পূর্বের পর ...
ভারত উপমহাদেশে অপসংস্কৃতিই মাযহাব উদ্ভবের কারণ
ভারত উপমহাদেশের মুসলিমগণের মধ্যেও এই মাযহাবগত বিভক্তি প্রকটভাবে বিদ্যমান। বিভিন্ন যুগে মধ্য এশিয়া হতে সামরিক শক্তি দ্বারা এই উপমহাদেশ আক্রান্ত হয়েছে, তাদের দ্বারা বহু বৎসর এই দেশ শাসিত হয়েছে, পরবর্তী দুই শত বৎসর ধরে ইংরেজরা শাসন করেছে এবং বহু পীর, ফকির, আউলিয়া দরবেশ এদেশে ইসলামী দাওয়াত নিয়ে এসেছে। ফলে এদেশের আদি ধর্মানুরাগীগণ যারাই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল তারা তাদের পুরাতন ধর্ম বিশ্বাস, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, দার্শনিক মতবাদ ইত্যাদি বিজাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলামী আকীদাহ-র সংমিশ্রণে কোরআন ও হাদীসের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে বিভিন্ন নেতা ও পীরের অধীনে পৃথক মাযহাব-এ বিভক্ত হয়ে পড়ে। ইংরেজরা প্রায় ২০০ বৎসর এই উপমহাদেশ শাসনকালে মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রম প্রণয়ন সহ বিভিন্ন মাসলা মাসায়েলের পুস্তক প্রণীত হয়। সেকেন্দার আলী ইব্রাহীমি কর্তৃক লিখিত এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত Reports on Islamic Education and Madrasah Education in Bengal গ্রন্থ হতে জানা যায় যে ভারতের মুসলিম সংখ্যা যখন এক তৃতীয়াংশে পৌঁছায় তখন মুসলিমরা মাদ্রাসা এডুকেশন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দাবী জানালে তৎকালীন ভারতবর্ষের শাসনকর্তা লর্ড হেষ্টীংস ১৭৮০ সনে সানন্দে ঐ প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং মইজুদ্দিন নামে জনৈক ব্যক্তিকে তিনি নিজ পকেট হতে ৩০০ টাকা বেতনে ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত করেন। (মোঃ নূরুল ইসলাম কর্তৃক প্রণীত পুস্তক 'আমরা কোন পথে!') ঐ সময় একজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসারের বেতন ছিল ১৫০ টাকা। লর্ড হেষ্টিংসের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু মুসলিম দুই জাতিকে পৃথক করা। তাই তিনি এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা নেন এবং তাতে তিনি কৃতকার্যও হন। হিন্দু মুসলিম বিবাদ বাধিয়ে দেন এবং মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে তাদেরকে প্রকৃত ইসলাম হতে অপসারণের চেষ্টা চালান। মুসলমানরা অজ্ঞতার কারণে এই মুইজুদ্দিন কে, কোথাকার লোক, কোন জাতীয় তারও কোন খোঁজখবর নেন নাই এবং কি উদ্দেশ্যে লর্ড সাহেব নিজ পকেটের টাকা খরচ করে মুসলমানদের বন্ধু সাজেন তাও চিন্তা করে দেখেন নাই। ১৭৮১ সাল হতে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছর মাদ্রাসা পরিচালক দ্বারা এবং ১৮১৯ সাল হতে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ইংরেজ সেক্রেটারী ও মুসলমান সহকারী সেক্রেটারীর কর্তৃত্বাধীনে পরিচালক পরিষদ দ্বারা উক্ত মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। ১৮৫০ সাল থেকে ঐ মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের পদ সৃষ্টি হলে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ৭৭ বছর পর্যন্ত ১৭ জন ইংরেজ অফিসার উক্ত পদে বহাল ছিলেন। বিদেশী শাসনামলে সুকৌশলে বহু জাল হাদীসের সংমিশ্রণে উল্লেখিত পাঠ্যক্রম ও মাসলা মাসায়েলের পুস্তকাদি রচনা করে কোরআন ও হাদীসের সঠিক শিক্ষাকে কলুষিত করা হয়। ফলে উপমহাদেশের মুসলিমগণ সুন্নী, শিয়া, শাফেয়ী, কাদিয়ানী, মেমন, আহলে হাদীস ইত্যাদি বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে অখন্ড ইসলামকে খন্ড খন্ড করে ফেলে।
বাংলাদেশে মাযহাব সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা
বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ, এখানকার জনগোষ্ঠির প্রায় ৮৬% মুসলমান। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ধর্মভীরু সুন্নী, কিন্তু সঠিক ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষার অভাবে তারা প্রায়শঃই বিভিন্ন ধরণের শিরক, বিদ’আতকে ইসলামী শরিয়াহ-র অংশ হিসাবে গণ্য করে আসছে। এরা মাযহাব সম্বন্ধে খুবই সচেতন, এক মাযহাব অনুসারী অন্য মাযহাবীকে তাচ্ছিল্যভাবে দেখে।
এদের বেশীর ভাগের ধারণা চারজন ইমামের অনুসরণীয় মাযহাব স্বীকার করা ফরজ, শরীয়তের উপর আমল করতে চার ইমামের একজনের পয়রবী করা ওয়াজিব, বিপরীত করলে অর্থাৎ যে কোন একটি মাযহাব না মানলে শরীয়ত হতে খারিজ হতে হবে, এক মাযহাব-এ থেকে অন্য মাযহাবের কোন অংশ অনুসরণ করা যাবে না, চারজনের মধ্যে আজীবন শুধু মাত্র একজনের অন্ধ অনুসরণ করতে হবে ইত্যাদি।
এছাড়াও বিভিন্ন অপসংস্কৃতির সংমিশ্রনে এদেশে যে সব আচার-আচরণ, ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে উঠেছে সেগুলির বেশির ভাগই ভ্রান্ত এবং কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত সঠিক আচার আচরণ নয়। এই কারণেই বর্তমানে আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের আদায়কৃত সালাত এবং রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদায়কৃত সালাতের তরীকার মধ্যে সচরাচর ভিন্নতা দৃশ্যমান হয়। তাই মাযহাব-এর শাব্দিক অর্থ কি, চার মাযহাব কখন সৃষ্টি হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণের মাযহাব কি ছিল, চারজন ইমাম কোন মাযহাব মানতেন, চার মাযহাব মানা কি ফরয, মাযহাব ইসলামের কি ক্ষতি করছে ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানার মাধ্যমে মাযহাব সম্বন্ধে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা ও কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত সঠিক দিকনির্দেশনা জেনে রাখা একান্ত অপরিহার্য।
চলবে ...
* সংকলন- মুহাম্মদ আবু হেনাভারত উপমহাদেশে অপসংস্কৃতিই মাযহাব উদ্ভবের কারণ
ভারত উপমহাদেশের মুসলিমগণের মধ্যেও এই মাযহাবগত বিভক্তি প্রকটভাবে বিদ্যমান। বিভিন্ন যুগে মধ্য এশিয়া হতে সামরিক শক্তি দ্বারা এই উপমহাদেশ আক্রান্ত হয়েছে, তাদের দ্বারা বহু বৎসর এই দেশ শাসিত হয়েছে, পরবর্তী দুই শত বৎসর ধরে ইংরেজরা শাসন করেছে এবং বহু পীর, ফকির, আউলিয়া দরবেশ এদেশে ইসলামী দাওয়াত নিয়ে এসেছে। ফলে এদেশের আদি ধর্মানুরাগীগণ যারাই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল তারা তাদের পুরাতন ধর্ম বিশ্বাস, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, দার্শনিক মতবাদ ইত্যাদি বিজাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলামী আকীদাহ-র সংমিশ্রণে কোরআন ও হাদীসের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে বিভিন্ন নেতা ও পীরের অধীনে পৃথক মাযহাব-এ বিভক্ত হয়ে পড়ে। ইংরেজরা প্রায় ২০০ বৎসর এই উপমহাদেশ শাসনকালে মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রম প্রণয়ন সহ বিভিন্ন মাসলা মাসায়েলের পুস্তক প্রণীত হয়। সেকেন্দার আলী ইব্রাহীমি কর্তৃক লিখিত এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত Reports on Islamic Education and Madrasah Education in Bengal গ্রন্থ হতে জানা যায় যে ভারতের মুসলিম সংখ্যা যখন এক তৃতীয়াংশে পৌঁছায় তখন মুসলিমরা মাদ্রাসা এডুকেশন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দাবী জানালে তৎকালীন ভারতবর্ষের শাসনকর্তা লর্ড হেষ্টীংস ১৭৮০ সনে সানন্দে ঐ প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং মইজুদ্দিন নামে জনৈক ব্যক্তিকে তিনি নিজ পকেট হতে ৩০০ টাকা বেতনে ঐ মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত করেন। (মোঃ নূরুল ইসলাম কর্তৃক প্রণীত পুস্তক 'আমরা কোন পথে!') ঐ সময় একজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসারের বেতন ছিল ১৫০ টাকা। লর্ড হেষ্টিংসের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু মুসলিম দুই জাতিকে পৃথক করা। তাই তিনি এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা নেন এবং তাতে তিনি কৃতকার্যও হন। হিন্দু মুসলিম বিবাদ বাধিয়ে দেন এবং মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে তাদেরকে প্রকৃত ইসলাম হতে অপসারণের চেষ্টা চালান। মুসলমানরা অজ্ঞতার কারণে এই মুইজুদ্দিন কে, কোথাকার লোক, কোন জাতীয় তারও কোন খোঁজখবর নেন নাই এবং কি উদ্দেশ্যে লর্ড সাহেব নিজ পকেটের টাকা খরচ করে মুসলমানদের বন্ধু সাজেন তাও চিন্তা করে দেখেন নাই। ১৭৮১ সাল হতে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছর মাদ্রাসা পরিচালক দ্বারা এবং ১৮১৯ সাল হতে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ইংরেজ সেক্রেটারী ও মুসলমান সহকারী সেক্রেটারীর কর্তৃত্বাধীনে পরিচালক পরিষদ দ্বারা উক্ত মাদ্রাসা পরিচালিত হয়। ১৮৫০ সাল থেকে ঐ মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের পদ সৃষ্টি হলে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ৭৭ বছর পর্যন্ত ১৭ জন ইংরেজ অফিসার উক্ত পদে বহাল ছিলেন। বিদেশী শাসনামলে সুকৌশলে বহু জাল হাদীসের সংমিশ্রণে উল্লেখিত পাঠ্যক্রম ও মাসলা মাসায়েলের পুস্তকাদি রচনা করে কোরআন ও হাদীসের সঠিক শিক্ষাকে কলুষিত করা হয়। ফলে উপমহাদেশের মুসলিমগণ সুন্নী, শিয়া, শাফেয়ী, কাদিয়ানী, মেমন, আহলে হাদীস ইত্যাদি বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে অখন্ড ইসলামকে খন্ড খন্ড করে ফেলে।
বাংলাদেশে মাযহাব সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা
বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ, এখানকার জনগোষ্ঠির প্রায় ৮৬% মুসলমান। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ধর্মভীরু সুন্নী, কিন্তু সঠিক ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষার অভাবে তারা প্রায়শঃই বিভিন্ন ধরণের শিরক, বিদ’আতকে ইসলামী শরিয়াহ-র অংশ হিসাবে গণ্য করে আসছে। এরা মাযহাব সম্বন্ধে খুবই সচেতন, এক মাযহাব অনুসারী অন্য মাযহাবীকে তাচ্ছিল্যভাবে দেখে।
এদের বেশীর ভাগের ধারণা চারজন ইমামের অনুসরণীয় মাযহাব স্বীকার করা ফরজ, শরীয়তের উপর আমল করতে চার ইমামের একজনের পয়রবী করা ওয়াজিব, বিপরীত করলে অর্থাৎ যে কোন একটি মাযহাব না মানলে শরীয়ত হতে খারিজ হতে হবে, এক মাযহাব-এ থেকে অন্য মাযহাবের কোন অংশ অনুসরণ করা যাবে না, চারজনের মধ্যে আজীবন শুধু মাত্র একজনের অন্ধ অনুসরণ করতে হবে ইত্যাদি।
এছাড়াও বিভিন্ন অপসংস্কৃতির সংমিশ্রনে এদেশে যে সব আচার-আচরণ, ধর্মীয় বিশ্বাস গড়ে উঠেছে সেগুলির বেশির ভাগই ভ্রান্ত এবং কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত সঠিক আচার আচরণ নয়। এই কারণেই বর্তমানে আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের আদায়কৃত সালাত এবং রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদায়কৃত সালাতের তরীকার মধ্যে সচরাচর ভিন্নতা দৃশ্যমান হয়। তাই মাযহাব-এর শাব্দিক অর্থ কি, চার মাযহাব কখন সৃষ্টি হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণের মাযহাব কি ছিল, চারজন ইমাম কোন মাযহাব মানতেন, চার মাযহাব মানা কি ফরয, মাযহাব ইসলামের কি ক্ষতি করছে ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানার মাধ্যমে মাযহাব সম্বন্ধে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা ও কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত সঠিক দিকনির্দেশনা জেনে রাখা একান্ত অপরিহার্য।
চলবে ...
* সংকলন- মুহাম্মদ আবু হেনা
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:১০