somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিক মিথলজিঃ পরিচিতি (পর্ব-৩) (পরিচিতি শেষ পর্ব)

২৬ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তবে গ্রিক দেবতারা যে শুধু যুদ্ধই করতেন তা কিন্তু না। তাদেরও ছিল দিনযাপনের ব্যতিক্রমী সব ধারা। যে ধারাগুলো গ্রিকরা তাদের নিজস্ব জ্ঞানের আলোকে সৃষ্টি করেছে। সকল জ্ঞানের মূল যে কল্পনাশক্তি এটা তো জানা কথা। আর গ্রিকদের কল্পনাশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। এ কারনেই বিজ্ঞান,দর্শন ও সাহিত্যের প্রসার তৎকালীন সময়ের অন্য কোন সভ্যতায় অতটা ঘটেনি যতটা ঘটেছিল গ্রিকদের মাঝে। এসকল বিষয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শাখার জনকও ছিল তারা। গ্রিকদের শক্তিশালী কল্পনা শক্তির পরিচয় পাওয়া যায় তাদের মিথেও। বিশ্বের অন্য কোন মিথ প্রাচুর্য ও জনপ্রিয়তায় গ্রিক মিথের ধারে কাছেও না থাকার এটাও একটা কারন। কল্পনাশক্তির প্রভাবেই গ্রিসের কবি-সাহিত্যিকরা উপমা দেওয়ার ব্যাপারে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। যার প্রমাণ মেলে তাদের করা বিভিন্ন দেব-দেবীর চরিত্র বিশ্লেষণে। দেব-দেবীরা সাধারণ মানুষের মতই আবেগ ও অনুভূতি দ্বারা পরিচালিত হলেও তাদের আবেগ-অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ মোটেও সাধারণ ছিলো না। দেব-দেবীদের অনুভূতিগুলো এতই তীব্র হত যে তাদের মানসিক অবস্থা পৃথিবীর পশু, পাখি, আলো, বাতাস, নদী, বৃক্ষ এক কথায় সমগ্র প্রকৃতির উপর গাঢ় প্রভাব ফেলতো। কোন দেবতা যখন ক্রুদ্ধ হতেন দেখা যেত তার সেই ক্রোধে পৃথিবীর আকাশ কালো হয়ে যেত এবং বজ্রপাতের সৃষ্টি হত। কোন অতৃপ্ত দেবীর হৃদয়ের মোচড়ে ফুঁসে উঠত গভীর সমুদ্র। ভাসিয়ে নিয়ে যেত উপকূল। নদীর স্রোত মুহূর্তের জন্যে থমকে যেত মর্ত্যে নেমে আসা কোন দেবীর সৌন্দর্য অবলোকন করে। প্রকৃতির নিয়মিত পরিবর্তনের এমন সুন্দর কাব্যিক ব্যাখ্যার কারনেই এসব উপমা ঠাই পেয়েছে বিশ্ব সাহিত্যেও। দেবতাদের বিভিন্ন ক্ষমতার বর্ণনায়ও ব্যবহৃত হয়েছে প্রকৃতি। যেমনঃ গ্রিক দেবতা এপোলোর ছেলে অরফিয়াস সংগীতের মাধ্যমে অস্বাভাবিক মূর্ছনার সৃষ্টি করতে পারতেন। গ্রিকদের বর্ণনায়,অরফিয়াসের সেই সংগীত শুনে বন্য পশুরাও শান্ত হয়ে যেত, নদী তার গতিপথ ভুলে যেত। মুলতঃ দেবতা ও দেবীদের আবেগ ও ক্ষমতার গভীরতার ধারণা দেয়ার জন্যে প্রকৃতিকে বেছে নিয়েছিলো গ্রিকদের কল্পনাশক্তি আর বাকিটা করেছে তাদের উপমা দেওয়ার ক্ষমতা।আর এতেই সৃষ্টি করেছে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা কল্পলজিটির।




তবে আর যে বিশেষ ধারণাটি না দিলে তাদের এ কল্পলজিটির পরিপূর্ণ পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয় সেটি হল প্রাচীন গ্রিক সেক্সুয়ালিটি। যেহেতু মিথলজির চরিত্ররা ছিলেন অসীম ক্ষমতার অধিকারী তাই তাদের নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিতর সেক্স কোন বাঁধা ছিল না। সে সময়কার গ্রিকদের কাছে সেক্স ছিল একটি অনন্য পুরষ্কার এবং পারস্পরিক তীব্র ভালোবাসার প্রতীকস্বরূপ। আর তাই তারা তাদের দেবতা ও দেবীদের এই অনন্য পুরষ্কার থেকে বঞ্চিত করতে চায় নি এবং করেও নি। অবাধ যৌনাচার গ্রিক দেব-দেবীদের সাধারণ জীবনাচরণ হিসেবেই পরিগনিত হত।

গ্রিক মিথলজির সাথে আমরা যত বেশী পরিচিত হব ততই আমরা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ আলাদা একটি জগতে প্রবেশ করবো। যে জগতে ভোর হয় অসম্ভব সুন্দরী সকাল দেবীর আলতো আঙুলস্পর্শে। পৃথিবীর পরিচিত সব ঘটনা, বস্তু ও ধারণার সৃষ্টির আড়ালে দেখবো মানব কল্পনার আদি কিছু স্বত্বার জীবনধারা। অত্যন্ত ক্ষমতাধর এসব স্বত্বার মাঝে বিদ্যমান মানবিক গুণাবলী তাদেরকে মাঝেই মাঝেই নামিয়ে নিয়ে আসবে মর্ত্যের মানুষের কাতারে আবার নিজেদের ঐশ্বরিক মহিমা বলে তারা হারাবেন সাধারণের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

*** প্রাচীন রোমেও গ্রিকদের বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। তবে রোমানরা গ্রিকদের মত সাহিত্য,দর্শন ও কল্পনায় ততটা উন্নত ছিলোনা। এ কারনে ওদের মিথটির সাথে গ্রিক মিথের কিছু কিছু গঠনগত মিল থাকলেও রোমান মিথে সভ্যতার ছোঁয়াটা অনেক কম এবং মিথ হিসেবে খুব একটা সমৃদ্ধও নয়। যদিও পরবর্তীতে গ্রিকরা যখন ইতালিতে প্রবেশ করেছিল তখন রোমানরা গ্রিকদের কাছ থেকে অনেক কিছুই গ্রহণ করেছিলো এবং নিজেদের বিশ্বাসে অনেক পরিবর্তন এনেছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৪৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×