somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Fraud

০৮ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইদানিং রাত ১০ টা না বাজতেই ঘুমিয়ে পরে সোমা। নতুন বিয়ে করার পর বউদের এমন অবস্থা হয় কিনা জানা নেই, তবে কেন যেন তার হচ্ছে এমনটা। যেখানে বিয়ের আগে রাত তিনটা পর্যন্ত ঘুম স্পর্শ করতে পারত না, সেখানে বিয়ের পর এই ২ মাস হাজার চেষ্টা করেও রাত দশটার পর আর চোখ মেলে রাখার ক্ষমতা থাকছে না তার।

এ নিয়ে সোমাকে বেশ কয়েকবার বকাঝকাও করেছে সুমন। এতবড় বাড়িতে সে একা থাকে যেহেতু, সেহেতু সকাল সকাল ঘুমিয়ে না পরে সুমনের জন্য একটু অপেক্ষা করলেই পারে। তার উপর আবার বাড়িটা শহর থেকে একটু ভিতরে এবং নির্জন নিরিবিলি স্থানে। এমন জায়গায় ভুতের ভয়ে এমনিতেই ঘুম আসার কথা না, সেখানে স্বয়ং ভুতই যেন অস্থির থাকে সোমার নাক ডাকার শব্দে।

খুব বদ অভ্যাস। এত সুন্দরী একটা মেয়ে অথচ ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে। বিয়ের আগে কন্যাদেরকে নানান ভাবে দেখার উপায় থাকলেও ঘুম পাড়িয়ে দেখার উপায় নেই। থাকলে বোঝা যেত যে সে নাক ডাকে কিনা। প্রত্যেক সুন্দরীর সৌন্দর্যেই একটা না একটা খুত থাকে। এটাই বোধহয় সোমার খুত। এ খুত তার রূপে নয়, তার ঘুমে। এমন সুন্দরী বউয়ের এটুকু জ্বালা মেনে নেয়াই যায়। যদিও সুন্দরী বউ থাকার মূল জ্বালানি অন্যখানে। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, এই বুঝি বউ তার অন্য কারো সাথে ভেগে গেল। যদিও বউ ভেগে যাবার মৌলিক কারণ সমুহের কোনটাই নেই সুমনের মধ্যে। তবুও, ফুল ফুটলে যেমন ভ্রমরের অভাব হয়না, তেমনি সুন্দরী বউয়ের চরিত্র নষ্ট করার জন্য বদ লোকের অভাব নেই। আর তাছাড়া এখন ইন্টারনেটের যুগ। আগেকার যুগের নানী দাদীরা শত অভাব দাতে দাত চেপে হজম করলেও এখনকার যুগের মেয়েরা অভাব না থাকা সত্বেও সখ করে নষ্টামি করে। আর তারই জ্বলজ্বলে প্রমাণ দাখিলের জন্যই যেন সেদিন সুমনের জীবনে ঘটল সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

সেদিন বৃহস্পতিবার হওয়াই অফিসের চাপ একটু বেশি ছিল বিধায় বাসায় ফিরতে রাত বারোটা বেজে গেল সুমনের। বাসায় গিয়ে দেখল শুধু ঘড়িতে নয়, তার সংসারও বারোটা বেজে বারো মিনিট, বারো সেকেন্ডে থেমে আছে।

অন্যান্য দিনের মত দরজায় তালা টিপে সোমা ঘুমিয়ে পরেছে ভেবে পকেট থেকে চাবি বের করে দরজায় হাত রাখতেই দেখল দরজা খোলা!! ভুলবশত এমনটা হয়ে থাকতে পারে ভেবে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল সুমন। কাপড়চোপড় ছেড়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলের দিকে এগোল সে। তার আগে একবার শোবার ঘরে ঢু মেরে দেখল মেয়েটা নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে। খাবার টেবিলে সুমনের সমস্ত পছন্দের রান্না তরকারি ঢেকে রাখা আছে। সেগুলো সাবার করে রোজকার মত আস্তে আস্তে বিড়ালের মত গিয়ে শুয়ে পরল সোমার পাশে।

কিন্তু শুতে গিয়ে সে আবিষ্কার করল অপরিচিত একটা পারফিউমের ঘ্রাণ। জেসমিন ফ্লেভার। ভাল করে ছুঁচোর মত এদিক সেদিক নাক দিয়ে শুকতে শুকতে খেয়াল করল ড্রেসিং টেবিলের উপরে একটা শার্ট আর প্যান্ট!! ধক্ করে উঠল বুকের ভিতর। এ তো তার শার্ট প্যান্ট নয়!! উঠে গিয়ে সেগুলো হাতে নিয়ে দেখতে লাগল। পকেট হাতরে ফায়ারবক্সের মত চারকোনা প্যাকেটটা দেখে গায়ের সবকটা লোম খাড়া হয়ে গেল সুমনের। ছেড়া প্যাকেটটার ফাক গলে বেরিয়ে আসছে জেসমিন ফুলের গন্ধ। সোমার সবথেকে প্রিয় ফুল জেসমিন। মাথার ভিতরে পইপই করে ঘুরে উঠল সুমনের। ঠিক তখনই খাটের তল থেকে একটা খুট শব্দে সচকিত হল সুমন। নিঃশব্দে পা ফেলে এগিয়ে গেল রান্না ঘরের দিকে, একটা চাকু আর টর্চলাইট হাতে ফিরে এলো রুমে। সোমা এখোনো একই ভাবে পরে পরে ঘুমুচ্ছে। আস্তে আস্তে মাজা নিচু করে খাটের নিচে আলো ফেলতেই চমকে উঠলো সুমন। মাঝ বয়সী একটা পুরুষ, আন্ডারগ্রাউন্ড পরে খাটের নিচে কোনার দিকে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে!!

পরদিন সকালে………………………….

অপরাধীর মত হাটু গেড়ে মাথা নিচু বসে আছে সোমা। খবর দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে তার বাবা, মা কে। মেয়ের এ ধরনের কুকর্মে মুখে চুনকালি মেখে বসে আছেন তারা। সুমন যদি এভাবে হাতেনাতে না ধরতো তবে হয়তো কোনদিনই বিশ্বাস করতেন না যে, তাদের মেয়ে সোমা এমন ঘৃণিত কাজ করতে পারে। নিরবতা ভঙ্গ করল সুমন। সোমার বাবা মা কে উদ্যেশ্য করে বলল -
“বলুন আমি এখন কি করব? এমন দুশ্চরিত্রার সাথে আর একটি দিনও কাটাতে পারবনা আমি।”

চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালেন সোমার বাবা। মেয়েকে নিয়ে টানতে টানতে বের হয়ে গেলেন সুমনের বাসা থেকে। এমন সময় এই প্রথম বারের মত সোমার মুখ থেকে চিৎকার শোনা গেল। বিভৎস চিৎকার। কিছু একটা বলে চিৎকার করছিল সে। যা শুনে সুমন মনে মনে হো হো করা হেসে উঠল। বিচ্ছিরি সে হাসির শব্দ শুধু তার কান অব্দেই পৌছল।

এরপর সোমাকে নিয়ে তার বাবা চলে যেতেই ফোনটা বের করে কাকে যেন ফোন দিল সুমন -

“আসসালামু আলাইকুম ঘটক সাহেব। এবার কিন্তু কোন নাক ডাকা মেয়ে চলবে না!! টাকা নেবেন কাচাঁ, মাইয়া দেবেন খাসা!! হাহাহা”

কুৎসিত হাসিতে ফেটে উঠলো বাড়িটা। তার সাথে তখনো যেন প্রতিধ্বনিত হয়ে ভেসে আসছিল সোমার চিৎকার - “Fraud”
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×