এরমধ্যেই আমরা প্রিমরডাল ডেইটিজদের সম্পর্কে জেনেছি। জেনেছি এদের মধ্যে সর্বশেষ দুজনঃ রাত্রি(Nyx) এবং আঁধার(Erebus) সম্পর্কে। একজন সারাদিনের বিশ্রাম শেষে বেড়াতে আসেন মর্ত্যধরায়। সাথে করে নিয়ে আসেন নিজের অপর সহোদর সঙ্গীকে। দুজনের মিলনে অতুলনীয় কাব্যিক মূর্ছনা রচিত হয় পৃথিবীতে। সঙ্গত কারনেই প্রকৃতির অনন্য দু’টি বৈশিষ্ট্যের প্রতিকী এ জুটি বুঝতে পারেন তাদের একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজনের অস্তিত্ব নিরর্থক। আর নিজেদের সেই উপলব্ধি তাদের মাঝে জন্ম দেয় প্রেম-ভালোবাসার ধারণা ছাড়িয়ে এক সম্পর্কের। উপযুক্ত উপমার অভাবেই এই অতুলনীয় সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হিসেবে অঙ্কিত করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। নিক্স ও এরেবাসের এ সম্পর্কের গভীরতার পরিমাপ পাওয়া যায় তাদের মিলন থেকে জন্ম নেয়া সন্তানদের মাঝে। এসব সন্তানরা ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই তাদের পিতা-মাতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের গাঢ় সংমিশ্রণ। গুরুত্বের ওজনে দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রিমরডিয়াল ডেইটিজদের মধ্যে গাইয়ার সন্তান ইউরেনাস(Uranus) এর পরপরই এদের স্থান।
নিক্স ও এরেবাসের সন্তানদের মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঈথার(Aether), হেমেরা(Hemera), মরস(Moros), ডলস(Dolos), নেমেসিস(Nemesis), দ্য কেরেস(The Keres), দ্য মইরাই(The Moirai), দ্য হেস্পেরিডস(The Hesperides), হিপ্নস(Hypnos), থানাটস(Thanatos), গেরাস(Geras), মমাস(Momas), ইরিস(Eris), এলিওস(Elios), শ্যারন(Charon)।
বলাবাহুল্য এদের সবাই ছিলেন পিতা-মাতার মতই প্রকৃতির বিমূর্ত সব ধারণার মানব অবয়ব ।
ঈথারকে বলা হয় এরেবাস এর বিপরীত স্বত্বা। আলোক ও উজ্জ্বলতার দৈব-চরিত্রায়ন তথা গড অফ দ্য লাইট(God of Light)। পৃথিবীপৃষ্ঠে আবদ্ধ বায়ু স্তরের উপরিভাগ থেকে এবং আকাশের নিম্নস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলেন ঈথার। প্রতি সন্ধ্যায় নিক্স তার কালো বসনে ছেলে ঈথারকে ঢেকে ফেলেন। তাই রাত্রি বেলা দেখা মেলে না ঈথারের।
হেমেরা হলেন নিক্সের বিপরীত স্বত্বা। তিনি গডেস অফ ডে(Goddess of Day)। রাতের শেষে ধরায় আসেন হেমেরা এবং নিজ পিতা-মাতার আবরণ সরিয়ে আবার প্রতিভাত হতে সাহায্য করেন ভ্রাতা ও স্বামী ঈথারকে। নিক্স ও এরেবাস এর সম্পর্কের মতই সঙ্গত একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে ঈথার ও হেমেরার মাঝেও। এই সম্পর্কের পরিনতি হিসেবে আবির্ভাব ঘটে আরো অপর একজন ডেইটি থালাসা’র(Thallassa)। সে সময় গ্রিকরা মনে করত মহাসমুদ্র আসলে দু’টি দৈবস্বত্বার সংমিশ্রণে গঠিত। এই দু’টি স্বত্বার একটি হলেন থালাসা।
নিক্স ও এরেবাসের সন্তানদের মাঝে সব চেয়ে বেশী আলোচিত জনের নাম নেমেসিস। দ্য গডেস অফ পানিশমেন্ট। কোথাও কোথাও তাকে “গডেস অফ রিভেঞ্জ” ও বলা হয়। যারা কাজে-কথায় দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করতো অথবা আচ্ছন্ন হত উদ্ধত অহমিকায় তাদের ভাগ্যে ভয়াবহ অশনি হয়ে দেখা দিতেন নেমেসিস। এছাড়া মর্ত্যের বুকে শৃংখলা ও ভারসাম্য বজায় রাখার দায়িত্বটিও ছিল নেমেসিসের। কেউ যদি অন্যায়ভাবে অত্যাধিক ধন-সম্পদের অধিপতি হত অথবা নিমজ্জিত হত মাত্রাতিরিক্ত সুখে তখন নেমেসিস সেখানে আবির্ভূত হতেন এবং ঐসব অতিরিক্তে বসবাসকারীদের রিক্ত করে দিয়ে ভারসাম্য সৃষ্টি করতেন ধরায়। আর এ কারনেই তাকে নিয়ে নির্মিত বেশীর ভাগ চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যে তার একহাতে তলোয়ার ও অন্য হাতে দাঁড়িপাল্লা দেখতে পাওয়া যায়। যাকে বলে একদম ন্যায় বিচার,তারই প্রতীক হলেন নেমেসিস।
মরস। দ্য গড অফ ইম্পেন্ডিং ডুম(The God of Impending Doom) অর্থাৎ আসন্ন কাল-নিয়তির দেবতা। কাল-নিয়তি যাতে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সবরকম সম্ভাবনাই বিদ্যমান তার অনাকাঙ্ক্ষিত আগমনীবার্তায় কম্পিত মানুষের হৃদয়ে বাস করেন মরস। যাকে বলে একদম ডার্ক,কী? তাইনা ? মরস হলেন মৃত্যুশীল মানুষের মনে নিজ মৃত্যু সম্পর্কে অবশ্যম্ভাবী ও অশুভ ভাবনা। পরাজয় ও সবকিছু হারিয়ে ফেলার সেই ভয় যাতে মানুষ সবসময় তটস্থ থাকে,এমনকি মাঝে মাঝে নিমজ্জিত হয় চরম হতাশায় সেটিই হলেন মরস।
ডলস হলেন ধূর্ততার প্রতীক। জাদুকরসহ সকল প্রতারক শ্রেনীর মানুষের পূজনীয় ছিলেন তিনি। মরসের মত তিনিও জন্ম নেন সরাসরি মানুষের মনের গহীনে। তারই কুমন্ত্রণায় পড়ে মানুষ নিজ উদ্দেশ্য হাছিলের উপায় হিসেবে আশ্রয় নেয় ছলনা,কপটতা ও বিশ্বাসঘাতকতার। প্রতারণায় তিনি এতটাই পারদর্শী যে মানুষ তার কৌশলে সদামুগ্ধ এমনকি সর্বস্ব হারিয়েও। মিথে তাকে ডাকা হয় গড অফ ট্রিকারি এন্ড গাইল(God of Trickery and Guile)।
তথ্যসূত্রঃ
১। এন আরটিকল অন গ্রিক নাইট;
২। হেসিওডস থিওগনি;
৩। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ গ্রিক এন্ড রোমান মিথলজি;
ছবি সংগ্রহঃ গুগল এন্ড পিন্টারেস্ট।
পরবর্তী পর্বঃ গ্রিক মিথলজিঃ সৃষ্টিগল্প(পর্ব-২) -- চিল্ড্রেন অফ নাইট - ২
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩