somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থার্টি ফার্স্ট প্রেম

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ওর নাম মোসাব্বির জোয়ারদার। এই গল্পের প্রধান চরিত্র। পাকা মিষ্টি কুমড়োর মত গোল আর লালচে একটা মুখ, সু প্রসস্থ বোঁচা থ্যাবড়া নাক আর কাঁচা বেলের বাটির মত মাথাটার জন্য ওকে দেখলেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখ থেকে হাসি বের হয়ে আসে। বয়স- আমার থেকে ২-১ বছরের ছোট হবে। ওর কথা বলার সময় একটু একটু তোতলামি উপভোগ করার মত। অসম্ভব বোকা একটা ছেলে। ওহ… সরি… ভুল বললাম !! বোকা নয়, বরং অসম্ভব সহজ সরল একটা ছেলে। অন্তত আমাদের থেকে হাজার গুন প্যাচগোচ কম তার মাথায়। আর মুখের এক টুকরো হাসি... তা যেন জন্মের সময় বিধাতার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে এসেছে সে।
আমরা একই অফিসে চাকরী করি এবং একটা বিশেষ কারনে আমি তাকে “বেয়াই” বলে ডাকি। শান্ত, শিষ্ট ও ভদ্রামির জন্য রীতিমত পুরস্কার পাবার যোগ্য সে। কেননা সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত আমার যে পরিমান অত্যাচার সে সহ্য করে তা অবিশ্বাস্য!!

যাইহোক, আজ ৩১ সে ডিসেম্বর। অফিসে আসার পর থেকেই দেখছি মোসাব্বির তার চিরচেনা চেহারাটা গোমড়ামি দিয়ে ঢেকে রেখেছে। একটা দুশ্চিন্তা আর ক্লান্তি ভাব তার চোখে মুখে স্পষ্ট। আমি অবশ্য জানতাম ওর চিন্তার কারণ। থার্টিফার্স্ট ও বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ ওর নাসরিনের সাথে বেড়াতে যাবার কথা। সে জন্য পুরনো পাঞ্জাবিটা ধুয়ে আয়রন করে আবার পারফিউম মেখে একবারে বর সেজে এসেছে সে।

আমি জানি ওর পকেটে কোন টাকা নেই। আমাদের বেতন হয় ৬-৭ তারিখের দিকে। গোপনে ও যে অফিস থেকে অগ্রিম টাকা চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে সে খবরও আমি গোপনেই পেয়েছি। কারো কাছে টাকা ধার চাইলে যে জাত যায় সে ভয়ে আমাদের কাউকে বুঝতে পযর্ন্ত দেয়নি আহাম্মক টা। কিন্তু আমি ঠিক টের পেয়েছিলাম। আর সে জন্য একটা খামের ভিতরে ১৫০০/= টাকা ভরে ওকে দিব বলে রেখে দিয়েছি। কিন্তু তাই বলে তো আর এত সহজেই তা দেয়া যায় না !! একটু মজা করবো, নাচাবো, কাঁদাবো তারপর সারপ্রাইজ স্বরূপ দিব। কিন্তু ওকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে যে নিজেই এভাবে সারপ্রাইজড হয়ে যাবো কল্পনাও করিনি !! তাহলে হয়তো ওর অনুভুতি কে এভাবে আঘাত করতাম না।

অফিস কক্ষে ঢুকতেই ওর পান্জাবীতে কালো কুচকুচে রঙের ম্যাজিক রং ছুরে মারলাম আর বললাম - অগ্রীম Happy New Year!! মুহুর্থেই পান্জাবীটা কালো রঙে ছেয়ে গেল এবং আপাতদৃষ্টিতে পরিধানের অযোগ্য হয়ে গেল। মাথা নিচু করে সেদিকে তাকিয়ে মোসাব্বিরের মুখটা যেমন করুন হয়েছিল তা কোনদিন ভুলতে পারবোনা। দেখে আমারই মায়া হল খুব। কিন্তু পরক্ষণেই ওই কালো দাগ মিলিয়ে গেলেও মোসাব্বিরের মুখের মলিনতা মেলালো না!!
বরং হাসিখুশিহীন গোমরা মুখটা নিয়ে ছাদের দিকে রওনা দিল সে। আমি জানি নাসরিন কে খুব ভালবাসে ও। খুব সখের প্রেম তার। এই প্রেমের পিছনের ইতিহাস নিয়ে লিখলে পরিপূর্ণ একটা উপন্যাস হয়ে যেত।

যাইহোক, আমি ওই খামটা মোসাব্বিরের টেবিলে রাখতেই দেখলাম ওর ল্যাপটপ টা অন করা এবং ফেইসবুকে লগইন করা। ওটা লগআউট করতে যাব এমন সময় একটা কনভার্সেশন ওপেন হয়ে গেল আমার সামনে … অনিচ্ছা স্বত্বেও সেদিকে তাকিয়ে আমি হা হয়ে গেলাম!!! গতকাল রাতের কনভেনশন … কোন এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে … যেখানে শেষ কথাটি ছিল এরকম -
- “এ নেগেটিভ (A-) হলে এক ব্যাগ ২০০০ টাকা, আর হাফ ব্যাগ ১০০০”

আমি জানি ওর রক্তের গ্রুপ “এ নেগেটিভ”!! দৌড়ে গেলাম ছাদে, কিন্তু পেলাম না ওকে … অফিসের ম্যানেজারের কাছে ছুটলাম এবং মোসাব্বিরের কথা জানতে চাইলে ৩২ টা দাত বের করে তিনি বললেন -
“সে তো ছুটি নিয়া গেছেগা!! তার নাকি আজকে ডেট আছে!! হিহিহি”
তৎক্ষণাৎ ফোন বের করে কল দিলাম ওকে … ফোন বন্ধ!!!
ছুটে এসে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ঠিকানা বের করে ছুটলাম সেদিকে ……..

কিন্তু পেলাম নাহ … কোথাও পেলাম না তাকে...


বুকের তাজা একব্যাগ রক্ত বেচেঁ সে চলে গেছে ডেট করতে … তার প্রেমিকার কথা রাখতে … প্রেমের মর্যাদা রাখতে …

একবুক হতাশা আর নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে এক তিক্ত যন্ত্রণা বারবার একটাই প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে আমার দিকে …

“মোসাব্বিরদের রক্তে কেনা ভালবাসার দাম কি দেবে নাসরিন রা???”
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×