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ইবাদত করলে তা বড় শিরক বা শিরকে আকবর হয়ে যাবে। রাসূল ﷺ বলেনঃ
“আল্লাহ তাআলা শুধু সে আমলই গ্রহণ করেন, যা ইখলাছের সাথে এবং আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হয়”। (নাসায়ী)
“যে জ্ঞান অর্জন করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা যদি কেউ পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে করে তাহলে সে কিয়ামত দিবসে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না” (আবু দাউদ)
“সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা) যখন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন তখন রাসূল ﷺ তাকে বলেছিলেনঃ তুমি যদি এরপর বেঁচে থাক এবং কোন ভাল আমল কর তাহলে তারা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবে” (বুখারী ও মুসলিম)
“আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের উপর ঐ ব্যক্তিকে হারাম করেছেন যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং এর মাধ্যমে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে”। (বুখারী ও মুসলিম)
“খাব্বাব বিন আরদ (রা) বলেন, আমরা রাসূল ﷺ এর সাথে হিজরত করেছিলাম মক্কা থেকে মদীনায় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে”। (বুখারী ও মুসলিম)
প্রত্যেকটি আমল(কর্ম) নিয়তের উপর নির্ভরশীল বা সকল কাজের ফলাফল নিয়ত অনুযায়ী পাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
কাজেই যে ব্যক্তি ইবাদত বা কোন কাজের শুরুতে নিয়ত করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সে ব্যক্তি সে অনুযায়ী আল্লাহর নিকট প্রতিদান পাবে আর যে ব্যক্তি কোন ইবাদত করে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সে ব্যক্তি শিরকে আকবর বা বড় শিরকে লিপ্ত হবে ।
এখন নীচের ছবিটি লক্ষ্য করুনঃ
এটি শায়খুল হাদীস যাকারিয়্যা (রহ) এর রচিত 'ফাযায়েলে আমল' বইয়ের ভূমিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। লাল বর্ডার দেওয়া লেখাগুলো লক্ষ্য করুন, "এইরুপ বুযুর্গগণের সন্তুষ্টি হাসিল করা আমার মত গোনাহগারের জন্য গোনাহ-মাফী ও নাজাতের ওসীলা - এই আশায় দ্রুত রচনা করতঃ এই উপকারী কিতাবখানি খেদমতে পেশ করিতেছি" এখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্যের সন্তুষ্টি কামনা করা হয়েছে এবং সেই অন্যের সন্তুষ্টির ওসিলায় গোনাহ মাফের আশা করা হয়েছে, যা স্পষ্ট শিরক। এটি হচ্ছে বড় শিরক বা শিরকে আকবর, যা একজন ব্যক্তির সকল ইবাদত তথা আমলকে নষ্ট করে দেয়। এই রকম আকীদা সম্পন্ন একজন লেখকের বই যারা পড়বে তাদের অবস্থা কি হবে? আল্লাহ তাআলা আমাদের রক্ষা করুন।
লেখক আবার নিজেই লিখেছেন -
নামায-রোযা ত্যাগ করার বিষয় কি বলিব যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রকাশ্য কুফর ও শিরকে লিপ্ত রহিয়াছে। সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হইল যে, তাহারা ইহাকে শিরক ও কুফর বলিয়া মনে করে না।
বাস্তব কথা, উনি নিজেই শিরকে লিপ্ত অথচ ইহাকে শিরক বলিয়া মনে করেন নাই!
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“অথচ (হে নবী), তোমার কাছে এবং সেসব (নবীদের) কাছেও যারা তোমার আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে, এ (মর্মে) ওহী পাঠানো হয়েছে, যদি তুমি আল্লাহ তাআলার সাথে (অন্যদের) শরীক কর তাহলে অবশ্যই তোমার (সব) আমল নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থদের দলে শামিল হয়ে যাবে।” (সূরা ঝুমারঃ ৬৫)
"আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি লক্ষ করব অত:পর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।" (সূরা আল-ফুরকান: ২৩)
যে সকল কাজ খালেছ আল্লাহর জন্যে করা হয় না কিংবা শরীয়তের অনুমোদিত পন্থায় পালন করা হয় না তা বাতিল বলে গণ্য- সন্দেহ নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
রাসূল ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন: আমি শরীকদের শিরক থেকে একেবারেই বে-পরওয়া। যদি কোন ব্যক্তি কোন আমল করে এবং এতে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে তাহলে আমি তাকে ও তার শিরকী কাজকে প্রত্যাখ্যান করি। (মুসলিম)
এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে হেয় করা নয়, কাউকে ছোট করা নয়, এই লেখার উদ্দেশ্য যেন আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা সংশোধন হয়ে শিরকমুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হোন। ইবাদত হতে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আর অন্য কারো সন্তুষ্টির জন্যে নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে শিরকের মতো জঘন্য পাপকর্ম থেকে হিফাজত করুন, আমিন।
***একটি বড় শিরক বা শিরকে আকবরের সচিত্র প্রতিবেদন***
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২২টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ধর্ম ও বিজ্ঞান
করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন