somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জনে যে সকল বাধা

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সরাসরি আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনার শুরু করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাস্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরী। যুক্তরাষ্ট্র দুপক্ষকে আলোচনা করা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ৯ মাস সময় বেঁধে দিয়েছে। শান্তি আলোচনা আবার শুরুর ব্যপারে সমঝোতা হওয়ার জন্য ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্রিত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গত ১৯ শে জুলাই জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, “শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখতেই দু দেশের নেতাদের সাহস ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে”।

এই আলোচনা শুরুর আগে ফিলিস্তিন জানিয়েছিল যে, ১৯৬৭ সালে ৩য় আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পূর্বে ফিলিস্তিন এর রাষ্ট্রের সীমানা বহাল রাখার নিশ্চয়তা পেলে আলোচনায় যাবে। কার্যত কোন ধরনের নিশ্চয়তা না পেলেও ফিলিস্তিন অংশ নিয়েছে।
ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জনে ৬ টি বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে।

[১] ফিলিস্তিনে অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণঃ ইসরাইলে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইল অবৈধ ভাবে ইহুদি বসতি নির্মাণ করে চলছে। এতে ফিলিস্তিন নতুন রাষ্ট্র করার কাংখিত জায়গাটিতে বসতি স্থাপনের বিষয়টি শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জনের পথে বড় বাধা। বসতি নির্মাণ কে কেন্দ্র করে দু পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনা থেমে যায় ২০১০ সালে। ৩ বছর আলোচনা বন্ধ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে আবার আলোচনা শুরু হয়। আগষ্ট ২০১৩ তে রামাল্লায় দুপক্ষের দু দফা বৈঠক সম্পন্ন হবার হয়। আলোচনা চলমান অবস্থায় ইসরাইল ১২০০ অবৈধ বসতি নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন এর আলোচন সায়েব ইরাকাত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন এই পদক্ষেপ শান্তি প্রক্রিয়ায় তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্নের দেখা দিয়েছে।

[২] জেরুজালেম সমস্যাঃ ফিলিস্তিন ও ইসরাইল মধ্যে শান্তি আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা হল জেরুজালেম। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয়েই জেরুজালেমকে তাদের নিজ নিজ ভু-খন্ডের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছে। উল্লেখ্য যে, জেরুজালেম কে শুধু একটি ভু-খন্ড নয় বরং এটি একটি চেতনা যা সম্মানের সাথে সম্পর্কিত হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ইসরাইল জানিয়েছে যে তারা আলোচনা এবং শান্তি চায় তবে তা জেরুজালেমকে বিভাজন করে নয়। উল্লেখ্য ধর্মীয় ভাবে জেরুজালেম মুসলিম, খ্রীষ্টান ও ইহুদি দের কাছে এক পবিত্র জায়গা।

[৩] এরিয়া “C” সমস্যাঃ ১৩ ই আগষ্ট, ১৯৯৩ সালে ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিকে অসলো চুক্তি বলা হয় কারন। এই চুক্তিতে পশ্চিম তীর এবং গাজা এলাকা ফিলিস্তিনিদের স্বশাসন দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এই সময়ে পশ্চিম তীর কে A, B এবং C তিনটি এরিয়াতে ভাগ করা হয়। চুক্তিতে বলা হয় এরিয়া “C” থাকবে ইসরাইলের অধীনে। ফিলিস্তিনের সাথে চুড়ান্ত চুক্তির পর এই জায়গা তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য পশ্চিম তীরের ৬১% এলাকা পড়েছে এরিয়া “C” এর মধ্যে। পশ্চিম তীরের উর্বরতর ভূমি ও পড়েছে এখানে। ইসরাইলের উগ্রবাদিরা বলছে এরিয়া “C” আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের দখনে নিতে হবে। আর ফিলিস্তিন চায় তাদের এলাকা বুঝে পেতে।

[৪] ফাত্তাহ-হামাস দ্বন্দ্বঃ ফিলিস্তিনের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব হচ্ছে ফাত্তাহ-হামাস দ্বন্দ্ব।ফাত্তাহ ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ হলে অনেক ফিলিস্তিন হতাহত হয়। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিম তীর চলে যায় ফাত্তাহ দের দখলে আর গাজা চলে যায় হামাসের দখলে। আর এই অন্তর্দ্বন্দ্ব লাভবান হচ্ছে ইসরাইল। ২০১২ সালে দোহায় ফাত্তাহ ও হামাসের মধ্যে ঐক্য হওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। ১৪ ই মে, ২০১৩ সালে মিশরে তিন মাসের মধ্যে ফাত্তাহ ও হামাসের মধ্যে পুন-একত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তাও কার্যকর হয়নি।

[৫] শান্তি প্রক্রিয়ার কাঠামোঃ ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একই কাঠামোতে রয়েছে। এই কাঠামো শান্তি প্রক্রিয়া সফল করতে পারবে বলে মনে হয় না। একারণে এই কাঠামোর পরিবর্তনে দাবী উঠেছে। ৩০ শে জুলাই। ২০১৩ সালে আলোচনার সুধুর দিকে রাশিয়া এক বিবৃতিতে এই কাঠামোর পরিবর্তনের আহবান জানায়। এই আহবানে বলা হয়, শান্তি প্রক্রিয়ায় ইরান, চীন লেবানন ও রাশিয়ার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এতে ইসরাইলের ও যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা ভূমিকা হ্রাস পাবে।

[৬] গণভোটঃ ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ সালে আলোচনা শুরুর পর ইসরাইল সরকার নতুন একটি আইন শুরু করেছে। এই আইনে বলা হয়েছে যে ফিলিস্তিনের সাথে যেকোনো চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে ইসরাইলে গণভোট হবে। গণভোটে জনগণ সমর্থন দিলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এটি অনুমান করা অপ্রাসঙ্গিক যে, ইসরাইলের জনগণ যেকোন চুক্তির বিষয় প্রত্যাখ্যান করবে।

এই কথা অনস্বীকার্য যে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি আলোচনা সফল করার জন্য অনেক জটিল পথ অতিক্রম করতে হবে। আলোচনা সফল হলে সীমানা নিয়ে সমস্যা দেখা দিবে। ১৯ শে মে, ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা করেন যে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্দ্বের পূর্ববর্তী সীমানা হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সীমানা। আরব জাতিগুলো স্বাগত জানালেও ইসরাইল অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। ইহুদিদের অবৈধ নির্মান বন্ধ করতে হবে। এরিয়া “C” নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে সমস্যার সমাধান হবে না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ইসরাইলের প্রতি মার্কিনীদের মনোভাব। ইসরাইল ফিলিস্তিনদের ভুমি দখলের নিরন্তর সাম্রাজ্যবাদী প্রচেষ্টা এবং ইসরাইলের এই অনৈতিক আগ্রাসনকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন বন্ধ হবে না। আর তাই ফিলিস্তিন স্বাধীনতা অর্জনের এগুলো একেকটি অন্তরায়। আর তাই অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যে।


Find / Follow me on Facebook:
https://www.facebook.com/neelchy/

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×