somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

⌂ ছবি ব্লগ ■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব-১

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একবার কল্পনা করুন তো চোখ বন্ধ করে - - -
হিম হিম শীতের সকালে আবছা ধূসর কুয়াশাময় আপনার উঠোন কিংবা বাড়ির ছাদের দৃশ্য !
কি অবাক হলেন নিশ্চয়ই, তাই না। শীতের সকালে এমন শুভ্র সময়ে পরিস্ফুটিত সতেজ ফুলের আহবান কে অমান্য করতে পারে রলুন। সোনাঝরা রোদের আলোয় শিশির জমা প্রতিটি ফুলের দৃশ্য তখন মনে হয কোন স্বর্গীয় উদ্যান এর অংশ। যারা ফুল ভালোবাসে ফুলের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে সেই সব ফুল প্রেমিকদের জন্য শীতের ফুল নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের আজকে থাকছে দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পরিচিতি প্রথম পর্ব

ডালিয়া ইউরো ফুল


চন্দ্রমল্লিকা ফুল


কসমস ফুল


ন্যাস্টারশিয়াম ফুল


ক্যালেন্ডুলা ফুল


পিটুনিয়া ফুল


কার্নেশন ফুল


গাঁদা ফুল


গাজানিয়া ফুল


শীত আসছে আসছে করে যে চলে এসেছে আমাদের খুব কাছে । চোখ বুজেঁ একবার ভাবুন তো! শীতের সকালে ফিনফিনে পাতলা ধূসর কুয়াশা নেমেছে আপনার আঙিনায়। ভোরের সোনাঝরা নরম আলোয় ঘাসের উপর শিশির বিন্দুর স্বচ্ছ স্ফটিক এর মোহনীয় আবেশ আপনাকে করছে বিমোহিত। শীত মানেই মায়ের হাতের বাহারি পিঠাপুলি আর নানা মুখোরোচক রসালো খাবারের মিলনমেলা। এই আয়োজন হয়তো আপনার শরীরের তৃপ্তি আসবে খিদা মিটবে হিম হিম কুয়াশাময় সকাল বেলায় কিন্তু আত্মার শান্তি কিংবা মনের খোরাক যাই বলুন না কেন । শিশির ভেজা শুভ্র ভোরে মনের প্রশান্তির জন্য যে এই শীতে আপনার জন্য আরেকটি চমক আছে আর তা হল বাগানজুড়ে রঙ বেরঙের মিষ্টি ফুলের মিলন মেলা। যার ছোঁয়াতে প্রকৃতির এই শুষ্কতার মাঝেও ফুটন্ত ফুলের মিষ্টি সুভাসে সুরভিত হবে চারপাশ মুগ্ধতা রেশ থেকে যাবে সারাবেলা।

তাহলে আর দেরি কেন ? নার্সারিতে শীতের ফুলগাছের কোনো অভাব নেই। পছন্দমতো ফুলগাছ বেছে নিতে পারেন সেখান থেকে। যদিও এসব ফুলের প্রায় সবই বিদেশি। তবে এসব বিদেশিনীকে এখন আর পরদেশি ভাবতে ইচ্ছে করে না, ওরা যেন এ শ্যামল বাংলার মেয়ে হয়ে উঠেছে। চাইলে ফুল ফোটা গাছসহ টবও কিনে নিতে পারেন। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক শীতের ফুল আছে কী কী?


● ডালিয়া
অপরূপ লাবণ্যে ও বর্ণের প্রাচুর্যে মহিমান্বিত সুন্দর একটি ফুল হলো ডালিয়া। এটি বহুবর্ষজীবী বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। ডালিয়া Asteraceae পরিবারের সদস্য । আমাদের উপমহাদেশে এই ফুল এসেছে ১৮৫৭-৬০ এর দিকে। শীত মৌসুমের এটি খুব জনপ্রিয় ফুল। আলুর মতো টিউবার থেকে ভাল চারা উৎপন্ন হয়। পাতা করাতের মতো খাঁজকাটা। প্রজাতির সংখ্যা ২০। ফুল একক ও যুগ্ম। ডালিয়ার একক ও যুগ্ম ফুল আছে। লাল, চকোলেট, হলুদ, সাদা, গোলাপী, বেগুনী প্রভৃতি বর্ণের ফুল রয়েছে। এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত হলো এ্যানিমোন, ডেকোরেটিভ, কলারেট, পিওনি, পমপন, মারলিন ইত্যাদি। আদিনিবাস মেক্সিকো।


● চন্দ্রমল্লিকা
এটি ক্ষুদ্রাকার ঝোপালো উদ্ভিদ। চন্দ্রমল্লিকার নানা আকৃতির একক ও যুগ্ম ফুল হয়। যেমন : এ্যানিমন, পমপন, হেয়ারি, ইনকার্ভড , ক্যাসকেইড। এই ফুল সাদা, হলুদ, লেবু, বেগুনী, লাল, নীল ইত্যাদি বর্ণের হয়। চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য উর্বর, উঁচু, শুষ্ক ও সহজে পানি নিষ্কাশিত হয় এমন জমি আবশ্যক। টবেও এর চাষ হয়। ফুল আসার সময় অবাঞ্ছিত কুঁড়ি ছিঁড়ে ফেললে ফুল বড় হয় ও সুন্দর দেখায়।


এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়। অক্টোবরে কুঁড়ি আসে এবং নভেম্বরে ফুল ফোটে৷ গাছে ফুল তাজা থাকে ২০ থেকে ২৫ দিন৷ ফুলদানি সাজানোর জন্য লম্বা ডাঁটাসহ এবং মালা গাঁখার জন্য ডাঁটা ছাড়া ফুল তোলা হয়। অন্যান্য স্থানীয় নামের মধ্যে - চন্দ্রমুখী, chrysanthemum, Gul dawoodi উল্লেখযোগ্য।
চন্দ্রমল্লিকার বিভিন্ন জাত রয়েছে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে যেগুলোর চাষ হয়, সেগুলোকে প্রধানতঃ দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয় – ছোট ও বড়৷
• ছোট প্রজাতি - বাসন্তী (জলদি জাত) – উজ্জ্বল হলুদ, মেঘামী (ঐ) – হালকা বেগুনী, উনা (নাবিজাত) – হালকা গোলাপী
• বড় প্রজাতি - চন্দমা, স্নোবল, সোনার বাংলা, রোজডে, পুইসা পকেট


● কসমস
কসমস বর্ষজীবী বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম Cosmos bipinnatus, সাধারণত এটিকে কসমস বা মেক্সিকান এষ্টার বলে ডাকা হয়। এটি একটি মাঝারি আকৃতির herbaceous উদ্ভিদ। কসমস অপূর্ব বাহারী শীতকালীন ফুল। তবে এর ফোটার ব্যাপ্তি বসন্তকাল অবধি। ঝোপ আকৃতির গাছ, সরু শাখা-প্রশাখা এবং ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। পাতার রং গাঢ় সবুজ, চিকন-চিরল আকৃতির গঠন। শাখা-প্রশাখা অনেক। গাছ ৯০ থেকে ১২০ সেমি. বড় হয়। ফুল সাদা, লাল বা গোলাপী বর্ণের হয়।


একাধিক রঙের ফুল ফোটে। সাদা, লাল, গোলাপি, বেগুনি, হলুদ, কমলা মিলিয়ে অসংখ্য রঙের বাহারি কসমস ফুল দৃষ্টিনন্দন ও নয়নাভিরাম। সদ্য ফুটন্ত ফুলে হালকা সুগন্ধ থাকে। সুসজ্জিত নমনীয় কোমল ৮টি পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্ট কসমস ফুলের মাঝে পরাগ অবস্থিত। পাপড়ির কিনারাতে খাঁজকাটা থাকে। ফুল ঊর্ধ্বমুখি এবং ফুলের বোঁটা বেশ লম্বা হয়ে থাকে। পত্রকক্ষ থেকে ফুলের বোঁটা বের হয় এবং ফুল ফোটে। ফুটন্ত ফুলের সৌন্দর্য বেশ কয়েক দিন স্থায়ী থাকে। তারপর ঝরে যায়। ফুল শেষে গাছে বীজ হয়, বীজের আকার চিকন লম্বা, পরিপক্ব, বীজের রং কালো হয়ে থাকে এবং ওজনে খুবই হালকা মানের হয়। বীজ ও ডাল কাটিং পদ্ধতির মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার করা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে। জমিতে বীজ বপনের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস। সাধারণত বীজ থেকে চারা গজানোর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর থেকে গাছে ফুল ফুটতে থাকে। সরাসরি জমি ও টবে এ ফুল উত্পাদন করা যায়। রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে সুনিষ্কাশিত দোঁআশ মাটি এ ফুল চাষের জন্য উত্তম, তবে এঁটেল-দোঁআশ মাটিতেও ভালো জন্মে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে এবং পানি নিকাশের উত্তম ব্যবস্থা থাকতে হবে। রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ তুলনামূলক কম হয়।


● ন্যাস্টারশিয়াম
ন্যাস্টারশিয়াম শীতের মৌসুমি ফুল ন্যাস্টারশিয়াম বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এই লতানো ফুলের গাছ দেখতে অনেকটাই থানকুনির মতো। Tropaeclaceae পরিবারের এই উদ্ভিদের.


ঝুলন্ত টবের কিনারায় ক্রিপার বা লতানো গাছ দিলে পাতা নিচে ঝুলে থাকে। আবার দেয়ালের গায়ে বা গ্রিলে মানিপ্ল্যান্টের গাছ লাগালেও সুন্দর দেখা যায়। বারান্দা বা গ্রিলে ঝোলানোর জন্য টবে ন্যাস্টারশিয়াম স্টার উত্তম।


● ক্যালেন্ডুলা
Pot Marigold ( ক্যালেন্ডুলা ফুল ) বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি খুব জনপ্রিয় শীতকালের মৌসুমী ফুল। গাছ ৩০ থেকে ৬০ সেমি লম্বা। পাতা লম্বা, রোমশ, অমসৃণ। গোড়ার কা- জড়িয়ে থাকে। ফুল কমলা, লাল ও হলুদ বর্ণের হয়। লম্বা ডাটার মাথায় ফুল ফোটে। গণে প্রজাতির সংখ্যা ৩০। ফুল আকারে বড় (প্রায় ১০ সেমি.)। বীজ বপনের সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে ফুল ফোটে। তবে পাহাড়ি ও বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে সময়ের কিছুটা তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। ক্যালেন্ডুলা (Calandula officinalis) ব্যবহার হয় ভূমিশয্যায় এবং কলম করার কাজে। তবে টবেও চাষযোগ্য। ছায়াতে এই গাছ ভাল হয় না, হলেও ফুল ধরে না। গাছের আগা রোপণের এক মাস পর ভেঙ্গে দিলে ভাল ফুল হয়। ভালো ফলনের জন্য সূর্যের আলো এবং সেচ দুটোই দরকার।


ক্যালেন্ডুলা আমাদের দেশে অনেক আগেই এসেছে। এ কারণে মৌসুমি ফুলের বাগানগুলোয় মোটামুটি সহজলভ্য। দেখতে অনেকটা মিল থাকায় অনেকে ভুল করে এই ফুলকে জার্বেরা বা জিনিয়াও ভাবেন। একসময় ইংল্যান্ডে সুগন্ধি সাবান তৈরির জন্য এদের পাপড়ি ব্যবহার করা হতো বলে এরা পট মেরিগোল্ড নামেও সুপরিচিত। তাছাড়া ওষুধি গুণের জন্যও ব্যবহার হতো। এরা মূলত দক্ষিণ ইউরোপের প্রজাতি। গাছ ঝোপাল, ৩০ থেকে ৬০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পাতা লম্বা, খসখসে, রোমশ এবং কিছুটা আঠালো। বৃন্তের ওপর প্রায় ১০ সেমি চওড়া বড়সড় ফুলগুলো চ্যাপ্টা ধরনের, থাকে জোড়ায় জোড়ায়। রঙ গাঢ়-কমলা, ক্যানারি-হলুদ, ঘন হলুদ খোবানি এবং কমলা লাল। জোড়া ফুলের পরিচিত জাতগুলো হলো বল, ক্যাম্পফায়ার, গোল্ডপিংক, গ্রান্ডিফ্লোরা, প্যাসিফিক বিউটি, পার্সিমোন বিউটি, অরেঞ্জ কিং, অরেঞ্জ সান, রেডিও, হলুদ কলোসাল ইত্যাদি। নোভাজাতের ফুলগুলো জার্বেরার মতো একক, রঙ কমলা, কেন্দ্রের দিকটা গাঢ় চকোলেট বর্ণের। নতুন জাতের ভোলানেকস ক্রেস্টেড মিক্স ফুলগুলো ভারি সুন্দর। একসারি করে পাপড়ি, কেন্দ্রস্থল সরু সরু নলের ঝুঁটির মতো বা ভাঁজ করা।

জনপ্রিয় জাতের মধ্যে ক্যামফায়ার, ড্যানিয়া, গোল্ডেন এ্যাম্পেরর, অরেঞ্জ কিং, অরেঞ্জ সান, প্যাসিফিক বিউটি, নোভা উল্লেখযোগ্য। আদি নিবাস ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল।


● পিটুনিয়া
পিটুনিয়া ফুল দেখতে অনেক সুন্দর। এটা আমাদের দেশের ফুল নয়। অনেকেই জানেন পিটুনিয়া ফুল ফোটে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে। আসলেও তাই। কিন্তু পুষ্পবিজ্ঞানের কল্যাণে এখন শীতেও পিটুনিয়া ফুটছে। পিটুনিয়ার এমন কিছু হাইব্রিড জাত এসেছে যেগুলো গ্রীষ্মের চেয়ে শীতেই ভালো ফুল দেয়। বাণিজ্যিক কারণে সেসব জাত এখন আমাদের দেশে চলে এসেছে। যা ফুল প্রেমীদের জন্য সুখবর বটে। বাহারি রূপের প্রচুর ফুল দেওয়া যেসব পিটুনিয়া ফুলের ছবি বইপুস্তক আর ক্যালেন্ডারে এতদিন দেখে এসেছি, সেসব ফুল এখন এই সমতল বাংলার মাটিতে অনায়াসে ফুটছে।


এই ফুলের নজরকাড়া রঙ এবং সৌন্দর্য পাগল করে সবাইকে। পিটুনিয়া ফুল নানান রঙের আছে। যেমন সাদা, গোলাপি, লাল, হলদে, বেগুনি ইত্যাদি। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠোনে এই ফুলের চাষ করতে পারেন। আসুন জেনে নেই কিভাবে এই ফুলের চাষ করতে হবে। দোআঁশ মাটি চাষের উপযোগী। আদি নিবাস আফ্রিকা ও আর্জেন্টিনা। এটিকে ছোট টবে লাগানো যায়।

পিটুনিয়া ফুল দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। আমাদের দেশে মূলত গ্রান্ডিফ্লোরা, মাল্টিফ্লোরা এই দুটি জাতের ফুল গ্রীস্মকালে ও বর্ষা কালে ফোটে। এবং চেরি ফ্রস্ট ও আলট্রা ব্লু স্টার এইদুটি জাত শীতকালে ফোটে। এছাড়াও আরও আছে বেভো ও ফ্ল্যাশ গাইব্রিড। পিটুনিয়া ফুল দিয়ে বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। এই ফুল বাড়ির চার পাশে লাগালে অনেক সুন্দর দেখা যায়।


● কার্নেশন
কার্নেশন বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। কার্নেশন ইংরেজি নাম: Carnation বৈজ্ঞানিক নাম: Dianthus caryophyllus; Dianthus শব্দের অর্থ হচ্ছে স্বর্গীয় ফুল। খ্রিস্টের জন্মের পর এ ফুলের চাষ হতো ফ্রান্সে। ৬০০ থেকে ৭০০ খ্রিস্টাব্দে সুগন্ধি তৈরির জন্য এর চাষ হতো আরব দেশে। ফুল দিয়ে তোড়া তৈরি করা যায়। বাগানে তিন প্রকার কার্নেশনের চাষ হয়ে থাকে। বর্ডার কার্নেশন, পারপ্যাচুয়েল ফ্লাওয়ারিং এবং মার্গারিট। বর্ডার কার্নেশনের মধ্যে ম্যাডোনা, ক্লোভ এবং পারপ্যাচুয়েল ফ্লাওয়ারিংয়ের মধ্যে গোল্ডেন রেইন, নিরো উল্লেখযোগ্য। ফুলে লবঙ্গের মতো গন্ধ থাকে। আদি নিবাস দক্ষিণ ফ্রান্স। উদ্ভিদ ৪৫ থেকে ৯০ সেমি. বড় হয়। পাতা ঘাসের মতো। গোলাপের মতো ফুল। রঙ গোলাপী, লাল, হলুদ, সাদা। আকারে ও বর্ণে গোলাপের পরেই এর স্থান।


উন্নত কাট-ফ্লাওয়ার উৎপাদনের লক্ষ্যে সাধারণত গ্রিনহাউস বা পলিশেডে কারনেশন চাষ করার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়। উজ্জ্বল সূর্যালোক গাছের বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত ফুল উৎপাদনে সাহায্য করে। টবে রোপণ পদ্ধতি : ৮-১০ ইঞ্চি আকারের টবে সারা বছর কারনেশন ফুল উৎপাদন করা যায়।


● গাঁদা
গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। একটি সুগন্ধী ফুল যা সর্বত্র সহজে হয়ে থাকে এবং গৃহসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। বৈজ্ঞানিক নাম Tagetes erecta, এটি Compositae পরিবারের একটি সদস্য। চাকমাদের কাছে এই ফুল ‘সওরং ফুল’ নামে পরিচিত। ত্রিপুরারা বলে ‘ক্ষেতারা’। ইংরেজী নাম Marigold, পাতা বহু খণ্ডে বিভক্ত। পত্রকের কিনারা করাতের মতো খাঁজকাটা। গাছ ও পাতায় সূক্ষ্ম লোম ও ঝাঁঝালো গন্ধ আছে। বীজ কালো, ছোট। কেটে গেলে পাতা কচলিয়ে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়। মূত্র বৃদ্ধি কারক হিসেবেও এর পাতা ব্যবহৃত হয়।


গাঁদা ফুল বিভিন্ন জাত ও রঙের দেখা যায়। এই ফুল সাধারণত উজ্জল হলুদ ও কমলা হলুদ হয়ে থাকে। সাধারণত: এটি শীতকালীন ফুল হলেও বর্তমানে এটি গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালেও চাষাবাদ হয়ে থাকে। বাগানের শোভা বর্ধন ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বন ও গৃহসজ্জায় এর ব্যাপক ব্যবহার ফুলটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।


বাংলাদেশে গৃহস্থ বাগানের সাধারণ ফুল গাঁদা। ১৯৯০-এর দশক থেকে গাঁদা বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। যশোরের গদখালী, ঝিকরগাছা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী ও পটিয়া, ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় অধিক হারে চাষ হয

ভারত ও বাংলাদেশে গাঁদার পাঁচটি জাত রয়েছে- বড় ইনকা গাঁদা, ছোট ছোট চায়না গাঁদা, রক্ত গাঁদা, দেশী গাঁদা, জাম্বো গাঁদা। আদি নিবাস মেক্সিকো।


● গাজানিয়া
শীতের মৌসুমী ফুল। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্যাজানিয়া বহুবর্ষজীবী বীরুৎ হলেও আমাদের দেশে এটি বর্ষজীবী বীরুৎ হিসেবে জনপ্রিয়। গাছ ছোট। ২০ থেকে ২৫ সেমি. লম্বা। কিছুটা লতানো। পাতা সরু, লোমযুক্ত। ফুল অনেকটা সূর্যমুখীর মতো। সাদা, লাল, কমলা, হলুদ রঙের ফুল হয়। হাইব্রিড জাতগুলোর ফুলের পাপড়িতে লাল, কমলা, সাদা ইত্যাদি রঙের শেড থাকে। পাহাড়ী এলাকায় এরা ভাল জন্মে। ফুল বেশ বড়, দেখতে কিছুটা জারবেরা ও ডেইজির মতো। ফুলের মাঝের চাকতি থেকে পাপড়ির মধ্যখান বরাবর গাঢ় খয়েরি রঙের রশ্মির মতো লম্বা রেখা গাজানিয়াকে বেশি মোহনীয় করে তুলেছে। তবে দাগ ছাড়া একরঙা পাপড়ির জাতও গাজানিয়ার আছে। প্রখর সূর্যের আলো এদের পছন্দ। সকালে রোদ পেলে ফুল ফোটে এবং বিকেলে স্তিমিত হয়ে যায়। বীজ সরাসরি বুনে গাছ তৈরি করা যায়, তবে কাটিং করেও নতুন চারা পাওয়া যায়। গাজানিয়া লাগাতে হবে রোদেলা জায়গায় এবং যেখানে পানি জমে না। তিন মাসের মধ্যেই গাছে ফুল হয়।


গাজানিয়া, Treasure flower বৈজ্ঞানিক নাম- Gazania spp. পরিবার- Asteraceae Gazania মূলত একটি গণের নাম। ১৭৯১ সালে জার্মান উদ্ভিদবিদ Joseph Gaertner তার “De Fructibus et Seminibus Plantarum” বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে সর্বপ্রথম এই গণ সম্পর্কে ধারণা দেন। গাজানিয়া ফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ আফ্রিকা।



বিচিত্র সব দেশী- বিদেশী শীতের ফুল পরিচিতি নিয়ে পরর্বতী পর্ব সমূহঃ

■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব-২
■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব- ৩
■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব-৪ (শেষ পর্ব )
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×