somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিক মিথলজিঃ সৃষ্টিগল্প(পর্ব-২) -- চিল্ড্রেন অফ নাইট - ১

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এরমধ্যেই আমরা প্রিমরডাল ডেইটিজদের সম্পর্কে জেনেছি। জেনেছি এদের মধ্যে সর্বশেষ দুজনঃ রাত্রি(Nyx) এবং আঁধার(Erebus) সম্পর্কে। একজন সারাদিনের বিশ্রাম শেষে বেড়াতে আসেন মর্ত্যধরায়। সাথে করে নিয়ে আসেন নিজের অপর সহোদর সঙ্গীকে। দুজনের মিলনে অতুলনীয় কাব্যিক মূর্ছনা রচিত হয় পৃথিবীতে। সঙ্গত কারনেই প্রকৃতির অনন্য দু’টি বৈশিষ্ট্যের প্রতিকী এ জুটি বুঝতে পারেন তাদের একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজনের অস্তিত্ব নিরর্থক। আর নিজেদের সেই উপলব্ধি তাদের মাঝে জন্ম দেয় প্রেম-ভালোবাসার ধারণা ছাড়িয়ে এক সম্পর্কের। উপযুক্ত উপমার অভাবেই এই অতুলনীয় সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হিসেবে অঙ্কিত করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। নিক্স ও এরেবাসের এ সম্পর্কের গভীরতার পরিমাপ পাওয়া যায় তাদের মিলন থেকে জন্ম নেয়া সন্তানদের মাঝে। এসব সন্তানরা ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই তাদের পিতা-মাতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের গাঢ় সংমিশ্রণ। গুরুত্বের ওজনে দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রিমরডিয়াল ডেইটিজদের মধ্যে গাইয়ার সন্তান ইউরেনাস(Uranus) এর পরপরই এদের স্থান।



নিক্স ও এরেবাসের সন্তানদের মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঈথার(Aether), হেমেরা(Hemera), মরস(Moros), ডলস(Dolos), নেমেসিস(Nemesis), দ্য কেরেস(The Keres), দ্য মইরাই(The Moirai), দ্য হেস্পেরিডস(The Hesperides), হিপ্নস(Hypnos), থানাটস(Thanatos), গেরাস(Geras), মমাস(Momas), ইরিস(Eris), এলিওস(Elios), শ্যারন(Charon)।
বলাবাহুল্য এদের সবাই ছিলেন পিতা-মাতার মতই প্রকৃতির বিমূর্ত সব ধারণার মানব অবয়ব ।



ঈথারকে বলা হয় এরেবাস এর বিপরীত স্বত্বা। আলোক ও উজ্জ্বলতার দৈব-চরিত্রায়ন তথা গড অফ দ্য লাইট(God of Light)। পৃথিবীপৃষ্ঠে আবদ্ধ বায়ু স্তরের উপরিভাগ থেকে এবং আকাশের নিম্নস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলেন ঈথার। প্রতি সন্ধ্যায় নিক্স তার কালো বসনে ছেলে ঈথারকে ঢেকে ফেলেন। তাই রাত্রি বেলা দেখা মেলে না ঈথারের।



হেমেরা হলেন নিক্সের বিপরীত স্বত্বা। তিনি গডেস অফ ডে(Goddess of Day)। রাতের শেষে ধরায় আসেন হেমেরা এবং নিজ পিতা-মাতার আবরণ সরিয়ে আবার প্রতিভাত হতে সাহায্য করেন ভ্রাতা ও স্বামী ঈথারকে। নিক্স ও এরেবাস এর সম্পর্কের মতই সঙ্গত একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে ঈথার ও হেমেরার মাঝেও। এই সম্পর্কের পরিনতি হিসেবে আবির্ভাব ঘটে আরো অপর একজন ডেইটি থালাসা’র(Thallassa)। সে সময় গ্রিকরা মনে করত মহাসমুদ্র আসলে দু’টি দৈবস্বত্বার সংমিশ্রণে গঠিত। এই দু’টি স্বত্বার একটি হলেন থালাসা।



নিক্স ও এরেবাসের সন্তানদের মাঝে সব চেয়ে বেশী আলোচিত জনের নাম নেমেসিস। দ্য গডেস অফ পানিশমেন্ট। কোথাও কোথাও তাকে “গডেস অফ রিভেঞ্জ” ও বলা হয়। যারা কাজে-কথায় দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করতো অথবা আচ্ছন্ন হত উদ্ধত অহমিকায় তাদের ভাগ্যে ভয়াবহ অশনি হয়ে দেখা দিতেন নেমেসিস। এছাড়া মর্ত্যের বুকে শৃংখলা ও ভারসাম্য বজায় রাখার দায়িত্বটিও ছিল নেমেসিসের। কেউ যদি অন্যায়ভাবে অত্যাধিক ধন-সম্পদের অধিপতি হত অথবা নিমজ্জিত হত মাত্রাতিরিক্ত সুখে তখন নেমেসিস সেখানে আবির্ভূত হতেন এবং ঐসব অতিরিক্তে বসবাসকারীদের রিক্ত করে দিয়ে ভারসাম্য সৃষ্টি করতেন ধরায়। আর এ কারনেই তাকে নিয়ে নির্মিত বেশীর ভাগ চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যে তার একহাতে তলোয়ার ও অন্য হাতে দাঁড়িপাল্লা দেখতে পাওয়া যায়। যাকে বলে একদম ন্যায় বিচার,তারই প্রতীক হলেন নেমেসিস।



মরস। দ্য গড অফ ইম্পেন্ডিং ডুম(The God of Impending Doom) অর্থাৎ আসন্ন কাল-নিয়তির দেবতা। কাল-নিয়তি যাতে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সবরকম সম্ভাবনাই বিদ্যমান তার অনাকাঙ্ক্ষিত আগমনীবার্তায় কম্পিত মানুষের হৃদয়ে বাস করেন মরস। যাকে বলে একদম ডার্ক,কী? তাইনা ? মরস হলেন মৃত্যুশীল মানুষের মনে নিজ মৃত্যু সম্পর্কে অবশ্যম্ভাবী ও অশুভ ভাবনা। পরাজয় ও সবকিছু হারিয়ে ফেলার সেই ভয় যাতে মানুষ সবসময় তটস্থ থাকে,এমনকি মাঝে মাঝে নিমজ্জিত হয় চরম হতাশায় সেটিই হলেন মরস।



ডলস হলেন ধূর্ততার প্রতীক। জাদুকরসহ সকল প্রতারক শ্রেনীর মানুষের পূজনীয় ছিলেন তিনি। মরসের মত তিনিও জন্ম নেন সরাসরি মানুষের মনের গহীনে। তারই কুমন্ত্রণায় পড়ে মানুষ নিজ উদ্দেশ্য হাছিলের উপায় হিসেবে আশ্রয় নেয় ছলনা,কপটতা ও বিশ্বাসঘাতকতার। প্রতারণায় তিনি এতটাই পারদর্শী যে মানুষ তার কৌশলে সদামুগ্ধ এমনকি সর্বস্ব হারিয়েও। মিথে তাকে ডাকা হয় গড অফ ট্রিকারি এন্ড গাইল(God of Trickery and Guile)।

তথ্যসূত্রঃ
১। এন আরটিকল অন গ্রিক নাইট;
২। হেসিওডস থিওগনি;
৩। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ গ্রিক এন্ড রোমান মিথলজি;

ছবি সংগ্রহঃ গুগল এন্ড পিন্টারেস্ট।

পরবর্তী পর্বঃ গ্রিক মিথলজিঃ সৃষ্টিগল্প(পর্ব-২) -- চিল্ড্রেন অফ নাইট - ২
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×