somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

⌂ ছবি ব্লগ ■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব-২

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফূল পছন্দ নয় এমন মানুষ পৃথিবীতে একজনও নেই। ফূল আর প্রেম যেন মুদ্রার এপিট-ওপিঠ। শীত মৌসুমে দেশে-বিদেশে প্রচুর পরিমান ফূল ফোটে। নানা রঙের মনোরম সব ফুলে মাঠ ঘাট কিংবা বাড়ির বাগানগুলো সজ্জ্বিত হয়ে উঠে নতুন রূপে। আশে পাশে থাকা নার্সারিগুলো শীতকালীন ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে। শীতের ফুল নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের আজকে থাকছে দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পরিচিতি পর্ব ২ ।

□ জিনিয়া ফুল (Zinnia elegans) □


□ ডায়ান্থাস ফুল □


□ কৃষকলি ● সন্ধ্যা মালতী ● সন্ধ্যামনি ফুল □


□ ডেইজি ফুল □


□ প্যানজি ফুল □


□ সিলভিয়া ফুল □


● জিনিয়া ফুল :
বাহারি রঙিন ফুল হিসেবে জিনিয়া সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। এ ফুলের আদিনিবাস মেক্সিকো। ইংরেজি নাম- Zinnia পরিবার- Compositae, উদ্ভিদতাত্তি্বক নাম-Zinnia elegans। এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ প্রজাতির জিনিয়া ফুল শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মৌসুমি ফুলের মধ্যে এটি অত্যন্ত সুন্দর ও আকর্ষণীয়। বাহারি রং-রূপ ও লাবণ্যে অতুলনীয় এ ফুলের রয়েছে সাদা, হলুদ, লাল, বাদামি, বেগুনি, কমলা, সবুজ রং মিলিয়ে নানা রং ও বৈচিত্র্যতা। এ ফুলের উৎপাদন মৌসুম মূলত শীতকাল হলেও প্রায় সারাবছর এর চাষ করা যায়। তবে শীত মৌসুমে ভালো মানসম্পন্ন ফুল উৎপাদিত হয়ে থাকে বিধায় শীত মৌসুমে এর আবাদ বেশি হয়ে থাকে।


ক্ষুদ্রাকৃতি গাছের উচ্চতা গড়ে ৬০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে, শাখা-প্রশাখা পরিমাণে কম হয়, পাতার আকার ছোট, রং ধূসর সবুজ এবং বেশ রুক্ষ। প্রায় প্রতি শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল ধরে। ফুল ঊর্ধ্বমুখী। নমনীয় কোমল অসংখ্য পাপড়ির সমন্বয়ে সৃষ্ট জিনিয়া ফুলের, মধ্যে পরাগ অবস্থিত। ফুল গন্ধহীন। গাছে ফুটন্ত ফুল বেশ অনেক দিন পর্যন্ত সৌন্দর্য ধরে রাখতে সক্ষম এবং ফুলদানি সাজাতেও বেশ মানানসই ফুল।


জিনিয়া ফুলের রং বৈচিত্র্য ও গঠন ডালিয়া ও চন্দ্রমলি্লকার সঙ্গে মিল আছে। বীজের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার করা হয়। জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরে এ ফুলে বীজ বপন, টবে বা মূল জমিতে রোপণ এবং চারা উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। রৌদ্রোজ্জ্বল সুনিষ্কাশিত উর্বর দোঅাঁশ মাটি এ ফুল উৎপাদনের জন্য বেশি উপযোগী। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে এবং পানি নিকাশের উত্তম ব্যবস্থা রাখতে হবে।



● ডায়ান্থাস ফুল :
আমাদের দেশে শখের বাগানের শীতের অন্যতম ফুল ডায়ান্থাস। যদিও আমাদের দেশে এটি শীত কালীন ফুলহিসাবে দেখা হলেও এটি বহুবর্ষজীবি।


যেখানে গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা থাকে সেখানে রেখে দিলে সারা বছর ফুল পাওয়া যায়। এর অনেক রকমের মন মাতানো রঙের হয়। কখনো এক রঙের কখনো বা বাই কালারের। গাছের উচ্চতা ১৫ থকে ৪৫ সে.মি র মধ্যে হয়।



● কৃষকলি; সন্ধ্যা মালতী ; সন্ধ্যামনি ফুল :
কৃষ্ণকলি ফুল তবে এই ফুলকে অনেকে ডাকে সন্ধ্যামালতী কখনো বা সন্ধ্যামনি নামে। কৃষ্ণকলি আমাদের দেশীয় ফুল। এটি হাত দেড়েক লম্বা এবং এতে ছোট ছোট ফুল ফোটে। কোনোটি সাদা আবার কোনোটি গোলাপি। কৃষ্ণকলি নামটা পাওয়া যায় H. Piddington সংকলিত An English index to the plants of India (১৮৩২) বইতে। বইটি গুগুল লাইব্রেরীতে আছে। মজার বিষয় হলো বাংলা / সংস্কৃত / তামিল / হিন্দী ভাষায় এই উপমহাদেশের বেশীরভাগ উদ্ভিদে স্থানীয় নাম বিদ্যমান। গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি মাপের টবই যথেষ্ট। সন্ধ্যামালতী নামের সঙ্গে এ ফুলের রয়েছে অদ্ভুত এক মিল।


পড়ন্ত বিকেলের শেষ ও সন্ধ্যায় এ ফুল ফোটে। সন্ধ্যা হতে না হতেই ফুল ফোটে, তাই এর নাম সন্ধ্যামালতী। সারারাতব্যাপী ফুলেরা থাকে প্রস্ফুটিত অমলিন এবং সূর্যের আলোয় ফুলগুলো ঝিমিয়ে যায়। কিছু কিছু সন্ধ্যামালতীর রয়েছে সুমিষ্ট গন্ধ, তবে সব ফুলে নয়। ফুলটি দিয়ে গাঁথা যায় বিনা সুতার মালা। সাধারণত সন্ধ্যার সময় ফুটলেও কখনো কখনো শীতের সকালেও ফুল ফুটতে দেখা যায়।


অন্যান্য স্থানীয় নামঃ Four O'clock, Beauty-of-the-night, Marvel of Peru , Krishnakeli
বৈজ্ঞানিক নামঃ Mirabilis jalapa Family: Nyctaginaceae (Bougainvillea family)

সন্ধ্যামালতী এমন এক ধরণের ফুল যা সাধারণত বসতবাড়ি সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। সন্ধ্যামালতী বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। সম্ভবত এই ফুল পেরু হতে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যামালতীর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল এতে একটি গাছেই বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটতে পারে। শুধু তাই না, মাঝেমাঝে একই ফুলে বিভিন্ন রঙ দেখা যায়।


ফুটন্ত ফুলগাছ দেখতে খুবই নয়নাবিরাম। ফুল ফোটার ব্যাপ্তিকাল গ্রীষ্ম থেকে শুরু করে হেমন্তকাল পর্যন্ত। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এ ফুল আবার সন্ধ্যামণি ও কৃষ্ণকলি নামেও পরিচিত। বর্ষাকাল ও শরৎকালে গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। গাছের শিকড় থেকে ডালিয়ার মতো স্ফীত কন্দ জন্মায়। এ কন্দ থেকে পরবর্তী বছর গাছ জন্মানো সম্ভব। বীজ থেকেও চারা জন্মে। সন্ধ্যামালতী খুব কষ্টসহিষ্ণু।


■ ব্যবহার :
সন্ধ্যামালতী ফুল সাধারণত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে রঙের কাজে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এর পাতাও খাওয়া যায়, অবশ্য তা কেবল জরুরি প্রয়োজনে রান্না করেই তা সম্ভব। এছাড়া কেক ও জেলী রঙের কাজেও এর রঙ ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ তৈরীতে এর ফুল ও শিকড় ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এর পাতার রসও ক্ষত সারানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।


● ডেইজি ফুল :
ডেইজি ফুলের সাথে পবিত্রতা, নিষ্পাপতা, সৌন্দর্য, ধৈর্য এবং সরলতা প্রতীক হিসেবে পরিচিত। মধ্যযুগের চিত্রকলায় ডেইজি ফুল তৃণভূমির ফুল হিসেবে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়েছে।


ডেইজি ফুল চার হাজার বছরের পুরনো এমনটি বিশ্বাস করা হয় এবং ক্রিট দ্বীপে মাইনোন প্রাসাদ খননের সময় ডেইজি ফুলকে চুলের কাঁটা হিসেবে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। আরও প্রাচীনকালে, মিসরীয় সভ্যতায় সিরামিকের বিভিন্ন সামগ্রী ডেইজি ফুল দ্বারা সাজানো হতো।



● প্যানজি ফুল :

প্যান্সি শীতের সবচাইতে সুন্দর ফুল। রসালো ভারী পাতার কিনারায় নকশা করা। সবুজ পাতার ওপর রংবেরঙের ফুল প্রজাপতির মতো দেখায়। ফুলের ওপরের দিকে থাকে দুটি পাপড়ি আর নিচের দিকে তিনটি।


নিচের পাপড়ি তিনটির আবার দুটির গড়ন এক রকম। বাকিটির রঙের মিশ্রণ ভিন্ন রকম। সুন্দর প্যান্সি দেখা যাবে কার্জন হলের বাগানে।
ফুলগুলি বিভিন্ন রং এর পাওয়া যায়। টবে, বাগানের বেড করে লাগানো করা যায়। এর প্রচুর হাইব্রিড প্রজাতি রয়েছে। প্যান্সি এতুটাই জনপ্রিয় ফুল যে বাগানবিলাসীদের কাছে এটি ৪০০ এরও বেশী নামে পরিচিত।


অন্যান্য নামের মধ্যে Viola, Pansy, Pansy Violet, heartsease, love in idleness, flower of Jove, Johnny Jump Up নাম গুলো উল্লেখযোগ্য।


ফুলের নাম- প্যান্সি/Pansy
বৈজ্ঞানিক নাম - Viola tricolor hortensis
প্যান্সি ফুল Violaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ।




● সিলভিয়া ফুল :
সিলভিয়া রেড এটি সাধারনত শীতকালীন ফুল। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পযর্ন্ত এই ফুল ফুটে থাকে। অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস চারা রোপনের উপযুক্ত সময়।আপনার বাগানে, ছাদে, টবে, লনে চারা রোপন করা যাবে।



বিচিত্র সব দেশী- বিদেশী শীতের ফুল পরিচিতি নিয়ে ধারাবাহিক পর্ব সমূহঃ
■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব-১
■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব- ৩
■ ফুল পরিচিতি » দৃষ্টিনন্দন শীতের ফুল পর্ব-৪ (শেষ পর্ব )
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১০
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×