somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য আলটিমেট রেজাল্ট অব ব্রেকিং নেচারাল রুলস..... (প্রবন্ধ)

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্টারমিডেয়েট লাইফের কথা; আমি খুব রাত জাগতাম। এমনো হতো কোন কোন রাতে আমি এক ঘন্টা ঘুমায়ছি কিংবা একেবারেই ঘুমায়নি। ফলাফল স্বরূপ আমার স্বাথ্য ভেঙে যায়, যা পরবর্তী ছয় বছরেও আর উল্যেখযোগ্য হারে রিকভার হয়নি। রাত ঘুমানোর জন্য; স্রষ্টা রাতকে ঘুমানোর জন্যই সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি সৃষ্টিরই একটা নেচারাল নিয়ম আছে এবং প্রতিটি প্রাকৃতিক সৃষ্টিই চলে ঐ নেচারাল নিয়মে। এই নেচারাল নিয়মের মাঝেই ঐ সৃষ্টিটির সকল সৌন্দর্য লুকায়তি থাকে। বাঘ, সিংহ, হরিণ কিংবা রঙ-বেরঙের পাখিগুলোকে আপনি ধরে এনে খাচায় বন্দি রাখতে পারেন, বিনোদিত হতে পারেন কিংবা আপনার আভিজাত্য প্রকাশ করতে পারেন; কিন্তু ঐ প্রানীগুলোর নেচারাল সোন্দর্য তাতে করে কিছুই থাকে না। কারন ওগুলো মুক্ত অবস্থাতেই সত্যিকারের সুন্দর। সামান্য কিছুটা পার্থক্য করতে চাইলে সাফারি পার্ক এবং চিড়িয়াখানা; মাত্র এই দুইটা জায়গাতে ঘুরুন। ফুল আপনি যতো যত্ন করেই ঘরে সাজান না কেন, তা ততোটা শোভা বিলাবে না; যতোটা গাছে থেকে বিলায়। আপনি প্রাকৃতিক উপদানগুলোকে আপনার মতো করে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে চাইলে তা উল্টো শ্রিহীন হয়ে যাবে; ক্ষেত্র বিশেষ তা রুষ্ঠ এবং প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠবে। ইসলাম ধর্মে নদীর স্রোতকে বাধাগ্রস্ত করতে নিষেধ করা হয়ছে এবং এটিকে একটি উল্যেখযোগ্য অন্যায় বলা হয়েছে। এখন আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলে, কোন গতিশীল স্রোতকে বাধাগ্রস্ত করা হলে তা ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া, জলবায়ু, জীববৈচিত্র, জীবন-জীবিকা এবং সামগ্রিক পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। অর্থাৎ সমগ্র ইকো সিস্টেমের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয় এবং ঐ অঞ্চলের জিওগ্রাফিকাল/ভৌগলিক অবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদে বিধ্বংশী প্রভাব ফেলে। উদহারণ হিসাবে, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ফারাক্কার প্রভাব পর্যালোচনা করতে পারেন। আবার হিউম্যান সাইকোলজির ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত বিষয় হলো, প্রতিটা মানুষই প্রিয় জনের কাছ থেকে সময় এবং বন্ধুসুলভ ভালোবাসা প্রত্যাশা করে। এটা মানুষের প্রাকৃতিক/ নেচারাল বৈশিষ্ট্য/রুল। এখন আপনি আপনার প্রিয়জনের সেই নেচারাল স্রোতকে উপেক্ষা করছেন ক্যারিয়ার, বিত্ত-বৈভব কিংবা সমাজিক স্ট্যাটাসের পিছনে ছুটে। ফলাফল হিসাবে পারিবারিক জীবনে এসে আপনার সন্তান বখে যাচ্ছে কিংবা আপনার প্রিয় মানুষটি জড়িয়ে পড়ছে পরকিয়ায়। অথছ আপনি জানতেই পারছেন না তার কিছু। আর যখন জানতে পারছেন; তখন হয়তো অনেক দেরী হয়ে গেছে। আপনি তখন দোষ দেন প্রযুক্তি, মোবাইল, ইন্টারনেট, টিভি সিরিয়াল কিংবা ভাগ্যের। কিন্তু আপনি একটু সচেতন হলেই হয়তো অনাকাঙ্খিত এমন পরিস্থিতি বহুল অংশে এড়ানো সম্ভব। আপনি তো এটা নিশ্চয় জানেন, পরিবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখান থেকেই মানুষের প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়। কিন্তু আমারা একটা শিশুর শৈশব কিংবা শিক্ষার ভার তুলে দিচ্ছি কাজের বুয়ার হাতে, ভিডিও গেমস কিংবা কার্টুন চ্যানেলের হাতে, হাউজ টিউটর কিংবা কিন্ডার গার্ডেনের হাতে এবং মনকে মন বই শৈশবেই তাদের ঘাড়ে তুলে দিয়ে তাদেরকে অনুভূতিহীন গাধা তৈরি করছি। পরিস্থিতি এমন দাড়াচ্ছে যে, এখন শহুরে বাচ্চারা কাজের বুয়াকে মা আর বাড়ির কেয়ারটেকারকে আব্বু ডেকছে; বড়ো হচ্ছে এক ধরনের নির্জীবতা কিন্তু হিংস্রতা ভিতরে নিয়ে। ফলাফল হিসাবে সমাজে এক ভয়ংকর ট্রেন্ড গ্রো করছে। স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েগুলাই জড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর সব অপরাধে, এমনকি খুনাখুনিতে। অথচ ঐ শিশুটির শৈশব বাবা-মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সহচার্য, খেলাধুলা এবং দুরান্তপনায় আনন্দময় ও প্রানবন্ত হওয়ার কথা ছিলো; যেমনটা হয়েছিল আমাদের বাবা-মায়ের জেনারেশনের ক্ষেত্র, যেমনটা হয়েছিল আমাদের জেনারেশনের অনেকের এবং যেমনটা এখনো হয় গ্রামের শিশুদের। কিন্তু আমারা শহুরে পরিবেশে মানুষ বানানোর নামে আমাদের সন্তানদেরকে দুই থেকে তিন রুমের ফ্লাটের বন্দী জেলখানয় এমন ভাবে বড়ো করছি; যেখান থেকে উৎপন্ন হচ্ছে পল্টি মুরগীর মতো এক জেনারেশন, যাদের বেশির ভাগেরই ভালো মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতাটুকুই হারিয়ে যাচ্ছে বাস্তব জগতের মুখমুখি হয়ে। অথচ পারিবারিক এবং সমাজিক সফলতার জন্য আমাদের দরাকার এক প্রানবন্ত তরুণ প্রজম্ম। আমার চোখে সেই পুরুষ মানুষটা সফল না, যে সফল প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন এবং মানুষের কাছে নন্দিত হয়েছেন। আমার কাছে সফল পুরুষ সে, যে তার পরিবারের একজন সফল পরিচালক হতে পেরেছে; যে একজন সফল সন্তান, আদর্শ ভাই, সফল পিতা এবং আদর্শ স্বামী। আপনি কি জানেন, সমাজে পরকিয়া বিস্তারের সবচেয়ে বড়ো কারন আপনার প্রিয় মানুষটাকে যথেষ্ঠ সময় না দেওয়া এবং আপনার যান্ত্রিক ব্যাস্ত জীবনযাপন। শুধু সোনা-জহরতে মুড়িয়ে টাকার বিছনায় স্ত্রীকে রাখলেই হয় না; একটা মেয়ের জন্য প্রিয় পরুষের কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে দামী উপহারটা হচ্ছে সময়। সবচেয়ে লোভী মেয়েটাও দিন শেষে প্রিয় পুরুষ কিংবা প্রিয় মানুষদের সহচার্য পেতে কাতর হয়ে উঠে। আর আপনি বিশ্বাস নিয়ে আছেন, টাকার রশিতে গেথেই কিনা একটা মেয়েকে ধরে রাখবেন! বিপরতীত দৃষ্টিকোন থেকে একই ভাবে আমার চোখে ঐ নারীটি সফল না, যে কোন কর্পোরেট কিংবা মিডিয়া আইকন হয়েছে। আমার চোখে ঐ মেয়েটিই সফল; যে একজন আদর্শ মেয়ে, আদর্শ বোন, আদর্শ স্ত্রী এবং প্রকৃত অর্থে একজন সফল মা হতে পেরেছে। একটি নারীর সবচেয়ে বড়ো সফলতা মাতৃত্বে; সফল মাতৃত্বে। একজন প্রকৃত সফল মা এবং স্ত্রী হয়ে হয়ে উঠতে পারাতেই একজন নারীর প্রকৃত সফলতা। আমার কাছে পারিবারিক বন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন এক একটি সফল ইউনাইটেড পরিবার একটি সমৃদ্ধ ও সফল সমাজ এবং রাষ্ট্রের চাবি। আর এই পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার ভিত্তিই হচ্ছে একজন নারী। একটি সুউচ্চ ভবন যেমন তার ভিত্তির উপর ভর করেই মাথা তুলে দাড়িয়ে থাকে; তেমনি একটি সফল পরিবারের গল্পগাথা মূলত রচনা হতে পারে একজন নারীর অবদানেই। আমার কাছে একই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি বিষয় হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন এবং হাজার বছরের সমাজিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্য যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার পাশাপাশি ধরে রাখা। কারন এগুলো আমাদের শেকড়, সুশৃঙ্খল ব্যাক্তি এবং সমাজ জীবনের চাবিকাঠি; যা নেচারেল রুল বা নিয়ম। কিন্তু আমরা প্রতি নিয়ত এই নিয়মগুলোকে ভাঙছি এবং আমাদের মতো করে সবকিছু পেতে কিংবা সফলতার পথে হাটতে চাইছি। ফলাফল হিসাবে প্রকৃতি আমাদেরকে তার মতো করে সাস্তি দিচ্ছে এবং আমাদের জীবনকে জটিল ও কঠিন করে তুলছে।
.
পরিশেষ বলবো, প্রকৃতি সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক এবং সুন্দর। কিন্তু একইভাবে আবার প্রতিশোধ গ্রহনে কঠোর, নির্মম এবং ক্ষমাহীন। আমরা মানুষরাই ইলিউশনে ভুগি; উচিৎ-অনুচিৎ পার্থক্য করতে ভুলে যাই। নারী-পুরুষের মূল দায়িত্ব-কর্তব্য, গন্ডি, সৌন্দর্যের ক্ষেত্রকে আধুনিকতার দোহায় দিয়ে গুলিয়ে ফেলতে চাই এবং প্রাকৃতিক জীবনাচরন পদ্ধতিকে দৃষ্টিকটু ভাবে বদলে দিতে চাই। ভুলে যেতে চাই সব নীতি-নৈতিকতা, সমাজিক রীতি-নীতি এবং পারিবারিক বন্ধনকে। কিন্তু সত্যি হলো, প্রাকৃতিক নিয়মের ধারাবাহিক ব্যাত্যয় ঘটিয়ে আমাদের কর্ম ও অনাচারই ফলাফল হিসাবে আমাদের জন্য অযাচিত দুর্ভোগ এবং দুঃভাগ্য ডেকে আনছে; এবং বর্তমান অধিকাংশ সমাজিক বিপর্যয়ে অন্যতম অনুঘটকও এটিই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:৫৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×