সময়গুলো কি অস্বাভাবিকভাবেই না বদলে যায়! দিন রাত্রি সংঘটিত হচ্ছে চিরায়ত নিয়মেই। সূর্যও তার কিরন দ্বারা প্রকৃতিকে জাগিয়ে রেখেছে। চাঁদ তার বিক্ষিপ্ত আলোর ছটায় পৃথিবীকে করে রেখেছে মায়াময়। মেঘও তার জলরাশিতে ধরনীকে করেছে সিক্ত। বাড়ীর পাশের ঘাসের ডাগায় শিশির বিন্দু হীরার মতো জ্বলজ্বল করে আজও। শুধু আমি আর আমার মতো নেই। কবে যেন বদলে গিয়েছি নিজের অজান্তেই। সবকিছুই নতুন লাগে। পুরনো সেই মজা আর কোথাও পাই না। কোকিলের সুমধুর স্বরেও আজকাল চমকে উঠি। টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দও এখন একঘেয়ে লাগে। ভোরবেলার আজানের ধ্বনিও আজকাল কোন প্রতিক্রিয়া সৃস্টি করে না। সেই অনুভূতিগুলো কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে।
ও, এখন আমি জীবন নিয়ে ব্যস্ত। জীবনের বাস্তবতার হার মেনে সব অনুভূতিগুলো আজ ডুকরে কাঁদছে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সব আবেগগুলো হাজার মাইল পেছনে পড়ে গেছে। শৈশবের অনেক সুন্দরই আজ কুৎসিত কদাকার মনে হয়। এখন আর কোন কিছুতেই অবাক হই না। একসময় সবকিছুই কত সহজেই না অবাক করে দিত! আকাশের ঘুড়ি কিংবা ভরা যৌবনা নদীর বুক চষে বেড়ানো ছোট নৌকাও অবাক করে দিত। নিষ্পলক চোখে চেয়ে রইতাম সদ্য জন্মানো ছাগল ছানা কিংবা ঐ বড় তালগাছটার দিকে। কতদিন বসে বসে দেখেছি দিঘীর জলে মাছেদের ভেসে বেড়ানো আর হাঁসেদের জলকেলি। এখন সবকিছুতেই ভান করতে হয়। অবাক হওয়ার, খুশি হওয়ার ভানে চলছে জীবন। মাঝে মাঝে আবার দুঃখ পাওয়ারও ভনিতা করতে হয়। অভিনেতা না হয়েও জীবনটা অভিনয় সর্বস্ব হয়ে গেছে। অকৃত্রিম ভালোলাগাগুলো হঠাৎ করে যেন উধাও, বিপরীতে স্থান হয়েছে কিছু ফরমালিন মিশ্রত অনুভূতির। একসময় নতুন জামা কাপড় পেলে মুখে এক অকৃত্রিম খুশির আলো ফুটে উঠত। সেটা ছিল স্বর্গীয়। হাসির রেখা আজও বিদ্যমান কিন্তু এটা যন্ত্রনার। যন্ত্রনা নিয়ে মুখে হাসির রেখা ফোটানো, এটা মনে হয় পৃথিবীর সবচেযে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি। অথচ এটিই করতে হয় প্রতিনিয়ত। এটাই নাকি জীবন! এটাই নাকি বাস্তবতা!
এই বাস্তবতাই সব সুখ, মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। মাঝে মাঝেই সেই দীর্ঘকায়া, সুঠাম, সবল দাদুকে মনে পড়ে। যে আমাকে পিঠে নিয়ে ঘুড়ে বেড়াতো। অথচ এই জ্বরাজীর্ন, রুগ্ন, শীর্ণকায়া মানুষটিই আমার দাদু। যার আজকে চলন শক্তি নেই, সেই একসময় কতজনকে চলতে শিখিয়েছে। এটাই নাকি বাস্তবতা। বাস্তবতার কি নির্মম কষাঘাত মানুষের জীবনে!
আমি আবার ফিরিয়ে চাই আমার সেই নিষ্পাপ অনুভূতিগুলো। ফিরে যেতে চাই শৈশবের সোনালী দিনগুলোতে। অবাক হতে চাই- বুলবুলির শীস শুনে কিংবা রাত দুপুরে শেয়ালের ডাকে। শিহরিত হতে চাই- বর্ষার প্রথম দিনে বৃষ্টির ছোঁয়ায় কিংবা দুর্বাঘাসের ডগায় টলটলে শিশিরের স্পর্শে। ফিরিয়ে চাই সেই অকৃত্রমি ভালোলাগা, ভালোবাসাগুলো। আমি ভালোবাসতে চাই সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:০১