somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিন

২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বর্তমান সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা এক আতঙ্কের নাম। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা এক ভয়াবহ রুপ ধারন করছে। খালি হচ্ছে হাজারো মায়ের কোল। প্রতিদিন পত্র-পত্রিকা খুললে খবর পাওয়া যায় অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় দশজনের প্রানহানী হচ্ছে। আর এসব খবর অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমাদের জীবন আজ হুমকির মুখে। আজ উনি,কাল তিনি একদিন আমি,আপনিও শিকার হতে পারি এই অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনার। কলেজ ছাত্র রাজিব চলে গেলো,প্রতিনিয়ত মানুষ হাত হারাচ্ছে,পা হারাচ্ছে,প্রান দিচ্ছে,পঙ্গু হচ্ছে। তাই এই অনাকাঙ্ক্ষিত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অচিরেই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা আবশ্যক। সড়ক দুর্ঘটনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যতম প্রতিবন্ধক। তাই সরকারেরই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে সরকারের একার পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই সরকারের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকলের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত জরুরি। গনমাধ্যম,সুশিল সমাজ,বিভিন্ন সংগঠন,এনজিও,ছাত্র সমাজ,যাত্রী,চালক,পথচারীসহ রাষ্ট্রের সকল জনগনকে মিলে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ সরকারই নিতে পারে। কেনোনা সরকারই হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিধর সংগঠন। তাছাড়া সরকারের আইন প্রনয়ন,বাস্তবায়ন ও সংশোধন করার ক্ষমতা রয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অনেক আইন রয়েছে কিন্তু সে আইনের অনেকাংশে প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তাই এসব আইন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সরকারের আরো কঠোর হওয়া জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সর্বপ্রথম সড়ক দুর্ঘটনার সকল কারনগুলো খতিয়ে বের করা আবশ্যক। সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে প্রধান কারন হচ্ছে অসচেতনতা। এছাড়া রয়েছে অদক্ষ ও অশিক্ষিত চালক,ফিটনেসবিহীন গাড়ি,চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব,যাত্রী ও পথচারীদের অসচেতনতা,দুর্নীতি, চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার,অপরিকল্পিত ও ভঙ্গুর সড়ক,ওভার ক্রোসিং,অতিরিক্ত গতি,ওভার ব্রিজের স্বল্পতা,ট্রাফিক আইন অমান্য, ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতি,অনিয়ম,বিপদজনক ট্রাক, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও চালক, বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং যথাযথ আইন ও আইনের প্রয়োগের অভাবসহ বিবিধ।
এবার প্রথমে আসি অসচেতনাতা প্রসঙ্গে। মুলত অসচেতনতা সৃষ্টি হয় উপরের প্রত্যেকটি কারনে। অদক্ষ, অযোগ্য,অশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণ বিহীন চালকদের মধ্যে অসচেতনতা থাকবে এটি স্বাভাবিক। তাই সরকারের উচিত চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আরো বাড়ানো। অর্থাৎ এটি নুন্যতম এইচএসসি পাস করা উচিত। কারন শিক্ষাই চালকদের সচেতন করতে পারে। তাছাড়া অনেক চালক আছে যারা গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলে থাকে। যেটা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারন। তাই গাড়িতে চালকদের মোবাইল ফোন সম্পুর্নরুপে নিষিদ্ধ করা উচিত। অর্থাৎ কোনো চালক গাড়িতে মোবাইল ফোন আনতেই পারবেনা। এবং হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান একটি কারন। তাই প্রত্যেক দুরপাল্লার গাড়িতে দুজন করে চালক রাখার বিধান করা উচিত। কেনোনা দুরপাল্লার গাড়িতে যাত্রা করতে প্রায় ৮ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লাগে। যেটি একজন চালকের পক্ষে এতো দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানো সত্যিই কষ্টকর ব্যাপার। অনেক চালক শারিরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পরেন। যেটি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান একটি কারন। তাই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অচিরেই দুরপাল্লার গাড়িতে দুজন করে চালকের বিধান করা জরুরি।
এবার আসি ট্রাক প্রসঙ্গে। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারনই হলো বেপরোয়া ট্রাক। প্রায়ই ট্রাক ও বাসের মুখোমুখী সংঘর্ষে সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। এটি এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। আর এর কারন হলো যেকোনো ট্রাক সাধারনত পন্য নিয়ে অনেক দুর যাত্রা করে। আর এতো দীর্ঘ সময় একজন চালকের পক্ষে ট্রাক চালানো অসম্ভবই বলা যেতে পারে। অনেক চালক আছেন বাধ্য হয়ে ক্লান্ত অবস্থায় গাড়ি চালান। তাই ট্রাকেও দুজন চালক বাধ্যতামূলক করা উচিত। এমন বিধান করলে দেশ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশেই হৃাস পাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস। এটাই হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অন্যতম কার্যকর একটি উদ্যোগ।
এছাড়া চালকদের প্রতিমাসে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের ব্যবস্থা করা উচিত। এতে চালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে এটি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। ওভার ক্রোসিং সড়ক দুর্ঘটনার মারাক্তক একটি কারন। তাই যাত্রাপথে ওভার ক্রোসিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোও নিষিদ্ধ করা উচিত। সাধারনত ৪০ কিঃমিঃ এর বেশি গতিতে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা উচিত। আমাদের মনে রাখতে হবে যে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। ভঙ্গুর সড়ক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ী সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি প্রধান কারন। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সড়ক মেরামত ও সংস্কার জরুরি। এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা আবশ্যক। দরকার হলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাষ্টে যেমন ন্যায়পাল থাকে ঠীক তেমনি সড়কেও ন্যায়পালের মতো কর্মকর্তা নিয়োগ করা যেতে পারে। এটি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
এছাড়া যাত্রীসাধারন ও পথচারীগন ও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কিছুটা দায়ী। যেমন অনেক সময় যাত্রীগন চালকের সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকে। এতে চালকের মনমানসিকতা ভেঙ্গে যায় এবং চালক যাত্রীদের প্রতি ক্ষীপ্ত হয়ে যায়। এতে করে অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই যাত্রীদের উচিত চালকদের সাথে সবসময় মার্জিত ব্যবহার করা। আর পথচারীগন সড়ক ক্রোস না করে ওভার ব্রীজ ব্যবহার করা উচিত। যেখানে ওভার ব্রীজ নেই সেখানে পথচারীদের রাস্তা ফাকা হওয়ার পরে সাবধানতার সহিত রাস্তা পারাপার করা উচিত। এবং দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরকারের আরো ওভার ব্রীজ নির্মান করা জরুরি। এছাড়া প্রতিমাসে চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। কেনোনা অসুস্থ চালক সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারন। অসুস্থ চালককে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে চিকিৎসা প্রদান করা উচিত। ট্রাফিক পুলিশদের আরো বেশি করে সচেতন হতে হবে। এবং ট্রাফিক আইন মানতে সকলকে বাধ্য করতে হবে। লাইসেন্সবিহীন চালক ও গাড়ির বিরুদ্ধে যথাযৎ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশসহ সরকারের আরো কঠোর হতে হবে এবং ট্রাফিক আইনকে বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। এটি হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী একটি পদক্ষেপ।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গনমাধ্যম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নিয়মিত টেলিভিশনে সচেতনতামূলক বিভিন্য অনুষ্ঠান প্রচার করা,টকশোর ব্যবস্থা করা। পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত এ বিষয়ে লেখালেখি করা ইত্যাদি। যদিও এ বিষয়ে আমাদের দেশের গনমাধ্যম যথেষ্ট সোচ্চার। তাই আমি গনমাধ্যমকে স্বাগত জানাই। তবে গনমাধ্যমকে আরো সোচ্চার হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। লেখক,বুদ্ধিজীবি,সাংবাদিক তথা সুশিল সমাজ আলোচনা,সমালোচনা,লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। ছাত্রসমাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিভিন্ন সংগঠন ও এনজিও সচেতনতা তৈরি করতে পারে। মোদ্দাকথা সরকারসহ দেশের সকল জনগন সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারে। সরকার উপযুক্ত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে এবং সড়ক অাইনের প্রয়োগ করে দেশের অভিশাপ সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করবে বলে-প্রত্যাশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×