somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুল নং-১০: ফজরের সালাতের ওয়াক্ত

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাইখ আবদুল গফফার (হাঃফি)

লেখক
বলেছেন, আউয়াল ওয়াক্তে
ছালাত আদায় করা সর্বোত্তম
হিসাবে রাসূল (ছাঃ) খুব ভোরে
ছালাত আদায় করতেন। ‘‘আউয়াল
ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা
সর্বোত্তম’’ কথাটির বরাত দিয়েছেন
তিরমিযী শরীফের ১৭০ নং হাদীসের
এবং মন্তব্য লিখেছেন, সনদ সহীহ

স্কিনশুটঃ



তাহকীক: ইমাম তিরমিযী রাহ.
হাদীসটির সনদের উপর মন্তব্য
করেছেন এই কথা বলে-
ﺣﺪﻳﺚ ﺃﻡ ﻓﺮﻭﺓ ﻻ ﻳﺮﻭﻯ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺍﻟﻌﻤﺮﻱ ﻭﻟﻴﺲ ﻫﻮ
ﺑﺎﻟﻘﻮﻯ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺍﺿﻄﺮﺑﻮﺍ
ﻋﻨﻪ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﻫﻮ ﺻﺪﻭﻕ ﻭﻗﺪ
ﺗﻜﻠﻢ ﻓﻴﻪ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ
ﺣﻔﻈﻪ
ইমাম তিরমিযী রাহ.-এর এই মন্তব্য
হাদীসটির সনদকে যঈফ বলে
সাব্যস্ত করে। অথচ লেখক
সনদটিকে সহীহ বললেন। ইমাম
তিরমিযীর মন্তব্য অনুযায়ী
হাদীসটিতে আব্দুল্লাহ ইব্ন উমার
আল-উমারী নামক যে রাবী আছেন
তিনি যঈফ। তিনি ব্যতীত উম্মে
ফারওয়া রা.-এর এই হাদীসটি আর
কেউ বর্ণনা করেন না। তদুপরি
হাদীসটিতে ইযতিরাব রয়েছে। এতসব
দোষ থাকা সত্ত্বেও সনদটিকে
সহীহ বলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? হাঁ,
শায়খ আলবানী রাহ. হাদীসটিকে
সহীহ বলেছেন। লেখক হয়তো তাঁর
তাকলীদ করেই বলেছেন, সনদ সহীহ।
তাকলীদ যদি করতেই হয় তবে শায়খ
আলবানীর কেন, ইমাম তিরমিযীর নয়
কেন? তাছাড়া শায়খ আলবানী
হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সনদটিকে
নয়। সনদ সহীহ হওয়া আর হাদীস
সহীহ হওয়া এক কথা নয়। পরবর্তী
আলোচনায় তা স্পষ্ট হবে। লেখকের
উচিত ছিল শায়খ আলবানী রাহ.
হাদীসটিকে কেন সহীহ বলেছেন তা
তাহকীক করা ।
শায়খ আলবানী রাহ.-এর তাহকীক ও
পর্যালোচনা
উম্মে ফারওয়া রা.-এর হাদীসটির
সনদ শায়খ আলবানীর মতেও যঈফ।
তিনি সুনানে আবূ দাউদে হাদীসটির
উপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন :
ﻭ ﻫﺬﺍ ﺳﻨﺪ ﺿﻌﻴﻒ، ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ -
ﻫﻮ ﺍﻟﻌﻤﺮﻯ ﺍﻟﻤﻜﺒﺮ - ﻭﻫﻮ ﺳﻴﺊ ﺍﻟﺤﻔﻆ
(এটি যঈফ সনদ। আব্দুল্লাহ ইবন
উমর হচ্ছেন আল-উমারী । তিনি
দুর্বল স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন।)
এরপর তিনি হাদীসটির ইযতিরাব
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করার পর লেখেন:
ﻭﻫﺬﺍ ﺍﺿﻄﺮﺍﺏ ﺷﺪﻳﺪ ﻣﻤﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻰ
ﺿﻌﻒ ﺍﻻﺳﻨﺎﺩ
(এটা মারাত্মক ইযতিরাব যা হাদীসের
সনদকে আরও দুর্বল করে দেয়)
অর্থাৎ শায়খ আলবানী বলতে
চাচ্ছেন, একে তো যঈফ রাবীর
কারণে হাদীসের সনদটি যঈফ,
তদুপরি এতে রয়েছে নানারকম
ইযতিরাব যা হাদীসের সনদকে আরও
যঈফ ও দুর্বল করে দেয়।
এতদসত্ত্বেও আমাদের আলোচ্য
বইয়ের লেখক বলে দিলেন, ‘সনদ
সহীহ’। হাঁ উম্মে ফারওয়ার হাদীসটি
হাকেম কর্তৃক বর্ণিত আব্দুল্লাহ
ইব্ন মাসউদ রা.-এর হাদীস দ্বারা
সমর্থিত বলে মনে করার কারণে
আলবানী রাহ. হাদীসটিকে সহীহ
বলেছেন। অর্থাৎ তাঁর মতে হাদীসটি
সহীহ লিগাইরিহী। কোনো হাদীস
অন্য হাদীস দ্বারা সমর্থিত হওয়ার
কারণে সহীহ লি-গাইরিহী হওয়া আর
সেই হাদীসটির সনদ সহীহ হওয়া এক
কথা নয়। বিষয়টি সাধারণ তালিবুল
ইলমও জানে। লেখক কেন বিষয়টি
জানলেন না তা বোঝা গেল না।
উম্মে ফারওয়া রা.-এর হাদীসটি কি
সহীহ, যেমনটা আলবানী রাহ.
বলেছেন?
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রা. কর্তৃক
বর্ণিত মুস্তাদরাকে হাকেমের যে
হাদীসটির কারণে উম্মে ফারওয়া রা.
-এর হাদীসটিকে শায়খ আলবানী
রাহ. সহীহ বলেছেন সেটি যঈফ।
কারণ : বর্ণনাটি শায বা দল-বিচ্ছিন্ন
বর্ণনা। এর বিস্তারিত বিবরণ এই
যে, হাকেম হাদীসটিকে বর্ণনা
করেছেন এইভাবে:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﻠِﻲُّ ﺑْﻦُ ﻋِﻴﺴَﻰ ، ﻓِﻲ ﺁﺧَﺮِﻳﻦَ ،
ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ ،
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺑُﻨْﺪَﺍﺭٌ ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ ﺑْﻦُ ﻋُﻤَﺮَ ،
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣَﺎﻟِﻚُ ﺑْﻦُ ﻣِﻐْﻮَﻝٍ ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ ﺑْﻦِ
ﺍﻟْﻌَﻴْﺰَﺍﺭِ ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺍﻟﺸَّﻴْﺒَﺎﻧِﻲِّ ، ﻋَﻦْ
ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﺄَﻟْﺖُ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺃَﻱُّ
ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ ﺃَﻓْﻀَﻞُ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻓِﻲ ﺃَﻭَّﻝِ
ﻭَﻗْﺘِﻬَﺎ
এই হাদীসটিকেই ইমাম বুখারী রাহ.
ভিন্ন শব্দে তাঁর গ্রন্থে গ্রন্থাবদ্ধ
করেছেন। তিনি বলেছেন:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ ﻫِﺸَﺎﻡُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚِ
ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺷُﻌْﺒَﺔُ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻌَﻴْﺰَﺍﺭِ
، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﻋَﻤْﺮٍﻭ
ﺍﻟﺸَّﻴْﺒَﺎﻧِﻲَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺻَﺎﺣِﺐُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﺍﺭِ
ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺇِﻟَﻰ ﺩَﺍﺭِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﺄَﻟْﺖُ
ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻱُّ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ
ﺃَﺣَﺐُّ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﻗْﺘِﻬَﺎ
ﻗَﺎﻝَ ﺛُﻢَّ ﺃَﻱُّ ﻗَﺎﻝَ ﺛُﻢَّ ﺑِﺮُّ ﺍﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ ﻗَﺎﻝَ ﺛُﻢَّ
ﺃَﻱُّ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺠِﻬَﺎﺩُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ :
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺑِﻬِﻦَّ ﻭَﻟَﻮِ ﺍﺳْﺘَﺰَﺩْﺗُﻪُ ﻟَﺰَﺍﺩَﻥِ
(হাদীস নং-৫২৭)
লক্ষ করুন বুখারীর বর্ণনায় শব্দ
রয়েছে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ আর
হাকেমের বর্ণনায় রয়েছে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ
ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ । দুটি কথা সম্পূর্ন ভিন্ন
অর্থ বহন করে। সে কথায় পরে
আসছি। বুখারী রাহ. হাদীসটিকে
শু‘বার সনদে উল্লেখ করেছেন।
শু‘বার সকল শাগরেদ হাদীসটিকে
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দেই বর্ণনা
করেছেন। শুধু তাঁর একজন শাগরেদের
বর্ণনায় ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ পাওয়া
যায়। তিনি হলেন আলী ইব্ন হাফস।
আলী ইব্ন হাফস কর্তৃক বর্ণিত
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দ সম্বলিত
হাদীসটি হাকেম, বায়হাকী ও দারা
কুতনী তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে
উল্লেখ করেছেন। আলী ইব্ন হাফস
সম্পর্কে দারা কুতনী মন্তব্য
করেছেন এই বলে- ﻣﺎ ﺍﺣﺴﺒﻪ ﺣﻔﻈﻪ
ﻻﻧﻪ ﻛﺒﺮ ﻭﺗﻐﻴﺮ ﺣﻔﻈﻪ (আমি মনে করি
না আলী ইব্ন হাফস হাদীসটিকে
যথাযথ সংরক্ষণ করেছেন। কেননা,
তিনি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর
স্মৃতিশক্তির পরিবর্তন ঘটেছিল।)
আরেকটি সনদে হাদীসটি ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ
ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণিত হয়েছে।
সনদটি এরূপ -
ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻌﻤﺮﻯ ﻋﻦ ﺍﺑﻰ
ﻣﻮﺳﻰ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻰ ﻋﻦ ﻏﻨﺪﺭ ﻋﻦ
ﺷﻌﺒﺔ
কিন্তু আবূ মূসার শাগরেদদের মধ্য
হতে হাসান ইবন আলী ব্যতীত আর
কেউ হাদীসটিকে ঐ শব্দে বর্ণনা
করেন না। বরং তাঁর সকল শাগরেদ
তাঁর বরাতে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দেই
বর্ণনা করেন। দারা কুতনী রাহ.
এমনটাই বলেছেন। তিনি বলেন ,
ﺗﻔﺮﺩ ﺑﻪ ﺍﻟﻤﻌﻤﺮﻯ ﻓﻘﺪ ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺻﺤﺎﺏ
ﺃﺑﻲ ﻣﻮﺳﻰ ﺑﻠﻔﻆ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ
( অর্থাৎ আল-মা‘মারী এইরূপ একাই
বর্ণনা করেছেন। আবূ মূসার সকল
শাগরেদ হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে।) এই
মন্তব্যের পরে দারা কুতনী রাহ. আবূ
মূসার অপর এক শাগরেদ মাহামিলীর
বরাতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে। ঠিক
যেমনটা আবূ মূসার অন্যান্য
শাগরেদগণ বর্ণনা করেন। আবূ মূসার
ন্যায় গুনদারের সকল শাগরেদ
হাদীসটিকে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দেই
বর্ণনা করেন। হাফেয ইবন হাজার
আসকালানী রাহ. বলেন, প্রকাশ্যত
এটাই বোঝা যায় যে, হাসান ইবন
আলী আল-মা‘মারী তাঁর বর্ণনায়
ভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। কারণ,
তিনি তাঁর স্মৃতি থেকে হাদীস বর্ণনা
করতেন।
বাকী রইল মুস্তাদরাকে হাকেমের
উপরিউক্ত ঐ বর্ণনাটি যার দ্বারা
উম্মে ফারওয়ার হাদীসটি সমর্থিত
বলে শায়খ আলবানী রাহ. মনে করেন।
হাদীসটি সম্পর্কে বক্তব্য হল,
হাদীসটি মালেক ইবন মিগ্ওয়ালের
শাগরেদদের মধ্য হতে একমাত্র
উসমান ইব্ন উমার ব্যতীত আর কেউ
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণনা
করেন না। তাঁর সকল শাগরেদ তাঁর
বরাতে হাদীসটিকে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ
শব্দেই বর্ণনা করেন। হাফেজ ইবন
হাজার আসকালানী রাহ. বলেন , ﻭﺗﻔﺮﺩ
ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﺬﻟﻚ ’ ﻭﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻦ
ﻣﻐﻮﻝ ﻛﺮﻭﺍﻳﺔ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ
( অর্থাৎ এইরূপ বর্ণনায় উসমান
নিঃসঙ্গ। মালেক ইবন মিগ্ওয়াল
হতে যা প্রসিদ্ধ তা হল ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ
ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে অন্যান্য সকলের
অনুরূপ বর্ণনা।)
আপনি বলতে পারেন যে, হাকেম
তো হাদীসটিকে ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ
তথা বুখারী ও মুসলিমের হাদীসের
মানে উত্তীর্ণ বলে ব্যক্ত করেছেন।
এর জবাবে বলব যে , ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ
ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ কথাটি কোন্ হাদীসের
ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় বা করা
হয় তা নিয়ে বিশেষজ্ঞগণের মধ্যে
মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, কোনো
হাদীসের সনদে উল্লেখকৃত
রাবীগণের সকলেই যদি বুখারী ও
মুসলিমের রাবী হন তাহলে সেই
হাদীস সম্পর্কে বলা যায় যে, তা
ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ বা বুখারী ও
মুসলিমের হাদীসের মানসম্পন্ন।
কেউ বলেন, যে হাদীসটির সনদ হুবহু
বুখারী ও মুসলিমের সনদ সেই হাদীস
সম্পর্কে বলা যায় যে, তা ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ
ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ । কেউ বলেন, বুখারী ও
মুসলিমের রাবীগণ যে সকল
বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর অধিকারী সেই
সকল বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর
অধিকারী রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস
সম্পর্কে বলা যায় যে, তা ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ
ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ । দ্বিতীয় মতটিই অধিকতর
বিশুদ্ধ বলে মনে হয়। এর কারণ কী
সে আলোচনা এখানে
নিষ্প্রয়োজন। তবে সবকটি মতের
সার কথা হল, যে হাদীসটিকে ﻋﻠﻰ
ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ বা বুখারী ও
মুসলিমের হাদীসের মানে উত্তীর্ণ
বলে ব্যক্ত করা হয় তার রাবীগণ
উচ্চমান সম্পন্ন সত্যবাদি ও
বিশ্বস্ত। কিন্তু কোন হাদীস সহীহ
ও দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য
হওয়ার জন্য রাবীগণের সত্যবাদিতা,
বিশ্বস্ততা ইত্যাদি গুণই যথেষ্ট
নয়। বরং তাঁদের বর্ণনাটি শায বা দল-
বিচ্ছিন্ন না হওয়াও জরুরী। এটি
একটি স্বীকৃত মূলনীতি। দল
বিচ্ছিন্নতা হাদীস সহীহ হওয়ার পথে
একটি বড় বাধা। হাকেমের হাদীসটি
এই বাধাকে অতিক্রম করতে পারেনি।
কেননা পূর্বেই আমরা দেখিয়েছি যে ,
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে হাদীসটি
বর্ণনার ক্ষেত্রে উসমান ইব্ন উমার
নিঃসঙ্গ। তাঁর উস্তায মালেক ইবন
মিগ্ওয়ালের শাগরেদগণের কেউই
হাদীসটিকে ঐ শব্দে বর্ণনা করেন
না।
সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত হওয়া
সত্ত্বেও যে সকল রাবী হাদীসটিকে
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ - এর স্থলে ﺍﻟﺼﻼﺓ
ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণনা করেছেন
তাঁদের কেউবা স্মৃতি দুর্বলতার
শিকার হয়েছেন, আর কেউ সম্ভবত
কথা দুটোর অর্থ অভিন্ন বলে ধারণা
করে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ - এর স্থলে
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ বর্ণনা
করেছেন। হাফেজ ইব্ন হাজার
আসকালানী রাহ. বলেন , ﻭﻛﺄﻥ ﻣﻦ
ﺭﻭﺍﻫﺎ ﻛﺬﺍﻟﻚ ﻇﻦ ﺍﻥ ﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﻭﺍﺣﺪ
( যারা হাদীসটিকে এইভাবে বর্ণনা
করেছেন তারা হয়তো মনে করেছেন
যে, উভয়টির অর্থ এক।) শায়খ
আলবানীও (রাহ.) কথা দুটোর অর্থ
অভিন্ন বলে ধারণা পোষণ করেন।
কেননা তিনি হাকেমের হাদীসের
উদ্ধৃতি দেওয়ার পর বলেন : ﻭﻫﻮ ﻓﻰ
ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﻴﻦ ﻭﻏﻴﺮﻫﻤﺎ ﺑﻠﻔﻆ , ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ،
ﻭﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﻭﺍﺣﺪ ﻋﻨﺪﻧﺎ ( সহীহাঈন ও
অন্যান্য গ্রন্থে হাদীসটি ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ
শব্দে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের মতে
অর্থ একই।) শায়খ আলবানীর সঙ্গে
এ ক্ষেত্রে আমি সহমত পোষণ করি
না।
কারণ, দ্বিতীয় কথাটির অর্থ হল,
ওয়াক্তের শুরুতে সালাত আদায় করা।
আর প্রথম কথাটির স্পষ্ট অর্থ হল,
সময়মত সালাত আদায় করা। অর্থাৎ
সালাতকে তার ওয়াক্তচ্যুত না করা।
প্রতিটি সালাতের শুরু ও শেষের যে
নির্ধারিত ওয়াক্ত আছে সেই
ওয়াক্তের মধ্যেই সালাত আদায়
করা। কাযা না করা।
একটি প্রশ্ন ও তার জবাব
কেউ বলতে পারে যে, ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ
ﻭﻗﺘﻬﺎ কে তো আল্লাহর নিকট অধিক
প্রিয় বলে বলা হয়েছে। কোনো
বিষয় অধিক প্রিয় তখনই হয় যখন
ঐ বিষয়টির মধ্যে একাধিক
ঐচিছকতা বিদ্যমান থাকে এবং
তন্মধ্য হতে একটি ঐচ্ছিক বিষয়
অন্যটির তুলনায় প্রিয় হয়ে থাকে।
সময়মত সালাত আদায় করা বা কাযা
না করা তো অপরিহার্য।
অপরিহার্যের মধ্যে কোনো
ঐচ্ছিকতা থাকে না। সুতরাং বোঝা
যায় যে, হাদীসটিতে বলা হয়েছে, যে
কোনো সময়ে সালাত আদায় করা
বৈধ তবে অন্য যে কোনো সময়ে
আদায় করার তুলনায় আউয়াল
ওয়াক্তে সালাত আদায় করা
মুস্তাহাব বা অধিক প্রিয়।
এর জবাবে বলব যে, কথাটি
যুক্তিযুক্ত। তবে কথাটি আলোচ্য
বিষয়ে প্রযোজ্য হত যদি প্রশ্ন
করা হত যে, কোন্ সময়ে সালাত
আদায় করা উত্তম। এখানে প্রশ্ন
করা হয়েছে, কোন্ আমলটি সর্বাধিক
উত্তম? উত্তরে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ অর্থাৎ
অন্যান্য আমলের তুলনায় সালাতকে
সময়মত আদায় করা এবং কাযা না
করা অধিক প্রিয়। তুলনা করা হয়েছে
অন্যান্য আমলের সঙ্গে। বলা
হয়েছে, সালাত কাযা না করা
আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আমল।
সালাতের পূর্ণ সময়ের একটি
অংশকে অপর অংশের সঙ্গে তুলনা
করা হয়নি।
কথা আরও আছে। তা হল, একাধিক
ঐচ্ছিক সময়ের মধ্য হতে আউয়াল
বা শুরু সময়ের কথাটি বোঝা গেল
কোত্থেকে? এ অর্থ কেন হবে না
যে, একাধিক ঐচ্ছিক সময়ের মধ্য
হতে মধ্যবর্তী সময়ে বা শেষ সময়ে
সালাত আদায় করা অন্য সময়ের
তুলনায় অধিক প্রিয়?
এই দীর্ঘ আলোচনার সার দাঁড়ালো
এই যে, হাদীসটিকে যাঁরা ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ
ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণনা করেছেন
তাঁরা হয় স্মৃতি বিভ্রাটের শিকার
হয়েছেন নয় তো অর্থ বিভ্রাটের
শিকার হয়েছেন। কারণ যা-ই হোক,
তাঁদের বর্ণনাটি দল-বিচ্ছিন্ন বর্ণনা।
আর দল-বিচ্ছিন্ন বর্ণনাকে
মুহাদ্দিসগণ যঈফ বলেন। সম্ভবত
এই কারণেই ইমাম বুখারী ও ইমাম
মুসলিম রাহ. তাঁদের গ্রন্থে ঐ শব্দ
সম্বলিত হাদীসটিকে স্থান দেননি।
যদিও এর বর্ণনাকারীগণের বর্ণিত
অন্য হাদীস তাঁরা গ্রহণ করেছেন।
আর এই কারণেই ইমাম নববী রাহ.
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণিত
সকল হাদীসকে যঈফ বলে মত
প্রকাশ করেছেন। হাফেয ইব্ন হাজার
আসকালানী রাহ. তাঁর ফতহুল বারী
গ্রন্থে ইমাম নববী রাহ.-কে উদ্ধৃত
করে বলেছেন,
ﻭﻗﺪ ﺍﻃﻠﻖ ﺍﻟﻨﻮﻭﻯ ﻓﻰ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻤﻬﺬﺏ ﺃﻥ
ﻭﺍﻳﺔ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ ﺿﻌﻴﻔﺔ
অর্থাৎ শরহুল মুহায্যাব গ্রন্থে
নববী রাহ. ব্যাপকভাবে (কোন
ব্যতিক্রম উল্লেখ না করে) বলেছেন
যে, ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ বর্ণনা যঈফ।
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত হাফেজ ইবন
হাজার আসকালানীকে উদ্ধৃত করে
আমি যা লিখেছি তা যাচাই করতে
দেখুন ফাতহুল বারী ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা
১১ ও ১২, প্রকাশক: দারুল হাদীস,
কায়রো।

লেখক বলেছেন, আউয়াল ওয়াক্তে
ছালাত আদায় করা সর্বোত্তম
হিসাবে রাসূল (ছাঃ) খুব ভোরে
ছালাত আদায় করতেন। ‘‘আউয়াল
ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা
সর্বোত্তম’’ কথাটির বরাত দিয়েছেন
তিরমিযী শরীফের ১৭০ নং হাদীসের
এবং মন্তব্য লিখেছেন, সনদ সহীহ

স্কিনশুটঃ



তাহকীক: ইমাম তিরমিযী রাহ.
হাদীসটির সনদের উপর মন্তব্য
করেছেন এই কথা বলে-
ﺣﺪﻳﺚ ﺃﻡ ﻓﺮﻭﺓ ﻻ ﻳﺮﻭﻯ ﺇﻻ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺍﻟﻌﻤﺮﻱ ﻭﻟﻴﺲ ﻫﻮ
ﺑﺎﻟﻘﻮﻯ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺍﺿﻄﺮﺑﻮﺍ
ﻋﻨﻪ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﻫﻮ ﺻﺪﻭﻕ ﻭﻗﺪ
ﺗﻜﻠﻢ ﻓﻴﻪ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ
ﺣﻔﻈﻪ
ইমাম তিরমিযী রাহ.-এর এই মন্তব্য
হাদীসটির সনদকে যঈফ বলে
সাব্যস্ত করে। অথচ লেখক
সনদটিকে সহীহ বললেন। ইমাম
তিরমিযীর মন্তব্য অনুযায়ী
হাদীসটিতে আব্দুল্লাহ ইব্ন উমার
আল-উমারী নামক যে রাবী আছেন
তিনি যঈফ। তিনি ব্যতীত উম্মে
ফারওয়া রা.-এর এই হাদীসটি আর
কেউ বর্ণনা করেন না। তদুপরি
হাদীসটিতে ইযতিরাব রয়েছে। এতসব
দোষ থাকা সত্ত্বেও সনদটিকে
সহীহ বলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? হাঁ,
শায়খ আলবানী রাহ. হাদীসটিকে
সহীহ বলেছেন। লেখক হয়তো তাঁর
তাকলীদ করেই বলেছেন, সনদ সহীহ।
তাকলীদ যদি করতেই হয় তবে শায়খ
আলবানীর কেন, ইমাম তিরমিযীর নয়
কেন? তাছাড়া শায়খ আলবানী
হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সনদটিকে
নয়। সনদ সহীহ হওয়া আর হাদীস
সহীহ হওয়া এক কথা নয়। পরবর্তী
আলোচনায় তা স্পষ্ট হবে। লেখকের
উচিত ছিল শায়খ আলবানী রাহ.
হাদীসটিকে কেন সহীহ বলেছেন তা
তাহকীক করা ।
শায়খ আলবানী রাহ.-এর তাহকীক ও
পর্যালোচনা
উম্মে ফারওয়া রা.-এর হাদীসটির
সনদ শায়খ আলবানীর মতেও যঈফ।
তিনি সুনানে আবূ দাউদে হাদীসটির
উপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন :
ﻭ ﻫﺬﺍ ﺳﻨﺪ ﺿﻌﻴﻒ، ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ -
ﻫﻮ ﺍﻟﻌﻤﺮﻯ ﺍﻟﻤﻜﺒﺮ - ﻭﻫﻮ ﺳﻴﺊ ﺍﻟﺤﻔﻆ
(এটি যঈফ সনদ। আব্দুল্লাহ ইবন
উমর হচ্ছেন আল-উমারী । তিনি
দুর্বল স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন।)
এরপর তিনি হাদীসটির ইযতিরাব
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করার পর লেখেন:
ﻭﻫﺬﺍ ﺍﺿﻄﺮﺍﺏ ﺷﺪﻳﺪ ﻣﻤﺎ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻰ
ﺿﻌﻒ ﺍﻻﺳﻨﺎﺩ
(এটা মারাত্মক ইযতিরাব যা হাদীসের
সনদকে আরও দুর্বল করে দেয়)
অর্থাৎ শায়খ আলবানী বলতে
চাচ্ছেন, একে তো যঈফ রাবীর
কারণে হাদীসের সনদটি যঈফ,
তদুপরি এতে রয়েছে নানারকম
ইযতিরাব যা হাদীসের সনদকে আরও
যঈফ ও দুর্বল করে দেয়।
এতদসত্ত্বেও আমাদের আলোচ্য
বইয়ের লেখক বলে দিলেন, ‘সনদ
সহীহ’। হাঁ উম্মে ফারওয়ার হাদীসটি
হাকেম কর্তৃক বর্ণিত আব্দুল্লাহ
ইব্ন মাসউদ রা.-এর হাদীস দ্বারা
সমর্থিত বলে মনে করার কারণে
আলবানী রাহ. হাদীসটিকে সহীহ
বলেছেন। অর্থাৎ তাঁর মতে হাদীসটি
সহীহ লিগাইরিহী। কোনো হাদীস
অন্য হাদীস দ্বারা সমর্থিত হওয়ার
কারণে সহীহ লি-গাইরিহী হওয়া আর
সেই হাদীসটির সনদ সহীহ হওয়া এক
কথা নয়। বিষয়টি সাধারণ তালিবুল
ইলমও জানে। লেখক কেন বিষয়টি
জানলেন না তা বোঝা গেল না।
উম্মে ফারওয়া রা.-এর হাদীসটি কি
সহীহ, যেমনটা আলবানী রাহ.
বলেছেন?
আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রা. কর্তৃক
বর্ণিত মুস্তাদরাকে হাকেমের যে
হাদীসটির কারণে উম্মে ফারওয়া রা.
-এর হাদীসটিকে শায়খ আলবানী
রাহ. সহীহ বলেছেন সেটি যঈফ।
কারণ : বর্ণনাটি শায বা দল-বিচ্ছিন্ন
বর্ণনা। এর বিস্তারিত বিবরণ এই
যে, হাকেম হাদীসটিকে বর্ণনা
করেছেন এইভাবে:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﻠِﻲُّ ﺑْﻦُ ﻋِﻴﺴَﻰ ، ﻓِﻲ ﺁﺧَﺮِﻳﻦَ ،
ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ ،
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺑُﻨْﺪَﺍﺭٌ ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ ﺑْﻦُ ﻋُﻤَﺮَ ،
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣَﺎﻟِﻚُ ﺑْﻦُ ﻣِﻐْﻮَﻝٍ ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ ﺑْﻦِ
ﺍﻟْﻌَﻴْﺰَﺍﺭِ ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﻤْﺮٍﻭ ﺍﻟﺸَّﻴْﺒَﺎﻧِﻲِّ ، ﻋَﻦْ
ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﺄَﻟْﺖُ
ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺃَﻱُّ
ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ ﺃَﻓْﻀَﻞُ ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻓِﻲ ﺃَﻭَّﻝِ
ﻭَﻗْﺘِﻬَﺎ
এই হাদীসটিকেই ইমাম বুখারী রাহ.
ভিন্ন শব্দে তাঁর গ্রন্থে গ্রন্থাবদ্ধ
করেছেন। তিনি বলেছেন:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪِ ﻫِﺸَﺎﻡُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚِ
ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺷُﻌْﺒَﺔُ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻌَﻴْﺰَﺍﺭِ
، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﻋَﻤْﺮٍﻭ
ﺍﻟﺸَّﻴْﺒَﺎﻧِﻲَّ ﻳَﻘُﻮﻝُ ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺻَﺎﺣِﺐُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﺍﺭِ
ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺇِﻟَﻰ ﺩَﺍﺭِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﺄَﻟْﺖُ
ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻱُّ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ
ﺃَﺣَﺐُّ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓُ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﻗْﺘِﻬَﺎ
ﻗَﺎﻝَ ﺛُﻢَّ ﺃَﻱُّ ﻗَﺎﻝَ ﺛُﻢَّ ﺑِﺮُّ ﺍﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ ﻗَﺎﻝَ ﺛُﻢَّ
ﺃَﻱُّ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺠِﻬَﺎﺩُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ :
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺑِﻬِﻦَّ ﻭَﻟَﻮِ ﺍﺳْﺘَﺰَﺩْﺗُﻪُ ﻟَﺰَﺍﺩَﻥِ
(হাদীস নং-৫২৭)
লক্ষ করুন বুখারীর বর্ণনায় শব্দ
রয়েছে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ আর
হাকেমের বর্ণনায় রয়েছে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ
ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ । দুটি কথা সম্পূর্ন ভিন্ন
অর্থ বহন করে। সে কথায় পরে
আসছি। বুখারী রাহ. হাদীসটিকে
শু‘বার সনদে উল্লেখ করেছেন।
শু‘বার সকল শাগরেদ হাদীসটিকে
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দেই বর্ণনা
করেছেন। শুধু তাঁর একজন শাগরেদের
বর্ণনায় ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ পাওয়া
যায়। তিনি হলেন আলী ইব্ন হাফস।
আলী ইব্ন হাফস কর্তৃক বর্ণিত
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দ সম্বলিত
হাদীসটি হাকেম, বায়হাকী ও দারা
কুতনী তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে
উল্লেখ করেছেন। আলী ইব্ন হাফস
সম্পর্কে দারা কুতনী মন্তব্য
করেছেন এই বলে- ﻣﺎ ﺍﺣﺴﺒﻪ ﺣﻔﻈﻪ
ﻻﻧﻪ ﻛﺒﺮ ﻭﺗﻐﻴﺮ ﺣﻔﻈﻪ (আমি মনে করি
না আলী ইব্ন হাফস হাদীসটিকে
যথাযথ সংরক্ষণ করেছেন। কেননা,
তিনি বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর
স্মৃতিশক্তির পরিবর্তন ঘটেছিল।)
আরেকটি সনদে হাদীসটি ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ
ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণিত হয়েছে।
সনদটি এরূপ -
ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺑﻦ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻌﻤﺮﻯ ﻋﻦ ﺍﺑﻰ
ﻣﻮﺳﻰ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺜﻨﻰ ﻋﻦ ﻏﻨﺪﺭ ﻋﻦ
ﺷﻌﺒﺔ
কিন্তু আবূ মূসার শাগরেদদের মধ্য
হতে হাসান ইবন আলী ব্যতীত আর
কেউ হাদীসটিকে ঐ শব্দে বর্ণনা
করেন না। বরং তাঁর সকল শাগরেদ
তাঁর বরাতে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দেই
বর্ণনা করেন। দারা কুতনী রাহ.
এমনটাই বলেছেন। তিনি বলেন ,
ﺗﻔﺮﺩ ﺑﻪ ﺍﻟﻤﻌﻤﺮﻯ ﻓﻘﺪ ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺻﺤﺎﺏ
ﺃﺑﻲ ﻣﻮﺳﻰ ﺑﻠﻔﻆ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ
( অর্থাৎ আল-মা‘মারী এইরূপ একাই
বর্ণনা করেছেন। আবূ মূসার সকল
শাগরেদ হাদীসটিকে বর্ণনা করেছেন
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে।) এই
মন্তব্যের পরে দারা কুতনী রাহ. আবূ
মূসার অপর এক শাগরেদ মাহামিলীর
বরাতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে। ঠিক
যেমনটা আবূ মূসার অন্যান্য
শাগরেদগণ বর্ণনা করেন। আবূ মূসার
ন্যায় গুনদারের সকল শাগরেদ
হাদীসটিকে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দেই
বর্ণনা করেন। হাফেয ইবন হাজার
আসকালানী রাহ. বলেন, প্রকাশ্যত
এটাই বোঝা যায় যে, হাসান ইবন
আলী আল-মা‘মারী তাঁর বর্ণনায়
ভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। কারণ,
তিনি তাঁর স্মৃতি থেকে হাদীস বর্ণনা
করতেন।
বাকী রইল মুস্তাদরাকে হাকেমের
উপরিউক্ত ঐ বর্ণনাটি যার দ্বারা
উম্মে ফারওয়ার হাদীসটি সমর্থিত
বলে শায়খ আলবানী রাহ. মনে করেন।
হাদীসটি সম্পর্কে বক্তব্য হল,
হাদীসটি মালেক ইবন মিগ্ওয়ালের
শাগরেদদের মধ্য হতে একমাত্র
উসমান ইব্ন উমার ব্যতীত আর কেউ
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণনা
করেন না। তাঁর সকল শাগরেদ তাঁর
বরাতে হাদীসটিকে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ
শব্দেই বর্ণনা করেন। হাফেজ ইবন
হাজার আসকালানী রাহ. বলেন , ﻭﺗﻔﺮﺩ
ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﺬﻟﻚ ’ ﻭﺍﻟﻤﻌﺮﻭﻑ ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻦ
ﻣﻐﻮﻝ ﻛﺮﻭﺍﻳﺔ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ
( অর্থাৎ এইরূপ বর্ণনায় উসমান
নিঃসঙ্গ। মালেক ইবন মিগ্ওয়াল
হতে যা প্রসিদ্ধ তা হল ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ
ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে অন্যান্য সকলের
অনুরূপ বর্ণনা।)
আপনি বলতে পারেন যে, হাকেম
তো হাদীসটিকে ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ
তথা বুখারী ও মুসলিমের হাদীসের
মানে উত্তীর্ণ বলে ব্যক্ত করেছেন।
এর জবাবে বলব যে , ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ
ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ কথাটি কোন্ হাদীসের
ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় বা করা
হয় তা নিয়ে বিশেষজ্ঞগণের মধ্যে
মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, কোনো
হাদীসের সনদে উল্লেখকৃত
রাবীগণের সকলেই যদি বুখারী ও
মুসলিমের রাবী হন তাহলে সেই
হাদীস সম্পর্কে বলা যায় যে, তা
ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ বা বুখারী ও
মুসলিমের হাদীসের মানসম্পন্ন।
কেউ বলেন, যে হাদীসটির সনদ হুবহু
বুখারী ও মুসলিমের সনদ সেই হাদীস
সম্পর্কে বলা যায় যে, তা ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ
ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ । কেউ বলেন, বুখারী ও
মুসলিমের রাবীগণ যে সকল
বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর অধিকারী সেই
সকল বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলীর
অধিকারী রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস
সম্পর্কে বলা যায় যে, তা ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ
ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ । দ্বিতীয় মতটিই অধিকতর
বিশুদ্ধ বলে মনে হয়। এর কারণ কী
সে আলোচনা এখানে
নিষ্প্রয়োজন। তবে সবকটি মতের
সার কথা হল, যে হাদীসটিকে ﻋﻠﻰ
ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ বা বুখারী ও
মুসলিমের হাদীসের মানে উত্তীর্ণ
বলে ব্যক্ত করা হয় তার রাবীগণ
উচ্চমান সম্পন্ন সত্যবাদি ও
বিশ্বস্ত। কিন্তু কোন হাদীস সহীহ
ও দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য
হওয়ার জন্য রাবীগণের সত্যবাদিতা,
বিশ্বস্ততা ইত্যাদি গুণই যথেষ্ট
নয়। বরং তাঁদের বর্ণনাটি শায বা দল-
বিচ্ছিন্ন না হওয়াও জরুরী। এটি
একটি স্বীকৃত মূলনীতি। দল
বিচ্ছিন্নতা হাদীস সহীহ হওয়ার পথে
একটি বড় বাধা। হাকেমের হাদীসটি
এই বাধাকে অতিক্রম করতে পারেনি।
কেননা পূর্বেই আমরা দেখিয়েছি যে ,
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে হাদীসটি
বর্ণনার ক্ষেত্রে উসমান ইব্ন উমার
নিঃসঙ্গ। তাঁর উস্তায মালেক ইবন
মিগ্ওয়ালের শাগরেদগণের কেউই
হাদীসটিকে ঐ শব্দে বর্ণনা করেন
না।
সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত হওয়া
সত্ত্বেও যে সকল রাবী হাদীসটিকে
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ - এর স্থলে ﺍﻟﺼﻼﺓ
ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণনা করেছেন
তাঁদের কেউবা স্মৃতি দুর্বলতার
শিকার হয়েছেন, আর কেউ সম্ভবত
কথা দুটোর অর্থ অভিন্ন বলে ধারণা
করে ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ - এর স্থলে
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ বর্ণনা
করেছেন। হাফেজ ইব্ন হাজার
আসকালানী রাহ. বলেন , ﻭﻛﺄﻥ ﻣﻦ
ﺭﻭﺍﻫﺎ ﻛﺬﺍﻟﻚ ﻇﻦ ﺍﻥ ﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﻭﺍﺣﺪ
( যারা হাদীসটিকে এইভাবে বর্ণনা
করেছেন তারা হয়তো মনে করেছেন
যে, উভয়টির অর্থ এক।) শায়খ
আলবানীও (রাহ.) কথা দুটোর অর্থ
অভিন্ন বলে ধারণা পোষণ করেন।
কেননা তিনি হাকেমের হাদীসের
উদ্ধৃতি দেওয়ার পর বলেন : ﻭﻫﻮ ﻓﻰ
ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﻴﻦ ﻭﻏﻴﺮﻫﻤﺎ ﺑﻠﻔﻆ , ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ،
ﻭﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﻭﺍﺣﺪ ﻋﻨﺪﻧﺎ ( সহীহাঈন ও
অন্যান্য গ্রন্থে হাদীসটি ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ
শব্দে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের মতে
অর্থ একই।) শায়খ আলবানীর সঙ্গে
এ ক্ষেত্রে আমি সহমত পোষণ করি
না।
কারণ, দ্বিতীয় কথাটির অর্থ হল,
ওয়াক্তের শুরুতে সালাত আদায় করা।
আর প্রথম কথাটির স্পষ্ট অর্থ হল,
সময়মত সালাত আদায় করা। অর্থাৎ
সালাতকে তার ওয়াক্তচ্যুত না করা।
প্রতিটি সালাতের শুরু ও শেষের যে
নির্ধারিত ওয়াক্ত আছে সেই
ওয়াক্তের মধ্যেই সালাত আদায়
করা। কাযা না করা।
একটি প্রশ্ন ও তার জবাব
কেউ বলতে পারে যে, ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ
ﻭﻗﺘﻬﺎ কে তো আল্লাহর নিকট অধিক
প্রিয় বলে বলা হয়েছে। কোনো
বিষয় অধিক প্রিয় তখনই হয় যখন
ঐ বিষয়টির মধ্যে একাধিক
ঐচিছকতা বিদ্যমান থাকে এবং
তন্মধ্য হতে একটি ঐচ্ছিক বিষয়
অন্যটির তুলনায় প্রিয় হয়ে থাকে।
সময়মত সালাত আদায় করা বা কাযা
না করা তো অপরিহার্য।
অপরিহার্যের মধ্যে কোনো
ঐচ্ছিকতা থাকে না। সুতরাং বোঝা
যায় যে, হাদীসটিতে বলা হয়েছে, যে
কোনো সময়ে সালাত আদায় করা
বৈধ তবে অন্য যে কোনো সময়ে
আদায় করার তুলনায় আউয়াল
ওয়াক্তে সালাত আদায় করা
মুস্তাহাব বা অধিক প্রিয়।
এর জবাবে বলব যে, কথাটি
যুক্তিযুক্ত। তবে কথাটি আলোচ্য
বিষয়ে প্রযোজ্য হত যদি প্রশ্ন
করা হত যে, কোন্ সময়ে সালাত
আদায় করা উত্তম। এখানে প্রশ্ন
করা হয়েছে, কোন্ আমলটি সর্বাধিক
উত্তম? উত্তরে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺘﻬﺎ অর্থাৎ
অন্যান্য আমলের তুলনায় সালাতকে
সময়মত আদায় করা এবং কাযা না
করা অধিক প্রিয়। তুলনা করা হয়েছে
অন্যান্য আমলের সঙ্গে। বলা
হয়েছে, সালাত কাযা না করা
আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আমল।
সালাতের পূর্ণ সময়ের একটি
অংশকে অপর অংশের সঙ্গে তুলনা
করা হয়নি।
কথা আরও আছে। তা হল, একাধিক
ঐচ্ছিক সময়ের মধ্য হতে আউয়াল
বা শুরু সময়ের কথাটি বোঝা গেল
কোত্থেকে? এ অর্থ কেন হবে না
যে, একাধিক ঐচ্ছিক সময়ের মধ্য
হতে মধ্যবর্তী সময়ে বা শেষ সময়ে
সালাত আদায় করা অন্য সময়ের
তুলনায় অধিক প্রিয়?
এই দীর্ঘ আলোচনার সার দাঁড়ালো
এই যে, হাদীসটিকে যাঁরা ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ
ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণনা করেছেন
তাঁরা হয় স্মৃতি বিভ্রাটের শিকার
হয়েছেন নয় তো অর্থ বিভ্রাটের
শিকার হয়েছেন। কারণ যা-ই হোক,
তাঁদের বর্ণনাটি দল-বিচ্ছিন্ন বর্ণনা।
আর দল-বিচ্ছিন্ন বর্ণনাকে
মুহাদ্দিসগণ যঈফ বলেন। সম্ভবত
এই কারণেই ইমাম বুখারী ও ইমাম
মুসলিম রাহ. তাঁদের গ্রন্থে ঐ শব্দ
সম্বলিত হাদীসটিকে স্থান দেননি।
যদিও এর বর্ণনাকারীগণের বর্ণিত
অন্য হাদীস তাঁরা গ্রহণ করেছেন।
আর এই কারণেই ইমাম নববী রাহ.
ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ শব্দে বর্ণিত
সকল হাদীসকে যঈফ বলে মত
প্রকাশ করেছেন। হাফেয ইব্ন হাজার
আসকালানী রাহ. তাঁর ফতহুল বারী
গ্রন্থে ইমাম নববী রাহ.-কে উদ্ধৃত
করে বলেছেন,
ﻭﻗﺪ ﺍﻃﻠﻖ ﺍﻟﻨﻮﻭﻯ ﻓﻰ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻤﻬﺬﺏ ﺃﻥ
ﻭﺍﻳﺔ ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ ﺿﻌﻴﻔﺔ
অর্থাৎ শরহুল মুহায্যাব গ্রন্থে
নববী রাহ. ব্যাপকভাবে (কোন
ব্যতিক্রম উল্লেখ না করে) বলেছেন
যে, ﻓﻰ ﺃﻭﻝ ﻭﻗﺘﻬﺎ বর্ণনা যঈফ।
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত হাফেজ ইবন
হাজার আসকালানীকে উদ্ধৃত করে
আমি যা লিখেছি তা যাচাই করতে
দেখুন ফাতহুল বারী ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা
১১ ও ১২, প্রকাশক: দারুল হাদীস,
কায়রো।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×