তবে গ্রিক দেবতারা যে শুধু যুদ্ধই করতেন তা কিন্তু না। তাদেরও ছিল দিনযাপনের ব্যতিক্রমী সব ধারা। যে ধারাগুলো গ্রিকরা তাদের নিজস্ব জ্ঞানের আলোকে সৃষ্টি করেছে। সকল জ্ঞানের মূল যে কল্পনাশক্তি এটা তো জানা কথা। আর গ্রিকদের কল্পনাশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। এ কারনেই বিজ্ঞান,দর্শন ও সাহিত্যের প্রসার তৎকালীন সময়ের অন্য কোন সভ্যতায় অতটা ঘটেনি যতটা ঘটেছিল গ্রিকদের মাঝে। এসকল বিষয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শাখার জনকও ছিল তারা। গ্রিকদের শক্তিশালী কল্পনা শক্তির পরিচয় পাওয়া যায় তাদের মিথেও। বিশ্বের অন্য কোন মিথ প্রাচুর্য ও জনপ্রিয়তায় গ্রিক মিথের ধারে কাছেও না থাকার এটাও একটা কারন। কল্পনাশক্তির প্রভাবেই গ্রিসের কবি-সাহিত্যিকরা উপমা দেওয়ার ব্যাপারে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। যার প্রমাণ মেলে তাদের করা বিভিন্ন দেব-দেবীর চরিত্র বিশ্লেষণে। দেব-দেবীরা সাধারণ মানুষের মতই আবেগ ও অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত হলেও তাদের আবেগ-অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ মোটেও সাধারণ ছিলো না। দেব-দেবীদের অনুভূতিগুলো এতই তীব্র হত যে তাদের মানসিক অবস্থা পৃথিবীর পশু, পাখি, আলো, বাতাস, নদী, বৃক্ষ এক কথায় সমগ্র প্রকৃতির উপর গাঢ় প্রভাব ফেলতো। কোন দেবতা যখন ক্রুদ্ধ হতেন দেখা যেত তার সেই ক্রোধে পৃথিবীর আকাশ কালো হয়ে যেত এবং বজ্রপাতের সৃষ্টি হত। কোন অতৃপ্ত দেবীর হৃদয়ের মোচড়ে ফুঁসে উঠত গভীর সমুদ্র। ভাসিয়ে নিয়ে যেত উপকূল। নদীর স্রোত মুহূর্তের জন্যে থমকে যেত মর্ত্যে নেমে আসা কোন দেবীর সৌন্দর্য অবলোকন করে। প্রকৃতির নিয়মিত পরিবর্তনের এমন সুন্দর কাব্যিক ব্যাখ্যার কারনেই এসব উপমা ঠাই পেয়েছে বিশ্ব সাহিত্যেও। দেবতাদের বিভিন্ন ক্ষমতার বর্ণনায়ও ব্যবহৃত হয়েছে প্রকৃতি। যেমনঃ গ্রিক দেবতা এপোলোর ছেলে অরফিয়াস সংগীতের মাধ্যমে অস্বাভাবিক মূর্ছনার সৃষ্টি করতে পারতেন। গ্রিকদের বর্ণনায়,অরফিয়াসের সেই সংগীত শুনে বন্য পশুরাও শান্ত হয়ে যেত, নদী তার গতিপথ ভুলে যেত। মুলতঃ দেবতা ও দেবীদের আবেগ ও ক্ষমতার গভীরতার ধারণা দেয়ার জন্যে প্রকৃতিকে বেছে নিয়েছিলো গ্রিকদের কল্পনাশক্তি আর বাকিটা করেছে তাদের উপমা দেওয়ার ক্ষমতা।আর এতেই সৃষ্টি করেছে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা কল্পলজিটির।
তবে আর যে বিশেষ ধারণাটি না দিলে তাদের এ কল্পলজিটির পরিপূর্ণ পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয় সেটি হল প্রাচীন গ্রিক সেক্সুয়ালিটি। যেহেতু মিথলজির চরিত্ররা ছিলেন অসীম ক্ষমতার অধিকারী তাই তাদের নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিতর সেক্স কোন বাঁধা ছিল না। সে সময়কার গ্রিকদের কাছে সেক্স ছিল একটি অনন্য পুরষ্কার এবং পারস্পরিক তীব্র ভালোবাসার প্রতীকস্বরূপ। আর তাই তারা তাদের দেবতা ও দেবীদের এই অনন্য পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত করতে চায় নি এবং করেও নি। অবাধ যৌনাচার গ্রিক দেব-দেবীদের সাধারণ জীবনাচরণ হিসেবেই পরিগনিত হত।
গ্রিক মিথলজির সাথে আমরা যত বেশী পরিচিত হব ততই আমরা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আলাদা একটি জগতে প্রবেশ করবো। যে জগতে ভোর হয় অসম্ভব সুন্দরী সকাল দেবীর আলতো আঙুলস্পর্শে। পৃথিবীর পরিচিত সব ঘটনা, বস্তু ও ধারণার সৃষ্টির আড়ালে দেখবো মানব কল্পনার আদি কিছু স্বত্বার জীবনধারা। অত্যন্ত ক্ষমতাধর এসব স্বত্বার মাঝে বিদ্যমান মানবিক গুণাবলী তাদেরকে মাঝেই মাঝেই নামিয়ে নিয়ে আসবে মর্ত্যের মানুষের কাতারে আবার নিজেদের ঐশ্বরিক মহিমা বলে তারা হারাবেন সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
*** প্রাচীন রোমেও গ্রিকদের বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। তবে রোমানরা গ্রিকদের মত সাহিত্য,দর্শন ও কল্পনায় ততটা উন্নত ছিলোনা। এ কারনে ওদের মিথটির সাথে গ্রিক মিথের কিছু কিছু গঠনগত মিল থাকলেও রোমান মিথে সভ্যতার ছোঁয়াটা অনেক কম এবং মিথ হিসেবে খুব একটা সমৃদ্ধও নয়। যদিও পরবর্তীতে গ্রিকরা যখন ইতালিতে প্রবেশ করেছিল তখন রোমানরা গ্রিকদের কাছ থেকে অনেক কিছুই গ্রহণ করেছিলো এবং নিজেদের বিশ্বাসে অনেক পরিবর্তন এনেছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৪৯