
প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। বাংলাদেশের শীত মৌসুমের নিজস্ব ফুলের সংখ্যা কম হলেও বিভিন্ন দেশের ফুল চমৎকারভাবে মানিয়ে গেছে এদেশের পরিবেশে ও আবহাওয়ার সাথে। হিম হিম শীতের শিশিরভেজা এই সময়ে স্মিগ্ধ প্রকৃতিতে মাঝে সৌরভের আবেশ ছড়ায় শীতের বিচিত্র ফুল। প্রজাপ্রতি গুলো পাখা মেলে উড়ে বেড়ায় মনের আনন্দে ফুলে ফুলে। তখন বাগান, আঙিনা আর ছাদ হয়ে উঠে রঙে আর রূপে বর্ণিল। শীতের ফুল নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের আজকের এই পর্বের মাধ্যমে শেষ হবে শীতের ফুল পরিচিতি ।
■ ভার্বেনা ফুল ■

■ অ্যাজালিয়া ফুল ■

■ পর্তুলেকা বা টাইম ফুল ■

■ ফ্লক্স ফুল ■

■ হলিহক ফুল ■

■ অ্যান্টারিনাম ফুল ■

■ সুইট পি ফুল ■

●অ্যাজালিয়া ফুল
লাল, গোলাপি, কমলা এবং সাদা রঙের অ্যাজালিয়া ফুল দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু গাছ তত আকর্ষণীয় নয়। জীর্ণশীর্ণ গাছে যে অমন বাহারি ফুল ফুটতে পারে, তা ফুল ফোটা অবস্থায় গাছটিকে না দেখলে বোঝা যায় না। এ জন্য এ ফুল ফুটলে তা গাছের চেয়ে ভালো দেখায়। গুচ্ছবদ্ধ হয়ে অনেকগুলো ফুল একত্রে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলদানিতে ভালো মানায়। সেদিক দিয়ে অ্যাজালিয়ার কদর রয়েছে। বিশেষ করে ক্রিসমাসের উত্সবের উপহারে অ্যাজালিয়ার জুড়ি মেলা ভার।

অ্যাজালিয়া শীতের ফুল। কলকে বা চোঙার মতো কোনো কোনো জাতের ফুলে আছে নানা রঙের বৈচিত্র্য। গাছে ফুল থাকা অবস্থায় গোড়ার মাটি সব সময় ভেজা রাখতে হয়। টবে ও বাগানে অ্যাজালিয়া লাগানো যায়। শুকিয়ে যাওয়া ফুলগুলো সব সময় তুলে ফেলতে হবে।

শাখা কলম করে অ্যাজালিয়ার নতুন চারা তৈরি করা যায়। টবে লাগানো গাছ সংগ্রহ করতে পারলে এ শীতেই হয়তো আপনার বাগানে ফুটতে পারে অ্যাজালিয়া ফুল। তবে গাছ রাখতে হবে একটু ছায়া ছায়া জায়গায় এবং খুব যত্নে। হাজার হলেও এ দেশে নতুন অতিথি। খাপ খাইয়ে নিতে একটু সময় তো দিতে হবে। অ্যাজালিয়ার উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Rhododendron sp, পরিবার ইরিয়েসি। ফুলটি এসেছে চীন, তিব্বত বা জাপান থেকে।

● ভার্বেনা ফুল
Verbena দক্ষিণ আমেরিকার একটি শোভাময় ফুলের গাছ । ফুলের নাম- ভার্বেনা বৈজ্ঞানিক নাম- Verbena spp. পরিবার- Verbenaceae দক্ষিণ আমেরিকার প্রজাতি। এটি সাধারণ বাগান সংস্করণ নামেও পরিচিত। বাংলায় আমাদের এই ফুলের জন্য কোন নাম নেই।

এ কারণে আমরা এটিকে ভার্বেনা (Verbena hybrida, Verbena), (ভার্জেনা ফুল) বলে ডাকি। পাতা ছোট, লম্বাটে, রোমশ, কিনার দন্তর। খাড়া ডাঁটার আগায় ছোট ছোট ফুলের থোকা। লাল, নিল, সাদা বেগুনি, গোলাপী হরেকরকমের হয় এই ফুল। একটি গুচ্ছে অনেক গুলো ফুল থাকে, প্রতিটি ডালের আগায় ফুল থাকে। এ গাছের শুধু ফুল নয় পাতাও নয়নাভিরাম। বাংলাদেশে শীতের ফুল হিসেবে ভার্বেনা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

●পর্তুলেকা/ টাইম ফুল
ফুলটির বাংলায় নাম - পর্তুলেকা, অন্যান্য নামের মধ্যে Moss-rose, Moss-rose Purslane উল্লেখযোগ্য। বৈজ্ঞানিক নাম Portulaca grandiflora এটি Portulacaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ধরা হয় আর্জেনটিনা, দক্ষিন ব্রাজিল, উরুগুয়ে কে।

এটি নিদৃষ্ট সময় ফোটে বলে এটাকে Time Flower বলেও ডেকে থাকে। এটি একটা বর্ষজীবি উদ্ভিদ। রং এর ফুল দেখা যায় তার মধ্যে লাল, সাদা, গোলাপী, বেগুনী রং বেশী দেখা যায়।


● ফ্লক্স ফুল
বৈজ্ঞানিক নাম- Phlox drummondii পরিবার- Polemoniaceae অন্যান্য নাম- annual phlox, Drummond's phlox টেক্সাস ও নিউ-মেক্সিকোর প্রজাতি। বিশেষ করে মহাসড়ক এটা ব্যবহার করা হয়। ছোট গাছ, খাড়া বা গড়ান, ১০-১৫ সেমি লম্বা। পাতা সরু, লম্বাটে। ফ্লক্স / ফ্লকস্. ডালের আগায় ছোট ছোট ফুলের থোকা, গোটা কেয়ারি ভরে রাখে। সাদা, গোলাপি, লালা, বেগুনি নানা রঙ-এ।



● হলিহক ফুল
হলিহক ফুল হলিহক জবা গোত্রের একটি ফুল। নানা বর্ণের আকর্ষনীয় ফুলগুলো দেখতে একটু বড় সাইজের হয়। এটি বিদেশী একটি ফুল। বাইরের দেশে প্রচুর পরিমানে দেখা গেলেও আমাদের দেশে তেমন চোখে পড়ে না।

পাতি হলিহক. পাতি হলিহক (ইংরেজি: common hollyhock) (বৈজ্ঞানিক নাম: Alcea rosea); মালভেসি পরিবারের আলংকারিক উদ্ভিদ।এ গাছটি খাটো শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট এবং এদের পাতা বড় ও লোমশ। হলিহক ফুলের সাদা, গোলাপী, মেজেন্টা ইত্যাদি জাত আছে। ডাবল ফুলের জাতও আছে।

এই ফুলটিকে দক্ষিণ চীন থেকে ইউরোপে ১৫ শতক বা তার পূর্বে আমদানি করা হয়।


অ্যান্টারিনাম ফুল (Antirrhinum majus, Snapdragon)

অ্যান্টারিনাম ফুল


■ সুইট পি ফুল ■


বিচিত্র সব দেশী- বিদেশী শীতের ফুল পরিচিতি নিয়ে পরের পর্ব সমূহঃ
■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব-১
■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব-২
■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব-৩
▪ শীতে ভালো ফুল ফোটানোর টিপস
» রোদেলা জায়গায় গাছ লাগান।
» গাছে পানি দেওয়ার সময় শুধু গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁজরি দিয়ে গাছের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো গাছ-পাতা ভিজিয়ে নিয়মিত হালকা পানি দিন। এতে গাছ বেশি সতেজ হবে।
» গাছের চেহারা দুর্বল দেখা গেলে পরপর তিন-চার দিন এক ঝাঁজরি পানির মধ্যে দুই চা চামচ ইউরিয়া সার গুলে ওপরের নিয়মে সেচ দিন।
» সরিষার খইল কয়েক দিন একটি পাত্রে ভিজিয়ে রেখে তা গুলে ১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার চারদিকে দিন। অন্তত কুঁড়ি না আসা পর্যন্ত দিন।
» ফুল ফোটা শুরু হলে তখন থেকে ফুল-পাতা ভিজিয়ে পানি না দেওয়া ভালো।
» গাঁদা ফুলের আকার বড় করতে চাইলে প্রথম কুঁড়িগুলো নখ দিয়ে খুঁটে ভেঙে দিন।
» স্বাভাবিক সময়ের আগে গাছে কুঁড়ি এলে তা ভেঙে দিন।
» গাছের গোড়া ভেজা থাকলে পানি দেবেন না।
» প্রতি ১০-১৫ দিন পরপর গাছের গোড়ার মাটি হালকা নিড়িয়ে/খুঁচে দিন।
» ফুল শুকাতে শুরু করলে দ্রুত তা গাছ থেকে কেটে ফেলুন।
» প্যানজি গাছের বয়স হলে ফুল ছোট হয়ে আসবে। এ অবস্থায় গোড়া থেকে ছেঁটে দিলে নতুন গজানো ডালে আবার ভালো ফুল ফুটবে।
» অ্যান্টিরিনামের ভালো ফুল পেতে হলে শুধু মাঝের ডালটি রেখে অন্য সব ডাল কচি অবস্থায় ছেঁটে দেবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২০ সকাল ১০:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




