ইতিহাসের সেই দিনগুলি, কবে কী ঘটেছিল।
১৯৫২’র ২৭ জানুয়ারী তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্ণর খাজা নাজিমুদ্দিন এক ঘোষনায় উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এমন নীতির ঘোষনা দেন। এর প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ৩১ জানুয়ারী সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের আরবি দিয়ে বাংলা লেখার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয়। ডাক দেওয়া হয় এক সর্বাত্নক প্রতিবাদের। ঘোষণা করা হয় প্রতিবাদ সভা, সমাবেশ, রালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির। দিন ঠিক করা হয় ২১ ফেব্রুয়ারি। তারই ধারাবাহিকতায় ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জগন্নাথ কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী একত্রিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রস্তুতি নিতে থাকে বিশাল গনজমায়েত এর। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ঢাকায় সকল সভা, মমাবেশ ও গনজমায়েত নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। তিন জনের বেশি এক সাথে জমায়েত হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি ঘিরে চলতে থাকে প্রস্তুতি। চলতে থাকে সর্বাত্নক প্রতিবাদের কর্মপরিকল্পনা। সেদিন সকাল ৯ টায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একত্রিত হয়ে বের করে মিছিল। সকাল সোয়া ১১ টায় তারা জড়ো হয় বিশ্ববিদ্যালয় গেইটের কাছে। চেষ্টা চালায় পুলিশ প্রতিরোধ ভেঙ্গে ফেলার। পুলিশ টিয়ার গ্যাস শেল ছোড়ে। ছাত্রছাত্রীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে এক অংশ চলে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে। আর এক অংশ মিছিল করতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই। চারদিকে পুলিশ তাদের বেষ্টন করে রাখে। ভাইস-চ্যান্সেলর পুলিশকে থামার অনুরোধ করে ছাত্রছাত্রীদেরকে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার অপরাধে বেশ কিছু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। এর প্রেক্ষিতে ছাত্ররা পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদ ভবনের চারদিকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানাতে থাকে। পুলিশ তাতে গুলি চালালে আবদুস সালাম, রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত ও আবদুল জব্বারসহ বেশ কয়েকজন শহীদ হোন। এ ঘটনায় পুরো শহর জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সর্বাত্নক ধর্মঘট। অফিস-আদালত, দোকান-পাট, গণপরিবহন সব বন্ধ হয়ে যায়। গণপরিষদে মনোরঞ্জণ ধর, বসন্ত কুমার দাস, শামছুদ্দিন আহমেদ ও ধীরেন্দ্রণাথ দত্তসহ ছয়জন সদস্য চীফ মিনিস্টার নুরুল আমীনকে হাসপাতালে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলার অনুরোধ করেন ও পরিষদে একটা প্রস্তাব তোলার জন্য বলেন। বেশ কয়েকজন এটাকে সমর্থনও করেন। কিন্তু নুরুল অামীন সেটা নাকোচ করে দেন।
২২ ফেব্রুয়ারিতে পুরো দেশ জুড়ে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিল সমাবেশ হতে থাকে এবং এটা পুলিশের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ জমায়েত হয় কার্জন হলে। এতে ছাত্রছাত্রী ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, গণমাধ্যম কর্মকর্তারা যোগ দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা সরকার পক্ষের দ’টি সংবাদ প্রতিষ্ঠান ‘জুবিলী’ ও ‘মরনিং নিউজ’ এ আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর নওয়াবপুর রোডে জানাজা শেষে এক মিছিলে পুলিশ গুলি করলে শফিউর রহমান ও ৯ বছর বয়সি ওহিউল্লাহ নামে এক বালক শহীদ হোন।
২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদদের স্বরনে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। শফিউর রহমানের পিতা এটা উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙ্গে ফেলে। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি নারায়নগঞ্জে শিল্প শ্রমিকরাও ডাক দেয় সাধারন ধর্মঘট এর। পুলিশ ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভাগুলো সামাল দিতে হিমসিম খায়।
দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশের খবর আসতে শুরু করে। সরকার একটু নড়েচড়ে বসে। আবুল বরকত ও রফিক উদ্দিন আহমেদ এর পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু পুলিশ তা বাতিল করে দেয়। ৮ এপ্রিল ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলির বিষয়ে এক সরকারি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৪ এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশনে পূর্ব বাংলার আইনপ্রনেতারা ভাষা বিষয়ে উত্তপ্ত বক্তব্য দেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বার এসোসিয়েশন হলে এক সেমিনার আয়োজন করেন। সেখান থেকে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, গণমানুষের উপর বিধিনিষেধ কমানো ও বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষার দাবি তোলা হয়। ১৯৫৪ সালের ৭ মে বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যপারে মুসলিম লীগ এর সমর্থন পাওয়া যায়। অবশেষে ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্টভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটা তৎকালীন পাকিস্তান সংবিধানের ২১৪(১) অনুচ্ছেদে সংযুক্ত হয়।১৯৫২’র ২৭ জানুয়ারী তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন এক ঘোষনায় উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা এমন নীতির ঘোষনা দেন। এর প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ৩১ জানুয়ারী সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের আরবি দিয়ে বাংলা লেখার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয়। ডাক দেওয়া হয় এক সর্বাত্নক প্রতিবাদের। ঘোষণা করা হয় প্রতিবাদ সভা, সমাবেশ, রালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির। দিন ঠিক করা হয় ২১ ফেব্রুয়ারি। তারই ধারাবাহিকতায় ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জগন্নাথ কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী একত্রিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রস্তুতি নিতে থাকে বিশাল গনজমায়েত এর। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ঢাকায় সকল সভা, মমাবেশ ও গনজমায়েত নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। তিন জনের বেশি এক সাথে জমায়েত হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়।
২১ ফেব্রুয়ারি ঘিরে চলতে থাকে প্রস্তুতি। চলতে থাকে সর্বাত্নক প্রতিবাদের কর্মপরিকল্পনা। সেদিন সকাল ৯ টায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একত্রিত হয়ে বের করে মিছিল। সকাল সোয়া ১১ টায় তারা জড়ো হয় বিশ্ববিদ্যালয় গেইটের কাছে। চেষ্টা চালায় পুলিশ প্রতিরোধ ভেঙ্গে ফেলার। পুলিশ টিয়ার গ্যাস শেল ছোড়ে। ছাত্রছাত্রীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে এক অংশ চলে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিকে। আর এক অংশ মিছিল করতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই। চারদিকে পুলিশ তাদের বেষ্টন করে রাখে। ভাইস-চ্যান্সেলর পুলিশকে থামার অনুরোধ করে ছাত্রছাত্রীদেরকে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার অপরাধে বেশ কিছু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। এর প্রেক্ষিতে ছাত্ররা পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদ ভবনের চারদিকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানাতে থাকে। পুলিশ তাতে গুলি চালালে আবদুস সালাম, রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত ও আবদুল জব্বারসহ বেশ কয়েকজন শহীদ হোন। এ ঘটনায় পুরো শহর জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সর্বাত্নক ধর্মঘট। অফিস-আদালত, দোকান-পাট, গণপরিবহন সব বন্ধ হয়ে যায়। গণপরিষদে মনোরঞ্জণ ধর, বসন্ত কুমার দাস, শামছুদ্দিন আহমেদ ও ধীরেন্দ্রণাথ দত্তসহ ছয়জন সদস্য চীফ মিনিস্টার নুরুল আমীনকে হাসপাতালে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলার অনুরোধ করেন ও পরিষদে একটা প্রস্তাব তোলার জন্য বলেন। বেশ কয়েকজন এটাকে সমর্থনও করেন। কিন্তু নুরুল অামীন সেটা নাকোচ করে দেন।
২২ ফেব্রুয়ারিতে পুরো দেশ জুড়ে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিল সমাবেশ হতে থাকে এবং এটা পুলিশের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ জমায়েত হয় কার্জন হলে। এতে ছাত্রছাত্রী ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, গণমাধ্যম কর্মকর্তারা যোগ দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা সরকার পক্ষের দ’টি সংবাদ প্রতিষ্ঠান ‘জুবিলী’ ও ‘মরনিং নিউজ’ এ আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর নওয়াবপুর রোডে জানাজা শেষে এক মিছিলে পুলিশ গুলি করলে শফিউর রহমান ও ৯ বছর বয়সি ওহিউল্লাহ নামে এক বালক শহীদ হোন।
২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদদের স্বরনে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। শফিউর রহমানের পিতা এটা উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙ্গে ফেলে। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি নারায়নগঞ্জে শিল্প শ্রমিকরাও ডাক দেয় সাধারন ধর্মঘট এর। পুলিশ ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভাগুলো সামাল দিতে হিমসিম খায়।
দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশের খবর আসতে শুরু করে। সরকার একটু নড়েচড়ে বসে। আবুল বরকত ও রফিক উদ্দিন আহমেদ এর পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু পুলিশ তা বাতিল করে দেয়। ৮ এপ্রিল ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলির বিষয়ে এক সরকারি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৪ এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশনে পূর্ব বাংলার আইনপ্রনেতারা ভাষা বিষয়ে উত্তপ্ত বক্তব্য দেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বার এসোসিয়েশন হলে এক সেমিনার আয়োজন করেন। সেখান থেকে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, গণমানুষের উপর বিধিনিষেধ কমানো ও বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষার দাবি তোলা হয়। ১৯৫৪ সালের ৭ মে বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যপারে মুসলিম লীগ এর সমর্থন পাওয়া যায়। অবশেষে ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্টভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটা তৎকালীন পাকিস্তান সংবিধানের ২১৪(১) অনুচ্ছেদে সংযুক্ত হয়।
ভাষা শহীদদের রক্ত বৃথা যায় নি, যাবে না। তাঁরা বেঁচে আছেন আমাদের হৃদয়ে। অন্তরের অন্তস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা তোমাদের।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





