বাস্তব জীবনটা কখনো বাংলা সিনেমার মতো হয়না। এখানে চৌধুরী সাহেবদের মেয়ের সাথে মধ্যবিত্ত একটা ছেলের স্বপ্নের পূর্ণতা সপ্তাশ্চর্যই বটে। বাস্তবে একটা ছেলে চাইলেই নায়ক জসিমের মতো আলাদিনের চেরাগ (লটারি) হাতে পায়না; কিংবা নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো বলে কয়ে মুহূর্তেই কোটিপতি হয়না। এখানে চৌধুরী সাহেবদের মেয়েরাও হুটহাট কোন মধ্যবত্তি ছেলের প্রেমে পড়েনা। আর যদি ভুল করে কখনো কোন মধ্যবিত্ত ছেলের প্রেমে পড়েই যায়; তবে দ্রুতই তার সে মোহ ভাঙ্গে। ভুল শুধরে নেয়। কারন বাস্তব জগতের সুচতুর চৌধুরী কন্যরা ভালোই বোঝে, এসি রুমের বাইরের জগতটা তার মেকাপের সাথে কতোটা বেমানান; পানি ভরা কলসটা কতোটা ভারি।
.
এখানকার মধ্যবিত্ত বেলা বোসদের অভিনয়টা আরো দারুণ; আরো চমৎকার। বেকার অঞ্জনদের স্বপ্ন সাগরে ভাসিয়ে হুট করে একদিন বলে বসে, "আমি আর পারলাম না অঞ্জন। এবার বাবা-মায়ের ইচ্ছাকে আর উপেক্ষা করতে পারলাম না। আমি অনেক চেষ্টা করেছি; কিন্তু হেরে গেলাম।" তারপর আরো করুন স্বরে বলে, "অঞ্জন, তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমার কিছুই করার নেই। তুমি আমার থেকে আরো ভালো কাউকে ঠিক পাবে। আমি রাখছি।"
অঞ্জনরা চুপচাপ শুনে যায়। চোখের কোনা বেয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। এটাকে অশ্রু বলে কিনা কে জানে?
আর বেলা বোস ফোন রেখে ভাবে, "কতো বোকা অঞ্জন! ও কি করে ভাবে, নগদে হাতে পাওয়া প্রতিষ্ঠিত এমন ছেলে রেখে ওর আশায় আমি বসে থাকবো!" এসব ভেবে একটু মুচকি হাসে বাবা মায়ের লক্ষী মেয়েটা। তারপর এক ফাল্গুন বিকালে ঘোড়ায় চড়ে আদর্শ বৌয়ের বেসে অন্যের স্বপ্ন সাজাতে ছুটে চলে বেলা বোস।
.
বেলা বোসের প্রস্থানে অঞ্জনদের পৃথিবীটা হঠাৎ শূন্য হয়ে যায়; কিন্তু থামে না। তারপর এক সময় অঞ্জনরাও একটা চাকরি পেয়ে যায়। বাড়ি-গাড়ি সব কিছু হয় তার। কিন্তু বেলা বোসের শূন্যতা তখনো তাকে পোড়ায়। তখন সে আনমনে গেয়ে চলে, "হ্যালো ২৪৪১১৩৯..." কিন্তু বেলা বোস সে গান শুনতে পায়না। কারন ততো দিনে কারো চোখে আদর্শ গৃহিনী সে; বিছনা খামচে ভালোবাসা বিলাতে ব্যাস্ত...
.
জীবন! আহা জীবন! আহারে জীবন!!!
ছবি: সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:০৯