somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিক মিথলজিঃ সৃষ্টিগল্প(পর্ব-২) -- চিল্ড্রেন অফ নাইট -২

০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিক্স এর সন্তানদের মাঝে সবচেয়ে বেশী বিতর্কিত যারা তারা হলেন দ্য হেস্পেরিডস। তাদের জনক-জননী এবং সংখ্যা সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে মতের প্রচন্ড অমিল। বিভিন্ন ভার্শন অনুযায়ী এরা প্রিমরডিয়াল দেবী নিক্স এর কন্যা,আবার কোথাও অলিম্পিয়ান দেবতা জিউস ও দেবী থেমিস এর,আবার কোথাও বা টাইটান অ্যাটলাস ও হেস্পেরিস এর। বিতর্ক আছে তাদের সংখ্যা নিয়েও। কোনো বর্ণনায় তারা তিনজন,কোথাও তারা চার,কোথাও বা নয়জন। তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত যে এরা হলেন গডেস অফ সানসেট বা সূর্যাস্তের দেবী এবং এরা জিউস্পত্নি হেরার অধীনে কাজ করতেন। হেস্পেরিডসরা সবচেয়ে বেশী আলোচিত হয়েছিলেন জনপ্রিয় ডেমিগড হারকিউলিসের কাহিনীতে। কথিত আছে জিউস ও হেরার বিয়েতে মাতা গাইয়া তিনটি আপেল উপহার দেন হেরাকে। হেরা এই আপেল তিনটি অ্যাটলাস পাহাড়ের পাদদেশে একটি বনে লুকিয়ে রাখেন এবং আপেল তিনটি পাহারার দায়িত্ব চাপান হেস্পেরিডস বোনদের ঘারে। সে বনের চারপাশে দুর্ভেদ্য পাঁচিল তুলে দিয়ে তার প্রহরায় নিযুক্ত করা হয় একটি ড্রাগনকে। হেরাকে দেয়া চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী পরে হারকিউলিস হেস্পেরিডস বোনদেরকে বোকা বানিয়ে সেখান থেকে একটি আপেল চুরি করে আনতে সমর্থ। অবশ্য তার পিছনেও আছে বিশাল কাহিনী। সে কাহিনী অন্য কোন দিন বলবো।



দ্য মইরাইরা হলেন তিনজন গ্রিক অবতার যারা মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন। যাকে বলে স্বয়ং নিয়তি। ইংলিশে এদেরকে ফেইটস(Fates) নামে ডাকা হয়। একটা মানুষের জন্মস্থান থেকে শুরু করে তার জীবনের সকল ঘটনা এই ফেইটসদের দ্বারা পূর্ব নির্ধারিত। এই পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য থেকে কোন মানুষই যাতে পালাতে না পারে সে দায়িত্বও পালন করেন এই ফেইটসরা। কোন কোন বর্ণনায় এদেরকে জিউস ও থেমিস এর সন্তান বলা হয়েছে। সকল দেবতা ও মানুষ এই ফেইটসদের মেনে চলতে বাধ্য শুধুমাত্র জিউস ব্যাতীত। ধারণা করা হয় ফেইটস বোনত্রয় একমাত্র জিউসের নির্দেশই মেনে চলে। যদিও জিউসও তাদেরকে খুব বেশী একটা উক্তত্য করেন না। মইরাই রা তিন বোন। সবচেয়ে ছোট বোনের নাম ক্লথো(Clotho)। গ্রিক বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের জীবনকাল আসলে ফেইটসদের হাতে থাকা নমনীয় সুতার কিছু বান্ডিল। এই বান্ডিল থেকে বিভিন্ন মানুষের জন্যে আলাদা আলাদা সুতা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারণের এই কাজটি করেন ক্লথো। মানুষের জন্মকাল ঠিক করার দায়িত্ব তার। মেঝো বোনটির নাম ল্যাশেসিস(Lachesis)। ল্যাশেসিসের কাছে থাকে একটি দৈর্ঘ্য পরিমাপক স্কেল। এজন্যে তাকে ডাকা হয় পরিমাপক বা “স্কেল”। এই স্কেল দিয়ে তিনি প্রতিটি মানুষের জীবনকাল মেপে মেপে নির্ধারণ করেন। তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়জন হলেন অ্যাট্রোপস(Atropos)। তাকে ডাকা হয় অপ্রতিরোধ্য বা “ইনেভিটেবল” নামে। কারো জীবনকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে সে মানুষটির জীবনসূতা কেটে দেন তিনি।



কেরেসরা হলেন অপাঘাতে মৃত্যুর দেবীরূপ। বিভিন্ন অপমৃত্যু যেমন দুর্ঘটনায় মৃত্যু, হত্যা, যুদ্ধ ক্ষেত্রের বীভৎস মৃত্যুসমূহ এদের ইশারায় হয়ে থাকে। ধারণা করা হয় কেরেসরা অত্যন্ত কদাকার হয়ে থাকেন। শ্বাপদের মত চোখ, দন্ত ও নখর বিশিস্ট কেরেস দেবীগণ অত্যন্ত রক্তপিপাসু। একমাত্র অলিম্পিয়ান গডরাই তাদের রক্তপিপাসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। যুদ্ধক্ষেত্র হল কেরেসদের সবচেয়ে প্রিয় চারণভূমি। যুদ্ধাহতদের গোঙ্গানি তাদের কাছে সঙ্গীতের মত।



থানাটস হলেন গ্রিকদের শান্তিময় মৃত্যু। পৃথিবীতে কারো যখন নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে যায় তখন দেখা দেন থানাটস। গ্রিকদের মৃত্যুপরবর্তী বাসস্থানকে বলা হয় আণ্ডারওয়ার্ল্ড। ধারণা করা হয় মানুষ মারা গেলে থানাটস মানুষটির আত্মাটিকে আন্ডারওয়ার্ল্ড এর প্রবেশদ্বার পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যান। যদিও এই দায়িত্ব তাকে মাঝে মাঝেই হারমিসের(Hermes) এর সাথে ভাগ করে নিতে দেখা গেছে। গ্রিক ও ইংলিশ সাহিত্যে মাঝে মাঝেই থানাটস এসেছেন তবে সবসময়ই তিনি গৌণ ভূমিকায়। হিপ্নস ছিলেন থানাটসের জমজ ভ্রাতা। নিক্স ও এরেবাস এর অধিকাংশ সন্তানদের মত ইনিও ছিলেন ডার্ক বা নেগেটিভ স্বত্বা। মরনশীল মানুষের প্রতি থানাটস ঘৃণা পোষণ করতেন। যদিও তিনি শান্তিময় মৃত্যুপ্রদানকারী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তার প্রতি মানুষের মনেও ছিল ঘৃণা মিশ্রিত ভয়। থানাটস কালো পোশাক পরিধান করেন এবং তলোয়ার বহন করেন। তার ডানা আছে বলেও ধারণা করা হয়।



হিপনস হলেন ঘুম বা নিদ্রা স্বয়ং। শান্তিময় মৃত্যুর(থানাটস) জমজ হওয়ার কারনে তাকে “লিটিল ডেথ”(Little Death) বলেও ডাকা হয়। গ্রিকরা বিশ্বাস করত নিদ্রা মানুষকে মৃত্যুর জগত থেকেও ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে পারে। হিপ্নস লিথি(Lithe) নামক নদীর তন্দ্রা উদ্রেককারী জল, পপি গাছের শাখার মাধ্যমে মানুষ ও দেবতাদের চোখে ছিটিয়ে দিয়ে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দেন বলে ধারণা করা হয়। হিপ্নস সংক্রান্ত সবচেয়ে সুন্দর,পূর্ণাঙ্গ গল্পটি বর্ণিত হয়েছে হোমারের ইলিয়াডে। বিস্তারিত গল্পটি অন্য কোন একটি পর্বের জন্যে তোলা থাকলো। তবে গল্পানুসারে অলিম্পিয়ান দেবতাপ্রধান জিউসের পত্নী হেরা পূর্ব-আদেশকৃত একটি কাজ করার জন্যে হিপ্নসের সাথে পাসিথিয়া(Pasithea) –এর বিয়ে দেন। পাসিথিয়া ছিলেন গডেস অফ হেলুসিনেশন বা অলীকদৃশ্যের দেবী। হিপনস ও পাসিথিয়ার মিলনেই পরবর্তীতে স্বপ্নের দেবতাদের জন্ম হয়।



তথ্যসূত্রঃ
১। এন আরটিকল অন গ্রিক নাইট;
২। হেসিওডস থিওগনি;
৩। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ গ্রিক এন্ড রোমান মিথলজি;

ছবি সংগ্রহঃ গুগল এন্ড পিন্টারেস্ট।

পরবর্তী পর্বঃ গ্রিক মিথলজিঃ সৃষ্টিগল্প(পর্ব-২) -- চিল্ড্রেন অফ নাইট - শেষ
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:০৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×